পড়াশোনার ভয় আর নয়, ‘শিখো’-তে চলো শিখি একসাথে
সামাজিক মাধ্যমের শত শত কন্টেন্টের ভিড়ে প্রায় আমাদের সামনে কিছু বিজ্ঞাপন চলে আসে। অনেক সময় আমরা সেগুলো এড়িয়ে গেলেও- কিছু জিনিস মাঝেমধ্যেই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। ব্রাউজিং করছি, হঠাৎ-ই এমন একটি বিজ্ঞাপন সামনে চলে আসে একদিন। বিজ্ঞাপনের দৃশ্যপট ছিল- গায়ে অভূতপূর্ব অনুভূতির মতো। কখনো শহরের কোলাহলে, আবার কখনো নদীর মাঝখানে নৌকা আর গ্রামের পথঘাটের গাছের ছায়াতলে বসেই শিক্ষার্থীরা মোবাইল দেখে টুকে নিচ্ছে নোট। একইসময়ে দেশের সব প্রান্তের শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে একইমানের পড়াশোনা।
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে কোচিং, প্রাইভেট টিউটর ও গাইড বইয়ের ঝক্কি যেন শিক্ষার্থীদের জীবন একরকম বিষিয়ে তুলছে। আর এসব থেকে মুক্তি দিতেই 'আমি শিখবো, আমি জিতবো' ক্যাম্পেইন নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলাদেশের এডটেক স্টার্টআপ- 'শিখো'।
বিজ্ঞাপনে বর্তমান সময়ের খ্যাতিমান অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়- 'এবার সবাই শিখবে, সবাই জিতবে'। অর্থাৎ একজন শহুরে স্কুলের স্বচ্ছল শিক্ষার্থী পড়াশোনার ক্ষেত্রে যেসব লেকচার অনুসরণ করে পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে, গ্রামের প্রান্তিক শিক্ষার্থীরাও স্বল্প খরচে পাবে- সেই একই পাঠ্য সেবা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সকলের কমবেশি বিচরণ রয়েছে। স্কুলকলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এ প্রবণতা দিনকে দিন আরও বাড়ছে। ইন্টারনেট সংযোগ বৃদ্ধির এই যুগে– পড়াশোনার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে কেন মাইলের পর মাইল পাড়ি দিতে হবে! এই সমস্যার সমাধানে ও বাংলাদেশের প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের কম টাকায় মানসম্মত শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে শিক্ষাপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান 'শিখো'।
শাহীর চৌধুরী ও জিশান জাকারিয়া- দুই তরুণের হাত ধরে শুরু হওয়া এই স্টার্টআপে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৪০০জন। মাত্র ৩ বছরের যাত্রায় 'শিখো' হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়া কোনো 'এডটেক স্টার্টআপ'।
শিখো'র ব্র্যান্ড ও কমিউনিকেশন প্রধান জিশান আহমেদ জানান, 'শিখো'কে দাঁড় করানোর পেছনে আমাদের টিমের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা জড়িয়ে রয়েছে। একেকজন সদস্য নিজেদের পেশাগত জীবনের ইতি টেনে, অনিশ্চিত এই যাত্রায় সঙ্গী হয়েছেন। লিডারশিপ টিমে যারা দায়িত্বরত রয়েছেন, তারা সকলেই নিজ নিজ সেক্টরে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ। প্রত্যেকেরই প্রায় নিজস্ব ফিল্ডে ১০/১২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
'জাতীয় পাঠ্যক্রমকে মানসম্মত ও সহজ করে তুলে ধরতে দেশে প্রথম ভিজ্যুয়াল অ্যানিমেটেড ভিডিও কন্টেন্ট শিখো'র হাত ধরে শুরু হয়েছে। কোয়ালিটি এডুকেশন দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে 'শিখো' বদ্ধপরিকর'।
শুরুর গল্প
অন্যান্য স্টার্টআপের মতো শিখো'র পথচলার প্রথম ধাপটা সহজ ছিল না। শাহীর চৌধুরী তার দীর্ঘ ১২ বছরের ব্যাংকার পেশাগত জীবনের ইতি টানলেন। তার চিন্তা ছিল- তিনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কিছু করবেন। কিন্তু, শিক্ষকতা বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা না থাকায় তিনি পূর্ব-পরিচিত বন্ধু জিশান জাকারিয়ার সাথে যোগাযোগ করলেন।
জিশান জাকারিয়া শুরু থেকেই শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। শিক্ষকতায় তার আগ্রহ এত বেশি ছিলো যে, তিনি ইকোনোমিক্স ও ফাইন্যান্স থেকে গ্রাজুয়েট হয়েও- প্যাশনের জোরে 'ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন' থেকে এডুকেশনের ওপর আরেকটি মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। জিশান লন্ডনে দীর্ঘদিন শিক্ষকতাও করেছেন, তাই এইদিক থেকে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ পরিপূর্ণ। এবার পালা নিজ দেশে ফিরে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করার। তারপর একটি একটি করে কাঠামোকে সামনে রেখে, দুই বন্ধু মিলে দাঁড় করাতে শুরু করলেন তাদের স্বপ্নের এডটেক স্টার্টআপ-'শিখো'।
শিখোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিশান জাকারিয়ার শৈশবের স্মৃতি তাকে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে আরও উদ্বুদ্ধ করেছে। তার বাবা ছিলেন একজন আর্মি অফিসার। কিন্তু, বেতনের যৎসামান্য টাকায় সংসার চালিয়ে– ছেলের পড়াশোনার খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হতো তার বাবাকে। ছেলের প্রাইভেট, কোচিং- এর টাকা জোগাড় করতে তিনি স্থাবর সম্পত্তির একটা অংশ বিক্রিও করে দেন। সেখান থেকে জিশান জাকারিয়ার মাথায় সবসময় কাজ করতো বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। কীভাবে কম খরচে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা পেতে পারে– সেই পরিকল্পনা থেকেই অনলাইনে যাবতীয় কোর্সকে ঢেলে সাজিয়েছে 'শিখো' টিম।
শুরুর দিকে মাত্র একটি রুম নিয়ে চলতো শিখো'র যাবতীয় কার্যক্রম। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের দুটি অফিস স্পেস রয়েছে। শিখো'র গুলশান অফিসে চলে শিক্ষামূলক যাবতীয় কার্যক্রম। এবং বনানীর অফিসটি শুধুই কর্পোরেট ও ম্যানেজমেন্ট কাজের জন্যে। ৪০০ জন সদস্যসের 'শিখো' টেকনোলজি, ব্র্যান্ড মার্কেটিং, কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স টিম, অপারেশন টিম নামক- ৯টি আলাদা আলাদা টিমে ভাগ হয়ে নিজ নিজ দায়িত্বে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।
শিক্ষাপ্রযুক্তির উন্নয়নে সম্প্রতি 'শিখো' সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান 'ওয়েভমেকার পার্টনারস ও আরও ৭টি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। গত বছরের আগস্ট মাসে প্রথম ধাপে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের থেকে ১৩ লাখ ডলার বিনিয়োগ পায় 'শিখো'। এই নিয়ে দুই ধাপে মোট ৪৫ কোটি টাকা (বাংলাদেশি অর্থমূল্যে) বিনিয়োগ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রযুক্তি বিষয়ক স্টার্টআপের মধ্যে এটিই ছিল- সর্ববৃহৎ বৈদেশিক বিনিয়োগ।
মজার ছলে হবে পড়াশোনা
সকল শিক্ষার্থী যেমন সমান সুযোগ পায় না-তেমনি সকলের বোঝার সক্ষমতাও সমান হয় না। পাঠ্যক্রম বা সিলেবাসকে কীভাবে সহজ ও বোধগম্য করে শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির করা যায়-সে চিন্তা থেকে ভিজ্যুয়াল অ্যানিমেটেড ভিডিও'র মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে রসায়ন, গণিত, পদার্থবিজ্ঞানের জটিল জটিল সব সূত্র ও ব্যাখ্যা।
প্রথমদিকে সাধারণ গণিতের ওপর একটি মাত্র কোর্স ছিল 'শিখো'-তে। পরীক্ষামূলক এই কোর্সে মিলেছিল ভালো সাড়া। তারপর শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে যোগ হয় সকল বিষয়ভিত্তিক কোর্স ও অনলাইন লাইভ ক্লাস।
'শিখো' জুম বা গুগল মিটের মতো প্লাটফর্মগুলো ব্যবহার করে লাইভ ক্লাস নেয় না। এজন্য তাদের রয়েছে নিজস্ব প্লাটফর্ম- Shikho ওয়েব পোর্টাল ও Shikho অ্যাপ। প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষকের সাথে একজন করে সহকারী শিক্ষক থাকেন। যিনি লাইভ ক্লাস চলাকালীন টেকনোলজি বিষয়ক ত্রুটি ও শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দেন। এছাড়াও ক্লাসের নির্দিষ্ট সময় পরে এক্সট্রা কনসালটেশন ক্লাসের সুযোগ রয়েছে।
