সুগন্ধি দেশীয় সাগরকলা কেন দুষ্প্রাপ্য! সাগরকলা মানেই এখন নেপালী কলা!
আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলি দলি,
সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে—
হাপুস হুপুস শব্দ চারদিক নিস্তব্ধ
পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।
চারটে লাইন পড়তে পড়তেই নাকে সুগন্ধ ভেসে আসছে, তাই না? এই লাইনগুলোর মধ্য দিয়ে শিশু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মিষ্টতার সর্বোচ্চ পর্যায়কে তুলে এনেছেন। দাঁড়ান, দাঁড়ান, 'কদলি' শব্দটি শুনে আবার বিষম খাবেন না যেন! কদলি হলো কলার সংস্কৃত রূপ। সুস্বাদু ও সহজলভ্য হিসেবে যে ফলটির জুড়ি মেলা ভার, তার নাম কলা।
দুর্মূল্যের বাজারে কলা যেন আশীর্বাদস্বরূপ! একটি কলায় যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ থাকে, তা দিয়ে সহজেই শরীরের জন্য দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করা যায়। আর বিশ্বজুড়ে কলার যে জনপ্রিয়তা, তাতে যেকোনো সময় মানুষের পছন্দের তালিকায় ডিমকে ছাড়িয়ে শীর্ষে কলার নাম উঠে আসতেই পারে।
বাংলা লোকসাহিত্যে কলা নিয়ে কম কলকাকলি হয়নি। এই যেমন ধরুন—খনার বচন, প্রবাদ, বাগধারা সবেতেই উঠে এসেছে কলার নাম। বিদুষী নারী খনার কৃষিভিত্তিক বচনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—'কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত'। অর্থাৎ কলাগাছ রোপণের পর তার পাতা কাটা যাবে না, তাহলে কলার ফলন ভালো হবে। আর সেই কলা বিক্রি করে ভাত-কাপড়ের অভাবও পূরণ করা যাবে। এছাড়াও আঙুল ফুলে কলাগাছ কিংবা আদায়-কাঁচকলা সম্পর্ক কিংবা রথ দেখা কলা বেচা প্রভূত বাগধারা-প্রবাদের সঙ্গেও আমরা কম-বেশি পরিচিত।
আঁশ ও ভিটামিনে ভরপুর একটি বড় আকৃতির কলায় ৪৯০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। একটি মাঝারি আকৃতির কলায় প্রায় ১০০ ক্যালরি পর্যন্ত থাকে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কলায় ৭.০ গ্রাম প্রোটিন, ২৫ গ্রাম শর্করা ও ২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
৬০ ফুট উচ্চতার কলাগাছ!
কলার উৎপত্তির ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে সর্বাগ্রে উঠে আসবে পাপুয়া নিউগিনি ও ইন্দোনেশিয়ার নাম। ধরা হয়, কলার আদি নিবাস পাপুয়া নিউগিনির কুক ভ্যালিতে। এমনকি ৬০ ফুট উচ্চতার বিশ্বের সবচেয়ে বড় কলা গাছের অস্তিত্বও এই পাপুয়া নিউগিনি ও ইন্দোনেশিয়াতেই রয়েছে। এই প্রজাতির কলার নাম 'মুসা ইনজেনস'। বিজ্ঞানীদের মতে, কলার উৎপত্তি ঘটেছে প্রায় দশ হাজার বছর আগে এবং কলাই পৃথিবীর প্রথম ফল।
ধরা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ নাগাদ ভারতে আসে। পরবর্তী সময়ে উষ্ণমণ্ডলীয় বিভিন্ন দেশে কলা বিস্তার লাভ করে। এমনকি খ্রিস্টপূর্ব ২০০-৩০০ অব্দে প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু দ্বীপে এবং আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ভাগ এলাকায় কলা বিস্তার লাভ করেছিল বলে অনুমান করা হয়।
ফুড কেমিস্ট্রি জার্নালের তথ্যানুসারে, সারা বিশ্বের প্রায় ৩০০-র বেশি জাতের কলার চাষ হয়ে থাকে। যার প্রায় সবটাই উৎপাদন হয় এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায়। এর মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই কলার উৎপাদন ও চাষ সবচেয়ে বেশি হয়।
বাংলাদেশে কলার বাহার!
