এক পরিবারের হাত ধরে বগুড়া যেভাবে দেশের কৃষিপ্রযুক্তির রাজধানীতে পরিণত হলো
১৯ শতকের শেষের দিকে, অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে, পূর্ব বাংলায় ব্যবহৃত বেশিরভাগ কৃষি ও গৃহস্থালি সরঞ্জাম, বিশেষ করে ধাতব সরঞ্জামাদি তৈরি হতো কলকাতায়।
ওই সময় বগুড়ার তমিজউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি কলকাতা ঘুরে ঘুরে ধাতু শিল্পের কার্যক্রম দেখতেন। এক পর্যায়ে সেখান থেকে ধাতু সংগ্রহ করে নিজ শহরে একটি কামারশালা খোলেন তিনি।
প্রথমদিকে তমিজউদ্দিন ঘোড়ার নাল ও গাড়িটানা পশুদের জন্য নাল তৈরি করতেন। ওই পণ্যগুলো দেশব্যাপী বিক্রি হতো। এভাবে সর্বত্র তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। সময়টা ১৮৮০ সাল।
গত বছর আমি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটা সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প কিনতে কিশোরগঞ্জের এক কৃষি সরঞ্জামের বাজারে গিয়েছিলাম। দোকানদার আমাকে একটা পাম্প দেখালেন। পাম্পটা শক্তপোক্ত গড়নের, তবে ফিনিশিং বিশ্বমানের না। দেখতে অনেকটাই দেশি দেশি লাগছিল।
কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম পাম্পটা কোথায় তৈরি। বিক্রেতা জানালেন, বগুড়ায়। আমাকে অবাক করে দিয়ে বিক্রেতা বললেন, বগুড়ায় আরও অনেক কৃষি সরঞ্জাম তৈরি হয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল শিল্প মালিক সমিতির তথ্যমতে, আসলে দেশের কৃষি যন্ত্রপাতির প্রায় ৮০ শতাংশই তৈরি হয় বগুড়ায়, যার বিক্রি বছরে হাজার কোটি টাকা। এ শিল্প আমদানি বিকল্প হিসেবে কাজ করে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার সমান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে।
বগুড়ায় উৎপন্ন যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ধান ও ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র, আলু গ্রেডিং মেশিন, সেচ পাম্প, ধান কাটার যন্ত্র, টিলিং মেশিন (কর্ষণ যন্ত্র), ড্রাম সিডার ইত্যাদি। এছাড়া ডিজেল ইঞ্জিন ও পাওয়ার টিলারের ৩০ শতাংশ যন্ত্রাংশ এবং ইঞ্জিনের ৯৫ শতাংশ লাইনার ও পিস্টন বগুড়ায় তৈরি হয়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, তিন প্রজন্মেরও বেশি সময় ধরে ধাতব সরঞ্জামে বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছে তমিজউদ্দিনের পরিবার।
এখন তার নাতি আমির হোসেন—বগুড়া শহরের গোরের হাট এলাকায় অবস্থিত রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের স্বত্বাধিকারী—স্থানীয়ভাবে তৈরি ও স্থানীয় বাজারে প্রাপ্ত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবনের মশাল বয়ে নিয়ে চলেছেন।
এসব কার্যক্রম অবশ্য অনেকদিন আগেই তমিজউদ্দিনের পরিবারের বাইরে গোটা জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে জেলাটিতে ৫০০ থেকে ৬০০ কারখানা রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন খামার সরঞ্জামের পাশাপাশি আমদানিকৃত কৃষি যন্ত্রপাতির যন্ত্রাংশ তৈরি করে।
আমির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, '১১৯৪০ সালে আমার বাবা—তিনি ধলু মেকার নামে পরিচিত ছিলেন—আমার দাদার প্রতিষ্ঠিত কামারের দোকানটিকে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে রূপান্তরিত করেন। এরপর সমসাময়িক উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির যন্ত্রাংশ তৈরি করতে শুরু করেন। স্ক্র্যাপ ধাতু কিনতে তাকে কলকাতাও যেতে হতো।'
ব্যবসার পরিধি বাড়াতে ধলু মেকার একটি লেদ মেশিন কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এ যন্ত্র কেনার সামর্থ্য তার ছিল না। তবে তাতে তিনি দমে যাননি। ধীরে ধীরে যন্ত্রাংশ কিনে নিজেই একটি লেদ মেশিন তৈরি করে নেন ধলু মেকার। বগুড়ায় তখন বিদ্যুত ছিল না, তাই মেশিন হাতে চলত।
ধলু মেকার ইউরোপ থেকে আমদানি করা ধান মাড়াইয়ের যন্ত্রাংশ ও ডিজেল ইঞ্জিন তৈরি শুরু করেন। এই যন্ত্রাংশগুলো উত্তরের জেলাগুলোতে জনপ্রিয়তা পায়।
আমির বলেন, 'আমার বাবা বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। তাই কলকাতা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সাহায্যে তিনি একটা ছোট জেনারেটর তৈরি করেন, মূলত বাতি জ্বালার জন্য।'
ধলু মেকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়তে থাকে। রংপুরের তাজহাটের জমিদারের গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং তিস্তা ব্যারেজে ব্যবহৃত কিছু যন্ত্রাংশও তৈরি করেন তিনি।
আমিরের ছয় ভাই ও এক বোন। পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলেদের প্রতিদিন ওয়ার্কশপে দুই ঘণ্টা কাজ করা বাধ্যতামূলক ছিল। এভাবেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজে হাতেকলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন আমির। পরে তিনি বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন।
আমির বলেন, 'আমি প্রথম ১৯৮০ সালে একটা জাপানি ডিজেল ইঞ্জিনের পিস্টন তৈরি করি। একটা বাতিল মালের আড়ত থেকে পিস্টন সংগ্রহ করে আমি ওটার ছাঁচ এবং আমাদের ফাউন্ড্রিতে ওটার অনুলিপি তৈরি করি। এরপর বাবা আমাকে আরও যন্ত্রাংশ তৈরির অনুমতি দেন।'
রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস তখন সারা দেশে স্থানীয়ভাবে শ্যালো মেশিন নামে পরিচিত এ ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সরবরাহ শুরু করে।
আমির বলেন, 'আমরা দিনরাত কাজ করতাম। এটি জেলার আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করে। বগুড়ায় শতাধিক কারখানা গড়ে ওঠে। তারা সবাই এ ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি করতে আরম্ভ করে। আমাদের পরিবারের দেখানো পথে হেঁটে ১৯৬০-এর দশকে এরকম অনেক কারখানা গড়ে ওঠে। ১৯৮০-র দশকে বগুড়ায় ১০ থেকে ১২টি ফাউন্ড্রি ছিল। এখন ফাউন্ড্রির সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০।'
বগুড়া চেম্বার অভ কমার্সের সদস্য আমির জানান, কৃষি যন্ত্রপাতির খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা রয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০টি।
এ কারখানাগুলোর সবই ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বলে জানান বাংলাদেশ প্রকৌশল শিল্প মালিক সমিতির বগুড়া শাখার যুগ্ম সম্পাদক আমির হোসেন। তার অভিযোগ, এ শিল্পের জন্য কোনো সরকারই কিছু করেনি। কাঁচামালের (স্ক্র্যাপ ধাতু) দামের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এর ফলে দাম বেড়ে যায়। পরিণতিতে বেড়ে যায় কৃষকদের ফসল উৎপাদনের খরচ।
৫০০ থেকে ৬০০টি কৃষিপ্রযুক্তি (এগ্রিটেক) কারখানার মধ্যে মাত্র ৪৮টি বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত, যারা সরকার নির্মিত কিছু বিশেষ অবকাঠামোর সুবিধা পায়। এর মধ্যে ৩৭টি কারখানা পুরনো এলাকায় এবং বাকিগুলো সম্প্রসারিত এলাকায় বলে জানা গেছে বিসিক জেলা কার্যালয়, বগুড়ার তথ্য থেকে।
আমির হোসেনের উদ্ভাবন শুধু খুচরা যন্ত্রাংশেই থেমে থাকেনি। বর্তমানে তার তৈরি প্রায় ৫০টি মেশিন—ভুট্টা মাড়াই, ধান মাড়াই, আলু গ্রেডিং মেশিন, সেচ পাম্প, ধান কাটার যন্ত্রের মতো উন্নত কৃষি সরঞ্জাম—সারা দেশে বিক্রি হয়।
কৃষি-বহির্ভূত যন্ত্রপাতিও তৈরি করেন এই উদ্ভাবক। সারা দেশে বহুল ব্যবহৃত অটো-ব্রিক মেশিন ও স্টোন ক্রাশার মেশিনও আমিরের তৈরি। দুটি ভিনটেজ চেহারার গাড়িও তৈরি করেছেন তিনি। গাড়ি দুটি এখন বগুড়ায় তার ওয়ার্কশপের শোভাবর্ধন করছে।
তিনি বলেন, 'আমি সারা দেশের কৃষকদের কাছে গিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি আর কী কী হলে তাদের কাজ সহজ হবে। তারপর সে অনুযায়ী তাদের জন্য মেশিন তৈরি করি। ওসব মেশিন আমি ন্যূনতম লাভে বিক্রি করি। প্রায়ই আমি বিভিন্ন দামের রেঞ্জে একটা মেশিনের একাধিক সংস্করণ বানাই, যাতে কৃষকরা তাদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী সেগুলো কিনতে পারেন। ২০০৩ সালে চীনের তৈরি অটো-ব্রিক মেশিনের দাম ছিল ১ কোটি টাকা। আমার তৈরি অটো-ব্রিক মেশিনটি ৬ থেকে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করি।'
আমির একইসঙ্গে একজন উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উন্নয়নের পর্যায়ে মডেলগুলো ঠিকঠাক কাজ করে না, সেজন্য অর্থ ব্যয় হয়। এক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য পেলে উপকার হবে বলে জানান তিনি।
