ঢাকায় রিকশার হুডগুলো কেন ছোট হয়ে আসছে?
সিপাহীবাগের মনির মিস্ত্রির গ্যারেজ থেকে সবেমাত্র রিকশাটি বের করেছেন সজল মিয়া। তার রিকশায় চড়ার পর প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে হুড খুলে দিতে বললাম। সজল মিয়া ভাঁজ অবস্থায় থাকা হুডটি সজোরে টান দিলেন। আর সেটি এসে লাগল আমার মাথায়।
এটি হওয়ার কথা নয়। কারণ, সাধারণ বাংলাদেশি রিকশাগুলো দুইজন মানুষ বসার জন্য যথেষ্ট। কখনও কখনও একটি রিকশায় তিনজনও চড়ে থাকেন। হুড খোলা অবস্থায়ও দু'জন মাঝারি দেহের মানুষ বেশ আরামে এটিতে বসতে পারেন।
মাথায় ব্যথা নিয়ে সজল মিয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'আপনার রিকশা এতটা চাপা কেন?' উত্তরে সজল মিয়া বললেন, 'ম্যাডাম, আমরা রিকশা ঠিকই আছে। বরং আপনিই অনেক লম্বা।'
তার এ কথা আমার কাছে একেবারেই নতুন মনে হলো। কারণ, ৫ ফুট ২ ইঞ্চি গড় উচ্চতার এক নারীর জন্য এমন কথা এর আগে আমি কখনোই শুনিনি।
এটি যে একবারই ছিল তা নয়। এর পরেও উচ্চতা আর ওজন নিয়ে আমাকে রিকশাচালকদের কাছ থেকে একই কথা শুনতে হয়েছে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, দিন দিন রিকশার আকার ছোট হচ্ছে। যেহেতু পরিবহনের এই মাধ্যমটির সঙ্গে আমি আমার বিএমআইয়ের (বিএমআই বা বডি মাস ইনডেক্স হলো একটি গাণিতিক ফর্মুলা, যার মাধ্যমে আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত, তা নির্ণয় করা যায়) সমন্বয় করতে পারছিলাম না, তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম।
এ নিয়ে রিকশা মিস্ত্রি ও রিকশা গ্যারেজের মালিক মো. মনিরুদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বললেন, 'আকার অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের রিকশা রয়েছে। যেমন, কুমিল্লা রিকশা, নারায়ণগঞ্জ রিকশা, ঢাকা রিকশা ইত্যাদি। ঢাকার রিকশার চেয়ে কুমিল্লা স্টাইলের রিকশার আসন তুলনামূলক চওড়া।'
ঢাকার রিকশাগুলোর আকার ছোট হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ঢাকার রিকশাগুলোর গড় উচ্চতা সাধারণত ভূমি থেকে ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি থেকে ৬ ফুট। এগুলো খুব ভারি। কিন্তু রিকশাওয়ালারা সেসব রিকশা চালাতে চান যেগুলো হালকা ও নিয়ন্ত্রণে কম শক্তি লাগে। তবে এর অর্থ এই নয় যে ঢাকার সব রিকশাই ছোট।'
মোটর বা ইঞ্জিনচালিত রিকশার সংখ্যা বাড়ছে। এগুলো চলেও বেশ জোরে। ঐতিহ্যবাহী সাইকেল রিকশাগুলো এসব রিকশার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর রিকশা ছোট হলে চালকরা সেটি আরও জোরে চালাতে পারেন।
রশিদ আলী নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, ''ইঞ্জিনচালিত রিকশাগুলো জোরে চলে। লোকজনও তাই বেশিরভাগ এসব রিকশাতেই উঠতে চান। আর সাইকেল রিকশায় কখনো কখনো তিন বা চারজন যাত্রী চড়লেও তারা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে চান না। এ কারণে সাইকেল রিকশা ছোট হওয়াই আমি একদিক থেকে ভালো মনে করি।''
টোকিওর হাতে টানা রিকশা থেকে সাইকেল রিকশা
