হলুদের উপকারিতা নিয়ে অনেক কথা চালু আছে! সেগুলো কতটা বিজ্ঞানসম্মত?
আগে শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রান্নায় মশলা হিসেবে হলুদের ব্যবহার করা হতো। তবে এখন এশিয়া ছাড়িয়ে সারাবিশ্বেই মশলাটি জনপ্রিয় হয়েছে। এক্ষেত্রে বহু বাণিজ্যিক কোম্পানি কর্তৃক হলুদের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা প্রচার অন্যতম কারণ। তবে এসব কোম্পানির প্রচার করা উপকারিতার কিছু বিজ্ঞানসম্মত; আবার কিছু অনেকটাই অতিরঞ্জন।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের মায়ো ক্লিনিকের মেডিসিন স্পেশালিষ্ট ডেনিস মিলস্টাইন বলেন, "হলুদের প্রধান সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন স্বাস্থ্যগত বিবেচনায় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী।"
তবে ডেনিস ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হলুদ নিয়ে আরও গবেষণার জরুরী। কেননা এ মসলাটি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের ফলে দেহে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হতে পারে।
ভারতীয় রান্নায় হলুদ মশলা হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এতে করে খাবারের স্বাদ বাড়ানোর সাথে সাথে রঙও বৃদ্ধি করে। স্যুপ, তন্দুরি চিকেন, শাকসবজি ইত্যাদিতে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও শত শত বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে রোগবালাই নিরাময়ে হলুদ ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে পাউডার ও ক্যাপসুল হিসেবেও এটি পাওয়া যায়।
যদিও নির্দিষ্ট চিকিৎসার ক্ষেত্রে হলুদ আসলে কতটুকু কার্যকরী, সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে সার্বিকভাবে হলুদ যে উপকারী, সেটা বলাই যায়।
যেমন, হলুদে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস; যা কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রফেসর লিসা ইয়াং বলেন, "হলুদ হজমে সাহায্য করে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের যত্নে সাহায্য করতে পারে।"
অন্যদিকে জেএসহেলথের প্রতিষ্ঠাতা ও ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট জেসিকা সেপেল জানান, হলুদে থাকা কারকিউমিন আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ (জয়েন্টে ব্যথা এবং জয়েন্টের প্রদাহ) কমাতে সাহায্য করে। একইসাথে এটি হৃদপিণ্ডে জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে গুড কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে; যা দেহের জন্য বেশ উপকারী।
এমনকি হলুদে থাকা কারকিউমিনের ফলে দেহে ক্যান্সার প্রতিরোধী সক্ষমতা তৈরি হতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত নয়, এক্ষেত্রে গবেষণায় প্রয়োজন।
এ বিষয়ে নিউট্রিশন কনসালটেন্ট জেন মেসার বলেন, "কিছু কিছু গবেষণায় দেখা যায়, হলুদ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে এবং টিউমারের ক্ষেত্রে নতুন রক্তনালী গঠন রোধ করে ক্যান্সার প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করতে পারে।"
তবে হলুদের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এ বিষয়ে ইয়াং বলেন, "খাবারে হলুদ ব্যবহার নিরাপদ হলেও এটি অত্যধিক পরিমাণ গ্রহণে ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এবং মাথাব্যথা হতে পারে।"
একইসাথে হলুদে রয়েছে অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট (তঞ্চনপ্রতিরোধী) উপাদান যার কারণে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যেতে পারে। এটি অবশ্য ব্যক্তি ও অবস্থাভেদে উপকারী কিংবা অপকারী উভয়ই হতে পারে।
অন্যদিকে ডেনিস মিলস্টাইন বলেন, "আমার মতে হলুদ গ্রহণে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হল অন্যান্য ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়ার ফলে দেহে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা। "
ঠিক কী পরিমাণ হলুদ খাওয়া যাবে সেটির কোন আদর্শ পরিমাপ নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে দৈনিক দেহের প্রতি পাউন্ড ওজনের বিপরীতে ১.৪ মিলিগ্রাম হলুদ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে ব্যক্তি ও দৈহিক অবস্থা বিবেচনায় এটি পরিবর্তিত হতে পারে।
আর জেন মেসার জানান, বেশিরভাগ গবেষণায় দেখা যায়, সাপ্লিমেন্ট হিসেবে একজন ব্যক্তি দৈনিক ৫০০ থেকে ২ হাজার মিলিগ্রাম পর্যন্ত হলুদ গ্রহণ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যেকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ জরুরী।