মোবাইলের জিপিএস অ্যাপগুলো কীভাবে জানে ট্রাফিক জ্যামের খবর?
কাজে যেতে-আসতে বা ছুটির দিনে ঘুরতে বেরিয়ে ট্রাফিকের অবস্থা সম্পর্কে জানতে আমরা অনেকেই গুগল ম্যাপ, অ্যাপল ম্যাপ বা ওয়েজ এর মতো জিপিএস অ্যাপ ব্যবহার করি। ট্রাফিক থাকলে সড়কে লাল বা কমলা রঙ দেখিয়ে অ্যাপগুলো আমাদের নির্দেশনা দেয়।
প্রশ্ন হলো, কীভাবে অ্যাপগলো ট্রাফিকের গতি বা জ্যামের অবস্থা এত নির্ভরযোগ্যভাবে সরবরাহ করতে পারে? উত্তর আছে ব্যবহারকারীদের নিজেদের মধ্যেই। অনেক সময় তাদের অজান্তেই প্লার্টফর্মগুলোতে চলে যাওয়া তথ্যও অবদান রাখে এতে।
গুগল ম্যাপ: নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম এটি। ২০২০ সালে গুগল ম্যাপের ১৫তম বার্ষিকীতে কোম্পানিটি জানায়, বিশ্ববাপী ১০০ কোটি লোক এই অ্যাপ ব্যবহার করে। গুগল ম্যাপে ট্রাফিক জ্যাম কেমন তা জানা যায় দুই ভাবে। তারজন্য অবশ্যই জিপিএস চালু থাকতে হবে। প্রথমত, কোন রুট ঠিক না করেই ম্যাপে পারিপার্শ্বিক ট্রাফিকের অবস্থা জানা যায়। আবার নির্দিষ্ট গন্তব্য ঠিক করে সেই পথের ট্রাফিকের অবস্থা দেখা যায়। উভয় ক্ষেত্রে রঙের ভিত্তিতে বোঝা যায় ট্রাফিকের অবস্থা। সবুজ মানে সড়ক ফাঁকা। কমলা মানে গাড়ির চাপ আছে কিছুটা। আর লাল মানে গাড়ি একই জায়গায় আটকে আছে অর্থাৎ যানজট বিদ্যমান।
আর ব্যবহারকারীদের এসব তথ্য প্রদানের জন্য দুটি জিনিসের উপর নির্ভর করে গুগল ম্যাপ। প্রথমত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এর মাধ্যমে সড়কের অতীত ট্রাফিকের ধরন বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন- স্পেনের মাদ্রিদের এম-৪০ সড়কে সকাল ১০-১১টার মধ্যে গাড়ির গতি থাকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। কিন্তু সকাল ৮টা-৯টা পর্যন্ত গাড়ির গতি থাকে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার।
ট্রাফিকের অবস্থা জানাতে বিশ্লেষণের পাশাপাশি রিয়েল টাইমে পাওয়া তথ্য একত্রিত করে ফলাফল দেখানো হয়। ব্যবহারকারী কোথায় আছে এবং যে গতিতে চলছে সেটির উপরও নির্দেশনা নির্ভর করে।
অ্যাপল ম্যাপ: আইফোন ব্যবহারকারীদের কাছে অ্যাপর ম্যাপ অ্যাপটি ডিফল্টভাবে ইনস্টল করা থাকে। এখানে গুগল ম্যাপের মতো একনজরে এত বেশি তথ্য দেখা যায় না। তবে খুঁজলে খুঁটিনাটি তথ্যগুলো পাওয়া যায়।
এখানে ট্রাফিকের অবস্থা জানতে গাড়ি বা স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিলেক্ট করতে হয় এবং সেই সাথে রুট বাছাই করতে হয়। এরপর সেখানে গুগল ম্যাপের মতোই রঙের মাধ্যমে ট্রাফিকের অবস্থা চিহ্নিত করা হয়। নীল দিয়ে যানজট নেই বোঝানো হয়, হলুদ চিহ্ন দিয়ে বোঝায় হালকা ট্রাফিক। আর লাল মানে যানজট বিদ্যমান।
এছাড়াও, যদি কোনও চালক রাস্তায় কোনও সমস্যার সম্মুখীন হন, যেমন ট্র্যাফিক জ্যাম, দুর্ঘটনা বা ম্যাপে উল্লেখ নেই এমন কিছু, তাহলে তারা অবিলম্বে সিরিকে বলে প্ল্যাটফর্মকে সতর্ক করতে পারে। সবকিছুই করা যাবে মোবাইল স্পর্শ না করে। অ্যাপল সার্ভারে পাঠানো তথ্যের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। তথ্য পাঠানো ব্যক্তির পরিচয় সেখানে যায় না।
আগামী কিছুদিনের মধ্যেই অ্যাপল ম্যাপের নতুন সংস্করণ আসবে। সেখানে বৈদ্যুতিক ব্যবহারকারীরা চার্জিং স্টেশনের তথ্যও রিয়েল টাইমে দেখতে পাবেন।
ওয়েজ: ১৫০ মিলিয়নের বেশি মানুষ প্রতি মাসে তাদের প্রধান জিপিএস হিসেবে ওয়েজ অ্যাপ ব্যবহার করেন। এরমধ্যে ৫০ হাজার ব্যক্তি এমন আছেন যারা অ্যাপ হালনাগাদ, পথ প্রদর্শন এমনকি দুর্ঘটনার সতর্কতাও তুলে ধরতে সাহায্য করেন। অ্যাপের সাহায্যে তারা রিপোর্ট পাঠান। তখন তা ম্যাপ এডিটর নামে স্বেচ্ছোসেবীদের কাছে চলে যায় এবং রিয়েল টাইমে তা হালনাগাদ করা হয়।