১৮৬৮ সালে সর্বপ্রথম জাপানে হাতে টানা রিকশার প্রচলন শুরু হয়। সে সময়ে এটিকে বলা হতো জিনরিকিশা (জিন অর্থ মানুষ, রিকি অর্থ শক্তি বা বল, আর শা অর্থ বাহন)। শব্দগুলোকে যোগ করলে অর্থ দাঁড়ায় মানুষের শক্তিতে চলা বাহন বা মানুষ চালিত বাহন।
এ বাহনটি ছিল দুই চাকার। যারা এ রিকশা টানতেন তাদের বলা হতো 'কুলি'। সে সময় এ রিকশা চলাফেরার বাহন হিসেবে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে অল্প সময়ের মধ্যেই এটি চীন (সাংহাই), হং কং, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে এটি ছিল একটি ব্যক্তিগত পরিবহন। পরে ১৯ শতকের শেষের দিকে এটি এশিয়ার বিভিন্ন শহরে গণপরিবহনের সস্তা একটি বাহন হয়ে ওঠে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির পাওয়ার হাউস মিউজিয়ামে ১৮৮০ সালে তৈরি ১২০ বছরের পুরনো একটি রিকশা সংরক্ষিত আছে। এ রিকশার বর্ণনায় লেখা রয়েছে, রিকশা, কিংবা জিনরিকিশা হলো দুই চাকার এমন এক গাড়ি বা বাহন, যেটি হালকা, দরজাবিহীন ও এর দেহ চেয়ারের মতো। এর রয়েছে কোলাপসিবল (গুটানো যায় এমন) হুড ও কাঠের তৈরি দুইটি হাতল। হাতল দুইটি কালো রংয়ের বার্নিশযুক্ত।
হাতে টানা রিকশার উৎপত্তিস্থল জাপান হলেও সাইকেল রিকশার ব্যাপক ব্যবহার দেশটিতে কখনোই দেখা যায়নি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৪০ সালে টোকিওতে ৮.২ মিলিয়ন বাইসাইকেল ছিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যখন পেট্রোল ও মোটরচালিত বাহনের সংকট দেখা দেয়, তখন রিনতাকু বা পেডিক্যাবের (সাইকেল রিকশা) ব্যবহার দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ১৯৫৯ সালের মধ্যে জাপান থেকে এসব বাহন উঠে যায়।
১৯২৯ সালে প্রথমবারের মতো সিঙ্গাপুরে সাইকেল রিকশার ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। ১৯৫০ সালের মধ্যে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার প্রতিটি দেশে এ রিকশার ব্যবহার শুরু হয়।
লাক্ষ্মৌতে (ভারত) যেখানে ১৯৪৪ সালে রিকশার সংখ্যা ছিল মাত্র ৪১২টি, সেখানে ১৯৭৭ সালে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজারটি। কলকাতায় সাইকেল রিকশার প্রচলন শুরু হয় ১৯৩০ সালে। বাংলাদেশে এ রিকশা আসে ১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে। আর ঢাকায় আসে ১৯৩৮ সালে।
ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিষয়ের অধ্যাপক সেলিম রশিদের মতে, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জের পর তৃতীয় শহর হিসেবে ঢাকায় রিকশার প্রচলন শুরু হয়।
১৯৯২ সালের দ্য রিকশাস অব বাংলাদেশ বইতে সেলিম রশিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ''১৯৩৮ সালে সূত্রাপুরের একজন বাঙালি জমিদার এবং ওয়ারীর একজন মাড়োয়ারি ভদ্রলোক ছয়টি রিকশা কিনেছিলেন এবং ঢাকা শহরে এগুলো চালু করার চেষ্টা করেছিলেন।
রিকশাগুলো কলকাতা থেকে আনা হয়েছিল। এগুলোর ডিজাইনও ছিল বর্তমান রিকশাগুলোর চেয়ে আলাদা। এগুলোর ছিল কালো চামড়ার সিট। হুড ছিল খাকি কাপড়ের। ১৯৫০ এর দশকে এসব রিকশায় যুক্ত হয় রঙ-বেরঙের সাজ ও নকশা।