বাংলাদেশে কলা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো প্রায় সারাবছরই উঁচু জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব। বাংলাদেশের নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ পার্বত্য এলাকায় শত শত বছর ধরে কলার আবাদ হচ্ছে।
বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২০ জাতের কলার চাষ হয়। এদের মধ্যে সাগরকলা, নেপালী কলা, এঁটে বা বিচি কলা, সবরি কলা, চাঁপা কলা, বাংলা কলা, আনাজ কলা, সিঙ্গাপুরী কলা, ক্যাভেন্ডিশ কলা প্রভৃতি অন্যতম।
যত রকমের কলাই থাকুক না কেন—সাগরকলা, সবরি কলার, চাঁপাকলার নাম উঠে আসে সর্বাগ্রে। টক-মিষ্টি স্বাদের বাহারে একেকটি কলা মুখে দিলেই নতুন অনুভূতির জন্ম দেয়। সাগরকলা ও সবরিকলা স্বাদের দিক থেকে মিষ্টি, অপরদিকে চাঁপাকলা কিঞ্চিৎ টক স্বাদের। আকারের দিক থেকে সাগরকলা আকারে লম্বাটে এবং সবরি ও চাঁপাকলা আকারে ছোট। উচ্চতার দিক থেকে সবরিকলা আগা থেকে গোড়া অনেকটা সমান গোলাকার। আবার চাঁপাকলার আগা ও গোড়ার তুলনায় পেটটা বেশ উঁচু।
এছাড়াও পেটভর্তি বিচিসমৃদ্ধ এঁটে কলা শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামে বেশ জনপ্রিয়। ওজনে ভারী হলেও এই কলার পেট বেশ মোটা।
রঙের দিক থেকেও সবরিকলা ও চাঁপাকলার ফারাক রয়েছে। সবরি কলার গায়ের রং অনেকটা কাঁচা হলুদের মতো, আবার চাঁপাকলার গায়ের রংটা একটু বেশিই হলুদ।
দেশী সাগরকলা নাকি নেপালী কলা?
বর্তমান সময়ে বাজারে সাগরকলার মধ্যে দেশী সাগরকলা ও নেপালী কলার আধিক্য বেশি দেখা যায়। বাজারে অনেক জায়গায় নেপালী কলা 'নেপালী সাগরকলা' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দেশীয় সাগরকলার সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় নরসিংদী, দিনাজপুরে, নীলফামারি, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও এলাকায়। আবহাওয়াভেদ ও মাটিভেদের কারণে একেক জেলার কলা একেক সময় পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে বর্তমানে দেশী সাগরকলার পাশাপাশি চাষ বেড়েছে নেপালী কলার। এই কলা চাষের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে এর ফলন ভালো হয় এবং রোগের আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম হয়। নেপালী কলার ফলন বেশি হয় মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, টাঙ্গাইল, চুয়াডাঙ্গা এলাকায়।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মেহেদি মাসুদ নেপালী কলা বাংলাদেশে আসার বিষয়ে বলেন, 'নেপালী কলা বাংলাদেশে আসে সিঙ্গাপুরী কলা হিসেবে। ১৯৯০-১৯৯১ সালের দিকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কলার উপর একটি গবেষণা হয়। সেই গবেষণার জন্য সারা পৃথিবী থেকে কলা প্রফেসর আজিজুল হক, যাকে বলা হয় কলা আজিজ, তিনি সংগ্রহ করেন। সংগ্রহ করার সময় নেপালী কলা, সিঙ্গাপুরী কলা, ক্যাভেন্ডিশ কলা—সব গবেষণায় এসে যায়। সেখান থেকে যে কলার ফলন বেশি, তা ধীরে ধীরে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। নেপালী কলা আসলে নেপালী নয়, একে জাহাজী বা সিঙ্গাপুরী কলা বলা হয়।'
নেপালী কলা ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ ফলন বেশি বলে মনে করেন প্রকল্প পরিচালক মেহেদি মাসুদ। এই কলা চাষ করে চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হয় বিধায় এর চাষ বাড়ছে।
সাগরকলা ও নেপালী কলার স্বাদের পার্থক্য কেমন?
