শেষ উপন্যাস নষ্ট করে ফেলার নির্দেশ ছিল মার্কেসের, কিন্তু সেটি প্রকাশ করছেন ছেলেরা
জীবনের শেষদিকে, স্মৃতিশক্তির অবস্থা যখন সঙিন, সেই সময় একজন মধ্যবয়সি নারীর গোপন যৌনজীবন নিয়ে একটি উপন্যাসের কাজ শেষ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। অন্তত পাঁচবার পাঁচভাবে উপন্যাসটি লেখেন তিনি। বছরের পর বছর লেখায় কাটাছেঁড়া করেন, মার্জিনে নোট নেন, বিশেষণ বদলান, সহকারীকে নোট দেন। অবশেষে হাল ছেড়ে দেন মার্কেস, নেন এক ভয়াবহ সিদ্ধান্ত।
'তিনি আমাকে সরাসরি বললেন যে উপন্যাসটা নষ্ট করে ফেলতে হবে,' জানান লেখকের ছোট ছেলে গনজালো গার্সিয়া বার্কা।
২০১৪ সালে মার্কেস মারা যাওয়ার পর ইউনিভার্সিটি অভ টেক্সাসের হ্যারি র্যানসম সেন্টারে তার আর্কাইভে উপন্যাসটির অনেকগুলো খসড়া, নোট আর বিভিন্ন অধ্যায়ের খণ্ড খণ্ড অংশ রেখে দেওয়া হয়। ৭৬৯ পৃষ্ঠার বেশি আয়তনের গল্পটি ওখানেই পড়ে রইল। ওটা প্রায় বিস্মৃত ও অপঠিতই রয়ে গেল—মার্কেসের ছেলে প্রয়াত বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার আগপর্যন্ত।
তার সুবাদেই মৃত্যুর দশ বছর পর এ মাসে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০টি দেশে প্রকাশিত হচ্ছে মার্কেসের শেষ উপন্যাস 'আনটিল অগাস্ট'। এ উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে ম্যাগদালেন বাক নামের এক নারীকে কেন্দ্র করে, যে প্রতি আগস্টে মায়ের কবর দেখতে একটি ক্যারিবিয়ান দ্বীপে যায়। স্বামী ও পরিবার থেকে সাময়িকভাবে মুক্ত হয়ে এই যাত্রায় যাওয়ার সময়ই প্রতিবারই তার একজন নতুন প্রেমিক জুটে যায়।
উপন্যাসটি নোবলজয়ী, তুমুল জনপ্রিয় সাহিত্যিক মার্কেসের জীবন ও কাজে এক অপ্রত্যাশিত উপসংহার যোগ করেছে। লেখকের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে প্রকাশক ও সাহিত্যিক উত্তরাধিকারীদের কীভাবে মরণোত্তর লেখাপত্র প্রকাশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত—এ উপন্যাস সম্ভবত সেই প্রশ্নও তুলে দেবে।
লেখকের শেষ ইচ্ছা উপেক্ষা করে তার মৃত্যুর পর লেখা প্রকাশ এবং বিখ্যাত হওয়ার নজির অনেক আছে। উত্তরাধিকারীরা ওই লেখকদের অন্তিম ইচ্ছা উপেক্ষা না করলে ওসব লেখা পড়ার সুযোগ হতো কারোরই।
কবি ভিজিল মৃত্যুশয্যায় তার মহাকাব্যিক কবিতা 'দি ইনিড' নষ্ট করে ফেলতে বলেছেন বলে লোকশ্রুতি রয়েছে। ফ্রাঞ্জ কাফকা যখন যক্ষ্মায় গুরুতর অসুস্থ, তখন বন্ধু ম্যাক্স ব্রডকে বলেছিলেন তার সমস্ত কাজ যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়। কিন্তু তার কথা মানেনি ব্রড। আর ওই 'বিশ্বাসঘাতকতার' কারণেই 'দ্য ট্রায়াল', 'দ্য কাসল', 'আমেরিকা'র মতো ধ্রুপদি কাজ পড়ার সুযোগ পেয়েছে মানুষ।
ভ্লাদিমির নভোকভ মৃত্যুর আগে তার শেষ উপন্যাস 'দি অরিজিনাল অভ লরা' নষ্ট করে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন পরিবারকে। কিন্তু লেখকের মৃত্যুর ৩০ বছরের বেশি সময় পর তার ছেলে ওই অসমাপ্ত লেখা প্রকাশ করেন।
মৃত্যুর আগে লেখা সিংহভাগ কাজই লেখকেরা সমাপ্ত করে যেতে পারেন না। তাদের লেখা অনেকক্ষেত্রেই দুর্বোধ্য থাকে। কাজেই মৃত্যুর পর এসব লেখা প্রকাশিত হবার পর লেখক ও পণ্ডিতজনদের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যায়: এসব লেখা কতটা সম্পূর্ণ, এবং পাণ্ডুলিপিতে সম্পাদকেরা কতটা কাঁচি চালিয়েছেন?
