লিভিং ব্লু: নীলের জগতে স্বাগতম!
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/01/25/271590982_641556123861850_9139414592820590930_n.jpg)
সময়টা ২০০৬ সাল, স্থানীয় হস্তশিল্পীদের কাজের তদারকি করতে রংপুর আসেন ভারতীয় এক ফ্যাশন ডিজাইনার। ওই অঞ্চল পরিদর্শনের সময়ই তার চোখে পড়ে ছোট গুল্ম জাতীয় একটি গাছ। গাছটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা কেউই এর সঠিক পরিচয় বলতে পারে নি। গুল্মজাতীয় সেই গাছটিকে রংপুরের সবাই চেনে 'মালখড়ি' নামে।
উত্তরবঙ্গে যে সময়টাতে ফসল হয়না, সেসময় জমিতে নাইট্রোজেন ফিক্সার হিসেবে এ গাছ ব্যবহার করেন স্থানীয় কৃষকরা; গাছের পাতা-ডালপালা দিয়ে মেটান সার-জ্বালানীর প্রয়োজন।
তবে, সেই ডিজাইনার গাছটিকে নীল গাছ হিসেবে চিহ্নিত করার পর এ অঞ্চলের মানুষ কেবল দৈনন্দিন কাজেই এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখেন নি। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, পরীক্ষা-নীরিক্ষা পেরিয়ে রংপুরে শুরু হয় নীলের চাষ। স্থানীয় হস্তশিল্পে যোগ হয় নীলের ব্যবহার।
লিভিং ব্লুয়ের শুরুটা যেভাবে
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2022/01/24/blue3.jpg)
২০০৬ সালে উত্তরবঙ্গে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) অর্থায়নে কেয়ার বাংলাদেশের 'নিজেদের জন্য নিজেরা' নামে একটি প্রকল্প শুরু হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে ইউনিয়নভিত্তিক ন্যাচারাল লিডার গড়ে তোলা।
সে সময় প্রায় প্রতিবছরই উত্তরবঙ্গে মঙ্গা দেখা দিত। এছাড়া নারীদের মধ্যে অর্থনৈতিক কাজে জড়িত থাকার হারও ছিল খুবই কম। এ অবস্থায় কেয়ারের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ইউনিট স্থানীয় সম্পদ জনশক্তির ব্যবহার করে জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেয়। কুমিল্লার কটন আর রাজশাহীর সিল্কের ওপর নকশী কাঁথার কাজ দিয়ে শুরু হয় এটি।
এ প্রকল্পের অধীনেই পরবর্তীতে নকশী কাঁথা বাণিজ্যিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে এখানে গড়ে ওঠে শিল্পীদের (আর্টিজান) অঞ্চলভিত্তিক ক্লাস্টার।
প্রতি ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকেন একজন মাস্টার আর্টিজান। কাজ পরিচালনা করা, বাকি আর্টিজানদের কাজ দেওয়া মাস্টার আর্টিজানের প্রধান দায়িত্ব। স্থানীয় জনগণের দক্ষতাকেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার কাজ শুরু হয়। মূলত এই প্রকল্প থেকেই লিভিং ব্লুয়ের জন্ম।
সে বছরই এই প্রকল্পের কনসালট্যান্ট ভারতীয় ওই ফ্যাশন ডিজাইনার রাস্তার ধারে নীলগাছ চিহ্নিত করেছিলেন। নীল থেকে নীল রং আহরণের প্রথা বন্ধ থাকায় এ গাছের পরিচয় ভুলে গিয়েছিলেন স্থানীয়রাও।
১৮ শতকে নীলচাষ বন্ধ হওয়ার পর সেভাবে নীলচাষ না করলেও স্থানীয় কৃষকরা গুল্মটির অন্যান্য ব্যবহার চালিয়ে যান। নীল একটি লিগিউমিনাস বা গুল্মজাতের ফসল। বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন ফিক্স করে জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এটি। এতে করে মাটি ক্ষয়ের সমস্যাও কমে আসে।
