‘একটা শেল্টার খুলতে চাই’: পশুপাখির কল্যাণে অর্ধযুগ ব্যয় করেছেন, এখনো উদ্যমী তানিম
শীতের রাত। হিম-হিম বাতাসে মানুষের জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তাঘাট। কিন্তু তাতে ব্যস্ত নগরী ঢাকার কিছুই যেন থেমে নেই। রাত হোক বা দিন, সদা মানুষের চলাচল তো আছেই। তার ওপর আবার রাস্তায় গাড়িঘোড়ার বিরতিহীন আসা-যাওয়া। থামাথামির কোনো লক্ষণ নেই। চলছে তো চলছেই।
ঘড়িতে তখন রাত ১০টা। একটু হেঁটে আসার চিন্তায় ঘর থেকে বের হন তানিম। কিছুটা যদি স্বস্তি মেলে তাতে! থাকেন কলাবাগানে। জন্ম ও বসবাস দুটোই এখানে। প্রায়ই মন খারাপের দিনে হুট করে বেরিয়ে পড়েন। সেদিনও তা-ই হলো।
মূল সড়কের ফুটপাত ধরে হাঁটছেন। রাস্তার দুপাশ থেকে সাঁই-সাঁই করে তীব্র গতিতে চলছে গাড়িদের অবাধ যাতায়াত। হঠাৎ করেই দ্রুতগতির এক ট্রাক এসে চাপা দিয়ে যায় একটি কুকুরকে। মুহূর্তেই কুকুরটি লুটিয়ে পড়ে। গাড়ির ড্রাইভারের অবশ্য এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নেই কোনো অপরাধবোধও। নির্বিকারচিত্তে আবার দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন। আশপাশের মানুষেরাও বেশ একটা মাথা ঘামালেন না। ভাব অনেকটা এমন: 'কি-ই-বা হবে এসব আমলে নিয়ে! পথের কুকুর মরলে কী এমন এল গেল।'
অনেকটা দৌড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে রক্তাক্ত প্রাণীটির কাছে ছুটে আসলেন তানিম। কুকুরটিকে কোলে নিয়ে ছুটলেন এদিক-সেদিক। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হলো না। অনেক দৌড়াদৌড়ির পরও আশপাশের কোথাও পশু ক্লিনিকের খোঁজ পেলেন না। তবে হাল ছাড়ার পাত্র নন তিনি। নানা চেষ্টায় জেনে নেন, কোথায় গেলে হবে চিকিৎসা। এরপর ছুটলেন গুলশানের উদ্দেশে।
১৫ বছর আগেও দেশে খুব একটা পশু চিকিৎসাকেন্দ্র ছিল না। যে কয়েকটার সন্ধান রাখত মানুষ, সেগুলোও ছিল বেশ দূরে দূরে। ফলে চিকিৎসার অভাবে কুকুর নিহতের ঘটনা ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার।
আধাঘণ্টা ছুটে গুলশানে পৌঁছে তানিম দেখেন ক্লিনিক বন্ধ। সকাল হলেই চিকিৎসা করাবেন — এমন ভাবনায় থেকে যান সেখানে। কনকনে শীতে প্রাণীটিকে বুকে জড়িয়ে তানিম কাটিয়ে দেন পুরো রাত। সকাল ১০টা কি ১১টা বাজে চিকিৎসা শেষ হতে হতে। তবে বাঁচানো যায়নি বেশিক্ষণ। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও ক্ষতের মাত্রা বেশি হওয়ায় কুকুরটির মৃত্যু হয়।
মনুষ্য জাতি যে অসীম ভালোবাসার ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেয়, তানিম তা বুঝেছিলেন সে রাতে। সেদিন কুকুরটির এমন মৃত্যুতে এক আকাশ দুঃখ নিয়ে ঘরে ফেরেন তিনি।
সেই প্রথম কোনো কুকুরকে উদ্ধার করা। অবশ্য তখনো পর্যন্ত জানতেন না এই কাজই একদিন পরিণত হবে নেশায়, পড়ে যাবেন মায়ায়।
আজ থেকে আরও ১৪-১৫ বছর আগে পশু-পাখির ভালো মন্দ নিয়ে খুব একটা ভাবতেন না কেউ। চিন্তাভাবনাই ছিল এমন – মরে যাওয়ার থাকলে মরে যাবে। কেবল হাতে গোনা কয়েকজনের ভাবনায় ছিল অবলা এসব প্রাণীর মঙ্গল করার চিন্তা। তারিকুল ইসলাম তানিমও আছেন এই দলে।
ওই অভিজ্ঞতার পর বিভিন্নভাবেই পশু-পাখি নিয়ে কাজ করতে থাকেন তারিম। যুক্ত হন বিভিন্ন 'অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার' গ্রুপে। একান্ত নিজের ভালো লাগা থেকেই কত শত সংগঠনের হয়ে কাজ করে গেছেন তার হিসেবও জানা নেই তার।
