ড্রোন বিমানের উত্থানে যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা, হারিয়ে যাবে কি মনুষ্যচালিত যুদ্ধবিমান?
ছবি তোলা হোক বা কোনো দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকাজ; চালকবিহীন যান (ড্রোন) পৃথিবীবাসীর জীবনযাপনে আনছে নাটকীয় পরিবর্তন। তবে সর্বাধুনিক নানান রকম স্থলচর ও উড়ন্ত ড্রোনের অস্ত্রসজ্জা রয়েছে সামরিক খাতে। সাম্প্রতিক দশকে ড্রোনের ব্যবহারই যুদ্ধক্ষেত্রে এনেছে নজিরবিহীন পরিবর্তন। মনুষ্যচালিত যুদ্ধবিমানের চেয়ে সস্তা কিন্তু বিপজ্জনক শত্রু এলাকার আকাশে ত্রাসসঞ্চারী উড়ন্ত ড্রোন ব্যবহারই বিশ্ব গণমাধ্যমের আলোচনায় এসেছে ঘুরেফিরে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস, বিশ্ব তখন ব্যস্ত করোনা মহামারির ভয়াল ডেল্টা সংক্রমণ মোকাবিলায়। ঠিক তখনই যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে ককেশাসে। নগরনো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে বৈরী প্রতিবেশী আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে আজারবাইজান। এ যুদ্ধে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান না থাকা আজারবাইজানের মূল হাতিয়ারই ছিল তুরস্ক ও ইসরায়েল থেকে কেনা অত্যাধুনিক সব ড্রোন; যার সাহায্যে আর্মেনিয়ার আকাশ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধবংস করে দিয়ে আকাশপথে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নেয় দেশটি। আজেরি ড্রোনের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমায় বিদ্ধস্ত হয় আর্মেনিয় সেনাবাহিনীর অসংখ্য সাঁজোয়া যান, ট্যাঙ্ক ও গোলন্দাজ ইউনিট।
তাছাড়া, ড্রোন শুধু আঘাতই হানে না, নজরদারির মাধ্যমে দেয় শত্রুর অবস্থান ও গতিবিধি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। এসব কিছুই কারাবাখ যুদ্ধে আজারবাইজানের জয় ছিনিয়ে আনে। যুদ্ধে ড্রোনের ব্যবহার নতুন কিছু না হলেও, এই যুদ্ধের ফলাফল সামরিক পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করেছিল। সবচেয়ে খ্যাতি পায় তুরস্কের তৈরি বাইরাক্তার টিবি-২ এর মতো ড্রোনগুলো। বলাই বাহুল্য, কারাবাখের পর ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমানে সহসাই কিনতে পারবে না বিশ্বের এমন অনেক দেশ ড্রোনটি কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে। ক্রয় চুক্তির প্রস্তাবে ভাসছে আঙ্কারা।
উড়ন্ত ড্রোনকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয়, আনক্রিউড/ আনম্যানড এরিয়াল ভিহাইকেল বা ইউএভি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ, স্যাটেলাইট সংযোগ আর দূর-নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির উৎকর্ষে ইউএভি হয়ে উঠছে রণাঙ্গনের গেমচেঞ্জার। এজন্য ড্রোন ব্যবহারের সুবিধাগুলোর দিকেও আলোকপাত করা প্রয়োজন।
যেমন- একজন পাইলট বা বিমানচালককে প্রশিক্ষণ দিতে ব্যয় হয় হাজারো ফ্লাইট আওয়ার, বা উড্ডয়ন ঘণ্টা। শুধু তাই নয়, দরকার উন্নত ও খরচসাধ্য যুদ্ধবিমান ক্রয়ের। সেই প্রয়োজন আজো ফুরায়নি, অচিরেই ফুরাবে এমনও নয়- তবে ধীরে ধীরে ইউএভি ড্রোন সে জায়গা দখল করে নেওয়ার সক্ষমতা প্রমাণ করছে।
মানবজাতির সংঘাতময় ইতিহাসও সাক্ষী- বৈপ্লবিক প্রযুক্তি সকল সময়েই রণাঙ্গনে লড়াইয়ের কৌশল ও প্রকৃতিকে আমূল বদলে দিয়েছে। মানবচালিত যুদ্ধবিমানের এক শতকের বেশি সময়ব্যাপী রাজত্ব ফুরিয়ে আসছে কিনা- তা পাঠক বিচার করতে পারেন ইতিহাসের কিছু তথ্যের ভিত্তিতে। চলুন যুদ্ধক্ষেত্রের তেমন কিছু ঐতিহাসিক আবিষ্কার ও তার প্রভাবকেই জেনে নেওয়া যাক।
লোহা- যে ধাতু চিরতরে বদলে দেয় যুদ্ধকে:
লোহার আগে যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরিতে তামা ও টিন মিশ্রিত সংকর ধাতু- ব্রোঞ্চের ছিল ব্যাপক ব্যবহার। ব্রোঞ্জের অস্ত্র দিয়েই বিশাল এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছিল সে যুগের মিশরীয়, হিটাইট, বেবিলনীয়, মিনয়ান ও মাইসিনিয়ান সভ্যতা।
অঞ্চল ও সভ্যতাভেদে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে একেক সময়ে হয় লৌহযুগের সূচনা। তবে নৃতাত্ত্বিক প্রমাণাদি ইঙ্গিত দেয়, খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় দুই হাজার বছর আগে থেকেই লৌহ আকরিক গলিয়ে ধাতু উৎপাদন ও ব্যবহার শুরু করে মানুষ।
লোহার প্রথম ব্যবহারের কথা জানা যায়, তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলে। সেখান থেকে তা পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণপশ্চিম এশিয়ায় ছড়ায়। ইউরোপে পৌঁছে যায় তারপরের ৫০০ বছরেই।
প্রথম দিকে নতুন ধাতু হিসেবে লোহার উপযোগিতা বা গুণাগুণ সম্পর্কে মানুষ কীভাবে নিশ্চিত হয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে এই ধাতু নিশ্চিতভাবেই আমাদের পূর্বপুরুষদের চেনা পৃথিবীকে বদলে দিতে শুরু করে।
পূর্বসূরি তামা ও ব্রোঞ্জের চেয়ে মজবুত গুণের লোহা অচিরেই যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত হতে থাকে। আরেকটি কারণ ছিল লৌহ আকরিকের তুলনামূলক প্রাচুর্য। সে তুলনায় ব্রোঞ্জ তৈরিতে দরকারি টিনের আকরিক সহজলভ্য না হওয়ায় উৎপাদন ছিল ব্যয়বহুল। তাই প্রাচীনকালের ঢালাই লোহা ব্রোঞ্চের স্থান দখল করে নিয়েছিল সহজেই।
তবে খৃষ্টপূর্ব ১১৭০ সনে পূর্ব ভুমধ্যসাগরীয় ব্রোঞ্জ সভ্যতাগুলোর পতন নেমে আসে 'দ্য সী পিপল' খ্যাত সমুদ্রচারী এক গোষ্ঠীর হাতে। তারা বড় বড় নগরগুলিকে ধবংস করে দেয়। ধারণা করা হয়, এই অভিযাত্রী হামলাকারীরা লোহার তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করত। সেকালের অত্যন্ত সমৃদ্ধ হিটাইট সাম্রাজ্যের পতন ঘটায় তারা। আক্রমণে দুর্বল হয়ে পড়ে আসিরিয় ও ইজিপ্টের নতুন রাজবংশের শাসন।
এই হামলাকারীরা লোহার অস্ত্র ব্যবহার করেছিল বলে ধারণা করেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, ওই সময়ের পর থেকেই সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ধাতু হয়ে ওঠে লোহা। তাই 'সী পিপল' গোষ্ঠীর মাধ্যমে উৎপত্তি হোক চাই না হোক- এই ধাতু যে এককালে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় সাম্রাজ্যের পতন ঘটাতে ভূমিকা রেখেছিল তা অন্তত স্পষ্ট।
শক ক্যাভেলরি বা ভারি অশ্বারোহী বাহিনী:
যুদ্ধক্ষেত্রে আরেক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে ভারি অশ্বারোহী বাহিনীর ব্যবহার। প্রাচীন ও মধ্যযুগে যুদ্ধের অনেক প্রযুক্তি আবিষ্কার হলেও- রণাঙ্গনে ভারি অস্ত্র ও বর্মসজ্জিত ঘোড়সওয়ার আক্রমণ কৌশলের মতো গভীর প্রভাব অন্যরা সেভাবে ফেলতে পারেনি।
দক্ষ ঘোড়সওয়ার বাহিনীর সুনিপুণ ব্যবহারে ইতিহাসের দিকপরিবর্তনকারী যুদ্ধ জিতেছেন বিখ্যাত সেনা-নায়কেরা। ঝটিকা অশ্বারোহী বাহিনীর অব্যর্থ হামলায় যুদ্ধের ময়দানে রীতিমতো কচুকাটা হয়েছে শত্রুবাহিনীর পদাধিক সেনাদল।
