অফুরন্ত অবসরে আদতে সুখ নেই, বলছেন মনোবিজ্ঞানীরা- কতটুকু সময় দরকার আপনার?
কর্মব্যস্ত জীবনে সকাল থেকে চলে কাজের ছুটোছুটি। সপ্তাহ শুরু হতে না হতেই মনে হয় কখন যে উইকেন্ড আসবে! প্রায় সময়ই আমাদের মন কাজের ভিড়ে বলে ওঠে, 'ইশ! পুরো এক সপ্তাহজুড়ে যদি অবসর পেতাম!'
কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্য অবসর পেলেই কি আমরা সুখী হব? সাধারণ উত্তর হতে পারে 'হ্যাঁ'। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেস-এর (ইউসিএলএ) মনোবিদ এবং অধ্যাপক ক্যাসি হোমসের গবেষণার ফলাফল বলছে অন্য কথা।
অতিরিক্ত অবসর মানে সুখী হওয়া নয়
এতক্ষণে হয়তো বুঝে গেছেন যে প্রয়োজনাতিরিক্ত অবসর সময় আপনাকে আদতে খুশি করতে পারে না। কিন্তু এই 'প্রয়োজনীয়' সময়টাই বা কতটুকু? গবেষণাটি বলছে, দৈনিক দুই থেকে তিন ঘণ্টাই হলো নিজেকে খুশি রাখার জন্য যথেষ্ট সময়।
দু'ঘণ্টার কম অবসর পেলে আপনার মনে হবে দৈনন্দিন কাজগুলো করার জন্য আপনি পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন না। আর এমনটা হলে এটি আপনাকে করে তুলতে পারে মানসিকভাবে শ্রান্ত, এমনকি ঠেলে দিতে পারে হতাশার দিকে।
অন্যদিকে, পাঁচ ঘণ্টার বেশি অবসর সময়কে বলা হচ্ছে 'অতিরিক্ত'। কারণ এটুকু সময় আপনাকে করে দিতে পারে উদ্দ্যেশ্যহীন। অর্থাৎ আপনি কোনো কাজে আনন্দ পাবেন না, এক সময় বিরক্ত হয়ে উঠবেন। তবে হ্যাঁ, যদি নিজের ভালো লাগার কাজ করেন বা কোনো সৃজনশীল কাজ করেন তবে বিরক্ত হওয়ার আশঙ্কা কম।
অবসয় সময় গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা কীভাবে ব্যয় করছেন সেটাও জরুরি
২৪ ঘণ্টায় একদিন হয়। তবে সবার জন্য এ নিয়ম খাটলেও আমরা সময়কে কীভাবে অনুভব করছি তা একেবারেই আপেক্ষিক। তার একটা উদাহরণ হতে পারে, খুশি হয়ে থাকলে মনে হয় সময় অতি দ্রুত যাচ্ছে, আর মন খারাপ থাকলে ঠিক তার উল্টোটা।
ঠিক তেমনি অফুরন্ত সময় পেলেও মনে হতে পারে খুব একটা সময় পেলেন না, আবার সারাদিনে দুঘণ্টা সময় পেলেও তা পর্যাপ্ত মনে হতে পারে। তাই শুধু সময় পাওাটাই জরুরি নয়, অতিরক্ত মানসিক চাপ না নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সারতে পারবেন এই আত্মবিশ্বাস থাকাটাও জরুরি। তিনটি উপায়ে এই আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন।
১। একটু হাঁটাচলা করুন
এটা বৈজ্ঞানিকভাবে সম্মত যে শারীরিক কসরত কেবল স্বাস্থ্য নয়, আপনার সুখের জন্য, এমনকি আত্মসম্মানের জন্যেও দরকারি। সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করুন। এই নির্দিষ্ট সময়টুকুকে বানিয়ে ফেলুন আপনার দৈনন্দিন রুটিনের অংশ।
চিন্তার কিছু নেই। এ ব্যায়াম কঠোর কিছু হতে হবে না। আপনার নিকটস্থ কোনো পার্ক বা এলাকায় জগিং করতে পারেন। অথবা কর্মস্থল যদি খুব দূরে না হয়, তাহলে হেঁটে আসা যাওয়াও করতে পারেন।
হাঁটাচলার পরে একটা ডায়েরিতে আপনার অনুভুতিগুলো লিখতে পারেন। না হাঁটার জন্য কখনো যদি মন অজুহাত খুঁজতে চায়, তবে ডায়েরির লেখা দেখে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন।
২। সহানুভূতির চর্চা করুন
যাপিত জীবন আমাদেরকে অনেক সময় আত্মকেন্দ্রিক করে ফেলে। গবেষণা বলছে, অন্যের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন বা কাউকে সহায়তা করা সময়কে আপনার কাছে আরও মূল্যবান করে তুলবে। সহানুভূতির দুটো কাজ করতে পারেন- একটা পরিচিতজনের প্রতি, আরেকটা অচেনা কারোর প্রতি। এক্ষেত্রে কী করবেন তা আপনার ওপর নির্ভর করবে তবে কিছু আইডিয়া হতে পারে এমন:
- কোনো একটা কফিশপে বা চায়ের দোকানে কারও বিল পরিশোধ করলেন।
- কাউকে তার কোন কিছুর জন্য প্রশংসা করলেন।
- আপনার সহকর্মীকে তার কাজে সাহায্য করলেন।
- কোনো বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের কোনো সদস্যকে উপহার দিলেন।
তবে হ্যাঁ, যা-ই করুন না কেন, মাথায় রাখবেন তার জন্যই কাজটা করছেন, কোনো ফিরতি সহায়তার জন্য নয়।
৩। অবাক হতে দ্বিধা করবেন না
ছুটোছুটি করতে করতে আমরা নিজের অজান্তেই জীবনটাকে যুদ্ধের ময়দান বানিয়ে ফেলি। এতে করে মনে হতে পারে তাড়াহুড়ো না করলে আমরা পিছিয়ে যাব। এসময় প্রয়োজন নিজেকে শান্ত করা। এক্ষেত্রে কিছু কাজ করতে পারেন।
সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া
আপাতদৃষ্টিতে ছোট মনে হলেও কিছু কাজ আপনার মনে প্রশান্তি আনতে পারে। যেমন ধরুন একজন শিশুকে কোলে নিলেন, ভালো লাগে এমন কারও সাথে অল্প কিছুক্ষণের জন্য কথা বললেন।
যেতে পারেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে
দৈনিক কয়েক মিনিট নিকটস্থ পার্কে ঘুরে আসতে পারেন। তা সম্ভন না হলে আপনার বাসার বাইরে যে ফুটপাত আছে, তাতেই একটু হেঁটে আসতে পারেন। আর বাসায় এবং বারান্দায় লাগাতে পারেন ছোট ছোট গাছ।
এছাড়া, অন্যের সাফল্য থেকেও নিজের জন্য অনুপ্রেরণা নিতে পারেন।
সূত্র: সিএনবিসি
ভাষান্তর: নীতি চাকমা