এসব গুণের কথা জানতেন উত্তরবঙ্গের কৃষকরা। বছরের যে সময়টা জমিতে ফসল ফলে না, সে সময়ই ৩-৪ মাসের জন্য নীল রোপণ করতেন তারা। এছাড়া, গাছের পাতা পচিয়ে সার হিসেবে আর ডালপালা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতেন স্থানীয়রা।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/01/24/josh4.jpg)
কিন্তু, ওই ভারতীয় ডিজাইনার এই গাছ চিহ্নিত করার পর এর ব্যবহারে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। সে বছরই কেয়ারের কয়েকজন কৃষি বিশেষজ্ঞ রংপুরে আসেন স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতে।
এরপরই নকশী কাঁথায় শুরু হয় প্রাকৃতিক নীল রঙের ব্যবহার। ২০০৭ সালে স্থানীয় এসব হস্তশিল্পীদের কয়েকজন প্রতিনিধি ও তাদের তৈরি পণ্য পাঠানো হয় দিল্লির 'দাস্তকার নেচার বাজারে'। প্রথমবারই প্রায় ৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়। তাদের পণ্যের এই চাহিদা দেখে দেশে ফিরেই নিজস্ব ব্যবসা গড়ে তোলার কথা ভাবেন তারা।
অবশেষে, ২০০৮ সালের নভেম্বরে যাত্রা শুরু হয় 'নিজেরা কটেজ অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজের (এনসিভিআই)। এনসিভিআইয়ের পণ্যের ব্র্যান্ড নামই দেওয়া হয় লিভিং ব্লু। ২০১৪ সালে এর নামকরণ করা হয় লিভিং ব্লু প্রাইভেট লিমিটেড।
এনসিভিআই-এর মডেলটি মূলত বাজারে দরিদ্রদের একটি অবস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখে। বাজারে হস্তশিল্প নতুন কিছু নয়। তবে, এ ধরনের ব্যবসায় কারিগরের মালিকানার বিষয়টি তুলনামূলকভাবে নতুন।
লিভিং ব্লু এর মালিকানার ৪৯ শতাংশ এনসিভিআইএ'র (আর্টিজান ও চাষীদের); ৫১ শতাংশ কেয়ার সোশ্যাল ভেনচারের। ১৭ সদস্যদের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আছে লিভিং ব্লুয়ের।
নতুন রূপে ব্লু-গোল্ড
কেয়ার থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে গাছ রোপনের পর প্রথম দফায় ১৪ কেজি পিগমেন্ট পায় রংপুরের কৃষকরা। পরবর্তীতে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় আড়াইশো কেজিতে। বর্তমানে লিভিং ব্লু এর কৃষকরা এক মৌসুমে সর্বোচ্চ দেড় টন পিগমেন্ট উৎপন্ন করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নীল গাছের ২০০ কেজি পাতা থেকে মাত্র ১ কেজি রং আহরণ করা যায়।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/01/24/blue4.jpg)
তবে, নীল চাষের একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। মূলত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে কৃষকদের মধ্যে বীজ বিতরণ শুরু হয়। সেই বীজ মার্চের মাঝামাঝিতে রোপণ করা হয়। এরপর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ফসল কাটা শুরু হয়, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে যেয়ে পাওয়া যায় নীল পাতা।
একেকটি নীল পাতার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ইঞ্চি। ফসল কাটার ২ ঘন্টার মধ্যে পাতাগুলোকে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়; এতে করে সেগুলো শুকিয়ে যায় না।
লিভিং ব্লু এর অ্যাটেলিয়ারে বর্তমানে ১০ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ট্যাংক আছে; এগুলো ১২'শ কেজি পাতা ধারণ করতে পারে। গাঁজনের জন্য পাতাগুলোকে এই ট্যাংকে ১৪ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখা হয়। গাঁজন শেষে ট্যাংকের নিচে জমা হয় সবুজ স্লারি।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2022/01/24/blue5_0.jpg)
সেই স্লারি অক্সিডেশনের জন্য অন্য ট্যাংকে স্থানান্তরিত করা হয়। প্রক্রিয়াটিতে প্রয়োজন হয় পাম্প এবং শাওয়ার হেডের একটি গ্রিড। আড়াই ঘণ্টা এই পাম্প চালানোর পর সবুজ স্লারি অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে জেলীর মতো নীল পদার্থ তৈরি করে।
এই পদার্থকেই ৪ দিন রোদে শুকানোর জন্য রাখার পর সেটিকেই বলা হয় নীলের গুড়া বা ব্লু গোল্ড।
লিভিং ব্লুয়ের পণ্য
লিভিং ব্লুর জন্ম নকশী কাঁথার মাধ্যমে হলেও তাদের রয়েছে কয়েক ধরনের পণ্য। ডায়িং এবং জাপানি টাই-ডাই 'শিবরি'র কাজ করা হয় পণ্যগুলোতে।
কেয়ারের কনসালট্যান্ট নিজেই একজন শিবরি বিশেষজ্ঞ হওয়ায় রংপুরের আর্টিজানদেরকে প্রায় ২০-২৫টি ডিজাইন শিখিয়ে যান তিনি। ওই ডিজাইনগুলোরই বিভিন্ন পারমুটেশন কম্বিনেশন করে লিভিং ব্লুয়ের পণ্যগুলোতে ব্যবহার করা হয়।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/01/24/josh.jpg)
নকশীকাঁথা ছাড়াও ওড়না, শাল ও স্টোল তৈরি করে তারা। শালের এক স্তরে থাকে প্লেইন ডাই, আরেক স্তরে থাকে শিবরির ডিজাইন।
এছাড়া, লিমিটেড এডিশন কালেকশনে নামানো হয় শাড়িও। শাড়ির অর্ডার পেলেই তবে বানিয়ে দেওয়া হয়।
কারখানা ও আর্টিজান
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/01/24/abir.jpg)
লিভিং ব্লু এর কারখানা রংপুরে। নীল আর পণ্য তৈরির বেশিরভাগ কাজই হয় সেখানে। ডায়িং, শিবরি স্টিচিং ও ফেব্রিক কাটিংসহ প্রায় সব কার হয় এখানকার অ্যাটিলিয়ারে।
কাঁথা সেলাইয়ের কাজ আর্টিজানরা ঘরে বসে করলেও শিবরি স্টিচিং আর ডায়িংয়ের কাজ হয় অ্যাটিলিয়ারেই। মোট ২৪০জন আর্টিজান এবং ৫৫০ জন কৃষক জড়িত আছেন লিভিং ব্লুয়ের সাথে। এছাড়া, অ্যাটিলিয়ারে আরও ৪০জন কাজ করছেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2022/01/24/abir2.jpg)
লিভিং ব্লুয়ের কাজ শুরুর পর নীল চাষের জন্য রংপুরের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তার ধারের খাস জায়গায় ভূমিহীন কৃষকদের চাষের ব্যবস্থা করে দেয়। এ অঞ্চলের অনেক কৃষকই লিভিং ব্লুয়ের কাছে নীল পাতা বিক্রি করে, অনেকে যোগান দেয় বীজের।
লিভিং ব্লু এর সাথে কাজ করা নতুন আর্টিজানদের প্রশিক্ষণ দেন প্রতি ক্লাস্টারের মাস্টার আর্টিজান। আর্টিজানদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী; পুরুষ আর্টিজান আছেন মাত্র ছয়জন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/01/24/blue2.jpg)