মাঝে মাঝে লেখকের ব্র্যান্ডের ফায়দা লোটার জন্যে নিম্ন মানের অথবা অসমাপ্ত কাজ প্রকাশ করে দেওয়ার জন্য তার উত্তরাধিকারী ও এস্টেটের কড়া সমালোচনা করেছেন পাঠক ও পণ্ডিতজনেরা।
'আনটিল অগাস্ট' প্রকাশ করা উচিত কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে বেশ জটিলটায় পড়ে গিয়েছিলেন মার্কেসের ছেলেরা। কারণ, লেখকের একের পর এক পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত। কিছুদিন তিনি মহা উৎসাহে পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করে তার সাহিত্য এজেন্টের কাছে খসড়া পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্মৃতিভ্রংশ ঘটার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে কাজটি যথেষ্ট ভালো হয়নি।
২০১২ সাল নাগাদ দেখা গেল, মার্কেস তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর পরিবারের সদস্যদেরও চিনতে পারছেন না। তার ছেলে জানান, ওই সময় তিনি স্ত্রী মার্সিডিজ বার্কাসহ অল্প কয়েকজনকে চিনতে পারতেন শুধু। ঠিকমতো কথা বলতেও কষ্ট হতো তার। মাঝে মাঝে নিজের কোনো বই তুলে নিয়ে পড়তে বসে যেতেন, নিজের লেখা নিজেই চিনতে পারতেন না।
মার্কেস ওই সময় তার পরিবারকে বলেছিলেন, স্মৃতিশক্তি হারিয়ে নিজেকে তার দিকভ্রান্ত মনে হচ্ছে, কারণ স্মৃতিই ছিল তার লেখালেখির সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। পরিবারের সদস্যদের বলেছিলেন, স্মৃতি ছাড়া তিনি 'কিছুই না'। জীবনের ওই হতাশাগ্রস্ত অধ্যায়ে নিজের উপন্যাসের মান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হতে থাকে তার মনে।
মার্কেসের বড় ছেলে রদ্রিগো গার্সিয়া বলেন, 'গ্যাবো বইয়ের ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি বোধহয় প্লটও বুঝতে পারতেন না।'
তার মৃত্যুর কয়েক বছর পর 'আনটিল অগাস্ট' পড়ে তার ছেলেদের মনে হয়েছে, মার্কেস সম্ভবত নিজেকে অনেক বেশি কড়াভাবে সমালোচনার বাটখারায় ফেলেছিলেন। তাদের কাছে বইটিকে মার্কেসের বিচারের চেয়ে অনেক ভালো মনে হয়েছে।
তার সন্তানেরা অবশ্য স্বীকার করেন, বইটি মার্কেসের মাস্টারপিস লেখার তালিকায় থাকবে না। তাদের আশঙ্কা, কেউ কেউ ধরে নেবেন এত বছর পর বাবার নাম ব্যবহার করে কিছু বাড়তি টাকা কামানোর চেষ্টায়ই বইটি প্রকাশ করেছেন তারা।
রদ্রিগো বলেন, 'আমাদের লোভী হিসেবে দেখা হবে, এ নিয়ে আমরা চিন্তিতও ছিলাম।'
মার্কেসের 'ওয়ান হানড্রেড ইয়ারস অভ সলিচিউট' বিক্রি হয়েছে ৫০ মিলিয়ন কপির বেশি। 'লাভ ইন দ্য টাইম অভ কলেরা' তার আরেক মাস্টারপিস। এসব মাস্টারপিস জাদুবাস্তব ঘরানার বইয়ের তুলনায় 'আনটিল অগাস্ট' বেশ সাধারণ মানের কাজ। ১২ মার্চ প্রকাশ হবে উপন্যাসটির ইংরেজি সংস্করণ, অনুবাদ করেছেন অ্যান ম্যাকলিন। এ সংস্করণের পৃষ্ঠাসংখ্যা মাত্র ১০৭।
দুই ভাইয়ের মতে, উপন্যাসটি মার্কেসের কাজের মহাফেজখানায় মূল্যবান সংযোজন হবে। এর একটি কারণ হচ্ছে, উপন্যাসটি লেখকের সম্পূর্ণ নতুন এক সত্তা উন্মোচন করেছে। এই প্রথম তিনি কোনো নারী প্রধান চরিত্রের বয়ানে বই লিখেছেন। চল্লিশের কোঠার শেষের দিকের এক নারীর অন্তরঙ্গ গল্প বলেছেন, যে বিয়ের প্রায় তিন দশক পর অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও নিজেকে পরিপূর্ণ করার পথ খুঁজছে।
