এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: প্রথম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
উত্তরার বাসা থেকে নিউ ইস্কাটনের অফিসে আসতে আমার সাধারণত প্রায় ৯০ মিনিট সময় লাগে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, এই ১৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া যায় এক ঘণ্টার মধ্যে। আর অশুভ দিনে সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটেরও বেশি।
প্রতিদিন মধ্য ঢাকায় অবস্থিত অফিসে যাতায়াত করা সব উত্তরাবাসীর গল্প প্রায় একই। এই কারণে খুব কম সংখ্যক বন্ধু আমার বাসার এদিকটায় আসে। কেন কখনো কখনো বিমানযাত্রীরা তাদের ফ্লাইট মিস করে তার ব্যাখ্যাও এখান থেকে পাওয়া যায়।
প্রতিদিন বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে আমাকে গুগল ম্যাপ দেখে নিতে হয়। নিউ ইস্কাটনে যেতে আমি কি নিয়মিত সড়ক এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে তেজগাঁও হয়ে মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে যাব নাকি মিরপুর ১২-মিরপুর ১০-ফার্মগেট-বাংলামোটর হয়ে নিউ ইস্কাটন পর্যন্ত এমআরটি-এর অধীনে উত্তরা তৃতীয় ফেজ রোড ধরে এগুবো?
এ ক্ষেত্রে আরো বিকল্প আছে, যেমন বিমানবন্দর সড়ক হয়ে গুলশান-হাতিরঝিল হয়ে মগবাজার। অথবা হতে পারে উত্তরা থার্ড ফেইজ-বেড়িবাধ রোড- গাবতলী-ধানমন্ডি হয়ে নিউ ইস্কাটন। বিকল্প হিসেবে বিশ্বরোডও ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর নিজের গাড়ি ব্যবহার না করলে আরেকটি বিকল্প হলো মেট্রোরেল। সেক্ষেত্রে আমাকে আগারগাঁও থেকে দ্বিতীয় কোনো বাহন নিতে হবে, অথবা দীর্ঘ পথ হেঁটে নিউ ইস্কাটনে পৌঁছাতে হবে।
তবে এখন আমার কাছে নতুন এক বিকল্প আছে। কারণ রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে জনসাধারাণের জন্য একেবারে নতুন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আংশিকভাবে খোলা হয়েছে।
বারবার বলা হচ্ছে, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে এয়ারপোর্ট পয়েন্ট (কাওলা) থেকে ১০ মিনিটে ফার্মগেটে পৌঁছানো যায়। আমার অবশ্য বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট আসতে সময় লেগেছে আরো কম, ৯ মিনিট।
এর আগে হরতাল থাকলে কিংবা শুক্রবার সকালে আমি এমন কম সময়ে নিউ ইস্কাটন যেতে পেরেছি। কিন্তু সাধারণ দিনে কখনো এমন হয় না।
স্বস্তিদায়ক বিষয় হলো, এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশ বা প্রস্থানের সময় কোনো ট্র্যাফিক জ্যাম ছিল না। অন্তত আজ ছিল না।
বাসা থেকে অফিস আসা পর্যন্ত আমার ৪৫ মিনিট সময় লেগেছে। এর প্রধান কারণ আমাকে কারওয়ান বাজার হয়ে ময়মনসিংহ সড়ক ব্যবহার করতে হয়েছে। যে সড়কের অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল।
এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ করা ছিল এক আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। টোলবুথ পর্যন্ত যাওয়া সড়কটি সুপ্রশস্ত। ফলে নির্ধারিত ৮০ টাকা টোল দিতে কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি (যেখানেই নামুন, ট্রাক বা বাস ছাড়া অন্যান্য গাড়ির জন্য টোল ৮০ টাকা)। এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য মানুষ উঠেপড়ে না লাগলে টোল প্লাজা পার হতে সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।
এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চালানোর গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। কিন্তু আপনি গতি আরো বাড়াতে প্রলুব্ধ হবেন- কারণ এই সড়ক ঢাকার রাস্তার প্রধান প্রতিবন্ধকতা বাস থেকে মুক্ত।
বাসে যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা নয়। কিন্তু লোকাল বাস, যেগুলো যত্রযত্র যাত্রী তোলা ও নামাতে পছন্দ করে তাদের এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করার কোনো কারণ নেই।
এক্সপ্রেসওয়ে আপনাকে ঢাকা শহরকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখাবে । দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করায় আপনি কি ভাবছেন যে, ঢাকা দেখতে কেমন তা আপনি জানেন? ভুল। এক্সপ্রেসওয়ে আপনাকে কিছুটা পাখির দৃষ্টিতে ঢাকাকে দেখার সুযোগ দেবে। যেখানে কোনো আবর্জনা নেই, কোনো ঝুলন্ত তার নেই, নির্মাণ খাতের বর্জ্য নেই। আপনি শহরের একটি দীর্ঘ দৃশ্য পাবেন, যা নিচের রাস্তা থেকে পাওয়া সম্ভব না।
দ্রুত এবং আনন্দদায়ক ভ্রমণ শেষে যখন আপনি আবারো নিচের সড়কে নামবেন, তখন আপনার মনে প্রশ্ন আসবে আমি কীভাবে ফার্মগেট থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠব? কারণ প্রস্থান ও প্রবেশের জায়গার দূরত্ব কিছুটা বেশি। ফলে এক্সপ্রেসওয়ে জনপ্রিয় বিকল্প হয়ে ওঠার আগে ব্যবহারকারীদের এই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হতে হবে।
৮০ টাকা টোল কি খুব বেশি মনে হয়েছে?
প্রথমবার এমন মনে হয়নি। কিন্তু প্রতিদিন ব্যবহার করলে কেমন লাগবে জানি না। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা বোঝা যাবে। সময় বাঁচানোর পাশাপাশি এটি আমাকে সড়ক সংশ্লিষ্ট কষ্ট থেকেও মুক্তি দিচ্ছে। প্রতিদিন আমি অশান্ত বাসগুলিকে অভিশাপ দেই, যেগুলি প্রায়শই আমার 'প্লাস্টিক' এর গাড়িতে আঘাত করার চেষ্টা করে। এক্সপ্রেসওয়ে আপনাকে ধ্বংসের এই অনুভূতি থেকে বাঁচায়।
শহরে এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রভাব বুঝতে আমাদের সকলের কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু আমার কোন সন্দেহ নেই যে, যখন পুরো এক্সপ্রেসওয়ে সম্পন্ন হবে, তখন যাতায়াত দ্রুত এবং চাপমুক্ত হবে।