‘মোবাইল কেডি’ মিল্টন: ৬ হাজারের বেশি হারানো ফোন উদ্ধার করেছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা
'হ্যালো স্যার, আমি ভাণ্ডারিয়া থেকে বলছি। আজ দুপুরে লেগুনা থেকে আমার মোবাইল চুরি হয়ে যায়। ইউটিউবে হারানো মোবাইল উদ্ধার নিয়ে অনেক ঘাঁটাঘাটির পর আপনাকে পেলাম। স্যার, আমি আমার মোবাইল কীভাবে উদ্ধার করতে পারি…'
ফোনের ওপার থেকে এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছিলেন বরিশালের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার এক বাসিন্দা। ফোনের এপারে খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিল্টন কুমার দেব দাস মনোযোগ দিয়ে শুনছেন সব। সমস্যা শোনার পর মিল্টনের প্রথম পরামর্শ, 'আপনি আগে থানায় জিডি করুন। সিম তুলে নিন। দুই মাস সময় দিন। এরপর আমার সাথে যোগাযোগ করুন।'
ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তিটি পরামর্শ কতটুকু গ্রহণ করেছেন, তা বোঝা গেল না। কিন্তু প্রতিদিন এমন হাজারো ফোনকল আসে মিল্টন কুমার দেব দাসের কাছে। পেশায় তিনি পুলিশের উপপরিদর্শক। বর্তমানে কর্মরত আছেন ঢাকার খিলগাঁও থানায়। হারানো মোবাইল উদ্ধার করে দেন বলে এক নামে সবাই চেনেন তাকে। কেউ কেউ তাকে ডাকেন 'মিল্টন কেডি' বলে, আবার কারও কাছে তিনি হারানো মোবাইলের ত্রাণকর্তা 'মোবাইল কেডি' নামেও পরিচিত।
এখন পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি মোবাইল উদ্ধার করেছেন বলে জানান মিল্টন। খোয়া যাওয়া মোবাইল খোঁজা অনেকটা খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার মতো। আর সেই সূক্ষ্ম কাজটি বিগত ৮–৯ বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে করে আসছেন পুলিশের উপপরিদর্শক মিল্টন।
কিন্তু কেন মোবাইল
হারানো মোবাইল খোঁজা অনেকটা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই শুরু করেছিলেন মিল্টন কুমার দেব দাস। ছাত্রাবস্থায় নিজের মোবাইল হারানোর পর বুঝতে পেরেছিলেন মোবাইল কতটা প্রয়োজনীয় একটি বস্তু। তার ওপর ব্যক্তিভেদে মোবাইল অত্যন্ত সংবেদনশীল। নিজের মোবাইল খোয়া যাওয়ার পর যে হতাশার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা থেকে অন্যদের রেহাই দেওয়ার জন্যই নিয়েছিলেন এমন উদ্যোগ।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন মিল্টন কুমার দেব দাস। প্রথম কর্মক্ষেত্র ছিল কুষ্টিয়া। এরপর নানান জায়গায় পাড়ি দিয়ে কাজ শুরু করেন ঢাকার খিলগাঁওতে। মিল্টন বলেন, 'ডিজিটাল বা তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর তদন্তের কাজে মোবাইলসংক্রান্ত নানাবিধ তথ্য নিতে হয়। আমরা যারা তদন্ত করি, তারা মোবাইল বিষয়ে বেশি কাজ করি। সেখান থেকে কাজের সুযোগ বাড়ল। তখন হারানো মোবাইলের জিডি এলে সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করতাম। আর সেভাবেই শুরু হলো।'
পুলিশকে জনগণের বন্ধু বলা হলেও পুলিশ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ভিন্ন কিছু ধারণা রয়েছে। আর এই ধারণা ভাঙতেই কাজ করছেন মিল্টন কুমার দেব দাস। মিল্টনের ভাষ্যে, পুলিশের প্রতি মানুষের যে নেতিবাচক ধারণা আছে, তার কিছুটা ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে এই কাজের মাধ্যমে। শুধু তা-ই নয়, তার মাধ্যমে পুরো বাহিনীরই ইতিবাচক উপস্থাপন হচ্ছে জনগণের সামনে।
