ধনী ও দরিদ্রের যে ১১ অভ্যাস তাদের আর্থিক সাক্ষরতায় প্রভাব রাখে
ধনসম্পদ অর্জনের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে আর্থিক সাক্ষরতা। আর্থিক সাক্ষরতা বলতে ব্যক্তি কীভাবে অর্থ আয়, ব্যবস্থাপনা, ও বৃদ্ধি করেন তা বোঝায়। ধনী আর দরিদ্রের মধ্যকার পার্থক্য প্রায়শই তাদের অভ্যাস ও মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। নিউ ট্রেডার ইউ নামক একটি অর্থসম্পদ বিষয়ক ব্লগের এ লেখায় জেনে নেওয়া যাক ধনী ও দরিদ্রের মধ্যকার ১১টি পার্থক্যের কথা যেগুলো তাদের আর্থিক সাক্ষরতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।
১. জীবন দর্শন
নিজেদের জীবন নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছেন — এমন বিশ্বাসে অভ্যস্ত ধনীরা। এটিকে প্রবৃদ্ধি মানসিকতা বলা হয়। অন্যদিকে দরিদ্ররা অটল মানসিকতানির্ভর। তারা মনে করেন জীবন পুরোপুরি নিয়তির ওপর নির্ভরশীল — নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনে তাদের কোনো হাত নেই। প্রবৃদ্ধির মানসিকতা থাকলে জীবনে উত্তরোত্তর উন্নতি করার নিরন্তর চেষ্টা করে মানুষ।
২. লক্ষ্য তৈরি
ধনীরা নিজেদের জীবনের বিভিন্ন লক্ষ্য ঠিক করেন। সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট লক্ষ্য তৈরি করা ধনীদের মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে দরিদ্ররা পরিস্থিতির ওপর সবকিছু ছেড়ে দেন। কিন্তু সম্পদ অর্জনে আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩. চিন্তার পরিসর
ধনীরা বড় পরিসরে চিন্তা করেন। সোজা কথায়, তাদের স্বপ্ন বড় হয়। তারা বোঝেন, ভালো কিছু অর্জন করতে চাইলে উচ্চকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। দরিদ্ররা তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সীমিত করে ফেলেন, তারা অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে চান।
৪. মনোযোগে ভিন্নতা
ধনীরা তাদের সুযোগগুলোর ওপর বেশি মনোযোগ দেন। তারা সবসময় চান ভ্যালু ও সম্পদ বাড়ানোর নতুন নতুন পথ খুঁজে পেতে। অন্যদিকে দরিদ্রদের মধ্যে সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে দেখা যায়। এর ফলে তার সাফল্যের সুযোগগুলো চিহ্নিত করতে পারেন না।
৫. অনুকরণে পার্থক্য
ধনীরা স্বভাবগতভাবেই অন্য ধনী ও সফল মানুষদের মডেল হিসেবে দেখেন। কারণ তারা বুঝতে পারেন, যারা ইতোমধ্যে সফল হয়েছেন, তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তারা অন্য ধনীর অভ্যাস, কৌশল, ও মানসিকতার ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখেন এবং সেগুলো অনুকরণের চেষ্টা করেন। অন্যদিকে সাধারণত ধনীদের দেখতে পারেন না দরিদ্ররা। তারা অন্যের ধনসম্পদ ও সাফল্যের প্রতি ঈর্ষাবোধ করেন। এর ফলে ধনসম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় থেকেই তারা বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেন।
৬. নিজেকে মেলে ধরা
ধনীরা সবসময় নিজেকে অন্যের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। তারা নিজেদের ব্যবসা এবং নিজেদেরকে নিয়মিত প্রমোট করেন। কারণ তারা জানেন, সফলতা পেতে হলে নিজেই নিজেকে অন্যের কাছে জাহির করতে হবে। অন্যদিকে দরিদ্ররা এ বিষয়টি নেতিবাচক চোখে দেখেন। তারা নিজেদের সাফল্য, যোগ্যতাসমূহকে সচরাচর প্রকাশ করতে চান না।
৭. কাজ বনাম সময়
ধনীরা তাদের কাজের ফলাফলের মাধ্যমে অর্থ আয় করেন। অন্যদিকে দরিদ্ররা তাদের ব্যয়িত সময়ের ওপর নির্ভর করে আয় করেন। ধনীরা জানেন, অর্থের জন্য সময় ব্যয় করলে আয়ের সম্ভাবনা সীমিত হয়ে পড়ে। দরিদ্র মানুষেরা সচরাচর সুনির্দিষ্ট বেতনভিত্তিক কাজেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর ফলে তাদের আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন বাধাগ্রস্ত হয়।
৮. সম্পদ সৃষ্টি
ধনীরা অর্থসৃষ্টিকারী সম্পদ তৈরিতেই অভ্যস্ত। তারা নিজেদের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে একাধিক নগদ প্রবাহের পথ তৈরি করতে সিদ্ধহস্ত। অন্যদিকে দরিদ্ররা সাধারণত অন্য কারও জন্য অর্থ তৈরি করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন। কারণ, তারা আয়ের ক্ষেত্রে সচরাচর কেবল তাদের চাকরির ওপরই নির্ভরশীল থাকেন।
৯. আয়ের ধরনে মনোযোগ
ধনীরা সাধারণত তাদের মোট সম্পদ ও নগদ প্রবাহের ওপর বেশি মনোযোগ দেন। অন্যদিকে দরিদ্ররা কেবল তাদের কাজ থেকে পাওয়া আয় তথা বেতন নিয়েই বেশি ভাবেন।
১০. শেখার মানসিকতা
ধনীরা সবসময় শেখার চেষ্টা করেন। বিশ্বের অনেক ধনীর সাফল্যের মৌলিক ভিত্তি হলো নিয়মিত শেখা। তারা বুঝতে পারেন জ্ঞানই শক্তি; তাই অর্থ, বিনিয়োগ, ব্যবসা ইত্যাদি সম্পর্কে তারা প্রতিনিয়ত জ্ঞানবৃদ্ধি করেন। অন্যদিকে দরিদ্ররা মনে করেন, তারা দুনিয়ার হিসাবনিকাশ সব বুঝে গেছেন। তাদের মধ্যে জীবনভর শেখার মানসিকতার অভাব থাকে।
১১. অর্থের ব্যবহার
ধনীরা নিজেদের অর্থকে ব্যবহার করেন তাদের অর্থ বাড়ানোর জন্য। অন্যদিকে দরিদ্ররা কেবল অর্থের জন্য কাজ করেন। ধনীরা বিনিয়োগ, ব্যবসা, অ্যাসেট ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের অর্থকে আরও অর্থ অর্জনে কাজে লাগান। এর ফলে তাদের পরোক্ষ আয় বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে বিনিয়োগ বা অ্যাসেট তৈরিতে বিশেষ আগ্রহ থাকে না দরিদ্রদের।