হস্তশিল্পের মূল কাজ নারী কর্মীরা করলেও শিবরির এক ধাপের কাজ করেন পুরুষ আর্টিজানরা। এক টুকরো কাপড়কে স্টিচিংয়ের পর সেটিকে টেনে প্লিটেড করা হয়। সেই প্লিটিং এর পর ২১৫ সেন্টিমিটারের কাপড় ৪ ইঞ্চিরও কম আকারে চলে আসে। এই কাজটিই করেন পুরুষ আর্টিজানরা।
আর্টিজানদের মজুরি দিনপ্রতি ৫ ডলার। জুনিয়রদের মজুরি ৪ ডলার।
রংপুরে অ্যাটিলিয়ারে যারা কাজ করেন তারা ৯-৫টা কাজ করেন। কাপড় বোনার কাজও হয় আবহাওয়া দেখে; প্রাকৃতিক আলো যতোক্ষণ থাকে অ্যাটিলিয়ারে ততোক্ষণই কাজ করেন আর্টিজানরা।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/01/24/blue8.jpg)
শালে এবং ওড়নায় ৯-১১ স্টিচ আর নকশী কাঁথায় প্রতি ইঞ্চিতে ৭ স্টিচের কাজ করা হয়। একটি নকশী কাঁথা বুনতে একজন আর্টিজানের মোটামুটি সাড়ে ৩ মাস সময় লাগে। এসব কাঁথার দাম শুরু হয় ২৮ হাজার থেকে। ২৮ হাজারের একটি কাঁথা তৈরি করে আর্টিজান পান সাড়ে ৬ হাজার টাকা।
কাঁথার আরও একটি স্টিচের ধরণ হলো লহরী। একটি লহরী কাঁথা বানাতে লাগে ৬ মাস। মূলত হ্যান্ডলুম ফেব্রিক, ২ ধরনের কটন, সিল্ক, খদ্দর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় পণ্য উৎপাদনে।
লিভিং ব্লুয়ের বিভিন্ন পণ্যের দাম শুরু হয় সর্বনিম্ন ৫০ ডলার থেকে; সর্বোচ্চ ৭৫০ ডলার পর্যন্ত দামে বিক্রি হয় এসব পণ্য।
বিক্রি হয় নীল রঙের গুড়াও
বর্তমানে নীল ছাড়াও আটটি ন্যাচারাল ডাই নিয়ে কাজ করছে লিভিং ব্লু। সে রংগুলোর একটিকে আরেকটির সাথে ইনফিউজ করে ১২টি ন্যাচারাল ডাই তৈরি করেছে তারা। লিভিং ব্লু ক্লোদিং ব্র্যান্ড হলেও তারা নীল পিগমেন্টও বিক্রি করে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2022/01/24/blue6.jpg)
ন্যাচারাল ডাই রিটেইলার এবং ন্যাচারাল ডায়াররা এখান থেকে পিগমেন্ট কেনেন। ডাই রিটেইলাররা ৫০-১০০ কেজি এবং ডায়াররা এক মৌসুমে ১০ কেজি পর্যন্ত পিগমেন্ট কেনেন।
২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ক্রেতার কাছে ১ টন নীল রং বিক্রি করে লিভিং ব্লু।
রংপুর থেকে নামীদামী ব্র্যান্ড আর ফ্যাশন শো'তে পা রাখা
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয় লিভিং ব্লুয়ের পণ্য।
জাপানের ক্যালিকো, বিভিন্ন বিদেশি বুটিকস ব্র্যান্ডগুলো তাদের প্রধান কাস্টোমার। তাদের বেশিরভাগ পণ্য বিক্রি হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা; পরিচিতিটা ছড়ায়ও সেভাবেই।
এ পর্যন্ত ডিওর, রাফ লরেন, লুই ভিটনের মতো ব্র্যান্ডগুলো লিভিং ব্লুয়ের স্যাম্পল নিয়েছে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/01/24/blue_0.jpg)
২০১২ তে অস্ট্রেলিয়ার স্যালি ক্যাম্পবেল, ভারতের প্ল্যান্টেশন হাউস, কানাডার মাইওয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানির সাথে কাজ করেছে তারা।
এর ৪ বছর পর, ২০১৬ সালের মার্চে গ্যালারি লাফায়েতের কো-ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের পণ্য প্রদর্শনী করে লিভিং ব্লু। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেই প্যারিসে প্রথমবারের মতো পা রাখে তারা।