ঘোড়ার জিন, লাগাম, লোহার তৈরি অশ্বক্ষুর বা হর্সশু ইত্যাদির প্রযুক্তি যত উন্নত হয়, ততই মারাত্মক হয়ে ওঠে হেভি ক্যাভিলারির আক্রমণ। একইসময়ে হচ্ছিল আরোহী সেনার বর্মের উন্নতি। ফলে ঘোড়া ও সওয়ারী মিলে প্রাচীন রণক্ষেত্রের সাঁজোয়া বাহিনী হয়ে ওঠে শক ক্যাভেলরি। মোটামুটি ১২ শতক থেকেই এশিয়া ও ইউরোপের রণভূমি কাঁপাতে থাকে সুসজ্জিত অশ্বসেনাদল।
প্রবল বেগে ঘোড়া চালিয়ে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের আতঙ্কিত ও ছত্রভঙ্গ করাই ছিল শক ক্যাভেলরি ব্যবহারের উদ্দেশ্য। ধাবমান ঘোড়ার সাড়ি ও তার সওয়ারীদের হাতে উদ্যত অস্ত্র দেখে শত্রু সেনার বুকেও কাঁপন উঠত। অনেক সময় আক্রমণের শেষ ঢেউ হিসেবেও এই বাহিনীকে রিজার্ভে রাখতেন সেনাপতিরা। যা ব্যবহার করতেন শত্রুর চরম দুর্বলতার মুহূর্তে।
শক ক্যাভেলরি ব্যবহারে সবচেয়ে নৈপুণ্য দেখায় মঙ্গোলরা। মঙ্গোল অশ্বের খুরের নিচেই চূর্ণ হয়েছে চীন থেকে পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সব জনপদ।
গানপাউডার বা বারুদের আবিষ্কার:
সামরিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ছিল বারুদ আবিষ্কার। মানুষের তৈরি প্রথম এ বিস্ফোরক ইতিহাসের অন্যতম সেরা উদ্ভাবনের তালিকায় রয়েছে।
৯ম শতকে যুদ্ধে বারুদের প্রথম ব্যবহার করেছিল চীনের তাং রাজবংশ। পরবর্তী সময়ে এই প্রযুক্তি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ১৩ শতকের দিকে তা ইউরোপেও আসে। তারপর রাতারাতি যেন বদলে যায় ইউরোপের যুদ্ধ-কৌশল।
প্রস্তুত হতে থাকে উন্নততর কামান ও আগ্নেয়াস্ত্র। ১৭ শতক নাগাদ অতীতে পরিণত হয় তীরন্দাজ সেনাবহুল সামরিক বাহিনী। তার জায়গা দখল করে বন্দুকধারী পদাধিক সেনা ও গোলন্দাজ ইউনিট।
বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে সমুদ্রপথের যুদ্ধেও। আরো শক্তিশালী ও ভারি কামান বহনে তৈরি হয় একাধিক ডেকের 'শিপ অব দ্য লাইন'। সে যুগে এসব জাহাজই ছিল একটি জাতির সর্বাধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান ও দক্ষতার নিদর্শন। নৌশক্তিতে দক্ষ ইউরোপীয় জাতিগুলোই ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে উপনিবেশ গড়ে তোলে। উত্তর আফ্রিকা থেকে ভারতবর্ষ, চীন পর্যন্ত বহু সমৃদ্ধ ও ধনী রাজ্যের শাসকরা পরাজিত হয় ইউরোপের আগ্নেয়াস্ত্র প্রযুক্তির সামনেই।
উড়োজাহাজ ও বিমানবাহী রণতরী:
মানুষ জয় করেছে ভূমি, পাড়ি দিয়েছে অনন্ত সমুদ্র। তবু পাখিদের দেখে আকাশজয়ের স্বপ্নও দেখেছে প্রাচীনকাল থেকেই। কিন্তু, সফলতা আসে ১৯ শতকে। রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রথমবার আকাশে ওড়ার মধ্যে দিয়ে পূরণ হয় দিগন্ত জয়ের স্বপ্ন।
খুব শিগগিরই সম্ভাবনাময় এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে উৎসাহী হয়ে উঠলো ইউরোপ ও আমেরিকার সামরিক বাহিনীগুলো। ১৯০৯ সালে প্রথম সামরিক বিমান 'রাইট মিলিটারি ফ্লায়ার' তৈরি হয়। এরমাত্র কয়েক বছর পরই তৈরি হয় বিশ্বের প্রথম বিমানবাহিনী ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স (আরএএফ)।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিমানের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হলেও, যুদ্ধের ফলাফলে তাদের প্রভাব ছিল সামান্য। কিন্তু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নাগাদ বিমানশক্তিই হয়ে ওঠে জয়-পরাজয় নির্ধারক।
