যে ৭টি লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার নতুন চশমা নেওয়া প্রয়োজন
পৃথিবীটাকে স্পষ্টভাবে দেখতে হলে আপনাকে যদি একটা চশমা পরতেই হয় তাহলে মনে রাখবেন, এই দলে আপনি একা নন। সি নেট- এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিক ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী চশমা ব্যবহার করেন। স্টাইলে পরিবর্তন আনার জন্য চশমা পরা আর নানাবিধ সমস্যার কারণে চশমা পরার মধ্যে পার্থক্য আছে। তাহলে কখন বুঝবেন যে আপনার সত্যিই চশমা নেওয়া প্রয়োজন? সি নেট-এর প্রতিবেদনে ৭টি লক্ষণের কথা বলা হয়েছে যা দেখে বোঝা যাবে যে আপনার হয়তো ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে চশমা নিতে হতে পারে।
১. প্রায়ই মাথাব্যথা
প্রায়ই মাথাব্যথার সমস্যায় ভুগছেন এমন যে কারও চশমা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যেহেতু মাথাব্যথারই প্রায় দেড়শোর বেশি ধরন আছে, তাই ডাক্তারের পরমর্শ ছাড়া বলা কঠিন যে আপনি কোন সমস্যার ভুক্তভোগী।
এ সমস্যা দেখা দিলে কতবার, কোন কোন সময় মাথাব্যথা হচ্ছে ইত্যাদি নোট নেওয়া দরকার। অনেকক্ষণ যাবত কোনোকিছুর দিকে তাকিয়ে থাকার পরে যদি মাথাব্যথা হয় তাহলে আপনার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত।
২. চোখের সামনে এনে পড়া
মোবাইলে স্ক্রল করতে করতে বা কোনোকিছু পড়তে গিয়ে স্পষ্টভাবে দেখতে কি সেটি আপনার চোখের খুব কাছাকাছি নিয়ে আসতে হচ্ছে? কখনো কখনো আমরা বুঝতেই পারি না যে স্পষ্টভাবে দেখতে আমরা এক চোখ বন্ধ করেও তাকাচ্ছি ওই বস্তুর দিকে। আর এটা যখন করা হচ্ছে, তার মানে চোখে আলো পড়ার মাত্রা পরিবর্তন করছেন আপনি। এ ধরনের সমস্যা অবশ্যই একটি স্পষ্ট লক্ষণ যে আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে।
৩. তাকিয়ে থাকায় ক্লান্তি
দীর্ঘ সময় কোনোকিছুর দিকে তাকিয়ে থেকে কাজ করলে চোখের ক্লান্তি আসে। অতিরিক্ত কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস চালানো, দীর্ঘ পথের দূরত্বে গাড়ি চালানো, লম্বা সময় ধরে বই পড়া এবং খুবই উজ্জ্বল বা খুবই কম আলোতে কাজ করলে এই সমস্যা দেখা দেয়। ইংরেজিতে একে 'আই স্ট্রেইন' বলে।
এই সমস্যার ফলে চোখে ক্লান্তি আসে, চোখ লাল হয়ে যেতে পারে এবং চোখ দিয়ে পানিও পড়তে পারে। দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডাক্তারের বিধান অনুযায়ী চশমা নেওয়ার পাশাপাশি 'ব্লু লাইট ব্লকিং গ্লাস'ও খুঁজতে পারেন আপনি। এই চশমা স্ক্রিনের দিকে কয়েক ঘণ্টা তাকিয়ে থাকার সময় আপনার চোখকে কিছুটা স্বস্তি দিবে।
৪. ঝাপসা দৃষ্টি
দৃষ্টিশক্তি ঘোলা হয়ে গেলে কোনোকিছু স্পষ্টভাবে দেখা যায় না। এই প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে হয় এবং অনেক সময় সাথেসাথে অনেকে বুঝতেও পারেন না যে তার দৃষ্টিশক্তি আর আগের মতো তীক্ষ্ণ নেই।
ঝাপসা দৃষ্টির একটি খুব পরিচিত কারণ হচ্ছে পুরনো চশমা ব্যবহার। এই ক্ষেত্রে দূরের জিনিস বা খুব কাছের জিনিস দেখতে সমস্যা অথবা 'অ্যাস্টিগমেটিজম' (চোখের আকৃতি ঠিকঠাক না হওয়ায় দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া)।
৫. বহুদিন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে না যাওয়া
শেষবার কবে আপনি চোখের ডাক্তার দেখিয়েছেন? যদি দুই বছরের বেশি সময় হয়ে থাকে যে আপনি ডাক্তার দেখিয়েছেন, তাহলে এক্ষুণি আপনার উচিত ডাক্তার দেখিয়ে নতুন করে চশমা নেওয়া। অন্তত প্রতি দুই বছর পরপর দুই চোখ চেকাপের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেই সাথে আপনার যদি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা ক্যান্সারের মতো রোগ থেকে থাকে, তাহলে প্রতি বছরই ডাক্তার দেখাতে হবে।
৬. আগের মতো পড়তে না পারা
রেস্টুরেন্টে গিয়ে কি একেবারে নাকের নিচে মেন্যু কার্ড ধরে পড়তে হয়? এর মানে আপনার কাছের জিনিস দেখতে সমস্যা হয়। অথবা মোবাইল ফোন কি হাতের কনুইয়ের সমান দূরত্বে রেখে ধরতে হচ্ছে? এর মানে দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা। আগের মতো স্পষ্টভাবে কোনোকিছু পড়তে না পারার অর্থ হলো আপনার নতুন চশমা দরকার।
৭. রাতে গাড়ি চালাতে সমস্যা
একসময় রাস্তা পুরোপুরি পরিষ্কারভাবে দেখতেন, কিন্তু রাতের বেলা এখন আর দেখেন না, তার মানে আপনার হয়তো 'নাইট ব্লাইন্ডনেস' আছে। এর ফলে রাতে যে কম আলো থাকে, চোখ তার সাথে মানিয়ে নিতে পারে না। আর এই সমস্যায় সমাধান করতে পারে নতুন চশমা।
চশমা কখন বদলানো উচিত।
সাধারণত এক থেকে দুই বছরের মতো একই প্রেসক্রিপশনের চশমা ব্যবহার করা যায়। তবে সবচেয়ে ভাল হয় চোখ পরীক্ষা করালে। কারণ প্রেসক্রিপশনের মেয়াদ যা-ই হোক না কেন, উপরে উল্লিখিত ৭টি লক্ষণের কোনো একটি দেখা গেলেও ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়র মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মনে করা হয় দৃষ্টিকে। তাই চোখের অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার আগেই নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং সে অনুযায়ী নতুন চশমা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন চশমা কেনার সময় নতুন নতুন ফ্রেমও বেছে নিতে পারেন। এতে প্রতিবার চশমার ব্যবহারে আপনার লুক পাল্টে দিতে সহায়তা করবে।
(বি.দ্র. এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত সকল তথ্যই শিক্ষামূলক, এগুলো কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ হিসেবে দেওয়া নয়। শারীরিক যেকোনো সমস্যায় অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিন।)