স্বাতী স্ন্যাকস: যে দোকানের পানিপুরি খেতে ভালোবাসেন মুকেশ আম্বানি
সেব পুরি, পানি পুরি বা দাহি বাটাটা পুরি- সাথে ডুবোতেলে ভাজা ডাম্পলিং, মাখো মাখো দই, তেঁতুলের টক আর মিহি করে কাটা ধনেপাতা কুঁচি- জিভে জল এলো বুঝি!
ভারতের জনপ্রিয় এসব স্ট্রিট ফুডের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছুই নেই।
তবে জানেন কি, ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানিও পাপড়ি চাট-পানিপুরির মায়া কাটাতে পারেননি। মুকেশের স্ত্রী নীতা আম্বানি তার বিলাসী জীবনধারার জন্য কিছুদিন পরপরই খবরের শিরোনামে উঠে আসেন। তবে পানিপুরির স্বাদের সাথে সমঝোতা করতে বোধহয় রাজি নয় নীতা!
তাই তো, সেই ষাটের দশক থেকে এখন অব্দি একই দোকানে মজে আছেন এই দম্পতি ও তাদের পরিবার। নীতা আম্বানির হাজার ডলারের পানি, লাখ টাকার শাড়ির মতো এই চাট-পানিপুরির দোকানও তাই এখন আলোচনায়।
বলছি, স্বাতী স্ন্যাকসের কথা। ১৯৬৩ সালে মুম্বাইতে প্রথম শাখা খোলে প্রতিষ্ঠানটি। এখন মুম্বাই ও আহমেদাবাদ মিলে এর রয়েছে মোট ৪টি শাখা। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠাতা মীনাক্ষীর মৃত্যুর পর দোকানের হাল ধরেন তার মেয়ে জাবেরী (৭৬)।
স্মৃতির ঝাঁপি খুলে স্বাতী স্ন্যাকসের বর্তমান কর্ণধার জাবেরী জানান, একসময় আর সকলের মতোই মুকেশ-নীতা দম্পতি এসে তাদের পানিপুরির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। এখন নিজেরা আর আসেন না, খাবারের অর্ডার দিয়ে দেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ইউনিফর্ম দেখলেই জাবেরী চিনতে পারেন।
কি এমন রহস্য লুকিয়ে আছে স্বাতী স্ন্যাকসের মশলায় যার টানে ভারতের শীর্ষ ধনী পরিবার এখনো সেখানে ভিড়ে?
জাবেরী স্মরণ করেন তার মাকে। 'সিঙ্গেল মম' ছিলেন মীনাক্ষী, ভালবাসতেন অন্যকে খাওয়াতে। নিজের রান্নার দক্ষতাকে কাজে লাগাতেই মূলত রেস্তোরাঁ খোলার উদ্যোগ নেন তিনি।
জাবেরী বলেন, "মায়ের হাতের চাট ছিল রীতিমত 'ফিঙ্গার লিকিং গুড'। যে একবার খেয়েছে, স্বাদ ভুলতে পারে নি। মার আরেকটি বিশেষ পদ হাতে তৈরী কুমড়ার আইসক্রিম, সেটির রেসিপি জানতেও সবাই উন্মুখ হয়ে ছিল। রেস্তোরাঁ খোলার পর এসব খাবারই মেন্যুতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।"
এখন ২৫ জন বাবুর্চি মিলে স্বাতীর খাবার তৈরী করে থাকেন; জাবেরীদের তিন প্রজন্মের নাম জড়িয়ে গেছে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে।
স্বাতীর পানিপুরির টকে যে 'সিক্রেট মশলা' রয়েছে তা জানার এখতিয়ার এখন পর্যন্ত একমাত্র জাবেরিরই আছে। রেস্তরাঁর ২৫ থেকে ৩০টি পদেই কমবেশি এ মশলা ব্যবহৃত হয়। ঐতিহ্যবাহী সাতপদী রোটি, গাট্টা নু শাক, ফাডা নি খিচড়ির মতো পদগুলোর স্বাদ এই এক মশলায় বহুগুণ বেড়ে যায়।
আম্বানিদের আরও এক প্রিয় খাবার পানকি। চালের গুঁড়াকে কলার পাতায় ভাপিয়ে চাটনী সহযোগে খাওয়া হয় এটি। স্বাতী স্ন্যাকসের এটি আরেক বহুল জনপ্রিয় আইটেম।
চাল, হলুদ, লবণ, টকদই, ধনেপাতা ইত্যাদি মিশিয়ে ব্যাটার প্রস্তুত করা হয়। এরপর ফ্রাইপ্যানে কলাপাতা রেখে তাতে সামান্য তেল গ্রিজ করা হয়। এরপর তাতে ব্যাটার দিয়ে প্রয়োজনমতো ভাঁপিয়ে তোলা হয়।
হাসতে হাসতে জাবেরী জানান, যখন এই খাবারের প্রচলন হয়, তখন কেউই জানতো না শেষ পর্যন্ত এর স্বাদ কী দাঁড়াতে চলেছে!
"আমাদের এই খাবারটি রেস্তরাঁর বাবুর্চিরাই তৈরী করে থাকেন। আমরা কখনো এর বাণিজ্যিক দিক নিয়ে ভাবিনি। ফলে গ্রাহকের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা বুঝতে আমাকে তাদের টেবিলে-টেবিলে যেতে হয়েছে।"
প্রতিদিন সকাল দশটায় দোর খোলে 'স্বাতী'র। জাবেরী বলেন, "উদ্যোক্তা পদে আমার কোন ডিগ্রি নেই। আমি ঠিকমত জানিনাও কীভাবে রাঁধতে হয়। তবে আমি নিশ্চিত করি, রেস্তরাঁটি যেন সঠিকভাবে চলতে পারে এবং আমাদের গ্রাহকেরা সুস্বাদু খাবার থেকে কখনো যেন বঞ্চিত না হন।"
দিল্লীভিত্তিক ভারতের আঞ্চলিক খাবারের রেস্তোরাঁ, কারি অ্যান্ড কোং-এর স্বত্বাধিকারী শেফ ময়ুর গুপ্তার মতে, স্বাতী স্ন্যাকসের সাফল্যের পেছনে রয়েছে খাবারের স্বাদ এবং মানের সাথে কখনো আপোস না করার মনোভাব।
পানিপুরি, চাট, ভেলপুরি- এসব খাবার অনায়াসে মেলে, রেসিপিতেও বিশেষত্ব নেই। আর ঠিক এই কারণেই এসব মুখরোচক নাশতা ঘরের খাবারের স্বাদ দেয়, প্রত্যেকের রুচির সাথে যায়।
গুপ্তা বলেন, "এসব খাবারের দোকানে আপনি খুব চটকদার কিছু খুঁজে পাবেন না, হেঁশেলে দেখবেন না কোন খ্যাতনামা শেফকেও। আর সেজন্যেই আপনার এখানে ঢুকতেই একটা আপন-আপন অনুভূতি হবে।"
আর তাই বোধহয়, মুকেশ আম্বানির পাশাপাশি, অনেক বলিউড তারকা আর ক্রিকেটারদের পা পড়েছে স্বাতী স্ন্যাকসে।
"আমাদের এখানে আসা প্রতিটি গ্রাহকের আমরা এমনভাবে যত্ন নেই যেন তারা আমাদের বাড়িতে আসা অতিথি। আমি নিজে রান্নার তত্ত্বাবধান করি; রান্নায় কোন মশলা কী পরিমাণে যাচ্ছে, তার সমস্তটাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি", বলে ওঠেন জাবেরী।
- সূত্র- সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট