গুলশানে হতো পিকনিক, ধানমন্ডিতে বসতো হাট- ব্যস্ত ঢাকার হারানো রূপ
আজিম বখশের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ফরাশগঞ্জে। এখন থাকেন গুলশানে। অথচ ষাটের দশকে গুলশানে আসতেন বনভোজন করতে। তাদের পরিবহন ব্যবসা ছিল, নিজেদের বাসে করেই আসতেন পরিবারের সবাই মিলে। বছরে একবার তো বটেই, কখনো কখনো দু–তিনবারও। তখনকার সঙ্গে আজকের গুলশানের কোনো মিলই নেই। আজিম বখশ নিজেই এই ঝাঁ চকচকে, বড় বড় ভবনের গুলশান দেখে মাঝেমধ্যে ধন্দে পড়ে যান। সেকালে গুলশান ছিল যাকে বলে সাদামাটা এক গ্রাম। লোকে ডাকত ভোলাগ্রাম বলে। সারি সারি তালগাছ ছিল, খোলা মাঠ ছিল। রাতে ঝোপঝাড় থেকে ভেসে আসত শেয়ালের ডাক। সুনসান গ্রামখানায় মানুষজনও ছিল কম। অনেকে তো ষাটের দশকের শুরুর দিকে এখানে মেছোবাঘও দেখেছেন। গ্রামের প্রশস্ত ও গভীর খালটি কোনো বাধা ছাড়াই বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ত।
তাই বখশ পরিবারের মতো সে সময়ের সম্ভ্রান্ত ঢাকাবাসীদের জন্য গুলশান ছিল ব্যস্ততা থেকে রেহাই পাওয়ার মনোরম এক জায়গা। শিকার বা বনভোজনের জন্য অনেক পরিবারেরই পছন্দ ছিল নদী আর সবুজের ধারক গুলশান।
মতিঝিল উদ্যানে ছিল ফলের গাছ
সে সময়কার ঢাকায় এমন আরও কিছু বাগান আর জঙ্গুলে এলাকা ছিল। কাউকে এখন বিশ্বাসই করানো যাবে না, এককালে লোকে এসব জায়গায় বনভোজন করতে আসত!
এই যেমন মতিঝিল তখন ছিল বিরাট উদ্যানের মতো — পুরো এলাকাজুড়ে ছিল অনেক বড় বড় ফলের গাছ, কাঠ গাছ। মতিঝিলের ভেতরে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ছিল একটি জলাশয়। আরেকটু এগিয়ে গেলে কমলাপুর গ্রাম আর তারপরেই খিলগাঁও। সামান্য দক্ষিণে দিলখুশা। এর মধ্য দিয়ে তিনশো বছর পুরোনো একটি খাল বা ছোটো নদী বয়ে যেত। মতিঝিল নামটি এ নদী থেকেই হয়। বনভোজনে এসে বিশাল উদ্যান আর প্রবহমান নদীটির পাশে বসে লোকেদের বিকেল কাটত।
মতিঝিল যখন অফিসপাড়া হতে শুরু করল, তখন আশপাশের গ্রাম থেকে অনেক মানুষ এসে ভিড় করতে শুরু করলেন — উদ্যানের মতিঝিল রূপ নিল ব্যস্ত এক বাণিজ্যিক এলাকায়।
শিক্ষাসফরে তেজগাঁও কৃষিখামারে
ঢাকায় বিনোদন বইটির লেখক রফিকুল ইসলাম রফিক জানিয়েছেন, তেজগাঁও এলাকার কৃষিখামারটিও একসময় ঢাকার দর্শনীয় স্থান ছিল। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা সবুজে ভরপুর এ স্থানে বনভোজন ও শিক্ষা সফরে আসত। তেজগাঁও'র আশপাশে পঁয়ত্রিশ–চল্লিশ বছর আগেও ঘোড়াগাড়িতে চড়ে মানুষ বনভোজনে আসতেন।
মিরপুরের বাইগুনবাড়ি
নাহ, বাগানবাড়ি নয়, ওটা বাইগুনবাড়িই। মিরপুরের এ এলাকাটিতে ছিল নবাবদের সংরক্ষিত বন। তবে বনভোজনের জন্যও মনোরম স্থান ছিল বাইগুনবাড়ি। পিনিস নৌকা বা বজরায় করে এখানে আসতেন অনেকে।
ঢাকার নবাবরা বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীপথে লঞ্চ বা বজরায় করে বাইগুনবাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। সাধারণত আগেরদিন রাতে পিনিসে চড়ে রওনা দিতেন তারা। পিনিসে কাওয়ালরা সারারাত কাওয়ালীর আসর বসাতেন।
পরের দিকে ধনীলোকেরা নিজেদের গাড়িতে এবং সাধারণ মানুষেরা বাস ভাড়া করে, ট্রাকে প্যান্ডেল লাগিয়ে, চেয়ার নিয়ে বাইগুনবাড়িতে যেতেন বনভোজনে।
বনভোজন বাদে শিকারের জন্যও খ্যাত ছিল বাইগুনবাড়ি।
আজিমপুরের শাহজাদা মিয়ার বাগিচা
ব্রিটিশ আমলে আজিমপুর কলোনির পূর্বপাশের রাস্তাপাড়ার জায়গা শাহজাদা মিয়ার মালিকানাধীন ছিল। তিনি ছিলেন ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা জায়গাটিকে মানুষ শাহজাদা মিয়ার বাগিচা বলে চিনত। ঢাকার লোকজন এখানে এসে বনভোজন করতেন। পরবর্তী সময়ে মানুষ জয়দেবপুর এলাকায় বনভোজন করা আরম্ভ করল। হাল আমলে তো জয়দেবপুর ও গাজীপুর অঞ্চলে অসংখ্য পিকনিক স্পট গড়ে উঠেছে।
টঙ্গী, গাজীপুর, ভাওয়ালে ছিল মৃগয়াক্ষেত্র
তখনকার দিনে ঢাকাবাসী নানারকম বিনোদনমূলক কাজে অগ্রগামী ছিলেন। তার একটি ছিল শিকার। পর্যটক রেজিনাল্ড বিশপ হেবার বলেছেন, তখন নাকি ঢাকার জঙ্গলে অভিজাতরা বাঘ শিকার করতে বের হতেন। জঙ্গলে সাপের ভয়ও ছিল প্রচণ্ড। আর কখনো কখনো এসব জঙ্গলে ঘোরার সময় অনেকে হাতির গর্তে পড়ে যেতেন। ঢাকায় সে সময় প্রচুরসংখ্যক হাতিও ছিল।
জেমস ওয়াইজ তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, শীত মৌসুমে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা জেলায় মুসলমানেরা শিকার করতে আসতেন। ঢাকায় ব্রিটিশদের জয়েন্ট কালেক্টর আর্থার লয়েড ক্লে টঙ্গীর জঙ্গলে শিকার করতে গিয়েছিলেন। টঙ্গীতে তখন চিতাবাঘ চড়ে বেড়াত। পুরান ঢাকা গবেষক আনিস আহমেদ জানান, শিকারি পরিবারগুলো মেঘনার চরে, গাজীপুরের ভাওয়ালে যেত শিকার করতে। মেঘনার চরে হতো পাখি শিকার।
রেসকোর্সে চলতো ঘোড়দৌড়, ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব
ঢাকার বিনোদন বই থেকে জানা যাচ্ছে, তখন রাজধানীতে অনেক খোলা ময়দান ছিল। এই যেমন পল্টন, আরমানিটোলা, রেসকোর্স, গেন্ডারিয়া, আগাসাদেক ময়দান ও ধূপখোলার মাঠ প্রভৃতি। এসব ময়দানে কুস্তিখেলা, ঘুড়ি ওড়ানোর মতো বিভিন্ন খেলাধুলা হতো। শীতকালে বাড়ি বাড়ি যে ঘুড়ি ওড়ানোর চল দেখা যায়, তা তখন হতো এসব মাঠে-ময়দানে। সবচেয়ে বড় উৎসবটা হতো ঢাকার রমনার রেসকোর্স ময়দানে।
ব্রিটিশ আমলে রমনা ঘোড়দৌড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। রমনা বনের মাঝখান থেকে হেঁটে যেতে হতো মগবাজারের ওদিকে। ভোর হলে মানুষ হাঁটা শুরু করতেন, আবার সন্ধ্যে নামার আগেই চলে আসতেন। সন্ধ্যার পর রমনার ভেতর দিয়ে পদব্রজে ভ্রমণে কেউ বেরোতেন না।