এই পর্যন্ত কত পশুপাখি উদ্ধার করেছেন জানতে চাইলে হেসে ফেলেন তিনি। হয়ত কঠিন কোনো প্রশ্ন করে ফেলেছি। 'এটি বলা আসলেই কঠিন। ২০০৯ সাল থেকেই তো করছি এই কাজ। ঠিক কতটা রেসকিউ করেছি সেটা মনে নেই। আসলে কখনো গুণে রাখবার চিন্তাও করিনি। তবে কয়েক হাজারের কম তো হবে না।'
'অ্যানিমেল রাইটস কোয়ালিশন বাংলাদেশ'-এর যাত্রা
২০১৭ সাল। ভালোবেসে করা এই কাজটিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে তানিম একদিন খুলে বসেন 'অ্যানিমেল রাইটস কোয়ালিশন বাংলাদেশ' নামের এই গ্রুপ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সাড়াও আসতে থাকে। বলা যায় তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। শুরুতেই এমন ইতিবাচক 'ফিডব্যাক' তাকে আরও উদ্যমী করে তোলে।
ধীরে ধীরে মানুষের সম্পৃক্ততাও বাড়তে থাকে গ্রুপে । সাহায্য চেয়ে 'হেল্প সিকিং পোস্ট' আসতে শুরু করে নানান জনের কাছ থেকে। তানিমের চেষ্টায় থাকত কীভাবে তাৎক্ষণিক সাহায্য করা যায়। অসহায় কোনো প্রাণীর সন্ধান পেলেই ছুটে যেতেন শহরের যেকোনো প্রান্তে।
এ কাজ চলছে এখনও। যদিও সময়ের আবর্তনে ব্যস্ত নগরীর তিনিও একজন ব্যস্ত বাসিন্দা। তাই বলে কাজে হেরফের নেই। একাই চালিয়ে নিচ্ছেন সমস্ত কর্মযজ্ঞ; কোথাও কোনো কুকুর-বিড়াল আহত হয়েছে? আঘাত পেয়েছে? চিকিৎসা দরকার? শেল্টার দরকার? কেউ বিড়াল-কুকুর পোষ্য দেবে? তানিমের গ্রুপে যোগাযোগ করলেই পাওয়া যাচ্ছে সহজ সমাধান।
সবসময়ই চেয়েছেন এমন একটি গ্রুপ, যা হবে পুরো একটি কমিউনিটির মতোই। যেখানে কোনো সাহায্য চাওয়া মাত্রই পরস্পর পরস্পরের জন্য এগিয়ে আসবে অনায়াসে। হচ্ছেও তাই। কেউ কোনো কিছু জানতে চেয়ে পোস্ট করলেই গ্রুপের অন্য সদস্যরা বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। কেউ কেউ পশু চিকিৎসকের নাম্বার কিংবা পশু হাসপাতালের নাম্বার ও ঠিকানা দিয়েও সাহায্য করছেন।
তানিম বলেন, 'ক্যাটস সোসাইটি নামে একটা গ্রুপ ছিল। ওই গ্রুপের অ্যাক্টিভিটি খুবই ভালো লাগত। তারা একটা কমিউনিটি হয়ে কাজ করত। সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসেন, হেল্প করেন। আমিও আমার গ্রুপকে এমনভাবে তৈরি করতে চেয়েছিলাম। আস্তেধীরে সেটা হচ্ছে।'
এভাবে নিজের উদ্যোগ সফল হতে দেখে কিছুটা উচ্ছ্বসিত তিনি। অবশ্য হওয়ারই কথা। চারপাশের হাজারো নেতিবাচক মন্তব্যের ভিড়ে ভালো কিছু করে যাওয়াও কম কষ্টের নয় বলা চলে।
'অ্যাডভারটাইজিং করি না'
এমন সব অসাধারণ কাজের কোনো বিজ্ঞাপনও করেন না তিনি। এমনকি প্রায়ই তিনি কৃত কাজের ছবি ভিডিও আপলোড দেওয়ার কথাও ভুলে যান। করবার প্রয়োজন বলেই কাজ করে যান। সেসব ঘটাও করে দেখাতেও তার আপত্তি।
তানিম বলেন, 'অ্যাডভারটাইজিং করি না আমি। বাধ্যতামূলক করাও লাগে না। কারণ আমরা ফান্ড নিই না। ফান্ড কালেক্ট করি না। নিজেদের আয়ত্তের ভেতরে যতটুকু করা যায় করি।'
কাজের ধরন কিছুটা অন্যদের চেয়ে আলাদাও বলা চলে। এই যেমন এতসব প্রাণী উদ্ধার অভিযান বা চিকিৎসা সেবার জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার হয়, তার জন্য কোনো ফান্ডিং নেই। গ্রুপের কাজের পদ্ধতি অনেকটা এরকম: যদি কারও কোনো কুকুর বা বিড়াল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার দরকার হয়, সেক্ষেত্রে ওই কুকুরকে কোথায় চিকিৎসা করাতে হবে, কীভাবে সেখানে যেতে হবে, কী কী দরকার হবে সমস্ত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ার জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার হবে তা দেবেন ভুক্তভোগী ব্যক্তি। তবে কেউ যদি একান্তই বুঝে উঠতে না পারেন, তখন গ্রুপের সদস্যরা সশরীরে গিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করেন। এজন্য কোনো চার্জ বা টাকা নেন না কেউই।
তবে স্থান-দূরত্ব বিবেচনার বিষয়। এই যেমন তানিম থাকেন কলাবাগান। উত্তরা থেকে যদি কেউ সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন তবে তার পক্ষে সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা। দূরত্ব কম হলে অবশ্য তিনি নিজেই গিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করেন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজ অর্থায়নেই কাজ করেন তানিম। যে-সব প্রাণীকে দেখার মতো কেউ থাকে না, পথে যাদের বসবাস, সেগুলোর কোনোটি আহত বা অসুস্থ হলে চিকিৎসা করিয়ে থাকেন। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত যত খরচা হয়, তিনিই বহন করেন একা।
'এ-টু-জেড গাইডেন্স'
তবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য করতে পারেন না বলে কিছুটা আক্ষেপও আছে তানিমের। করতে চাইলেও সম্ভব হয় না। কর্মব্যস্ত দিন শেষে সময়ও কুলিয়ে উঠতে পারেন না সেভাবে। তাই চেষ্টা করেন সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু কাজ করা যায় তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করার। প্রায় সময় অনলাইনে সক্রিয় থাকতে হয় তাকে।
অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়া পরিচালনা করার এই কাজে যুক্ত আছেন আরও একজন ব্যক্তি। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন ডাক্তার নাদিয়া আনিস বিকন। নিজের শত ব্যস্ততার মাঝেও এই কাজে যুক্ত থেকেছেন। সহযোগিতা করেছেন নানাভাবে। এখনও তা চলমান। তিনি এবং তানিম মিলে নিশ্চিত করেন গ্রুপের পোস্ট দ্রুততম সময়ে অ্যাপ্রুভ করা। দিন এবং রাত; পরস্পর মিলে কাজ করেন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে।
তানিম বলেন, 'এমনও হয়েছে একা একা কাজ করতে পারছি না বা সময় দিতে পারছি না। তখন শিফট ভাগ করে নিয়ে কাজ করেছি। এভাবে রাত দিন অ্যাক্টিভ থেকেছি ফেসবুকে।'
এমন একটা সময় ছিল যখন তানিম নিজেই জানতেন না কোথায় আছে ক্লিনিক, কীভাবে সেখানে যাওয়া হবে, কী করতে হবে, কারাই-বা সাহায্য করতে পারে বা কোন শেল্টারে পাঠালে ভালো হবে, সেখানে পাঠানোর প্রক্রিয়াই বা কী। নিজের সীমাবদ্ধতা থেকেই উপলব্ধি করেন অন্যদেরও হয়ত একই সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ঠিক করেন এ নিয়ে 'এ-টু-জেড গাইডেন্স' (সার্বিক পরামর্শ) তিনিই দেবেন। সেসব তথ্য দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই গ্রুপের যাত্রা।
অন্যান্য কাজের পাশাপাশি আইনি সহায়তার কাজও করেন তিনি। যখন কোনো কুকুর বা বিড়ালকে মারা হয়, তখন কেউ যদি সেটা দেখে জানায় এবং সাক্ষী হিসেবে অভিযোগ করার ব্যাপারে রাজি থাকে, সেক্ষেত্রে সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আইনি সহায়তাও করে থাকে এ গ্রুপ।
অ্যাডাপশন ফর্ম
এসবের বাইরেও গ্রুপে প্রায়ই পোস্ট আসে পোষ্য নেওয়ার ব্যাপারে। কেউ যদি কোনো পশু পোষ্য হিসেবে নিতে চান, তবে সেক্ষেত্রে রাখা হয়েছে ফর্ম পূরণের ব্যবস্থা। আগে ফর্ম ফিলাপ করতে হবে, তারপরেই অন্য কাজ।
এই ফর্ম পূরণের বিশেষত্ব হলো দত্তক নেওয়া ব্যক্তির সমস্ত তথ্য সেখানে থাকবে। ফলে সহজেই পোষ্য দেওয়া প্রাণীর খবরাখবর রাখা যাবে। এতে উক্ত প্রাণীর ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকবে না। তবে অনেকেই এই ব্যাপারে আগ্রহ দেখান না। তাদের কাছে পশু দত্তক নেওয়ার চেয়ে কঠিন কাজ হলো ফর্ম পূরণ করা। এমনটা হলে সমস্যা হয়। খবর নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সে জন্য তানিমের চেষ্টা যাতে এই বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করা যায়। এক্ষেত্রে অপরপক্ষের সহযোগিতাও জরুরি।
প্রতিবন্ধকতা
এতকিছু করার পরেও নেতিবাচকতা থেকে বের হতে পেরেছেন তা নয়। মানুষ মাত্রই ভালো-মন্দ মতামত থাকবেই। তানিমের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। নানাভাবে নানাজন অনুৎসাহিত করেছেন তাকে। বিভিন্ন রকম কটূক্তি তো ছিলই। এমনকি চরম এক নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েও যেতে হয় একটা সময়।
আজ থেকে প্রায় দশ–বারো বছরের আগের কথা। বসুন্ধরায় অসুস্থ এক কুকুরকে উদ্ধার করার কারণে আটকে রাখা হয়েছিল তাকে। কুকুরটিকে সাহায্য করতে চাওয়াই ছিল অপরাধ। তবে তিনিও দমে যাবার পাত্র নন। কখনো গায়েই মাখেননি কিছু। চুপচাপ নিজের কাজ করে গেছেন।
এতকিছু সামলে ওঠার কারণ জানতে চাইলে তানিম বলেন, 'নিজের মানুষজন সঙ্গে থাকলে ওভাবে সমস্যা হয় না। আমি আমার পরিবার থেকে এই ব্যাপারে প্রচুর পরিমাণে সাপোর্ট পেয়েছি। নইলে সম্ভব ছিল না। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। একবার শীতকালে একটা ড্রেনের ভেতরে কোনো প্রোটেকশন ছাড়া নেমে পড়েছিলাম একটা বিড়ালের বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য। ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল তখন। সেদিনই কেবল আব্বু ভয় পেয়ে সামান্য বকা দিয়েছিলেন।'
'একটা শেল্টার খুলতে চাই'
তানিমের ইচ্ছে, আরও বড় পরিসরে করবেন এই কাজ। তবে প্রয়োজন অর্থের। তাই ফাউন্ডেশন চালু করার আশা ব্যক্ত করেন। কেবল নামে নয়, প্রকৃত অর্থেই পশুপাখির কল্যাণ নিশ্চিতকরণই হবে মুখ্য। সামর্থ্য অনুযায়ী ফান্ডিং করবেন মানুষ। দাতারাও জানবেন টাকার হিসেব, খরচের খাতও।
'এই যে রাস্তার বিড়াল-কুকুর, এদের কেউ দেখে না। তাদের থাকার একটা ব্যবস্থা করে দেব। আর যদি সম্ভব হয় একটা ক্লিনিক গড়ে তোলা। যেখানে ট্রিটমেন্ট হবে বিনামূল্যে। এখন তো টাকা ছাড়া কেউ কিছুই করে না। ট্রিটমেন্ট অনেক দূরের বিষয়,' বলেন তানিম।
২০২০ সালে করোনার ভয়াবহতা যখন চারদিকে তখন পথের কুকুরদেরও ধুঁকেধুঁকে মরার উপক্রম। ঠিক তখনই তানিম এবং তার সঙ্গীরা মিলে ৩০০-এর বেশি কুকুরের বন্ধ্যত্বকরণের অপারেশন করান। নেওয়া হয় টিকাদান কর্মসূচিও। এরপরের পদক্ষেপ আরও বড়। রাস্তার ৮০০-এর বেশি কুকুরকে খাওয়ানোর উদ্যোগ নেন তারা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ৩ বছর ধরে প্রতিদিনই সেসব কুকুরকে খাওয়ানোর আয়োজন হতো। পরিচিত এক ব্যক্তির ফান্ডিংয়ে এসব করেন তারা।
'ছোটবেলায় দাদুকে দেখতাম কুকুর বিড়ালকে খাবার দিতেন। প্রতিদিনই এই কাজ করতেন। আমার চাচাও ছিলেন পশুপ্রেমী। প্রায়ই তিনি অসুস্থ প্রাণীদের চিকিৎসা করাতেন। পশুপাখিকে ঘিরেই বড় হই। তাই ছোট থেকেই প্রাণীদের প্রতি ভয়টয় কেটে যায়। হয়ত তখন থেকেই অবচেতন মনে তাদের প্রতি মায়া ব্যাপারটি গেঁথে ছিল', বলেন এ পশুপ্রেমিক।