কর্পোরেটদের শখ: ট্রেকিং ও সাইক্লিংয়ে মনের শান্তি খোঁজেন শাম্মী আখতার
কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে থাকা মানেই মাথার উপরে গুরুদায়িত্ব ও কর্তব্যের চাপ। উচ্চপদে আসীন কর্পোরেট কার্যনির্বাহীরা যে সবসময়ই ব্যস্ত থাকেন, সেকথা আমাদের সবারই জানা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাদের ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই এবং তাদের কোনো শখ বা ইচ্ছা নেই!
কর্মজীবনের বাইরেও যদি কোনো দারুণ শখ থাকে, তা আমাদের মধ্যে আরও দক্ষতা এবং প্যাশন তৈরি করে। বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহীদের মধ্যে যাদের বিশেষ কোনো শখ থাকে, তারা অন্যদের চাইতে বেশি হাসিখুশি থাকেন এবং কাজের ব্যস্ততাকে তখন আর চাপ মনে হয়না। শুধু তাই নয়, শখ পূরণের মাধ্যমে যে দক্ষতা অর্জন করা যায় তা পেশাদারি জীবনেও কাজে লাগে।
ইউনিলিভারের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ও কর্পোরেট লীডার শাম্মী আখতারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তার শখ বা অবসর কাটানোর উপায় সম্পর্কে। তিনি আমাদের জানিয়েছেন কর্মক্ষেত্রের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে নিজের আগ্রহের কথা; জানিয়েছেন কিভাবে এসব শখ তাকে আরও কার্যক্ষম করে তুলছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তার মতে, এসব শখ তাকে সিনিয়র পদে দায়িত্ব পালনের চাপ থেকে প্রশান্তি দেয় এবং কর্মজীবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শাম্মী আখতারের মুখেই শোনা যাক তার নানাবিধ শখের কথা।
শাম্মী আখতার
হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, ইউনিলিভার
ব্যক্তিগতভাবে আমি বেশ সক্রিয় একজন মানুষ। শারীরিক সুস্থতা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমি একজন সনদপ্রাপ্ত ক্লাইম্বার (পর্বতারোহী) এবং লং-ডিসটেন্স সাইক্লিস্ট। আমি ভারতের কৃষ্ণনগর মাউন্টেইনিয়ারিং ক্লাব থেকে আমার ক্লাইম্বিং সনদ লাভ করেছি। প্রতি বছরই আমি একটা করে অভিযানে যাওয়ার চেষ্টা করি।
আমার অ্যাডভেঞ্চারগুলোর মধ্যে আছে হিমালয় পর্বত ট্রেকিং, মাদাগাস্কারে ৮০০ কিলোমিটার সাইক্লিং ইত্যাদি। সেই সাথে আমি কাশ্মীরের নুন এবং হিমাচলের চেঙ্গা বেঙ্গা পর্বতও জয় করেছি।
এর জন্য আমি যা করি তা হচ্ছে, দুই থেকে তিন সপ্তাহের ছুটি নিয়ে নেই। এই সময়ের মধ্যে ট্রেকিংয়ে বা সাইক্লিং ট্রিপে যাই। আমি একটা নির্দিষ্ট কোনো ক্লাব বা সংগঠনের সাথে যাই। আমার বেশিরভাগ অভিযানই হয়েছে ভারতে।
এসব অভিযানের মাধ্যমে আমি নানা সংস্কৃতির মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারি। কারণ এসব দলে নানা ভাষা, সংস্কৃতির, অঞ্চলের মানুষ থাকে।
যেহেতু এগুলো সবই দলগত কাজ, তাই আমার সিদ্ধান্ত, দক্ষতা ও দায়িত্ববোধ বাকি অভিযানকারীদের উপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে আমাকে একজন দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে আচরণ করতে হয়। আমার এই আচরণ আমাদের টিমকে এর লক্ষ্য ও গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এ অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে একেবারে আলাদা।
দ্বিতীয়ত, যখন আমরা প্রতিদিন একই কাজ করতে থাকি , তখন কোনোকিছু গভীরভাবে চিন্তার বা আত্মদর্শনের সুযোগ থাকে না। শখ মানেই যে খুব রোমাঞ্চকর কিছু হতে হবে তা নয়। কারণ বই পড়া বা বাগান করার মাধ্যমেও একই উদ্দেশ্য পূরণ হয়- আত্মা ও মনকে সংযুক্ত করা।
একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর আপনার মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিতে হবে। এতে করে আপনার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তা আসবে এবং আরও লক্ষ্যস্থির হতে সাহায্য করবে।
এটি আপনাকে আরও বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝতে শেখাবে, কারণ মানুষের চিন্তা সাধারণত সংকীর্ণ হয়। গতানুগতিকতার বাইরে চিন্তা করতে হলে আপনাকে একটা অচেনা পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে নিয়ে আসতে হবে। তখনই আপনি নিজের বিচারবুদ্ধি, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন।
কোনো প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে কাজ করা মানে শুধু সিদ্ধান্ত নিলাম আর বাস্তবায়ন করলাম, তা নয়; বরং এখানে আমাদের কৌশলগত দক্ষতা ও বিশ্লেষণধর্মী চিন্তার দরকার হয়। তাই কাজের মধ্যে বিরতি নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। আর শখের কাজে সময় ব্যয় করার মাধ্যমেই এই বিরতিকে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করা সম্ভব। হতে পারে এটিই আপনাকে আপনার সংগঠনকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিবে।