মেডিটেশন কেন সবার ক্ষেত্রে কাজ করে না?
অস্থিরতা বা শূন্যতা দূর করে মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে মেডিটেশনের বিকল্প নেই। কিন্তু এটা কি সবার ক্ষেত্রেই খাটে?
মেডিটেশন বলতে আমরা সাধারণত ধ্যানমগ্ন হওয়াকেই বুঝি। তবে যেকোনো কাজ যা মানসিক প্রশান্তি আনে, মননশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে সেটাই মেডিটেশন হতে পারে। প্রচলিত মেডিটেশনের বিষয়টাই আগে ধরা যাক। শরীর ও মন শিথিল করে শান্ত ধীরস্থিরভাবে বসে থেকে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি মনোযোগ দেওয়াটাই মেডিটেশনের সবচেয়ে প্রচলিত ধারণা। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে কেন তা কাজ করে না? কারাই বা মেডিটেশন করতে গিয়ে ব্যর্থ হন?
মেডিটেশন করতে গিয়ে যাদের সমস্যা হতে পারে
সাধারণত যারা দীর্ঘমেয়াদী ক্রনিক কোনো সমস্যায় ভুগেন, তাদের জন্য মেডিটেশন সবসময় কার্যকর নয়।
১। তীব্র উদ্বেগ: উদ্বেগ আপনার মানসিক শান্তি তছনছ করে দিতে পারে। না চাওয়া সত্ত্বেও গভীর কোনো ভাবনা, দুশ্চিন্তা এসে মানসিকভাবে আপনাকে গ্রাস করতে পারে। এই ধরনের সমস্যা থাকলে মেডিটেশনে মন কেন্দ্রীভূত না হয়ে বরং অস্বস্তি বাড়ে।
২। বিষণ্ণতা: যারা বিষণ্ণতায় ভুগে, তারা সাধারণত নিজেদের আলাদা করে রাখে, অনেক বেশি সময় একা কাটায়। মেডিটেশনে তাদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
৩। ট্রমা: ট্রমার কারণে প্যানিক অ্যাটাক থেকে শুরু হয়ে নিজেকে আলাদা রাখার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। ট্রমায় মন বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। সে সময় মন শান্ত করার চেষ্টা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
৪। সাইকোটিক এপিসোডস: সাইকোসিসের ক্ষেত্রে মানুষ নিজের সত্ত্বা নিয়ে ভঙ্গুরতা ও অস্থিরতা বোধ করে। মেডিটেশনে এই অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
প্রচলিত চিন্তাধারায় মেডিটেশন চিন্তাভাবনাগুলোকে কেন্দ্রীভূত করে। কিন্তু মনের কেন্দ্রেই যদি অস্থিরতা বিরাজ করে, সেক্ষেত্রে শুরু হতে পারে দ্বন্দ্ব। যা মানসিক অবস্থাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে।
ধ্যান ছাড়াও মেডিটেশনের অন্যান্য ধরন
আপনি যদি মেডিটেশন করতে অসমর্থ হন, তাহলে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে অন্য কিছুর চেষ্টা করে দেখুন। এমন কিছু করুন যা আপনার মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। সেটাও একধরনের মেডিটেশনই হবে।
এখানে একজনের গল্প বলা যেতে পারে। এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে মানুষটি ট্রমাটাইজড ছিলেন। উদ্বেগ ও পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে ভুগছিলেন তিনি। অনেক চেষ্টা করেও মেডিটেশনের মাধ্যমে নিজের মনকে শান্ত করতে পারছিলেন না। উলটো একেকবার ব্যর্থ হয়ে তার অস্থিরতা আরও বাড়ছিল।
একদিন গ্যারেজে এক টুকরো পাইন গাছের কাঠ পড়ে থাকতে দেখে পকেট নাইফ বের করে কাটতে শুরু করলেন। যত বেশি কাঠটিকে কাঠামো দিচ্ছিলেন, আরও বেশি মনোযোগী হয়ে উঠতে শুরু করলেন। এভাবে একসময় মনও স্থির হয়ে উঠল।
কাঠ খোদাই করাই একসময় তার মেডিটেশনে রূপ নিল। শুরুতে চামচ, কাটাচামচ এরকম ছোট ছোট কাঠের জিনিস বানিয়ে বন্ধুবান্ধবদের উপহার দিচ্ছিলেন। একসময় সেটাকে আরও গভীরভাবে আয়ত্ত করতে যোগ দিলেন আর্ট ক্লাসে।
নিজের এই সুপ্ত মেধাই তাকে মানসিক প্রশান্তি এনে দিলো। নিজের দুঃখের চেয়েও তখন অন্যকিছুতে মনোযোগ দিতে পারছিলেন। যে জিনিসগুলো তিনি বানাচ্ছিলেন সেগুলোই ছিল তার মানসিক শান্তির প্রতীক।
আপনার মেডিটেশনের নিজস্ব ধরন খুঁজুন
যে কাজগুলো আপনি খুব মনোযোগের সঙ্গে করতে পারেন বা যেগুলো করলে মানসিকভাবে শক্তি পান, সেই কাজগুলো আগে খুঁজে বের করুন। এসব কাজ যদি আপনার মনকে শান্ত করে তাহলে আপনি ঠিক পথেই আছেন।
এরকম কিছু অপ্রচলিত মেডিটেশনের মধ্যে আছে হাঁটা, হাইকিং, মাছ ধরা, সাঁতার কাটা, সার্ফিং, পেইন্টিং, বাইকিং, বই পড়া বা বাগান করা।
তবে এটা যে হুট করে খুঁজে পাবেন, তা না। এরজন্য হয়তো সময় লাগবে। সেই খুঁজে পাওয়ার যাত্রাটুকোও উপভোগ করুন নিত্যনতুন জিনিস চেষ্টা করে। মনে রাখুন মেডিটেশন কেবল আপনাকে শান্তই করবে না, আপনার জীবনের সবক্ষেত্রেই উন্নতি ঘটানোর ক্ষমতা মেডিটেশনের আছে।
- সূত্র: সাইকোলজি টুডে