জিশান আহমেদ শিখো'র কার্যক্রম নিয়ে আলাপচারিতায় বলেন, 'অনেক সময় ক্লাসে শিক্ষার্থীরা মনোযোগী থাকে না। আবার সবাই একইরকম ভাবে বুঝতে পারে না। তাই কোন শিক্ষার্থীর পড়া বুঝতে সমস্যা হলে, তারা ক্লাসের পরে আমাদের সহকারী শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। সপ্তাহের ৪দিন শিক্ষার্থীদের জন্যে এক্সট্রা ক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে। এজন্যে শিক্ষার্থীদের কোনপ্রকার অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয় না।
২টি পদ্ধতি অবলম্বন করে 'শিখো' শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠদান করে থাকে। একটি অনলাইন লাইভ কোচিং ক্লাস, অন্যটি অ্যানিমেটেড ভিডিও কন্টেন্ট। অ্যানিমেটেড ভিডিও লেসনগুলো শিক্ষার্থীদের আনন্দ দিয়ে পড়া বুঝানোর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রেখে কঠিন পাঠ্যক্রমকে সহজভাবে উপস্থাপন করা যায়।
গত বছরের নভেম্বর থেকে 'শিখো'র লাইভ ক্লাস কোর্স চালু করা হয়। এর আগপর্যন্ত পূর্বে রেকর্ডেড ভিডিও ক্লাস পদ্ধতি ছিল। লাইভ ক্লাস চলাকালীন সেগুলো রেকর্ড করা হয়, এবং পরবর্তীতে ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়া হয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ে কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকতে না পারলেও– যেকোনো সময় ক্লাসগুলো দেখে ধারণা নিতে পারবে'।
শিখো'র শিক্ষায় হও আলোকিত
জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে শিখো'র অনেকগুলো কোর্স রয়েছে। এই কোর্সগুলোর যাবতীয় দেখাশোনা শিখো'র সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিশান জাকারিয়ার দায়িত্বে রয়েছে। বর্তমানে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সকল বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যক্রম এখানে অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে এবং বাকি সকল ক্লাসের জন্যে কোর্স তৈরির কাজ চলছে। কয়েকজন সদস্য নিয়ে 'Knowledge Team' নামের শিখো'র আলাদা একটি টিম রয়েছে। এই টিমের সদস্যদের কাজ হচ্ছে-জাতীয় পাঠ্যক্রমকে সহজীকরণের নানাবিধ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা। সিলেবাস পর্যালোচনার মাধ্যমে বোর্ড পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিকে সহজ করে তুলতে এই টিম কাজ করে।
'শিখো' তে একাডেমিক কোর্সের পাশাপাশি রয়েছে 'Shikho Skills' প্রোগ্রাম যেখানে মূলত একাডেমিক ও প্রফেশনাল জীবনের জন্য দরকারি বিভিন্ন স্কিলের ওপর ভিত্তি করে কোর্সগুলো সাজানো হয়েছে। এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, গুগল ওয়ার্ক স্পেস, ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স, চাকরির প্রস্তুতি, জিআরই প্রস্তুতি, গ্রাফিক ডিজাইন, ই-মেইল রাইটিং-সহ দরকারি বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপের কোর্স রয়েছে।
সম্প্রতি 'আলোকিত শিক্ষক' নামের নতুন আরও একটি কোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে 'শিখো'। শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী ও নিয়োজিত ব্যক্তিরা এখান থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। এছাড়াও, শিক্ষক হিসেবে 'শিখো'তে নিযুক্ত হওয়ার পূর্বে সবাইকে বিশেষ প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যেন তারা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রেখে সঠিকভাবে জ্ঞানদান করতে পারেন।
এছাড়া, শিখো গত বছর দেশের অন্যতম জনপ্রিয় স্কিল ডেভেলপমেন্ট স্টার্টআপ 'বহুব্রীহি'কে অধিগ্রহণ করে। যেখানে বর্তমান সময়ের জন্যে খুবই দরকারি বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপ করার সুযোগ রয়েছে। স্পেশাল ক্যারিয়ার ট্র্যাক নামের একটি কোর্স রয়েছে। এখানে ক্যারিয়ার ট্র্যাক নামের আওতায় কিছু কোর্স রয়েছে, যা একজন শিক্ষার্থীকে সরাসরি দক্ষতা অর্জন করে– ক্যারিয়ার গড়ার জন্যে প্রস্তুত করে তোলে। অন্যান্য কোর্সের তুলনায় এই কোর্সের ফি কিছুটা বেশি। তার কারণও রয়েছে।
