স্কুবা ডাইভিং! সেন্টমার্টিনের সাগরতলে
নাসরিন জাহান, থাকেন আমেরিকায়। তার ১৭ আর ১৯ বছর বয়সী দুই ছেলেই চায় স্কুবা শিখতে, সমুদ্র তলদেশে সম্পূর্ণ অচেনা জগতে হারিয়ে যেতে। কিন্তু মায়ের মন বলে কথা। ভিনদেশি প্রশিক্ষকের কাছে শিখতে দিতে ভয়। তাই স্কুবা প্রশিক্ষক ও বন্ধু আসাদুজ্জামান তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে আসবেন শুনে, সেইসময় দুই ছেলেকে নিয়ে নাসরিনও দেশে আসবেন।
কাছাকাছি ঘটনা কুয়েতে থাকা এক বাংলাদেশিরও। স্কুবা করতে চান; কিন্তু একে তো দুনিয়ার খরচ, অন্যদিকে প্রশিক্ষক অন্যদেশি। সবমিলে সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না নাহিদ নামে ওই বাংলাদেশি। তাই তিনি আসাদুজ্জামান তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
বাংলাদেশ নেভির সাবেক সদস্য, আসাদুজ্জামান তালুকদার। স্কুবা ডাইভিংটা শিখেছিলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে (নেভি) থাকাকালেই। এরপর চলে যান কুয়েতে। সেখানকার নেভিতে যোগ দেন। এখন সেখানের ছাত্র-ছাত্রীদেরও শেখান স্কুবা ডাইভিং। বাংলাদেশেও স্কুবাতে আগ্রহীদের কথা বিবেচনা করে প্রশিক্ষণ দিতে কুয়েত থেকে এ বছর দেশে আসবেন আসাদুজ্জামান তালুকদার। এরইমধ্যে কেটে ফেলেছেন টিকিটও। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ৫ দিনের স্কুবা প্রশিক্ষণ দিতে দেশে আসবেন তিনি। `স্কুবা ডাইভিং বিডি' নামে একটি পেজও খুলেছেন তিনি, সঙ্গে রয়েছে আরও দুই বন্ধু।
স্কুবা শেখার জন্য পুরো বিশ্বে মোট তিনটি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান রয়েছে: পাডি, নাওয়ি আর এসএসআই। তবে পাডি'র এ প্রশিক্ষণ সবজায়গাতেই গ্রহণযোগ্য। আসাদুজ্জামান জানালেন, তাদের প্রশিক্ষণ পুরোটাই হবে পাডি'র আওতায়। অর্থাৎ ৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে সনদ মিলবে পাডি থেকে।
বাংলাদেশে আগেও ছিল স্কুবা, এবার মিলবে প্রশিক্ষণের সুযোগ!
বর্তমানে দেশে তরুণ প্রজন্মের কাছে স্কুবা ডাইভিং যে কতটুকু জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তার প্রমাণ মিলবে ইউটিউবে স্কুবা ডাইভিং বাংলাদেশ লিখে সার্চ করলেই। রাফসান সাবাবের মতো জনপ্রিয় ইউটিউবারও তার সমুদ্র তলদেশের রোমাঞ্চকর অনুভূতির কথা জানিয়েছেন এক ভিডিওতে। ২০২১ সালের মার্চে তিনি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্বাদ নেন। স্কুবা শেষে রাফসান রাতুল নামে আরও এক ইউটিউব ব্লগার এক ভিডিওতে জানাচ্ছিলেন সমুদ্রের নিচে তার দারুণ এক অভিজ্ঞতার কথা। ঘণ্টাখানেকের জন্য মাত্র সাড়ে ৩ হাজার টাকায় জীবনের সবচেয়ে সেরা অভিজ্ঞতার অর্জন হয়েছে বলেও জানান রাতুল।