রবার্ট গ্যালাঘার তার দ্য রিকশাস অব বাংলাদেশ বইতে বলেছেন, ''এটি ছিল হাতে টানা রিকশা ও বাইসাইকেলের সমন্বয়ে তৈরি। পরে ঢাকার মেকানিক ও কারিগররাও এই আদলে রিকশা তৈরি করতে শুরু করেন।''
অতি উচ্চতা ও অতিরিক্ত ওজন চালকদের জন্য রিকশা চালানো কঠিন করে তোলে
বাংলাদেশজুড়ে ঐতিহ্যবাহী রিকশার ডিজাইনে তেমন কোনো তফাৎ নেই। ঢাকা, কুমিল্লা, খুলনা, সিলেট ও বরিশালে চার থেকে পাঁচ ধরনের রিকশা দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে পার্থক্য খুবই ছোট এবং আয়তন বা মাপের সাথে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ- কুমিল্লার রিকশাগুলোর হুড বর্গাকৃতির এবং ঢাকার রিকশাগুলোর চেয়ে এই রিকশাগুলোর সিট বেশ প্রশস্ত।
গ্যালাঘার তার বইতে বলেছেন, স্থানীয় দুটি উদ্ভাবন যেমন সিলেটের ব্রেক ও যশোরের চাকা ছাড়া ''রিকশার ডিজাইন সারা বাংলাদেশে প্রায় একই এবং ১৯৩০ সালের দশকে সাইকেল রিকশা চালুর পর থেকে এর ডিজাইনে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি।''
একটি রিকশার কয়েকটি অংশ থাকে। যেমন, ক্যাপ (রৌদ্র/রোদনিবারক ছাতার মতো, যা হুড থেকে সামনের দিকে বর্ধিত একটি অংশ)। রিকশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির কাছে হুড 'কামানি' নামে পরিচিত। এটি বাঁশের পাঁচটি ফালি দিয়ে তৈরি করা হয়। এর দুই পাশে যুক্ত থাকে দুইটি লোহার কব্জা, যেটি হুড খোলা ও ভাঁজ করতে ব্যবহৃত হয়। যাত্রীর আরাম করে বসার জন্য সিটের দুই পাশে কিংবা পেছনে থাকে 'ঢেলনা'। সিটকে সাধারণত বলা হয় 'গোদি'। রিকশার সিট এবং পাদানি আলাদা দু'টি অংশ।
মনির মেকানিক 'ছোট' রিকশার পরিমাপ তুলে ধরেন। সে অনুযায়ী, বাঁশের হুড বা কামানির পরিধি ৯০ ইঞ্চি এবং পাদানি থেকে হুডের অগ্রভাগের উচ্চতা ৩০ ইঞ্চি।
আমি যখন রিকশায় বসলাম এবং মাথার ওপর হুড টানলাম, তখন আমার মাথা আর হুডের ছাদের মাঝখানে ছিল সামান্য একটু জায়গা। অর্থাৎ যদি এটির উচ্চতা ৩২ ইঞ্চি হতো, তাহলে আমি সোজা হয়ে আরামে বসতে পারতাম।
রিকশার সিটের দৈর্ঘ্য ২৯ ইঞ্চি এবং সিটের বাইরের ফ্রেম বা ঢেলনার প্রস্থ ১১ ইঞ্চি। আমার মনে হলো, যদি দৈর্ঘ্যটি ৩০ ইঞ্চি হতো, তাহলে দু'জন মানুষ পাশাপাশি আরামে বসতে পারত।
মনির বলেন, ''রিকশা বিভিন্ন গ্যারেজ ও কারখানায় তৈরি হয়ে থাকে এবং এটি আকারে এক বা দুই ইঞ্চি কমবেশি হতে পারে, এর বেশি নয়।''
রিকশাকে কখনো কখনো পরিবহনের অমানবিক মাধ্যম বলা হলেও এখন আসল সমস্যা হলো এর পরিমাপ ও ডিজাইন নিয়ে।
মনির ও অন্য মেকানিকদের মতে, ঐতিহ্যবাহী রিকশার নকশার প্রধান দুইটি সমস্যা হলো উচ্চতা এবং অতিরিক্ত ওজন। এ সমস্যাগুলো মেটাতে কখনও কখনও মেকানিকরা রিকশার আকার ও পরিমাপ কমিয়ে দেন।
মনির বলেন, বাংলাদেশে একটি রিকশার গড় উচ্চতা মাটি থেকে ৬ ফুট বা ১৭৩.৮ সেন্টিমিটার। এ উচ্চতা ও উচ্চ মাধ্যাকার্ষণ কেন্দ্র বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে। অতি উচ্চতার কারণে বায়ু প্রবাহে বাধা এবং রিকশাচালকের পেছনে দেখতে অসুবিধা হয়। আর উচ্চ মাধ্যাকার্ষণ কেন্দ্রের কারণে রিকশার উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। যাত্রীর সিট ও রিকশার প্রশস্ত হুডই এর কারণ।