সে বছরই প্যারিসভিত্তিক ফ্যাশন ডিজাইনার অ্যানাইস গুয়েরির সঙ্গে যৌথভাবে 'এ.গুয়েরি-লিভিং ব্লু' লেবেলে প্যারিস ফ্যাশন উইকের প্রোগ্রাম ডিজাইনারস অ্যাপার্টমেন্ট শোরুমে দেখা যায় লিভিং ব্লুয়ের পণ্য।
এছাড়া, প্যারিসের মেজোঁ ডি'এক্সপেকটেসিয়োঁ ফ্যাশন শো'তে পরপর তিনবার অংশ নেয় লিভিং ব্লু। মূলত হাই-ফ্যাশন ব্রান্ডগুলোই অংশ নেয় এখানে। এই শো তে অংশ নেওয়া ৩০ টি ব্র্যান্ডের মধ্যে ভার্নাকুলার টেকনিকস ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়ে অংশ নেয় লিভিং ব্লু।
তবে, তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির তালিকা এখানেই শেষ নয়। ২০১৭ তে লুয়েভে ক্রাফট প্রাইজ অ্যাওয়ার্ড পান দিনাজপুরের আর্টিজান সোনা রানি রায়। ২৬ জন ফাইনালিস্টের একজন ছিলেন তিনি। সে বছর পুরো পৃথিবী থেকে স্প্যানিশ লাক্সারি ব্র্যান্ডটির অ্যাওয়্যার্ডের জন্য হস্তশিল্প জমা পড়ে ৩ হাজার ৯৫১টি।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2022/01/24/blue7.jpg)
সোনা রানির হাতে বোনা পাঁচ স্তরের কটনের তৈরি লহরী নকশী কাঁথাটির নকশার নাম ছিল 'ময়ূর'। এ কাঁথাটি বুনতে তার সময় লাগে তিন মাস। এর আগেও, ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা ফেইন্টার ন্যাশনাল ফকআর্ট মার্কেটে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন সোনা রানি।
২০১৯ সাল পর্যন্ত লিভিং ব্লুয়ের রেভিনিউ বাড়ছিল ৩০ শতাংশ হারে।
এছাড়া, সোনা রানি অ্যাওয়ার্ড জেতার পর লিভিং ব্লুয়ের সঙ্গে দুটি কালেকশন নামানোর কাজ করে লুয়েভে। কিন্তু, করোনা মহামারির বিস্তার বাড়তে থাকায় বন্ধ হয়ে যায় তৃতীয় কালেকশন লঞ্চ।
লিভিং ব্লুয়ের টেকনিকাল অফিসার সৈয়দ মুর্তজা জাহাঙ্গীর জানান, ভবিষ্যতে আবারও লুয়েভের সঙ্গে কালেকশন নামানোর পরিকল্পনা আছে তাদের।
দেশে কবে আসবে?
এখন পর্যন্ত দেশী গ্রাহকদের কাছে সেভাবে লিভিং ব্লু এর পণ্য বিক্রি হয় না। তবে কেউ কিনতে চাইলে ব্র্যান্ডটির ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অর্ডার করেই কিনতে পারবেন পছন্দসই পণ্য।
২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে এআইএসডি'র মেলায় আগত বিদেশিদের কাছে লিভিং ব্লু'র পণ্য বিক্রি হতো। একদিনের মেলায়ই দেড়-দুই লাখের পণ্য বিক্রি হতো তাদের। সেসময় দেশে ১০ হাজার ডলারের মার্কেট ছিল লিভিং ব্লু এর।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2022/01/24/josh3.jpg)
কিন্তু ২০১৬ তে হলি আর্টিজান হামলার পর তাদের এই মেলা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে দেশে পণ্য বিক্রি একেবারেই কমে আসে।
চলতি বছরের রমজান থেকেই দেশীয় গ্রাহকদের জন্য মিড রেঞ্জের কিছু পণ্য বাজারে আনার চিন্তা করছে তারা। ডেডিকেটেড শোরুম না দিয়ে শপিং শপ ধরনের শেয়ার্ড স্পেসে পণ্য বিক্রির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।