বাংলাদেশে স্কুবা ডাইভিংয়ের কথা বলতে গেলে ফিরে যেতে হবে ২০০০ সালের শুরুর দিকে। সেইসময় থেকে এতোবছর ধরে বাংলাদেশে স্কুবা ডাইভিং পরিচালনা করে আসছিলেন এস এম আতিকুর রহমান। ওশেনিক স্কুবা ডাইভিং সেন্টার নামে স্কুবা পরিচালনা করে এরকম একটি গ্রুপ রয়েছে তার। এছাড়া ঢাকা ডাইভিং ক্লাব নামে আরও একটি গ্রুপ রয়েছে যারা স্কুবা পরিচালনা করতেন।
সাধারণত ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এই তিনমাস সেন্টমার্টিন স্কুবা ডাইভিংয়ের জন্য উপযুক্ত। অন্যান্যবার নভেম্বর থেকেই এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি শুরু করে দেন তারা। যদিও এ বছর নাব্যতা সংকট ও বালুচর জেগে ওঠার কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার পর্যটক জাহাজ বন্ধ রয়েছে। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই জাহাজ চলাচল আবারও শুরু হবে বলে আশা ঢাকা ডাইভিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মুজিবর রহমানের।
বাংলাদেশে যে ধরনের স্কুবা এতোদিন যাবৎ হয়ে আসছিল তা মূলত ডিসকভারি পর্যায়ের। ডিসকভারি পর্যায়টা একদম নেশার মতো। একবার করলে আবার সমুদ্রের অতল জলরাশি হারিয়ে যাওয়ার জন্য মন ছটফট করাটা নাকি খুব স্বাভাবিক, এমনটাই দাবি আসাদুজ্জামান তালুকদারের।
স্কুবা ডাইভিংয়ে প্রশিক্ষণের যতো খুঁটিনাটি
স্কুবার এ প্রশিক্ষকের কাছ থেকে জানা গেল, স্কুবা ডাইভিংয়ে সাধারণত ৫ ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরমধ্যে প্রথম ধাপ হচ্ছে ডিসকভারি বা ডিএসডি পর্যায়, সেন্টমার্টিনে যা হয়। এই ধাপের জন্য কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। এমনকি সাঁতার না জানলেও কোনো সমস্যা নেই। কেননা সাঁতার না জানলেও প্রাথমিকভাবে ভেসে থাকার কিছু টেকনিক শিখিয়ে নেওয়া হয়। তবে এ পর্যায়ের ডাইভিং নাকি এতটাই লোভনীয় যে, যারাই করেছেন, পরের ধাপগুলোর প্রশিক্ষণ না করলে নাকি জীবনটাই মনে হবে বৃথা!
এরপরের ধাপ, 'ওপেন ওয়াটার ডাইভার' থেকে মূলত স্কুবার মূল আকর্ষণ শুরু। আর এবার ফেব্রুয়ারিতে দেশে এসে এ ধাপের প্রশিক্ষণ দেবেন আসাদ ও তার বন্ধুরা।
এই ধাপে মোট ৫ দিনের ভেতর প্রথম ২দিন সুইমিং পুল বা অল্প পানিতে সাঁতার কাটতে হবে। তার পরের দুইদিন সমুদ্রে সাঁতার কাটতে হবে। তবে শেষদিন সমুদ্রে নিজের মতো ঘুরে বেড়ানোর মিলবে সুযোগ।
স্কুবা ডাইভিং বিডির প্রশিক্ষণে এই ধাপে অংশ নিতে খরচ পড়বে বাংলাদেশি টাকায় ৪৫ হাজারের মতো। এক্ষেত্রে বিশ্বের যেখানেই প্রশিক্ষণ নেওয়া হোক না কেন, পাডি'র নিয়মানুযায়ী সবজায়গাতেই খরচ এক।