তারপরও খোদ মার্কেস অসমাপ্ত বিবেচনা করেছিলেন, এমন কাজটা কাজ প্রকাশ করা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন কিছু পাঠক ও সমালোচক।
'আনটিল অগাস্টে'র পাণ্ডুলিপিতে অনেক ফুটনোটও লিখেছিলেন লেখক।
নিজ দেশ কলম্বিয়ার মুদ্রাতে ঠাঁই পেয়েছে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের চেহারা। সেখানকার সাহিত্য মহলে 'আনটিল অগাস্ট' নিয়ে প্রত্যাশা ও আগ্রহের পারদ তুঙ্গে। মার্কেসের যেকোনো নতুন কাজের জন্য, সেটি যতই অসম্পাদিত হোক না কেন, তারা সাগ্রহে অপেক্ষা করেন। তবু উপন্যাসটি যেভাবে বিক্রি হচ্ছে, তা নিয়ে সন্দিগ্ধ কেউ কেউ।
কলম্বিয়ান লেখক ও সাংবাদিক হুয়ান মোসকোয়েরা বলেন, 'বইটি ওরা পাণ্ডুলিপি বা অসমাপ্ত কাজ হিসেবে প্রকাশ করছে না, করছে গার্সিয়া মার্কেসের শেষ উপন্যাস হিসেবে। বইটি নিয়ে যেসব বড় বড় কথা বলা হচ্ছে, তা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার মনে হয় এখানে গার্সিয়া মার্কেসের স্বাক্ষর আর ব্র্যান্ডের ব্যাপক বাণিজ্যিক ফায়দা লোটা হচ্ছে।'
কলম্বিয়ান ঔপন্যাসিক হেক্টর অ্যাবাড বলেন, প্রথমে বইটি নিয়ে তার মনে সন্দেহ ছিল, কিন্তু একটা অ্যাডভান্স কপি পড়ার পর তার চিন্তা বদলে গেছে।
তিনি এক ইমেইলের মাধ্যমে বলেন, 'আমার আশঙ্কা ছিল কাজটা বাণিজ্যিক ফায়দা লোটার জন্য করা হতে পারে। কিন্তু না, ব্যাপারটা একেবারেই উল্টো। যেসব গুণ গার্সিয়া মার্কেসকে চরম উৎকর্ষ দিয়েছে, তার সবকিছুই রয়েছে বইটিতে।'
মার্কেস যে একপর্যায়ে উপন্যাসটিকে প্রকাশের যোগ্য মনে করেছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ১৯৯৯ সালে মাদ্রিদে ঔপন্যাসিক হোসে সারামাগোর সঙ্গে এক প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে উপন্যাসটি থেকে কয়েকটি অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান। পরে গল্পটির অংশবিশেষ স্পেনের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা 'এল পাইস' ও 'দ্য নিউ ইয়র্কারে'ও ছাপা হয়েছিল। স্মৃতিকথা লেখার জন্য এ বইয়ের কাজ বন্ধ রাখেন তিনি। এরপর 'মেমোয়ারস অভ মাই মেলানকোলি হোরস' উপন্যাসও লেখেন। উপন্যাসটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পায়। 'আনটিল অগাস্ট' নিয়ে ফের ২০০৩ সালে নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন। এক বছর বাদে উপন্যাসটি তার এজেন্ট, প্রয়াত কারমেন বলসেলসের কাছে পাঠান।
২০১০ সালের গ্রীষ্মে সম্পাদক ক্রিস্টোবল পেরাকে কল করেন বলসেলস। মার্কেসের স্মৃতিকথায় কাজ করেছিলেন পেরা। অশীতিপর মার্কেস একটা উপন্যাস শেষ করার চেষ্টা করছেন জানিয়ে পেরার সাহায্য চান বলসেলস। কাজ নিয়ে দারুণ উত্তেজিত ছিলেন মার্কেস। কয়েক মাস পর উপন্যাসটির কয়েকটা অধ্যায় পড়তে দেন তিনি পেরাকে। এর এক বছর পর স্মৃতিশক্তি হারাতে শুরু করেন মার্কেস, তখন থেকেই লেখা দাঁড় করানো কঠিন হতে থাকে মার্কেসের জন্য। তবে পাণ্ডুলিপির মার্জিনে নোট লিখতে থাকেন তিনি।
পেরা বলেন, 'কাজটা তার জন্য থেরাপির মতো ছিল, কারণ তখনও তিনি কাগজ-কলম দিয়ে কিছু করতে পারছিলেন।'
'আনটিল অগাস্ট' সম্পাদনা করেছেন পেরা। তিনি বলেন, 'তার সঙ্গে তিন কি চার অধ্যায় পড়ার পর সবার আগে আমার মাথায় যে চিন্তা এসেছিল, তা হলো, তার পাঠকদের এই অসাধারণ গল্পটা উপভোগ করার সুযোগ করে দিতে চাই আমি।'