এমনকি হুড ভাঁজ করা অবস্থাতেও ভূমি থেকে রিকশার উচ্চতা ৬ ফুট। যখন রিকশা ধীরে চলে, তখন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু যখন জোরে গতিতে চলে এবং বাতাস বইতে থাকে, তখন বাতাস কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চালককে অতিরিক্ত শক্তি খরচ করতে হয়। হুড পালের মতো কাজ করে, যা বাতাস ধরে রাখে।
এ বিষয়ে রবার্ট গ্যালাঘার উল্লেখ করেছেন, ''যাত্রীর সিট নিচু করা ও ভাঁজ করা অবস্থায় হুড আরও চাপানোর মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। এতে চালকের পেছনে দেখতেও সুবিধা হয় এবং বাতাসের প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে আসে।''
তবে বাহনটির মেইনফ্রেমের ডিজাইনে কাজ করার পরিবর্তে মেকানিকরা সঠিক হিসাব-নিকাশ বা পরিমাপ ছাড়াই এটির আকার কমানোর চেষ্টা করছেন।
রবার্ট আরও জানান, বাংলাদেশে একটি সাধারণ রিকশার ওজন ৯০-৯২ কেজি। সিট ও হুডের ওজন মোট ওজনের ৪৯ ভাগ। কেবল হুডের ওজনই ১৮-১৯ কেজি।
বিভিন্ন উপকরণ ও ডিজাইন ব্যবহারের মাধ্যমে এ ওজন কমিয়ে আনা যেতে পারে। কিন্তু রিকশার সার্বিক ডিজাইন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিবর্তে রিকশা তৈরিকারক ও মেকানিকরা এর সিট ও হুডের আকার ছোট করে সেগুলো সমন্বয় করার চেষ্টা করছেন।
পরিমাপে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তনে সমস্যাটির সমাধান হতে পারে
২০০৭ সালে তিনজনের একটি দল ডিজাইন অব দ্য রিকশা টু ইমপ্রুভ সেফটি অ্যান্ড কমফোর্ট অব প্যাসেঞ্জার্স শিরোনামে একটি পেপার উপস্থাপন করেছিলেন। এতে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি রিকশার পরিমাপের পাশাপাশি ডিজাইনের বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, গদির প্রস্থ বাড়িয়ে বসার জায়গা প্রশস্ত করতে হবে। তারা হুডের পৃষ্ঠের সঙ্গে বাতাসের ঘর্ষণ কমাতে অ্যারো-ডাইনামিক ডিজাইনের হুড ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে হুডে বাঁশের পাঁচটি ফালি ব্যবহারের পরিবর্তে অ্যালুমিনিয়ামের তিনটি চ্যাপ্টা বার ব্যবহার করা যেতে পারে, যার ওপরে থাকবে হালকা রেক্সিন, যা বাতাস কম টানবে। অ্যালুমিনিয়ামের বার ব্যবহারে রিকশার ওজন ৭ বা ৮ কেজি কমবে। আর রিকশার মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র নিচের দিকে নামিয়ে আনা গেলে হুডের শীর্ষ প্রান্তের উচ্চতাও কমে যাবে। যাত্রীর মাথায়ও আঘাত লাগবে না।
রিকশার উচ্চতা কমানোর মাধ্যমে বাহনটি আরও স্থিতিশীল হবে এবং এটি কোনোদিকে গড়িয়ে যাবে না। আর এর জন্য আরও সমতল ফ্লোরবোর্ড দিয়ে সিটের উচ্চতা কমানো যেতে পারে। একটি ঐতিহ্যবাহী রিকশার বর্তমান মডেলে মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্রের উচ্চতা ভূমি থেকে ২৬ থেকে ২৯ ইঞ্চি। এ উচ্চতা মাত্র ১০ ইঞ্চির মতো কমানো গেলে রিকশা আরও স্থিতিশীল হবে।