মিল্টন বলেন, 'আগে হয়তো আমি উদ্ধার করতাম বা বনানী থানার এএসআই কাদিরসহ গুটিকয়েক অফিসার উদ্ধার করতেন। এখন আমাদের দেখাদেখি সারা বাংলাদেশে হারানো মোবাইল উদ্ধার হচ্ছে। প্রত্যেক জেলাতে সাইবার টিম করা হয়েছে, শুধু ফোন উদ্ধারের জন্য। জনগণ যে পুলিশকে বিশ্বাস করছে, সেটার জন্যই ভালো লাগে খুব।'
মোবাইল হারালে করণীয়
মিল্টন জানান, মোবাইল হারালে সর্বপ্রথম জিডি করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে আইএমইআই নাম্বার, মোবাইল নাম্বার এবং মোবাইল সেটের মডেলের বিবরণ। প্রতিটি মোবাইলের সঙ্গে দুটি আইএমইআই নাম্বার যুক্ত থাকে। জিডি করার পরের কাজ হারানো মোবাইলের সাথে যুক্ত থাকা সিম তুলে ফেলা।
জিডির প্রসঙ্গে মিল্টন যুক্ত করেন, 'জিডি করা কিন্তু কেবল ফোন উদ্ধারের জন্য নয়। বরং জিডি করলে নিরাপত্তা বেড়ে যায়। হারানো ফোন এবং সিম দিয়ে যেকোনো অপরাধ হতে পারে। তাই জিডিতে সিম নাম্বার অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। বিকাশ কিংবা নগদ সংক্রান্ত যেকোনো অপরাধ হারানো মোবাইল দিয়েই করা হয়। তাই নিজের নিরাপত্তার জন্য জিডি করা খুবই জরুরি।'
জিডি করার পর শুরু হয় পুলিশের কাজ। প্রথমে সিনিয়র অফিসারেরা হারানো ফোন সংক্রান্ত তথ্য বের করেন। হারানো ফোন কোথায় চালু করা হয়েছে, কী সিম ব্যবহার করা হয়েছে, নতুন ব্যবহারকারীর পরিচয়, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার — এসব তথ্য তারা বের করে পৌঁছে দেন মিল্টন কুমার দেব দাসের মতো পুলিশদের কাছে; যারা হারানো ফোন খোঁজার দায়িত্বে রয়েছেন।
মিল্টন বলেন, 'নানান যাচাই-বাছাইয়ের পর আমরা যখন নিশ্চিত হই ফোন কে ব্যবহার করছে, তখন আমরা উদ্ধারে যাই। যদি আমার নিজের থানার এলাকার মধ্যে হয়, তখন আমি নিজে দলসহ যাই। যদি আমার থানার বাইরে হয় সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার অফিসারদের সাহায্য নেই। যখন ফোন ঢাকার বাইরে জেলা-শহরে চলে যায়, তখন আমরা জেলা শহরের চেয়ারম্যান, মেম্বার বা চৌকিদারদের সাহায্য নিয়ে, তাদের মাধ্যমে উদ্ধার করে ফেরত নিয়ে আসি।'
মোবাইল হারালে জিডি বাংলাদেশের যেকোনো থানাতে করা যেতে পারে। তবে সেই থানার অফিসারের সাথে দুই-তিনমাস নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেন মিল্টন। ন্যূনতম দুই মাস সময় যেকোনো মোবাইল উদ্ধারের জন্যই দেওয়া প্রয়োজন।
মিল্টন বলেন, 'যদি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে না উদ্ধার না হয়, তারপর আমার সাথে যোগাযোগ করলে ভালো হয়। সাধারণত দেখা যায়, মোবাইল চুরি হলেই সবাই প্রথমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শুধু ঢাকা না, সারা বাংলাদেশ থেকে যোগাযোগ করেন। আমি তো আমার জুরিডিকশনের বাইরে জিডি নিতে পারব না।'
সাধারণ জনগণের মধ্যে মোবাইল নিয়ে অসচেতনতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন মিল্টন। তিনি বলেন, 'মোবাইল হারানোর সাথে সাথে এত মানুষের কাছে আইএমইআই নাম্বার এবং জিডির কপি দেয়, কে যে মোবাইল উদ্ধার করে ফেলেছে, সেটাই সে জানতে পারে না।'
চুরি যাওয়া মোবাইল কোথায় যায়?
জিডি করার পর হারানো ফোন খুঁজে পেতে কখনো দুই মাস লাগে আবার কখনো ২–৫ বছরও লেগে যায়। মিল্টনের ভাষ্যে, মোবাইল হারালে চোর কখনো সাথে সাথে ব্যবহার করে না। বরং মোবাইল 'ফ্ল্যাশ' দিয়ে এবং কিছুদিন সময় নিয়ে সেগুলো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করে দেয়। অনলাইন থেকে সেসব মোবাইল অপেক্ষাকৃত কম দামে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার দিয়ে অনেকে কিনে নেয়। ফলস্বরূপ, ক্রেতাই চোরাই মাল বহনের সাক্ষী হয়ে যায়।
হারানো মোবাইলের সবচেয়ে বড় বাজার হলো অনলাইন বাজার। তাছাড়া অনেক বড় বড় দোকানেও বিক্রি হয় এসব ফোন। সিংহভাগ সময় এসব ফোন বিক্রি হয় কোনোরকমের বাক্স ছাড়াই।
মিল্টন বলেন, 'অনেক বড় বড় মোবাইলের দোকানে গিয়ে আমরা হয়তো মনে করি, এখানে ভালো ফোন পাওয়া যাবে। সেসব দোকানে অনেক সময় দোকানদারেরা মোবাইল কেনেন বাক্স ছাড়া। তাদের কাছে হয়তো বলা হয়, এ ধরনের মোবাইল কোনো আত্মীয় বিদেশ থেকে নিয়ে এসেছে, এজন্য কোনো বাক্স নেই। কেবল জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার দিয়ে বড় বড় দোকানের দোকানিরা সেসব ফোন কিনে নিচ্ছেন। এতে কিন্তু মোবাইলের কোনো ডকুমেন্টস পাওয়া যাচ্ছে না, পাওয়া যাচ্ছে ব্যক্তির ডকুমেন্টস। ফোনের মূল ডকুমেন্ট কিন্তু একটাই — বাক্স। এরা হয়তো সঠিকভাবে জানেই না যে কোনোরকম বাক্স ছাড়া মোবাইল রাখলে সেটা চোরাই বা ছিনতাই বা হারানো ফোন হতে পারে। একটা চতুর সংঘবদ্ধ চোরের দল ফোন সেভাবে মোবাইলের বড় দোকানে দিয়ে দেয়।'
মিল্টনের কাছে সাধারণ ফোনের পাশাপাশি আইফোন খুঁজে দেওয়ার আবেদনও আসে অনেক বেশি। পুলিশের এই উপপরিদর্শক বলেন, 'আইফোন হারানোর সাথে সাথে সবাই লোকেশনের দিকে পড়ে থাকে। কিন্তু আইফোনের যত সময় পর্যন্ত অ্যাপেল আইডি ইরেজ না করা হবে, ততসময় সময় পর্যন্ত অ্যাপল আইডি ব্রেক করা বেশ কঠিন। যদি না স্পেশাল চোরের হাতে পড়ে। যারা ছোটখাটো চোর তারা আইফোনের পার্টস খুলে খুলে বিক্রি করে দেয়। আইফোনের আরেকটি অংশ রোহিঙ্গাদের কাছে চলে যায়।'
আইফোনের পাশাপাশি ওয়ানপ্লাস ব্র্যান্ডের মোবাইলের ক্ষেত্রেও পার্টস খুলে বিক্রি করার দিকটি দেখা যায়। কারণ ওয়ানপ্লাস মোবাইল চুরির পর বিক্রির জন্য যদি ফ্ল্যাশ করা হয় তবে ফোনের ওপর সবুজ রঙের রেখা পড়ে। আর তাতে চোরাই ফোন বিক্রি করা চোরের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই তারা পার্টস খুলে বিক্রিকেই শ্রেয় বলে মনে করে।
মোবাইল কিনতে হবে আইএমইআই নাম্বার মিলিয়ে
বড় বা ছোট যেকোনো দোকান থেকে মোবাইল কেনার সময় বাক্সসহ কেনার পরামর্শ দেন মিল্টন। আরও ভালো হয় যদি মোবাইল কেনার সময় মোবাইলের সাথে আইএমইআই নাম্বার পরীক্ষা করে কেনা যায়। কারণ অনেকসময় দোকানিরা অন্য মোবাইলের বাক্সে এসব চোরাই বা হারানো ফোন দিয়ে দেয়। ফলে ক্রেতার অজান্তেই তার হাতে চলে আসে চোরাই ফোন। তাই মোবাইল কেনার সময় *#০৬# ডায়াল করে ডিসপ্লেতে আসা আইএমইআই নাম্বারের সাথে বাক্সের আইএমইআই নাম্বার মিলিয়ে কিনলে নিরাপদে থাকা যায়।
মিল্টন বলেন, 'আপনি সেকেন্ড-হ্যান্ড মোবাইল কেনেন, কোনো ব্যাপার না। শুধু বাক্সে থাকা আইএমইআই নাম্বার মিলিয়ে কিনবেন। কিন্তু যত দামী ফোন কিনবেন বাক্স ছাড়া, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখবেন চোরাই ফোন।'
চোরাই মোবাইল যদি কোনোভাবে দেশের বাইরে চলে যায় তবে তা উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। তবে ভারত থেকে আসা চোরাই ফোন বাংলাদেশে উদ্ধার করার অভিজ্ঞতা মিল্টনের হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমাকে জানানো হয়েছিল, ভারত থেকে আসা ফোনে বাংলাদেশি সিম ব্যবহার করে ব্যবহার করা হচ্ছে। এরকম দুটি ফোন আমি উদ্ধার করেছি। এগুলো ছাড়াও কলকাতা থেকে একটি আইফোন চুরি যাওয়ার পর তার লোকেশন বাংলাদেশ দেখাচ্ছিল। কিন্তু এখনো মোবাইলটি চালু না হওয়ায় উদ্ধার করতে পারিনি।'
চোরাই মাল বহনে শাস্তি?
চোরের পাশাপাশি যারা চোরাই মাল বহন করবেন তারাও শাস্তির আওতায় থাকবেন — এমন বিধান ১৮৬০ সালে প্রণীত দণ্ডবিধি আইনে রয়েছে। দণ্ডবিধি আইনের অধ্যায় ১৭-এর ৪১০ থেকে ৪১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চোরাই সম্পত্তি গ্রহণপরবর্তী যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হতে হবে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
দণ্ডবিধির ৪১১ ধারা অনুযায়ী, জানার পরও যদি কোন ব্যক্তি কোন চোরাইমাল অসাধুভাবে গ্রহণ করেন বা দখলে রাখেন, তখন উক্ত ব্যক্তি ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
অর্থাৎ চোরাই মাল বহন করাও চুরির কাছাকাছিই অপরাধ। তবে শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়ও রয়েছে। চোরাই মাল যদি কোনোক্রমে এর প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত চলে আসে বা দখলের অধিকারী ব্যক্তির নিকট চলে আসে, তাহলে উক্ত সম্পত্তি আর চোরাই মাল বলে গণ্য করা হবে না।
শিক্ষার্থীরাই চোরাই মোবাইলের মূল ক্রেতা!
