আম্বানি-আদানি-টাটা নন, স্বাধীন ভারতের প্রথম বিলিয়নিয়ার ছিলেন যে ব্যক্তি!
ভারতীয় বিলিয়নিয়ারদের সম্পর্কে বলতে গেলেই মুকেশ আম্বানি, রতন টাটা, শিব নাদর কিংবা গৌতম আদানির মতো বিজনেস টাইকুনদের নাম সামনে চলে আসে। এরমধ্যে মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানি শুধু ভারতে নয়, বরং বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায়ও টক্কর দিচ্ছেন সমানতালে।
তবে স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের এই বিলিয়নিয়াররা বেশ বিখ্যাত হলেও একজন অনেকটা অখ্যাতই রয়ে গেছেন। বলছিলাম স্বাধীন ভারতের প্রথম বিলিয়নিয়ার মীর ওসমান আলী খানের কথা।
১৮৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করা মীর ওসমান ব্রিটিশ ভারতের রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত রাজ্য হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম ছিলেন। তার বাবা মেহবুব আলী খান ছিলেন হায়দ্রাবাদের ষষ্ঠ নিজাম।
বাবার মৃত্যুর পর ১৯১১ সালের ২৯ আগস্ট মাত্র ২৫ বছর বয়সে সপ্তম নিজাম হিসেবে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন।
তৎকালীন ভারতের রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজ্যগুলোর মধ্যে হায়দ্রাবাদ ছিল বৃহত্তম। ১৯১১ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৭ বছর মীর ওসমান হায়দ্রাবাদ শাসন করেছেন।
তবে মীর ওসমান ছিলেন ব্রিটিশদের অনুগত। ব্রিটিশ শাসকেরা তাকে 'নিজাম', 'মহামান্য অধিপতি' এবং 'ব্রিটিশ রাজের বিশ্বস্ত মিত্র' ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করে।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগের সময় প্রভাবশালী এ নিজাম হায়দ্রাবাদকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে চাননি। বরং হয় তিনি পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন; নতুবা আলাদা স্বাধীন রাজ্য হিসেবে হায়দ্রাবাদকে রাখতে চেয়েছিলেন।
১৯৪৮ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদ রাজ্য আক্রমণ করলে নিজামকে আত্মসমর্পণ করতে হয়। অবশ্য ১৯৫০ ও ১৯৫৬ সালে তিনি রাজ্যের রাজপ্রমুখ হিসেবেও নিযুক্ত হন।
পরে রাজ্য-বিভক্ত হলে হায়দ্রাবাদকে ভেঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্রের অংশ করা হয়। তবে বিভক্তের আগে নিজামের শাসন করা হায়দ্রাবাদের আয়তন ছিল ৮৬,০০০ বর্গ মাইল, যা মোটামুটি বর্তমান যুক্তরাজ্যের আয়তনের সমান।
হায়দ্রাবাদ শাসনের সময়টাতে মীর ওসমান বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪০ এর দশকের শুরুর দিকে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালের অর্থমূল্যের হিসেবে যা প্রায় ৩৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মীর ওসমানকে বলা হয় আধুনিক হায়দ্রাবাদের স্থপতি। তিনি ভারতের প্রথম বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন তৈরি করেছেন।
মীর ওসমানের শাসনামলে হায়দ্রাবাদের রেলওয়ে ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি ঘটে। রাজ্যটি বিদ্যুতের আওতায়ও আসে।
একইসাথে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ওসমানিয়া জেনারেল হাসপাতাল, হায়দ্রাবাদ হাইকোর্ট ও দ্য ষ্টেট ব্যাংক অফ হায়দ্রাবাদের প্রতিষ্ঠাও এই নিজামের হাত ধরে হয়েছে।
১৯৩৭ সালে মীর ওসমান বিপুল পরিমাণ সম্পদের কারণে টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও জায়গা করে নিয়েছিলেন। তিনি এতটাই ধনী ছিলেন যে, ১৮৫ ক্যারেটের মহামূল্যবান 'জ্যাকব ডায়মন্ড' পেপারওয়েট হিসেবে ব্যবহার করতেন।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বিয়েতে মীর ওসমান হীরার নেকলেস ছাড়াও বেশ কয়েকটি গয়না উপহার দিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রানি এই গহনাগুলো পরতেন।
মীর ওসমান আলী খান ১৯৬৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে মসজিদ-ই-জুডিতে সমাহিত করা হয়। এমনকি তার মৃত্যুর পর ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করে।