কমিউনিকেশন হেড জিশান আহমেদের মতে, 'আমাদের এই কোর্স করার পর– কেউ বলতে পারবেন না তিনি পেশাগত জীবনে উপকৃত হননি। 'ক্যারিয়ার ট্র্যাক' কথাটি শুনেই বোঝা যাচ্ছে এখানে ক্যারিয়ার বিষয়ক যাবতীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ডিজিটাল মার্কেটিং, ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসায় ও অন্যান্য যাবতীয় বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ শিক্ষা দেওয়া হয়। ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট প্রফেশনাল ব্যক্তিরা এখানে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন'।
নোট টুকতে গিয়ে বিঘ্ন হবে না মনোযোগ
ক্লাসে শিক্ষক কী পড়াচ্ছেন- সেদিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করার চেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝোঁক থাকে তাকে নোট টুকতে হবে। এটি করতে গিয়ে অনেকে পড়ানো বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট বুঝতে পারে না। এই কাজটি আমরা সকলেই ছোটবেলায় শিক্ষার্থী অবস্থায় করেছি। এই সমস্যার সমাধানটাও পাওয়া যাবে শিখো'তে। প্রতিটি লেকচারের মূল পয়েন্টগুলো নিচে উল্লেখ করে দেওয়া থাকে-যেটাকে বলা হয় 'স্মার্ট নোট'। তাই শিক্ষার্থীকে আর মনোযোগে বিঘ্ন ঘটিয়ে নোট করায় ব্যস্ত থাকতে হবে না। প্রতিটি ক্লাস শেষে লেকচারের সাথে পেয়ে যাবে ক্লাস নোটস।
এছাড়াও, ক্লাসের মধ্যেই পড়ানো বিষয় থেকে তাৎক্ষণিক কুইজ টেস্ট নেওয়া হয়। কুইজ টেস্টের উত্তরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে কতটা মনোযোগী ছিল। প্রয়োজনের ভিত্তিতে পুনরায় একই লেকচার দেওয়া হয়ে থাকে। শিখো'র আলাদা একটি টিম রয়েছে অ্যাপ ও ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করার জন্যে।
পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, কোনো বিষয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীদের বাড়তি সেবা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিটি কোর্সে ভর্তির পূর্বে সকল শিক্ষার্থী কিছু ফ্রি ট্রায়াল ক্লাসের সুযোগ পান। মোবাইল ফোনে 'শিখো' অ্যাপ ইনস্টল করে রেজিস্ট্রেশন করার পর যাবতীয় তথ্য ও কোর্স ফি সম্পর্কে জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে ১১ লাখ শিক্ষার্থী অ্যাপটি ইন্সটল করেছে এবং আরও কয়েক লাখ শিক্ষার্থী শিখো'র বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হয়েছে।
জিশান আহমেদ আরও জানান, 'শিখো-তে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ বিভিন্ন জেলা ও প্রান্তিক অঞ্চলের। শহরে অবস্থিত স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা মোটামুটি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও তারা ভালো মানের শিক্ষা পেয়ে থাকে। কিন্তু, একজন গ্রাম বা মফস্বলের শিক্ষার্থীর জন্য চিত্রটা ভিন্ন। তাই এই শিক্ষার্থীরা এককালীন ফি দিয়ে শিখোর কোর্সগুলোতে ভর্তি হয়ে যায়। এভাবেই এক বন্ধু থেকে অন্য বন্ধুরা জানতে পেরে তারাও শিখো'র সাথে যুক্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে প্রান্তিক এলাকায় বাস করা বাবা-মায়েরাও নিজেদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠেছে। তাই ছেলেমেয়েদের ভালো মানের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে, তারাও শিখো-কে বেছে নিচ্ছেন। অনলাইনে পড়াশোনার এই প্রচলন ও ধারণা মানুষের মাঝে আরও প্রবল হয়েছে করোনাকালীন সময়ে। 'শিখো' শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একটি লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, আর তা হলো- দেশের সকল প্রান্তের সব শিক্ষার্থীর মাঝে মানসম্মত শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া। এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে শিক্ষার্থীবান্ধব করে তোলার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠ্যক্রমকে সহজভাবে তুলে ধরা'।