বিশ্বব্যাপী ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপনের যত অদ্ভুত রীতি
ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে কী করে থাকেন আপনি? পছন্দের মানুষটিকে মনের কথা জানান। কিংবা যদি দুজনের মনের দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টির আগে থেকেী মীমাংসা হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো ম্যাচিং জামাকাপড় পরে ঘুরতে বের হন, ভালোবাসার মানুষটিকে ফুল ও চকলেট উপহার দেন, তাকে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করেন।
কিন্তু কখনো কি মনে হয়েছে, প্রতি বছর একইভাবে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা একঘেয়ে ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে? মনে হয়েছে, খানিকটা ভিন্নভাবে, এমনকি বিচিত্র উপায়েও পালন করা যেতে পারে বছরের এই বিশেষ দিনটি?
চলুন, জেনে নিই বিশ্বব্যাপী ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের তেমনই অদ্ভুত কিছু রীতি-রেওয়াজ সম্পর্কে।
লন্ডনে রক্তাক্ত ভ্যালেন্টাইন
একটি ভৌতিক বাড়ি ও মধ্যযুগের এক ঐতিহাসিক জাদুঘরের মধ্যিখানে অবস্থিত লন্ডন ডানজন রক্ত ও নৃশংসতার মহাভক্ত। এখানে নিপীড়ন, রোগবালাই, মহামারি, দুর্যোগ, এবং অবশ্যই, জম্বিদের বিভিন্ন রক্ত পানি করা নৃশংস দৃশ্য প্রদর্শিত হয় খুবই হাস্যকরভাবে। যেমন একবার এই ডানজনে মিস কেকহেডের তৈরি করা মানব হৃদপিণ্ডের কাপকেক পরিবেশন করা হয়েছিল। প্রেমিকযুগলরা সেবার এই রক্তাক্ত ডেজার্টটি খেতে খেতে 'উপভোগ' করেছিল রক্তাক্ত অস্ত্রোপচারের দৃশ্য!
জাপানে চলে জেন্ডার রোল রিভার্সাল
জাপানে ভ্যালেন্টাইনস ডে'র ঐতিহ্য হলো—পুরুষদের জন্য চকলেট কিনতে হবে নারীদের। বিশ্বের অন্য অধিকাংশ দেশে যা হয়ে থাকে, এ যেন তার ঠিক উল্টো! জাপানে এই রীতির শুরু হয়েছিল ১৯৩০-র দশকে। নারীদের উপর বাধ্যবাধকতা তৈরি হয় যে পুরুষ সহকর্মী বা বসদেরকে চকলেট উপহার দিতে হবে তাদের। এর ঠিক এক মাস বাদে, হোয়াট ডে-তে, পুরুষরা এই ঋণ শোধ করত নারীদেরকে চকলেট উপহার দেওয়ার মাধ্যমে। নেহাতই বাণিজ্যিক স্বার্থে এই অদ্ভুত নিয়মের প্রচলন করেছিল দেশটির কনফেকশন ইন্ডাস্ট্রি। এখন এই দুইটি বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে ভ্যালেন্টাইন'স মৌসুমে দেশটির চকলেট ইন্ডাস্ট্রি বাড়তি আয় করে পুরো ৬৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!
ডেনমার্কে গোপন ভালোবাসা
ডেনমার্কে তরুণ-তরুণীরা জিকেব্রেভ (Gaekkebrev) নামে গোপন প্রেমিকের নাম অনুমান করার একটি মজার খেলা তৈরি করেছে। তরুণ-তরুণীরা মজার ছড়া বা লাভ নোট লেখে, কিন্তু সেখানে নিজেদের নাম লিখে সাইন করার বদলে ডট দিয়ে রাখে। প্রাপক যদি বুঝতে পারে ছড়া বা নোটটি তাকে কে পাঠিয়েছে, অর্থাৎ কে তাকে ভালোবাসে, তার জন্য থাকে বিশেষ পুরস্কার : ইস্টার সানডেতে একটি ডিম। পছন্দের মানুষটির ভালোবাসা পাওয়া না যাক, অন্তত একটা ডিম পাওয়া গেলে মন্দ কী!
ব্রাজিলের অন্য ভ্যালেন্টাইন
ব্রাজিলের ভ্যালেন্টাইন'স ডে-কে বলা হয় দিয়া দস নমোরাদোস। অবশ্য দিনটি ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, বরং পালিত হয় ১২ জুন। এ দিনটিকে সামনে রেখে কমবয়সী মেয়েরা একটি বিশেষ প্রথা মেনে চলে। কাগজের ছোট ছোট টুকরায় তারা তাদের সব ক্রাশের নাম লিখে ভাঁজ করে একটি হ্যাট বা কন্টেইনারের ভেতর ফেলে। তারপর ১২ জুন তারা হ্যাট বা কন্টেইনারের ভেতর থেকে যেকোনো একটি কাগজের টুকরা তুলে নেয়। এভাবে ভাগ্যের জোরে যার নাম ওঠে, তাকেই তাদের বিয়ে করা উচিত বলে ভাবা হয়।
ডাবলিনের 'আসল' ভ্যালেন্টাইন
আপনি যদি ১৪ ফেব্রুয়ারি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে অবস্থান করেন, তাহলে জানবেন, এখানকার হোয়াইটফ্রেয়ার স্ট্রিট কারমেলাইট চার্চেই কিন্তু চিরশায়িত আছে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের দেহাবশেষ। কথিত আছে, ১৮৩৫ সালে পোপ ষোড়শ গ্রেগরি ক্যাথলিসিজমের জনপ্রিয়তা বাড়াতে এই চার্চকে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের দেহাবশেষ দান করেন। আপনি যদি ভালোবাসা দিবসে প্রেমের সঙ্গে ধর্মের মেলবন্ধন চান, তাহলে এই চার্চই দেবে আপনাকে সবচেয়ে ভালো সুযোগ!
টেক্সাসের ব্লাইন্ড ডেটিং
ব্লাইন্ড ডেটিং ব্যাপারটির কথা নিশ্চয়ই আগেও শুনেছেন? এটি এমন একটি ট্রেন্ড, যেখানে একটি ইন্দ্রিয়কে কেড়ে নিয়ে অন্য ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা যাচাই করা হয়। ডালাস, টেক্সাসের 'ওপাক' নামের একটি রেস্তোরাঁ ঠিক এমন সুযোগই গড়ে দেয় অতিথিদের জন্য। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে তাদেরকে চার কোর্সের একটি মেন্যু সার্ভ করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যতিক্রমী কিন্তু খুবই অন্তরঙ্গ একটি ডাইনিং অভিজ্ঞতার স্বাদ দেওয়া হয় তাদের।
নারীর উপর সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
'দ্য ভ্যাজাইনা মনোলগস' শুরু হয়েছিল একটি নাটক হিসেবে, কিন্তু পরবর্তীতে এটি রূপান্তরিত হয়েছে নারী ও মেয়েদের উপর সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ক্যাম্পেইনে। তারা বিশ্বজুড়ে পরিচালনা করে তাদের ভি-ডে ক্যাম্পেইন। সেী ক্যাম্পেইনে 'দ্য ভ্যাজাইনা মনোলগস' নাটকের পারফরম্যান্স ছাড়াও বিভিন্ন সহিংসতাবিরোধী ওয়ার্কশপ চালানো হয় এবং ডকুমেন্টারি স্ক্রিনিং চলে। এভাবে স্থানীয় পর্যায়ে সহিংসতাবিরোধী কাজ যারা করে, তাদের জন্য অর্থ উত্তোলন করা হয়।
- সূত্র: বিবিসি