কম দামে পাওয়া যায় বলে অজান্তেই অধিকাংশ সময় চোরাই মোবাইলের ক্রেতা হন শিক্ষার্থীরা। কোনোরকমের বাক্স ছাড়াই কম দামে যাচাই-বাছাইহীনভাবেই মোবাইল কেনেন তারা। পরবর্তী সময়ে হারানো মোবাইল যখন তাদের কাছে পাওয়া যায়, তখন পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে। আইন অনুযায়ী চোরাই মাল বহনে শাস্তির বিধান থাকলেও মানবিকতার খাতিরে অনেকসময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয়।
মিল্টন বলেন, 'না বুঝে কিনলেও ক্রেতা অপরাধ করেছে। এখন মোবাইলটি যদি ডাকাতির কোনো জিনিস হতো বা যে মার্ডার করে মোবাইল ফেলে গেছে এবং সেটি আপনি কিনেছেন, তাতেও ছাড়ার কোনো সুযোগ থাকত না। তাকে জেলে যেতে হতো। ক্রেতা বাক্স ছাড়া ফোন না কিনলে এই সমস্যায় পড়বে না। এমনকি বন্ধুর কাছ থেকে মোবাইল কিনলেও বাক্সসহই কিনতে হবে।'
হারানো মোবাইল উদ্ধার করতে গিয়ে ভালো-খারাপ সব ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন মিল্টন কুমার দেব দাস। খারাপ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে গিয়ে উল্লেখ করেন গাজীপুরের একটি ঘটনা।
'চার-পাঁচ মাস আগে আমার থানাতেই জিডি করা একটি হারানো মোবাইলের খোঁজ পাওয়া যায় গাজীপুরে। আমি সেই নাম্বারে সরাসরি ফোন দিই এবং পুলিশের পরিচয় দিয়ে বিস্তারিত কথা বলি। মোবাইলটি একজন কলেজ-পড়ুয়া মেয়ের কাছে ছিল। তিনি আমাকে এত পরিমাণ গালি দিলেন! শুধু গালি নয়, তিনি বলেছেন আমার নামে মামলা করবেন এবং আমি ভুয়া পুলিশ। তিনি গাজীপুরের থানাতেও গিয়েছিলেন আমার নামে অভিযোগ করতে। আমি তার সঙ্গে সরকারি নাম্বার থেকেই যোগাযোগ করেছিলাম। পরে সেই থানার অফিসার যখন তাকে বুঝিয়েছেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন,' হেসে বলেন মিল্টন।
তাছাড়া ভালো অভিজ্ঞতার কথাও বলেন মিল্টন। একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর হারানো মোবাইল উদ্ধার করে হাতে তুলে দিয়েছেন। 'সেসময় যে অনুভূতি হয়েছিল, সেটা অনেক বড় পাওয়া', বলেন তিনি।
অবলম্বন করতে হবে সচেতনতা
রিক্সার ওপরে সেলফি তোলা এবং বাসে জানালার পাশে বসে মোবাইল চালানো — দুটি বিষয়ের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মিল্টন কুমার দেব দাস। তিনি বলেন, 'মোবাইল হাতে রাখা সবচেয়ে ভালো। মোবাইল ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেশি হারায়। শপিং করতে গিয়ে মেয়েরা ব্যাগে ফোন রাখে, আর তাতে চুরি হয় বেশি।'
মোবাইল হাতে এবং সামনের পকেটে রাখলে চুরি হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কমে যায় বলে জানান মিল্টন।
পরিবারের সদস্যদেরও ভরসার জায়গা মিল্টন কুমার দেব দাস। তাদের কারও মোবাইল হারালেও ডাক পড়ে মিল্টনের। একগাল হেসে মিল্টন বলেন, 'বাংলাদেশের যেখানেই ফোন হারাক, প্রথম কলটা আমার কাছেই আসে। আমার নাম্বার এখন জাতীয় নাম্বার হয়ে গেছে!'