পেরা মার্কেসকে বইটি প্রকাশ অনুরোধ করেন, কিন্তু লেখক দৃঢ়ভাবে দ্বিমত জানান। সেই স্মৃতি রোমন্থন করে পেরা বলেন, 'তিনি বলেছিলেন, জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমার আর কোনোকিছু প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই।'
৮৭ বছর বয়সে মার্কেস মারা যাবার পর 'আনটিল অগাস্টে'র বিভিন্ন সংস্করণ রাখা হয় র্যানসম সেন্টারের আর্কাইভে।
দুই বছর আগে মার্কেসের ছেলেরা সিদ্ধান্ত নেন, লেখাটা নতুন করে একবার পড়ে দেখবেন। পাণ্ডুলিপিতে উপন্যাসটি হযবরল অবস্থায় ছিল। কিছু পুনরাবৃত্তি আর পরস্পরবিরোধী অংশ ছিল বলে। তবে এসব খামতি থাকার পরও কাজটিকে পূর্ণাঙ্গ মনে হয়েছে তাদের।
উপন্যাসটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এক গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেলেন দুই ভাই। কাজ সমাপ্ত করার বিভিন্ন পর্যায়ে উপন্যাসটির অন্তত পাঁচটি সংস্করণ রেখে গেছেন মার্কেস। তবে কোন সংস্করণটি নিজের পছন্দ, সে ব্যাপারে সূত্রও দিয়ে গেছেন।
গার্সিয়া বার্কা বলেন, 'একটি সংস্করণ যে ফোল্ডারে রাখা হয়েছিল, তাতে লেখা ছিল, "গ্র্যান ওকে ফাইনাল"। উপন্যাসটি মোটেই ভালো হয়নি, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ কথা লিখেছিলেন।'
গত বছর পেরাকে উপন্যাসটি সম্পাদনা করতে বলেন তারা। পাঁচ নম্বর সংস্করণ নিয়ে কাজ শুরু করেন পেরা। ওটা লেখা হয়েছিল ২০০৪ সালে—ওতেই লেখা ছিল, 'গ্র্যান ওকে ফাইনাল'। বাকি সংস্করণগুলোও দেখেছেন পেরা। মার্কেসের সহকারী মনিকা আলোনসোর কাজ থেকে লেখকের বিভিন্ন নোট আর সংশোধনীও সংগ্রহ করেছেন। কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই একই বাক্য বা বাক্যাংশের একাধিক সংস্করণ থেকে কোনটা বেছে নেবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেছেন পেরা। দেখা গেল টাইপ করে পাণ্ডুলিপিতে একটি বাক্য বা বাক্যাংশ লিখেছেন, আবার মার্জিনে ওই বাক্য বা বাক্যাংশই অন্য ছাঁচে লিখে গেছেন মার্কেস।
প্রধান চরিত্র মধ্যবয়সি নাকি প্রায়-বৃদ্ধ, তার প্রেমিকদের গোঁফ আছে কি নেই—লেখকের এরকম অসংগতি ও পরস্পরবিরোধী অংশগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন পেরা।
সংগতি রক্ষার্থে পেরা ও মার্কেসের সন্তানেরা একটি নিয়ম সর্বসম্মতিক্রমে অনুসরণ করেছেন: মার্কেসের নোট বা বিভিন্ন সংস্করণের বাইরে থেকে এনে একটি শব্দও তারা ঢোকাননি উপন্যাসটিতে।
মার্কেসের অপ্রকাশিত অন্যান্য কাজের নিয়তি কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তার ছেলেরা বলেছেন, তাদের কখনও সেই অগ্নিপরীক্ষায় পড়তে হবে না: কারণ, লেখকের আর কোনো অপ্রকাশিত লেখা নেই। মার্কেস সারা জীবনই নিয়ম করে তার প্রকাশিত লেখাগুলোর পুরনো সব সংস্করণ এবং অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি নষ্ট করেছেন। কারণ পরবর্তীতে ওসব কাজ পাঠক-সমালোচক-গবেষকদের আতশকাচের নিচে পড়ুক, তা তিনি চাননি।
'আনটিল অগাস্ট' প্রকাশের এটিও একটি বড় কারণ বলে জানিয়েছেন তার সন্তানেরা।
গার্সিয়া বার্কা বলেন, 'এ বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর গ্যাবোর সমস্ত কাজ প্রকাশিত অবস্থায় পেয়ে যাব আমরা। দেরাজবন্ধ আর কোনো অপ্রকাশিত লেখা নেই।'
- ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ: মারুফ হোসেন