মালার: এখনো বহমান বাংলার ৩০০০ বছর পুরনো কাঠের নৌকা
একবিংশ শতকে এসেও ৩০০০ বছর পুরনো এক নৌকা এখনো জলপথে চলছে, এমনটা বিশ্বাস করতে আপনার একটু কষ্টই হবে বৈকি! আর সেটা যদি হয় নিজ দেশ বাংলাদেশেই, তাহলে কৌতূহল আরও বেড়ে যায়। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই দেশের ব্রহ্মপুত্র নদীতে চলছে তেমনই এক নৌকা, যার নাম 'মালার'।
সংরক্ষণবাদী কর্মী রুনা খান এবং ফরাসী অনুসন্ধানী ইভস মারে- এই দুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই এই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয়েছে।
১৯৯৪ সালে যখন ইভস বাংলাদেশে আসেন, তখন রুনার সাথে পরিচয় হয় তার। দুজনেই প্রাচীন নানা প্রযুক্তি নিয়ে মেতে ওঠেন । আগামী প্রজন্ম যাতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নৌকা শিল্প সম্পর্কে জানতে পারে, সেজন্য এই শিল্পকে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন তারা।
প্রাচীন ও সৌন্দর্য্যমন্ডিত এই নৌকাগুলোর যখন প্রায় বিলুপ্তি ঘটছিলো, তা এই দুজনকে ভাবিয়ে তোলে। পুরনো কাঠের শিল্পকে চোখের সামনে হারিয়ে যেতে দেখে ২০০২ সালে 'ফ্রেন্ডশিপ এনজিও'র অধীনে তারা একটি সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন।
বাংলাদেশের অসাধারণ নৌকা শিল্প পুরোপুরি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাওয়ার আগেই তারা এর আবেদন ধরে রাখার জন্য কাজ শুরু করেন। এছাড়াও, এই উদ্যোগের মাধ্যমে নৌকা নির্মাণ শ্রমিকদের টেকসই জীবনমান উন্নয়নেও সাহায্য করেন তারা।
১৯৯৭ সালে ইভস এবং রুনা দেশের একটি সর্ববৃহৎ কাঠের নৌকাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ভ্রমণ নৌকায় পরিণত করার মাধ্যমে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। হাজার বছর পুরনো নির্মাণ কৌশল অবলম্বন করে ব্রহ্মপুত্র পারের কাঠমিস্ত্রীদের হাতে তৈরি হয়েছিল এই নৌকা।
কন্টিক ক্রুইজ এর অধীনে নির্মিত বিসিক্সথার্টিন (মালার) একটি ঐতিহ্যবাহী মালার নৌকা। নৌকাটি ৯৩ ফুট লম্বা এবং ২৩ ফুট চওড়া।
মালার নৌকায় রয়েছে ছয়টি ডাবল কেবিন, চারটি বাথরুম, দুটি গোসলখানা এবং একটি বড় রান্নাঘর। নৌকার আসল পালকে ২০ মিটার উঁচু একটি মাস্তুল দ্বারা পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। চমৎকারভাবে হাতে বোনা, লালচে বাদামিরঙা দুটি বিশালাকৃতির পালের দৈর্ঘ্য মোট ২৫০ বর্গ মিটার। ফলে সবকিছু মিলিয়ে বিসিক্সথার্টিন (মালার) হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলার সর্ববৃহৎ নৌকা যা এখনো বাংলাদেশের পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গমস্থলে চলছে।
এখানে ২০২০ সালে পদ্মা নদীতে 'মালার' নৌকার ছুটে চলার কিছু ছবি দেখানো হয়েছে। আলোকচিত্রী মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান নৌকাটির এসব ছবি তোলেন।