এ রমনা ক্ষয় হতে থাকে মোগল আমলের শেষদিকে। কোম্পানি আমলে রমনা ছিল জঙ্গলে পরিপূর্ণ এবং বন্যজন্তুতে ভরা। বঙ্গভঙ্গের পর সবেগে গড়ে উঠতে থাকে রমনা এলাকা। পরবর্তীসময়ে রমনার অনেকটা অংশ সরকার নিয়ে নেয় নতুন রাজধানী নির্মাণের জন্য। এলাকাটির নাম দেওয়া হয়েছিল সিভিল স্টেশন। এখানে গড়ে উঠেছিল কার্জন হল, সচিবালয়, সরকারি কর্মচারীদের জন্য মিন্টো রোড, নীলক্ষেতের লাল রংয়ের বাড়ি এসব। প্রকৃতির সবুজের বিপরীতে বাড়িগুলোর রং রাখা হয়েছিল লাল। তখনই পত্তন হয় রমনা পার্কের। মুনতাসীর মামুন স্মৃতিময় ঢাকা বইয়ে লিখেছেন, রমনা তখন তিনভাগে বিভক্ত ছিল — রমনা স্টেশন, রমনা পার্ক ও রেসকোর্স।
ধোলাইখালে হতো নৌকাবাইচ
ধোলাইখাল তখন ছিল ছোট্ট একটা নদীর মতো, দেখতে বেশ ছবির মতো — তার দুইপাশ সবুজ গাছপালায় ভরা। ফরাশগঞ্জ ও গেন্ডারিয়াকে বিভক্তকারী এ খালটির উৎপত্তি বাবুবাজারে। এরপরে জিন্দাবাহার, গোয়ালনগর, নবাবপুর, নারিন্দা হয়ে লোহারপুলের নিচ দিয়ে মিশেছিল বুড়িগঙ্গায়। একসময় ধোলাইখালে জাঁকজমকভাবে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হতো। ধোলাইখাল নদীর শাখা-উপশাখা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল বিভিন্ন অঞ্চলে। সে খাল এখন অবশ্য কেবল নামেই টিকে আছে।
ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন তার ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী বইটিতে লিখেছেন, এ শতকের ষাটের দশক পর্যন্ত ধোলাইখালের সঙ্গে ঢাকার নাম ছিল ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এরপর থেকে জমি দখলের প্রক্রিয়ায় ধোলাইখাল হারিয়ে যেতে থাকে।
বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষ্যে খালের দুই তীরে নানা স্থানে তখন মেলা অনুষ্ঠিত হতো। নদীর ধারের গ্রামগুলোর মতো ঢাকাতেও মেলার আয়োজন হতো। মেলা বসত তিন নদীর মিলনস্থলে, নদীর কিনারায়।
কৃষিপণ্যের হাট থেকে অভিজাতদের বসতি ধানমন্ডি
মোগল আমলের ঢাকা দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদী, উত্তরে টঙ্গী, পশ্চিমে জাফরাবাদ-মিরপুর এবং পূর্বে পোস্তগোলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তবে মূল শহর গড়ে উঠেছিল বুড়িগঙ্গা তীর বরাবর। অর্থাৎ লালবাগ থেকে সূত্রাপুর-পোস্তগোলা পর্যন্ত ছিল শহর। ঢাকা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আজিম বখশ জানান, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরের অঞ্চল, রমনা, মিন্টো রোড পার হয়ে মগবাজার থেকে শুরু করে গুলশান, বনানী যা আছে সবই ছিল তখন গ্রাম।'
নতুন ঢাকার পুরোটাই ছিল বন-জঙ্গল, গ্রামগঞ্জ। হালের আধুনিক, অভিজাত ধানমন্ডি মোগল আমলে ছিল কৃষিপণ্যের হাট। বেশ বড় একটা হাট বসতো, যেখানে ধান এবং অন্যান্য শস্যই প্রধানত বিক্রি হতো। ধানমন্ডি নামের উৎপত্তি সেখান থেকেই। হেকিম হাবিবুর রহমান লিখেছেন, ১৯৪৬ সালে তিনি ঈদগাহর পেছনে জীর্ণ একটি পুল দেখেছিলেন। উনিশ শতকের দিকে হয়তো খালটি শুকিয়ে গিয়েছিল এবং হাট হিসেবে ধানমন্ডির গুরুত্বও কমে জায়গাটি জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে অভিজাতদের আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে ধানমন্ডি।
'বাড়ির মুরগি ধরে নিয়ে যেত'
ঢাকা গবেষক আনিস আহমেদ বলেন, 'ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর — এসব ছিল বনজ এলাকা। রাত হলেই আমরা সাপ, তক্ষক, বেজি, বাগডাশ, খাটাশ এগুলোর শব্দ শুনতে পেতাম। এসব প্রাণী বাড়ির মুরগি ধরে নিয়ে যেত অনেক সময়। শিয়ালের ডাক ভেসে আসত বাতাসে। বেজি, বানর তো এখনও আছে।'
তবে মানুষের বসতি ছিল রায়েরবাজারের দিকে। আর কিছুটা ছিল কলাবাগান, কাঁঠালবাগান এলাকায়। এসব এলাকায় জলাশয়ও ছিল বেশ।
ধানমন্ডি লেক থেকে একটি খাল বর্তমান হাতিরঝিল পর্যন্ত ছিল। এ খালের ওপর বানালো হলো পান্থপথ। খালটি হাতিরঝিল হয়ে একদম শীতলক্ষ্যার শাখা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। গুলশান লেক এ খালেরই বিস্তৃত অংশ। গুলশান-বনানীতেও প্রচুর খাল থাকার কথা জানা যায়। তেজগাঁওয়ে খালে মসলিনের সুতো ধোয়া হতো।
গাছগাছালির জন্য উর্বর ছিল ঢাকা
ঢাকাপাঠ গ্রন্থে আনিস আহমেদ লিখেছেন, ঢাকাজুড়ে নবাবদের বাগানবাড়ি ছিল অনেক। মোগল আমলেও বাগ-বাগিচা, উদ্যান যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। পরীবাগ, শাহবাগ, মালিবাগ, লালবাগ ইত্যাদি — বাগ মানেই বাগান। শহরের মানুষের মৌসুমী ফুল ও ফলের প্রয়োজন হাজারীবাগের ফলবাগান থেকে মিটত। ১৯৪৭-এর আগ পর্যন্ত মগবাজারে বেগুন খুব খ্যাত ছিল। ফুলকপি, পাতাকপির মতো অনেক তরকারিও হতো। তেজগাঁও এলাকায় চাষ হওয়া আনারস ঢাকাই আনারস নামে প্রসিদ্ধ ছিল।
শাহবাগ এলাকা ছিল নবাবদের বিলাস নিকেতন। সেখানে এশরাত মঞ্জিল নামক এক বাগানবাড়ি বানিয়েছিলেন তারা। আজিম বখশ জানান, 'শাহবাগ থেকে বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট রাস্তা এখন যা দেখি, এটাও ছিল না। বাংলামোটর দিয়ে ঘুরে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের ভেতর দিয়ে মানুষ বিমানবন্দর এলাকার দিকে যেত। রানি এলিজাবেথের ঢাকায় আসা উপলক্ষ্যে এ রাস্তা হয়। এ সমস্ত জায়গায় ছিল একদম গভীর জলাশয়, মানুষ পড়ে গেলে উঠতে পারবে না এমন।'
তখন সন্ধ্যা হলেই নেমে আসত রাজ্যের অন্ধকার। জনবসতি ছিল কম, লোকজন মাগরিবের আজান পড়লেই সব কাজ চুকিয়ে ঘরে আশ্রয় নিত। ডাকাতির ভয়, ছিনতাইয়ের ভয় তো ছিলই, সেই সঙ্গে ছিল ভূতের ভয়। রমনার ভূত, ঢাকাইয়া ডোবা বা জলার ভূত, মেছো ভূত আরও কত কি! ভূতের ভয়ে আগে মানুষ ঘরে লুকোতো, আর আজ একবিংশ শতাব্দীতে ভূতেরাই বোধহয় ঢাকার জনমানুষের ভয়ে লুকিয়ে আছে…
বিরান ও পরিত্যক্ত এসব অঞ্চলগুলো এখন মানুষে, যানবাহনে, বড় বড় ইটপাথরের দালানে গিজগিজ করছে। পাকিস্তান আমলেই ধীরে ধীরে জনস্রোতে পূর্ণ হতে থাকে এ নগরী। স্বাধীনতার পর সবুজ আর বনাঞ্চলের এ ঢাকা টইটুম্বর হয়ে পড়ে জনবসতিতে। যেখান থেকে আগে বন্যজন্তুর আওয়াজ ভেসে আসত, ভূতের ভয়ে মানুষ অন্ধকার হলে আর একা কোথাও বেরোতো না, সেসব অঞ্চলই আজ মানুষের বিচরণে ত্যক্ত, বিরক্ত!