স্বাদের বিবেচনায় দেশীয় সাগরকলার স্বাদ ও গন্ধ তুলনামূলক বেশি। দেশীয় সাগরকলার খোসা ছাড়ালে অদ্ভুত সুবাসে চারপাশ ম ম করতে থাকে। স্বাদের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও দেশী সাগরকলা আর নেপালী কলার বাহ্যিক সৌন্দর্য অনেকটা একইরকম। তবে দেশি সাগরকলার দিকে ভালো করে তাকালে দেখা যাবে, এই কলার মাথার অংশ কিছুটা চিকন; অপরদিকে নেপালী কলার মাথা অপেক্ষাকৃত মোটা। এছাড়াও দেশীয় সাগরকলার নিচের অংশ কিছুটা ধারালো থাকে, অপরদিকে নেপালী কলার নিচের অংশ কিছুটা ভোঁতা থাকে।
নেপালী কলা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় খুচরা দোকান অর্থাৎ চা দোকান, মুদি দোকান প্রভৃতি জায়গায়। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান, সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে স্থান লাভ করে দেশীয় সাগরকলাই।
দেশীয় সাগরকলার একেকটি ছড়ায় ৫০ থেকে ৬০টি কলা থাকে। অপরদিকে নেপালী কলার একেক ছড়ায় কলা থাকে ১২০ থেকে ১৩০টির মতো। চাঁপাকলার একেকটি ছড়াতে ৮০টির মতো কলা থাকে।
দেশী সাগরকলার নামে নেপালী কলা বিক্রি!
ঢাকা শহরে কলার আড়ত হিসেবে কারওয়ান বাজার কলার আড়ত, তেজগাঁও কলার আড়ত এসব নাম উঠে আসে। এই আড়তগুলোর ব্যবসায়ীদের মুখ থেকেই উঠে এসেছে সাগরকলা ও নেপালী কলা নিয়ে নানা রকমের অসাধুতার কথা।
সোহেল তানভীর কারওয়ান বাজারের কলা ব্যবসায়ী। তিনি জানান, নেপালী কলা ও সাগরকলা দেখতে অনেকটা একই রকম, ক্রেতারা অনেকেই চেনে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা নেপালী কলাকে সাগরকলা বলে বেচে দেয়। দেশী কলার থেকে দামে কম থাকায় চাহিদাও বেশি থাকে।
আরেকজন কলা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামও একই মত ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, 'মেহেরপুর থেকে নেপালী কলা ছড়িয়ে পড়ে। ১০০-এর মধ্যে মনে করেন যে ৭০ জন চেনে না যে এই কলা সাগর নাকি নেপালী। অনেক বেপারী সাগর ভেবে নেপালী কিনে নিয়ে যায়; পরে সেভাবেই বিক্রি করে।'
তবে সময়কালের পার্থক্য নেপালী কলাকে বিক্রির দিক থেকে বেশি এগিয়ে রাখছে বলে মনে করেন তেজগাঁওয়ের কলা ব্যবসায়ী শঙ্কর সাহা। তার মতে, সাগরকলা চাষের সময়কাল মূলত ভাদ্র ও আশ্বিন মাস। অপরদিকে নেপালী কলার উৎপাদনের সময়কাল সাগরকলার দ্বিগুণ। কার্তিক থেকে পৌষ মাস নেপালী কলা চাষের মূল সময়। যার জন্য দামের ফারাকও স্পষ্ট চোখে পড়ে। এক ছড়া সাগরকলার যেখানে দাম ৬০০ টাকা; নেপালি কলার দাম সেখানে ৩০০-৪০০ টাকার বেশি হয় না।
দেশীয় সাগরকলা ও নেপালী কলা উভয়ের পরিচর্যা ব্যয় প্রায় একই। তবে দেশীয় সাগরকলার ফলন কম হওয়ায় খরচ একটু বেশিই থাকে।
বেড়ে যাচ্ছে মেহের সাগরকলার চাষ
বর্তমান সময়ে দেশী সাগরকলার পাশাপাশি বাড়ছে সুগন্ধী সাগরকলার চাষ। সুগন্ধী সাগরকলা 'মেহেরসাগর' নামেই পরিচিত বলে জানিয়েছেন বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মেহেদি মাসুদ। মূলত মেহেরপুরেই এই কলার চাষ বেশি হয়, তবে আজকাল অন্যান্য স্থানেও হচ্ছে। বর্তমানে মেহের সাগরকলা নিয়ে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে নিয়মিত কাজ হচ্ছে।