আরও আরামদায়ক করার জন্য যাত্রীর ও চালকের সিটের মধ্যবর্তী দূরত্ব বাড়াতে হবে। এতে উচ্চতা কমে রিকশার আকার আরও চ্যাপ্টা হবে এবং দৈর্ঘ্যও বাড়বে। হিসাব-নিকাশ করে ওই দলটি জানিয়েছে যে রিকশার দৈর্ঘ্য মাত্র ১০.১৬ সেন্টিমিটার (চার ইঞ্চি) বাড়িয়ে এটি করা সম্ভব।
বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ রিকশায় চড়ে। এটি পরিবহনের একটি মাধ্যমের চেয়েও বেশি কিছু।
২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ঢাকা শহরেই ৬ লাখের বেশি রিকশা রয়েছে। বর্তমানে রিকশার যে ডিজাইন তা চালকের স্বাস্থ্য ও শরীরের বড় ধরনের ক্ষতি করে।
মনির বলেন, ''মেকানিক হিসেবে আমরা বিদ্যমান নকশা তৈরি করতে, সমন্বয় করতে ও সংশোধন করতে পারি। আমরা পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বগুলো বুঝি না বা বায়ুচাপ পরিমাপ করতে পারি না। যদি একজন প্রকৌশলী ভালো নকশার প্রস্তাব করেন, আমরা তা গ্রহণ করব।''
স্থপতি সাইমুম কবির ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি রিকশার ডিজাইন নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। এতে তিনি ডিজাইনগুলো পুনর্বিবেচনার কথা বলেন।
সাইমুম কবির ডিজাইন, আর্কিটেকচার ও পরিকল্পনা বিষয়ক অনলাইন-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম কনটেক্সটবিডি.কমের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
নিবন্ধটিতে তিনি বলেন, অতীতে রিকশার ডিজাইন উন্নত করার জন্য জিও এবং এনজিও উভয়েই আলাদাভাবে পদক্ষেপ নিয়েছিল। তারা নলাকৃতির ফ্রেম ও পাটের প্লাস্টিকের সিট, পিভি সাপোর্ট (সৌর) ও একটি টর্ক সেন্সর প্যাডেলের ব্যবহার করে বিভিন্ন পরীক্ষা চালিয়েছিল।
সাইমুম বলেন, ''এই মডেলের বেশিরভাগ রিকশাতেই যান্ত্রিক দক্ষতার উন্নতির দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। ওজন কমানোর জন্য এগুলোতে কাঠের তৈরি সিটের কাঠামোর পরিবর্তে ধাতব ফ্রেমের ব্যবহার করা হয়েছিল। পাদানির উচ্চতা কমানো হয়েছিল। সেই সঙ্গে সাসপেনশন ও ব্রেকিং সিস্টেম উন্নত করা হয়েছিল।''
১৯৮৬ সালে ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবক প্রকৌশলী ও বাংলাদেশি মেকানিকদের সহায়তায় ফ্রেড উইলকি একটি 'নতুন রিকশা' তৈরি করেছিলেন। এতে ছিল শক্ত ফ্রেম এবং এটি প্রচলিত রিকশার তুলনায় ১০ শতাংশ হালকা। কিন্তু এটি তৈরি ১৫ শতাংশ বেশি ব্যয়বহুল ছিল। ঠিকমতো বাজারজাত না হওয়ায় রিকশাচালকদের সমিতি ও গ্যারেজ মালিকরা এটি কিনতে আগ্রহী ছিলেন না।
সাইমুম বলেন, ''আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে রিকশার ঐতিহ্যবাহী রূপটি স্থানীয় উপকরণ ও জ্ঞান ব্যবহার করে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত ও ধীরে চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে। আর এগুলো খুবই বিশেষ ধরনের শিল্পকর্ম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। তাই ভবিষ্যতের যেকোনো রিকশা তৈরির ক্ষেত্রে নিম্ন প্রযুক্তি, নিম্ন রক্ষণাবেক্ষণ, শূন্য কার্বন নিঃসরণ ও শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যগুলোই মূল বিবেচ্য হওয়া উচিত।''