যে ৩টি সতর্ক সংকেত আপনাকে নতুন চাকরি খোঁজার কথা ভাবাতে পারে
২০০৯ সালে অ্যান্থনি রবিনস কোম্পানিজের কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতেন এমি পোর্টারফিল্ড । নিয়মিতভাবেই বেতন পেতেন তিনি, ছিল বেতনসহ ছুটির সুবিধা, এমনকি প্রমোশনের সুযোগও ছিল তার সামনে। কিন্তু এক পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারলেন, তিনি আরও বেশি কিছু চান। চাকরিটির সুবাদে তিনি অনলাইন ব্যবসা গড়ে তোলা এমন অনেকের সাথেই পরিচিত হয়েছিলেন। আর তিনিও সেরকমই কিছু চাইছিলেন, যার জন্য তাকে দৈনিক কাজ করতে হবে না।
পোর্টারফিল্ড শেষমেশ তার ফুল-টাইম চাকরি ছেড়ে দিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ব্যবসা করতে নেমে পড়েন, যার মধ্যে রয়েছে অনলাইন কোর্স তৈরি ও বিক্রি। ২০১৯ সালে ডিজিটাল কোর্স অ্যাকাডেমি নামে এক নতুন উদ্যোগ নেন তিনি, যেখানে শেখানো হবে কীভাবে অনলাইন কোর্সের ব্যবসা শুরু করা যায়। আর সেটাই হয়ে ওঠে পোর্টারফিল্ডের জ্যাকপট।
"আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ ছিল এটি। দুই-তিন বছরের মধ্যে ৫০ হাজার ছাত্রকে আমি সাহায্য করেছি।" আর তার এই ব্যবসা টেনে এনেছে আরও কয়েক মিলিয়ন ছাত্রকে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পোর্টারফিল্ড "টু উইকস নোটিশ: ফাইন্ড দ্য কারেজ টু কুইট ইয়োর জব, মেক মোর মানি, ওয়ার্ক হোয়্যার ইউ ওয়ান্ট অ্যান্ড চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড" নামের একটি বই প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যেই বইটি হয়ে উঠেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার।
যদি আপনি আপনার নয়টা থেকে পাঁচটা কর্মঘণ্টার অফিসকে বিদায় জানাবেন কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, তবে পোর্টারফিল্ডের পরামর্শ তিনটি বিষয় খেয়াল করা। আর সেগুলো হলো:
১। আপনাকে 'কম বেতন' দেওয়া হচ্ছে
যদি আপনি জানেন যে, আপনাকে কম বেতন দেওয়া হচ্ছে, তবে আপনার চাকরি ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
পোর্টারফিল্ড তার এক সাবেক ফার্মাসিস্ট ছাত্রীর কথা উল্লেখ করেন, যিনি কোম্পানিতে ঢোকা নতুন একদল কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। "যখন তিনি জানতে পারলেন, এই নতুনদের একজনের বেতন তার চেয়ে বেশি এবং তিনি বহু বছর ধরেই সেই কোম্পানিতে চাকরি করছেন, তখন তিনি চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।"
পোর্টারফিল্ডের জীবনেও এরকম এক মুহূর্ত এসেছিল। তিনি দেখতে পান তার চেয়েও কম দায়িত্ব পাওয়া একজন ব্যক্তি তার চেয়ে বেশি আয় করছেন। তখন তিনি নতুন চাকরি খুঁজতে শুরু করেন এবং তার তিন মাস পরেই চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পোর্টারফিল্ডের মতে, "চাকরি ছেড়ে দেওয়ার অন্যতম বড় বিষয় কম বেতন পাওয়া। আপনি অবশ্যই বেতন বাড়ানোর কথা বলতে পারতেন, কিন্তু সেটি যদি না করা হয়, তবে আপনার হাতে দ্বিতীয় পরিকল্পনা থাকা উচিৎ।"
২। আপনার কাজকে 'গুরুত্ব' দেওয়া হচ্ছে না
একইভাবে আপনার কাজকেও যদি গুরুত্ব না দেওয়া হয় কিংবা অফিসে আপনি নিজেকে অদৃশ্য মনে করতে শুরু করেন এবং এ থেকে যদি উত্তরণের কোনো পথই না খোলা থাকে, তা হলে চাকরি ছাড়ার কথা ভাবুন।
"মাঝেমধ্যে নয়টা থেকে পাঁচটার চাকরিতে ব্যক্তিরা নিজেকে অদৃশ্য মনে করতে শুরু করেন। তাদের কাছে আইডিয়া আছে, তারা সেগুলো বলেও, কিন্তু কেউ সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে না।" এর অর্থ হলো আপনি এখন যে অবস্থায় আছেন, সেখান থেকে আপনার উন্নতি হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।
"যদি আপনি নিজেকে অদৃশ্য মনে করেন কিংবা আপনার চাকরিত্তে গুরুত্ব কম পাচ্ছেন বলে মনে করেন, তবে এমন কিছু খুঁজুন, যেখানে আপনার মতামতকে, আপনার আইডিয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।" একইসাথে নিজের ব্যবসা খোলার পরামর্শও দেন পোর্টারফিল্ড, যেখানে "আপনার সিদ্ধান্তই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।"
৩। আপনি আপনার 'বসের চাকরি' চান না
প্রায়ই এমন হতে পারে, যেখানে আপনি যে ধরনের কাজ করতে চান, ঠিক সে ধরনের সুযোগ আপনার কোম্পানিতে নেই।
পোর্টারফিল্ডের মতে, "চাকরির আরেকটি বড় সতর্ক সংকেত, যেটি প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়, হলো এমন কাজ যা আপনি করতে চান না। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে প্রায়ই দেখা যায়, বস যে কাজ করছেন, তা কর্মীরা করতে চান না।" সব ধরনের পদোন্নতিই একরকম নয়। আপনি পদোন্নতি পাওয়ার পর যে কাজের দায়িত্ব পাবেন, সেটি করার সামর্থ্য বা ইচ্ছা আপনার আছে কিনা তা বিবেচনা করাও জরুরি।
আপনার যদি মনে হয়, "আমি এ ধরনের কাজ করতে চাই না, আমি আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই, আরও সৃজনশীল হতে চাই, আরও টাকা কামাতে চাই, আরও নতুন জিনিস শিখতে চাই কিংবা আরও নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই, তাহলে আপনি চাকরিটি ছেড়ে আপনার পছন্দানুযায়ী কাজের কথা বিবেচনা করতে পারেন।"
যদি এই তিনটি সতর্ক সংকেত আপনার ক্ষেত্রে খাটে, তবে তিন মাস, ছয় মাস, নয় মাস কিংবা এক বছর পর্যন্ত সময় নিন। ভাবুন পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে। এবং 'চাকরি থেকে বেরিয়ে নতুনভাবে নিজের উন্নয়ন ঘটান'।
সূত্র: সিএনবিসি