খানিকটা অসন্তোষের সুরেই তিনি বলেন, 'গবেষণা তহবিল পেলে আমাদের উপকার হবে। সুদবিহীন ঋণও আমাদের অনেক সাহায্য করবে। বিশেষ ছাড়কৃত দামের বিদ্যুৎও এই খাতের বিকাশের জন্য দরকার। আমরা কৃষি খাতের জন্য কাজ করছি। এর ভাগ্য আমাদের সঙ্গে বাঁধা। আমরা অর্থ পাচারকারী নই। আমরা আমাদের কৃষকদের উন্নতির জন্য কাজ করি।'
আমির জানান, চীনা কৃষি সরঞ্জামে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এসব চীনা যন্ত্র বেশিদিন টেকে না। স্থানীয় শিল্প এরচেয়ে ভালো যন্ত্র বানাতে পারে। তবে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।
আমির বলেন, 'বর্তমানে আমদানি করা সমন্বিত ফসল কাটার যন্ত্রগুলো আমাদের দেশের জন্য উপযোগী নয়। এগুলো সমতল, শুষ্ক জমির জন্য ভালো। কিন্তু ফসল কাটার আগে আমাদের কৃষিজমি প্রায়ই প্লাবিত হয়। ফলে এই মেশিনগুলো এখনই অকেজো হয়ে পড়ছে। আমাদের দেশের অবস্থা মাথায় রেখে এই যন্ত্রকে আমরা আরও উন্নত করতে পারি। তবে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য আমাদের তহবিল দরকার।'
তিনি বলেন, অনেক বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখন কৃষিযন্ত্র আমদানি করছে। ওই যন্ত্রগুলো খোলা কঠিন; তাই মেরামত করা যায় না।
তবে এই হালকা প্রকৌশল খাতের সম্ভাবনা শুধু কৃষি যন্ত্রপাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বলে জানান তিনি।
'আমি একটা মেশিন তৈরি করেছি যা পৌরসভার বর্জ্য থেকে দানাদার জৈবসার তৈরি করতে পারে। ঢাকা ও অন্যান্য শহরে অনেক ভাগাড় আছে। এগুলো মিথেন উৎপন্ন করে পরিবেশ দূষণ করে। আমি এমন একটি মেশিন তৈরি করতে পারব, যা ধরন অনুযায়ী বর্জ্য পৃথক, জৈব সার তৈরি এবং রিসাইকেলযোগ্য প্লাস্টিকও সংগ্রহ করতে পারবে,' বলেন তিনি।
আমির জানান, বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে জৈবসার নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তিনি মনে করেন, সঠিক সহায়তা পেলে এই শিল্প তৈরি পোশাকের (আরএমজি) চেয়েও বড় হতে পারবে।
বিসিক কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, বগুড়ায় উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রপাতি শুধু আমদানি বিকল্প হিসেবেই কাজ করে না, এগুলো রপ্তানিও হয়।
বগুড়ার বিসিক জেলা অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার একেএম মাহফুজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'বগুড়া বিসিকে উৎপাদিত সেচ পাম্প অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হয়। বগুড়া মোটরসের তৈরি ফিল্টার কানাডায় রপ্তানি করা হতো। মিল্টন পাম্প ভারতে রপ্তানি করা হয়।
'ভারত প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশ, তবু তারা আমাদের পাম্প নিচ্ছে। আমি মনে করি এটি আমাদের পণ্যের উচ্চ গুণমানের নির্দেশক।'
বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) অনুসারে, দেশে কৃষি-যন্ত্র উৎপাদনকারী ৮০০টি কারখানা রয়েছে। এ শিল্পের অর্থমূল্য বার্ষিক ৩ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা।
দেশে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে, আর পাম্পের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার, যার পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হয়। পাওয়ার স্প্রেয়ার ছাড়া বর্তমানে দেশে প্রায় সব ধরনের হাত ও পায়ে চালিত স্প্রেয়ার তৈরি করা হচ্ছে। এর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার।
এআইএস আরও জানাচ্ছে, দেশে ব্যবহৃত মাড়াই মেশিন এখন স্থানীয় কারখানায় তৈরি হচ্ছে। এখন দেশে ব্যবহৃত নানা ধরনের মাড়াই মেশিনের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়েছে এবং প্রতি বছর এর চাহিদা প্রায় ৬০ হাজার। এছাড়াও দেশে অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, বগুড়ায় উৎপাদিত ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতি দেশের চাহিদা মিটিয়ে নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটও (ব্রি) এ ধরনের যন্ত্রপাতি ডিজাইন করে এবং উপযুক্ত কৃষি সরঞ্জাম তৈরির জন্য স্থানীয় নির্মাতাদের সহায়তা করে।