বাসসের একটি প্রতিবেদন থেকে মেহেরপুরের ইতিহাস রচয়িতা প্রবীণ সাংবাদিক তোজাম্মেল আহমেদের বরাতে উঠে এসেছে মেহের সাগরকলা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার গল্প। তোজাম্মেল আহমেদের মতে, ১৯৭১ সালের বন্যায় ভারত থেকে ভেসে আসে একটি জাতের কলাগাছ। মেহেরপুরের ভৈরবনদ পাড়ে আটকে যাওয়া সেই কলাগাছ থেকে অনেকগুলো কলাগাছ হয়। এভাবেই গাছটি ছড়িয়ে পড়ে। ইসরাইল হোসেন নামক এক যুবক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রথম বন্যায় ভেসে আসা কলার জাতের চারা ভারত থেকে সংগ্রহ করেন। সেই থেকে মেহেরপুরে চাষ শুরু হয় এবং কলাটির নাম হয়ে যায় মেহেরসাগর। এই কলা পাকলেও সবুজ থাকে এবং কলাগাছের উচ্চতা অন্যান্য গাছের তুলনায় অর্ধেক হয়।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মেহেদি মাসুদ বলেন, 'মেহেরসাগর আর সাধারণ সাগরকলার পার্থক্য হচ্ছে—সুগন্ধী মেহেরসাগর পাকলে বোঁটা থেকে ভাঙে না, আর এর স্বাদও আকর্ষণীয়। এমনি সাগরকলা একটু পাকলেই বোঁটা থেকে ভেঙে যায়। এই অসুবিধার কারণেই সাগরকলা কমে যাচ্ছে।'
তবে কমছে কলার উৎপাদন
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট কলা উৎপাদন হয়েছে ২০ লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ২২ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন।
তেজগাঁওয়ের কলা ব্যবসায়ীর আব্দুল কাইয়ুম জানান, কলার উৎপাদন আগের তুলনায় কমে আসছে কিন্তু চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে কলার রেটও এখন বেশি। আর বর্তমানে নানাবিধ খরচ, অর্থাৎ সারের দাম, পরিবহন খরচ বাড়ায় এর প্রভাব কলার উপরে এসে পড়ছে।
আরেক ব্যবসায়ী তারা মিয়া জানান, কলার বাগানীরা গাছে থাকতেই ঔষধ দেয়। কলা হওয়ার পর থেকে বড় হওয়ার আগপর্যন্ত ঔষধ দিতে হয়। ঔষধ দেয়া হলে কলায় পোকা ধরে না আর গায়ে কালো ছোপ পড়ে না। কিছু পোকা আছে যেগুলো আক্রমণ করলে কলার গায়ে ঘামাচির মতো ছোট ছোট দাগ হয়। মূলত সেগুলোর হাত থেকে বাঁচার জন্যই কাঁচা থাকতেই গাছে ঔষধ দিয়ে দেয় বাগানীরা।
কলার গায়ে কিনা ট্যান!
কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কথা বলতে বলতে উল্লেখ করেন যে সূর্যের আলো যখন কলার উপর অতিরিক্ত পড়ে তখন কলার গায়ে কালো দাগ পড়ে যায়। ব্যাপারটা অনেকটা সানট্যান পড়ার মতো। 'কলার গায়ে ট্যান' শুনতে আশ্চর্যজনক লাগলেও আদতে এর বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কলার গায়ের কালচে দাগ আসে মেলানিন নামক এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ থেকে, যা মানুষের দেহেও আছে। মেলানিন ও কলার গায়ে থাকা ফেনল নামক একটি উপাদান যখন বাতাসের সংস্পর্শে আসে এবং অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে, তখনই কলার গায়ে কালচে দাগ হয়। আর এই দাগকেই অনেকে ট্যান হিসেবে অভিহিত করেন।
অনেকের ধারণা, কলার গায়ে কালচে দাগ থাকা মানেই কলা পচে গেছে। আদতে কিন্তু তা নয়, কলার খোসা যত গাঢ় রঙের হয়, কলা ততই জটিল থেকে সরল শর্করায় রূপান্তরিত হয়। তাই কালচে দাগ হওয়া মানেই কলা নষ্ট হয়ে যাওয়া, এই তথ্য একেবারেই ভুল।
কার্বাইডের মাধ্যমে কলা পাকানো নিষিদ্ধ হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে পাকানোর কাজ করা হয়। কাঁচা কলা নিয়ে এসে তুন্দুলের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পাকানো হয়। প্রথমে কলার ছড়াগুলো তুন্দুলের ভেতর রাখা হয়, এর ঠিক পাশেই রাখা হয় মাটির তৈরি পাতিল বা স্টোভ। ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্টোভের তাপমাত্রার সাহায্যে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পাকানো হয় বলেই কলার স্বাদ বেশি থাকে এবং নষ্টও কম হয় বলে মনে করা হয়।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মেহেদি মাসুদের মতে, বাংলাদেশে সাগরকলার পাশাপাশি মেহেরসাগরকলার উৎপাদন বাড়ছে। সবরী কলা, যেটি আঞ্চলিকভাবে বিভিন্ন জায়গায় চাষ হচ্ছে ও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। পাহাড়ের বাংলা কলার চাষও বেড়েছে আগের তুলনায়। এর অন্যতম কারণ করোনা মহামারি—এই সময়ে মানুষের ফলের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় এর চাহিদাও বেড়ে গেছে অনেক।