আসাদ বলেন, "ওপেন ওয়াটার ডাইভিংয়ে উতরে গেলে যে লাইসেন্স পাবেন, তার মধ্য দিয়ে আপনি পেয়ে যাবেন পৃথিবীর যেকোনো সাগর-মহাসাগরে ১৮ মিটার বা ৬০ ফুট পর্যন্ত নিচে নামার সুযোগ।"
তবে ভয়ের কারণ নেই, এসময় একজন বিশেষজ্ঞ অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে থাকবে আপনার।
পরবর্তী ধাপ বা অ্যাডভান্স লেভেলে প্রশিক্ষণের জন্য কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সী হতে হবে। এই ধাপে প্রশিক্ষণ শেষে ১৪০ ফুট পর্যন্ত নিচে নামতে পারবেন। তবে এরজন্য দুইশ' মিটার সাঁতার আর দশ মিনিট ভেসে থাকা পানিতে ভেসে থাকার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রেও আলাদা করে খরচ হবে ৪৫ হাজার টাকার মতো।
আসাদুজ্জামানের মতে, অ্যাডভান্স লেভেলে যাওয়ার আগে লিখিত বেশ বড় একটি ই-লার্নিং কোর্সে অংশ নিতে হবে। প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে পুরো স্টেজটি পার হতে সময় লাগতে পারে ৩ সপ্তাহ থেকে শুরু করে ৪ মাস পর্যন্ত। সাধারণত এ সময়ের ভেতরই সম্পন্ন হয়ে যায় ই-লার্নিং প্রক্রিয়াটি।
তবে কেউ যদি অন্যকোনো দেশ থেকে আগেই ওপেন ওয়াটার কোর্স করে আসে, সেক্ষেত্রে অ্যাডভান্স লেভেলের প্রশিক্ষণও দেবে স্কুবা ডাইভিং বিডি।
এবারের ই-লানিংয়ের জন্য পানির নিচের প্রকৃতি, রেক ডাইভিং, ডিজিটাল আন্ডারওয়াটার ইমেজিংয়ের মতো মোট ১৩টি বিষয় থাকবে। সেখান থেকে যেকোনো তিনটি বিষয়ে বেছে নিতে হবে।
তবে বাংলাদেশে যেহেতু সবে ডাইভিংয়ের কাজ শুরু হচ্ছে, সেজন্য প্রথমে ডিসকভারি ডাইভিং, এরপর ওপেন ওয়াটার ডাইভিং পর্যন্তই হবে স্কুবা ডাইভিং কার্যক্রম। এমনটি জানাচ্ছিলেন আসাদের আরেক প্রশিক্ষক বন্ধু এডবার জামান।
স্কুবার যন্ত্রগুলোই ভাসিয়ে রাখে অনায়াসে!
স্কুবার জন্য আলাদা করে যে খুব ভালো সাঁতারু হতে হবে তা নয়। স্কুবা (SCUBA) মূলত সমুদ্রের তলদেশের সাঁতারের এমন এক যান্ত্রিক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে মানুষ সহজেই মাছের মতো করে ভাসতে ও সাঁতার কাটতে পারে। অক্সিজেন বহনকারী সিলিন্ডার থাকায় পানির নিচেও ডাঙ্গার মতো স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়।
হাই প্রেসার এয়ার কম্প্রেসার, স্কুবা সিলিন্ডার ব্রিদিং রেগুলেটর প্রেসার মিটার, বয়েন্সি কন্ট্রোল ডিভাইস, মাস্ক, ফিন্স ওয়েটবেল্ট, নাইফ, ওয়েটসুট, ডাইভ কম্পিউটর, টর্চলাইটের মতো যন্ত্রপাতি স্কুবা ডাইভিংয়ের জন্য প্রয়োজন। এসব যন্ত্রপাতিগুলো লাগানোর পর এমনিতেই ভেসে থাকতে পারবে যেকেউ, আবার চাইলে হারিয়ে যেতে পারবেন মাছের স্বর্গরাজ্যেও!
কেননা, অক্সিজেন বহন করা ট্যাঙ্কে অক্সিজেনের মাত্রা এখন দেখা যায় সহজেই। এছাড়া স্কুবার ক্ষেত্রে দলছুট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, তাই একজন বিপদে পড়লে বাকিরা এগিয়ে আসে। তবে হঠাৎ বিপদে পড়ে গেলে সেসময় সাঁতার নিঃসন্দেহে ভালো কাজ করবে।
সামুদ্রিক স্রোত বেশি হলে সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। যদি ঘণ্টায় ২৫ নটের বেশি বাতাসের গতি থাকে, সেক্ষেত্রে সাধারণত স্কুবা ডাইভিং করা হয় না।
পৃথিবীর সবদেশেই স্কুবা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, আর প্রতি সেট ইকুইপমেন্টে খরচ পড়ে ১,০০০ থেকে ১,৫০০ মার্কিন ডলার। তবে এডবারের কাছ থেকে জানলাম একটি চমকপ্রদ তথ্য। স্কুবা সংক্রান্ত সমস্ত ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করবেন তারা নিজেরাই। এজন্য এরইমধ্যে পাডি ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও জানালেন তিনি।
তার মতে, একজন ইন্স্ট্রাক্টর সাধারণত ৪ থেকে ৮ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী নিতে পারে। এজন্য আপাতত ৬টা থেকে ৮ টা ইকুইপমেন্ট কিনবেন তারা। এক্ষেত্রে ইকুইপমেন্ট কিনতে সহায়তা করবে পাডি ভারত। পরবর্তীতে ডাইভিং সনদ পেয়ে গেলে আস্তে ধীরে ডাইভিং স্টোর খোলার বা ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এমনকি দেশে এ ধরনের ব্যবসা গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে বলেও জানালেন তিনি।
বঙ্গোপসাগরে যেভাবে পরিবেশ রক্ষার কাজ করবে স্কুবা ডাইভাররা
সমুদ্রের বাস্তুসংস্থানের মূলে রয়েছে প্রবাল। প্রবাল মারা গেলে ওই এলাকার সব মাছই মারা যাবে। পানির নিচের পরিবেশ, পরিস্থিতি খুব সহজেই বুঝতে পারে ডাইভাররা, এমনটি জানাচ্ছিলেন এডবার জামান। ১৯৯৮ সাল থেকে স্কুবা ডাইভিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা এডবার জানালেন, প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম প্রবাল সমুদ্র তলদেশে প্রাকৃতিক দেয়ালের মতো তৈরি করে। যা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো থেকে রক্ষা করতে পারবে। যারা এ এলাকার প্রবাল বাঁচাতে আগ্রহৈ, তাদের এখন থেকেই ডাইভিং শুরু করা উচিত। এর ফল পাওয়া যাবে এখন থেকে আরও ১০ বা ২০ বছর পর। উপকূলীয় এলাকা নিরাপদে রাখার জন্য সমুদ্রের পরিবেশ নিয়ে যারা পড়াশোনা করেন, তাদেরও দলের সঙ্গে যুক্ত করতে চান বলে জানান এই টেকনিক্যাল ডাইভার।
সাধারণত সমুদ্রের তলদেশে ১৭০ থেকে ৩৫০ ফুট পর্যন্ত নিচে নামতে পারেন টেকনিক্যাল ডাইভাররা। মিসরের শারম আল শেখে ৩৩০ ফুট পর্যন্ত পানির নিচে ঘুরে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন এডবার। ব্যক্তিগতভাবে ডাইভিংয়ের সময় ট্রাইমিক্স গ্যাস ইউজ করেন তিনি। হিলিয়াম, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন তিন গ্যাসের সমন্বয়ে তৈরি এ ট্রাইমিক্স গ্যাস এখনও পর্যন্ত কেউ ব্যবহার করে না বাংলাদেশে। তবে ভবিষ্যতে ডাইভিং কমিউনিটি তৈরি হয়ে গেলে ট্রাইমিক্স ডাইভিং আনার বিষয়ে জানালেন এডবার। এতে বঙ্গোপসাগরের সাড়ে ৩শ' থেকে সাড়ে ৪শ' ফুট পর্যন্ত নিচে নামা এবং বেশ স্পষ্টভাবে দেখা সম্ভব।