পিছিয়ে থাকতে রাজি ছিল না নৌবাহিনী। প্রথম মহাযুদ্ধের শেষদিকে ১৯১৮ সনে প্রথম বিমানবাহী রণতরী এইচএমএস হার্মিস তৈরির কাজ শুরু হয়। এরপরের বছরই হোশো ক্লাস বিমানবাহী রণপোত তৈরি শুরু করে জাপান।
এই প্রতিযোগিতা বিশ্বের অন্যান্য শক্তির মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিমানবাহী রণতরী থেকেই পার্ল হারবারে হামলা করে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে জাপান। আবার মিডওয়ের যুদ্ধে জাপানিদের চার চারটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ডুবিয়ে দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের আধিপত্য ফিরে পায় যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর আর পেছন ফিরে দেখতে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রকে। তাদের বিমান হামলায় ডুবে যায় জাপানের সুবিশাল সব ব্যাটেলশিপ। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারলেন, পৃথিবীর মহাসমুদ্রের নতুন সম্রাট এখন বিমানবাহী রণতরী।
আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে আজো প্রাসঙ্গিক এ প্রযুক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি জেরাল্ড আর ফোর্ড ক্লাস রণতরীগুলোই এখন পৃথিবীর সর্বাধুনিক বিমানবাহী জাহাজ।
পরমাণু বোমা, সমর প্রযুক্তির চরমতম আবিষ্কার:
সামরিক খাতে সবচেয়ে ধবংসাত্মক প্রযুক্তি তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পরমাণু অস্ত্র। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট ছিল ইতিহাসের সেই অন্ধকার দিন, এদিনই জাপানের হিরোশিমা শহরে প্রথম আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। কিছুদিন পর আরেকটি বোমায় সম্পূর্ণ ধবংস হয়ে যায় নাগাসাকি।
'লিটল বয়' ও 'ফ্যাট ম্যান' নামের এ দুটি বোমার ভয়াবহ শক্তিতে বিস্মিত, সন্ত্রস্ত হয় পুরো বিশ্ব। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার সংকল্প নেওয়া জাপানও বাধ্য হয় মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণে।
দ্বিতীয় যুদ্ধের সময়কার ওই দুটি বোমার চেয়ে অনেকগুণ শক্তিশালী আধুনিক যুগের পরমাণু অস্ত্র। এখন বিশ্বে মোট ১৩ হাজার পরমাণু অস্ত্র রয়েছে, সিংহভাগের মালিক যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। বাকি অস্ত্র রয়েছে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ইসরায়েল, পাকিস্তান, ভারত ও উত্তর কোরিয়ার হাতে।
সকল পারমাণবিক ওয়ারহেড বিস্ফোরণ ঘটালে তার শক্তি হবে ১৩টি ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের সমান ধবংস শক্তির। এ পরিমাণ শক্তি পৃথিবীর বুকে থাকা সমস্ত জনপদকে চোখের পলকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে।
মারাত্মক ধবংস ক্ষমতার অধিকারী হয়েও, পরমাণু অস্ত্রের কারণেই বিশ্বশান্তি নিশ্চিত হয়েছে। এই প্রযুক্তি না থাকলে স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে পুঁজিবাদী বিশ্বের সরাসরি যুদ্ধ ছিল অনিবার্য।
কিন্তু না হওয়ার কারণ, সব পক্ষই জানতো তারা একে-অপরকে সম্পূর্ণভাবে ধবংস করে দিতে পারবে। পারস্পরিক ধ্বংসের এই ভয় থেকেই পৃথিবীকে আজো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়নি।
- সূত্র: ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং