নোবেলজয়ী পাবলো নেরুদাকে কি বিষ দেওয়া হয়েছিল? এখনও ধোঁয়াশায় বিজ্ঞানীরা...
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বিখ্যাত কবি, চিলি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পাবলো নেরুদার মৃত্যুর সময় হয়তো তার শরীরে বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ছিল।
১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মারা যান নেরুদা। এরপর তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে প্রায় পাঁচ দশক ধরে দীর্ঘ তদন্ত করা হয়। পাঁচ দশক পর অবশেষে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। যদিও মৃত্যুর সময় নেরুদা প্রোস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন। তবে তিনি যে সময়ে মারা যান, তা নিয়ে বিতর্ক ওঠে।
১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রক্তক্ষয়ী সেনা অভ্যুত্থানে চিলির শাসনক্ষমতা দখল করেন অগাস্তো পিনোশে। ক্ষমতা হারিয়ে সেদিনই গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন সালভাদর আয়েন্দে, যিনি ছিলেন নেরুদার প্রিয় বন্ধু।
আয়েন্দের মৃত্যুর ১২ দিন পরই মারা যান নেরুদা। এ কারণে অনেকে দাবি করছিলেন, নেরুদার মৃত্যু কাকতালীয় নয়। অভিযোগ ওঠে, বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে তাকে। যদিও হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে নেরুদার।
নেরুদার মৃত্যুবিষয়ক বিরোধ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। অবশেষে ২০১৩ সালে নেরুদার দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয় আদালতের আদেশে। তারপর সেটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রে।
অবশেষে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয়। ওই সময় নেরুদার আত্মীয় ও আইনজীবী রদোলফো রেইস বলেন, তাদের কাছে প্রমাণ আছে যে নেরুদাকে বিষ দেওয়া হয়েছিল। নেরুদার দাঁতে ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনামের অবশেষ পাওয়া গেছে। এ ব্যাকটেরিয়া বিষাক্ত বটুলিনাম বিষ উৎপন্ন করতে পারে। আর নেরুদার দাঁতে এ বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হতে পারে।
রেইস 'নেচার'কে বলেন, এই পদ্ধতিতে বিষ দেওয়া হলে তাকে স্বাভাবিক মৃত্যু মনে হতে পারে।
তবে তদন্তে সহায়তাকারী কয়েকজন গবেষক বলেছেন, এসব তথ্য-প্রমাণ থেকে কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না।
কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির মোলেকুলার জেনেটিস্ট হেনড্রিক পয়নার বলেন, নেরুদাকে বিষ দেওয়া হয়েছিল তা বিজ্ঞানে প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
নেরুদার মৃত্যুর কয়েক দশক পর, ২০১১ সালে, তার সাবেক গাড়িচালক মানুয়েল আরায়া এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ তোলেন, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে নেরুদাকে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল। অথচ ওই ইনজেকশন দেওয়া কথা ছিল না।
এর কদিন পরই চিলির কমিউনিস্ট পার্টি অভিযোগ করে, পিনোশের সরকার নেরুদাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছে।
এর জেরে আদালত নেরুদার দেহাবশেষ পরীক্ষার আদেশ দেন। ২০১৩ সালে তদন্তকারীরা বলেন, তারা বিষ প্রয়োগের কোনো প্রমাণ পাননি।
এর দুই বছর পর আদালত ফের নেরুদার দেহাবশেষ পরীক্ষার জন্য আরেকটি প্যানেল গঠন করে দেন। ওই দলটিই নেরুদার দাঁতে ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম-এর অংশ পায়।
ওই বিষাক্ত অবশেষ আগে থেকেই নেরুদার দেহে ছিল, নাকি পরে মাটি থেকে তার মৃতদেহে ঢুকেছে, তা জানতে পরীক্ষা চালানো হয়।
'নেচার'কে ওই গবেষকদের একজন জানান, দাঁত ও হাড়ের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে নেরুদার দেহাবশেষে পাওয়া সি. বটুলিনাম তার মৃত্যুর সময় থেকেই শরীরে ছিল।
তবে এরপরও বিজ্ঞানীরা জোরালো উপসংহারে আসতে রাজি নন। ইউনিভার্সিটি অভ কোপেনহেগেনের ফরেনসিক জেনেটিস্ট মেরি-লুই ক্যাম্পম্যান বলেন, শুধু ইনজেকশন নয়, খাদ্যে বিষক্রিয়ার (ফুড পয়জনিং) কারণেও শরীরে ওই বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে। কারণ ক্যান করা খাদ্যে সি. বটুলিনাম জন্মাতে পারে।
কাজেই পাবলো নেরুদার মৃত্যু বিষপ্রয়োগের হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি গবেষকদের পক্ষে।