কথার ফাঁকে জানলাম, ডাইভিংয়ের জন্য এডবারের প্রিয় জায়গা মিসরের শারম আল শেখ। সেখানকার মেরিন এনভায়রনমেন্টের দারুণ ভক্ত এডবার। জানালেন, শারম আল শেখে সামুদ্রিক পরিবেশ এতোটাই সুন্দরভাবে রক্ষা করা হয় যে ৩০-৩৫ তলা ভবন থেকে নিচের দিকে তাকালে যেমন দেখা যায়, সমপরিমাণ উচ্চতা হলেও নাকি একদম স্বচ্ছ দেখা যায় পানির নিচের পরিবেশ! কত জাতের মাছ আর প্রাণী যে রয়েছে, তা হিসেব করা বলাটাই অসম্ভব। বালি, কিউবা, যুক্তরাষ্ট্রেও প্রচুর স্কুবার অভিজ্ঞতা রয়েছে বলেও জানালেন তিনি।
তবে তার আক্ষেপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে। প্রবাল পাথর নয়, জীবিত প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ প্রায়ই প্রবালে হাত দেয়, ভেঙে ফেলে। এ বিষয়টি অনেক ভাবায় এডবারকে। তাই বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করলে এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করার কথা জানালেন তিনি।
পেশা হিসেবেও দারুণ সম্ভাবনাময় স্কুবা
পুরো বিশ্বের অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য স্কুবা নিঃসন্দেহে দারুণ এক অভিজ্ঞতা। পেশা হিসেবেও স্কুবা বেশ সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশে যে এটি সম্ভাবনাময় পেশা হয়ে উঠতে পারে, তা নিয়ে তেমন কোনো সংশয় নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশে সেন্টমার্টিনের মতো প্রবালদ্বীপ থাকায় এটি স্কুবার জন্য হয়ে উঠতে পারে খুবই আকর্ষণীয় জায়গা।
বাংলাদেশে জাহাজডুবির ঘটনা যেহেতু প্রায়ই ঘটে, সেজন্য এ ধরনের রেক ডাইভিংয়ের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন এডবার জামান। সুন্দরবন বা কাপ্তাইয়ের মতো এলাকায় ভবিষতে রেক ডাইভিং বা এ ধরনের বিভিন্ন কোর্স নিয়ে শেখানোর বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
মূলত অ্যাডভান্স লেভেলের সার্টিফিকেট পাওয়ার পর ইন্স্ট্রাক্টর হিসেবে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পেরোতে হবে অ্যাসিসটেন্ট ইন্সট্রাক্টরের ধাপ। এই ধাপ পার হলে মিলবে ওপেন ওয়াটার স্কুবা ইনস্টাক্টর ও মাস্টার স্কুবা ডাইভার ট্রেইনার হওয়ার সুযোগ।
এ প্রসঙ্গে আরেক স্কুবা ডাইভার এস এম আতিকুর রহমান জানালেন অভিনব আরেক তথ্য। তিনি জানালেন, শুধু সমুদ্র নয় নদী বা লেকেও সম্ভব স্কুবা ডাইভিং। সিলেটের জাফলংয়ের পিয়াইন নদী, কাপ্তাই লেক, সুন্দরবনেও সম্ভব স্কুবা ডাইভিং করা যেতে পারে।
তার মতে, সাগর গবেষণা, আন্ডার ওয়াটার মেরিন লাইফ রিসার্চ, কোরাল রিসট্রোরেশন, কোরাল শৈবাল সার্ভে, নদী শাসনের মতো প্রকল্পগুলোতে কাজ সহজেই পাওয়া সম্ভব। তাই স্কুবাকে পেশা হিসেবে নিতে হলে অবশ্যই সমুদ্রতলে ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, রেসকিউ ডাইভ, মেরিন লাইফের আচরণ, বোট অপারেশনের মতো বেশ কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
এ প্রক্রিয়া কিন্তু খুব মসৃণও নয়। আসাদুজ্জামান তালুকদারের কথাই ধরা যাক। প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে স্কুবা করছেন তিনি। তবে ইন্স্ট্রাক্টর সার্টিফিকেট পেয়েছেন এ বছর জুলাইয়ে। এর আগে তিনি ছিলেন অ্যাসিস্টেন্ট ইনস্ট্রাক্টর। ক্যারিয়ারে কতবার স্কুবা করেছেন, হিসেব করেও বলতে পারলেন না আসাদ। সেন্টমার্টিনে দ্বীপে প্রথমবার সেই যে স্কুবার প্রেমে পড়েন, এরপর থেকে নিজেকেই এর বাইরে চিন্তাও করতে পারেন না। তাই তো শেষ পর্যন্ত নিজের ঠিকানা বেছে নিয়েছেন স্কুবা ট্রেইনার হিসেবেই। আর দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই স্কুবার ট্রেনিং দিতে ছুটে আসছেন বাংলাদেশে।