মাত্র ৫৩ সেকেন্ডের বিমানযাত্রা!
যাত্রীদের মাত্র কয়েক ইঞ্চি সামনে এসে বসেন পাইলট। বসার সাথে সাথেই সামনের সুইচগুলো নাড়াচাড়া করে ইঞ্জিন স্টার্ট দেন। জীবন্ত হয়ে উঠে ছোট বিমানটি।
যাত্রীদের জন্য এই ভ্রমণ এতটা আরামদায়ক না। মাইক্রোবাসের সমান একটি আঁটসাঁট জায়গায় আটজনকে বসতে হয় জড়সড় হয়ে। ইঞ্জিনের শব্দও প্রচুর। বিমানের ভেতরেও কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। টয়লেট চাপলে চেপে রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
কিন্তু এরপরও এই বিমান ভ্রমণের আলাদা একটি গুরুত্ব আছে। কী গুরুত্ব, সেটা না জেনে থাকলে দুই মিনিট অপেক্ষা করুন। কারণ, দুই মিনিট পর বিমানটা আর আকাশে থাকবে না।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, বিশ্বের সংক্ষিপ্ততম বিমান পরিষেবা এটি। মাত্র ১.৭ মাইলের (২.৭ কিলোমিটার) এই যাত্রা এতোই ছোট যে সিংহভাগ বিমান চলার মতো উচ্চতায় উঠতে যে সময় নেয়, তার আগেই শেষ হয়ে যায় এই ফ্লাইট। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বিমানে থাকা মালামালের ওজন কম থাকলে মাত্র ৫৩ সেকেন্ড লাগে পুরো ফ্লাইট শেষ হতে।
স্কটল্যান্ডের অর্কনি দ্বীপপুঞ্জের এক প্রান্তে অবস্থিত দ্বীপ ওয়েস্ট্রেকে প্রতিবেশী দ্বীপ পাপা ওয়েস্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করে এই ফ্লাইট। দিনে দুই থেকে তিনবার দেওয়া হয় এই ট্রিপ।
বিমানে সামনের সারিতে বসলে সিটে বসেই পাইলটের সব কর্মকাণ্ড দেখতে পারবেন আপনি। তবে কোথায় বসবেন সেটা আবার নিজে ঠিক করতে পারবেন না। বিমানটি এতোই ছোট যে ভারসাম্য রাখতে যাত্রীদের ওজন অনুসারে সিট বণ্টন করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
এখন আপনি প্রশ্ন রাখতে পারেন, দুই মাইলেরও কম জায়গায় কেন একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা হয়েছে?
মজার ব্যাপার হচ্ছে, অর্কনি দ্বীপপুঞ্জের দ্বীপগুলোতে মানুষের বসবাস এতোই কম যে ৭০টি দ্বীপের মধ্যে ৫০টিতে কেউ থাকে না। আর বাকি ২০টি দ্বীপকেও বেশ প্রত্যন্ত অঞ্চল হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। সিংহভাগ দ্বীপের জনসংখ্যা ১০০-র আশেপাশে। এই ফ্লাইটকে সংযুক্ত করা দ্বীপ পাপা ওয়েস্ট্রের জনসংখ্যাও মাত্র ৮০ জন।
যে কারণে দুই দ্বীপের মাঝে সেতু তৈরি করার প্রসঙ্গও আসে না। কারণ খরচের তুলনায় সেই সেতুর ব্যবহার তেমন হবে না। দ্বীপপুঞ্জগুলোর ভেতরে চলাফেরা করার জন্য একটি ফেরি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। কিন্তু সেই ফেরি বেশ ধীর গতির। যে কারণে সবার পছন্দের পরিবহন বিমানই।
"এই ফ্লাইট অনেকটা বাস সার্ভিসের মতোই," বলেন এখানকার প্রধান পাইলট কলিন ম্যাকালিস্টার।
তবে বাস সার্ভিসের মতো এতো সহজে চলে না এই পরিষেবা। দুই দ্বীপে যেমন ছিমছাম দুটি ছোট ছোট বিমানবন্দর আছে, সাথে আছে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট জনবলও।
সেই জনবল অবশ্য তেমন বড় না। দুই বন্দরে বিমান পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন দুইজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার। আর তাদের সঙ্গে থাকেন দুইজন করে মোট চারজন অগ্নিনির্বাপককর্মী। তবে, সৌভাগ্যক্রমে তাদের কোনো কাজ নেই বললেই চলে।
১৯৬৭ সাল থেকে চলে আসা এই বিমান পরিষেবা এখনও কোনো দুর্ঘটনার মুখ দেখেনি। বেশ সাফল্যের সঙ্গেই দুই দ্বীপের লোকজনের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে এটি।
সূত্র: সিএনএন।