বহুজাতিক কোম্পানির চাকরি ছেড়ে বইয়ের ফেরিওয়ালা
কর্মরত ছিলেন একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে। প্রায় আট বছর চাকরি করে বেশ ভালো একটা অবস্থানও তৈরি করে নিয়েছিলেন। বহু তরুণেরই স্বপ্নের জীবন এরকম বহুজাতিক কোনো কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরি করা। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠিত, নিশ্চয়তার লোভনীয় জীবনই হঠাৎ একঘেয়ে, নিরামিষ হয়ে উঠল তার কাছে। অন্যের অধীনে বাঁধাধরা রুটিনে বন্দি দিনকাল ভালো লাগছিল না। তাই হুট করেই চাকরিটা ছেড়ে দিলেন নিজে নতুন কিছু করার নেশায়।
এই পর্যন্ত গল্পটা চেনা ছকেই এগোচ্ছিল। এভাবে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন অনেকেই। কিন্তু চাকরি ছাড়ার পর এই তরুণ যা করলেন, তাকে আমাদের দেশে মোটামুটি পাগলামিরই নামান্তর বলা চলে।
চাকরি ছেড়ে দিয়ে অনলাইনে—আসলে ফেসবুকে—বই বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন এই তরুণ। এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কেন তার এই কাজকে পাগলামি বলেছি? আমাদের এই দেশে মোটা দাগে পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কোনো বই পড়াকেই ভালো চোখে দেখে না কেউই। পাঠ্যবইয়ের বাইরের যেকোনো বই—অভিভাবকদের ভাষায় 'আউটবই'—পড়াটা এদেশের অভিভাবক সমাজের কাছে রীতিমতো ফৌজদারি অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত। সেখানে তিনি কিনা লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুরু করলেন সেই আউটবইয়ের ব্যবসাই!
এই তরুণের নাম সৈয়দ মোহাম্মদ রেজওয়ান।
নিশ্চিন্ত জীবন ছেড়ে অনিশ্চিত, বন্ধুর পথে
চাকরি ছাড়ার পর প্রথম এক-দেড় বছর রিয়েল এস্টেট থেকে শুরু করে মিষ্টির ব্যবসা—অনেক কিছুই চেষ্টা করেন রেজওয়ান। তবে কোনোটিতেই মন বসছিল না, পাচ্ছিলেন না কাঙ্ক্ষিত সাফল্যও। অবশেষে হঠাৎ মাথায় এলো, বই তো ভালোই পড়েছেন। বইয়ের পাতায় বুঁদ হয়ে যাওয়া, বই নিয়ে আড্ডায় মেতে ওঠার নেশা বহু বছরের। বইয়ের জগত নিয়ে জানাশোনাও রাখেন ভালোই। তাহলে এই অঙ্গনে চেষ্টা করে দেখছেন না কেন?
রেজওয়ানের বিশ্বাস ছিল, বই নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাই চিন্তা করলেন, অনলাইনে বই বিক্রির প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুললে মন্দ হয় না। তার ভাষায়, 'তখনও অত মানুষ অনলাইনে কেনাকাটায় অভ্যস্ত ছিল না, বা প্ল্যাটফর্মও অতটা ছিল না।'
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। প্রথমে ভাবলেন বই বিক্রির ওয়েবসাইট তৈরি করবেন। তাই এক বন্ধুর আইটি ফার্ম থেকে একটা ওয়েবসাইট বানান। ২০১৪ সালের আগস্টে ফেসবুক পেজও খোলেন। ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ একইদিনে লঞ্চ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওয়েবসাইটটা নজর কাড়তে পারেনি। তবে বুক স্ট্রিট নামের ফেসবুক পেজটি ঠিকই নজর কেড়ে নিল অনুসন্ধানী পাঠকের। বুক স্ট্রিটে যাত্রা শুরু মাত্র ১ হাজার ৬০০ টাকা বিনিয়োগ নিয়ে।
ফেসবুকভিত্তিক বই বিক্রির প্রতিষ্ঠানটি পাঠকদের কাছে সুলভমূল্যে পৌঁছে দিতে শুরু করে দেশের প্রায় সমস্ত প্রকাশনীর বই। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বই বিক্রি করে রেজওয়ান অল্পদিনের মধ্যেই পেয়ে যান সাফল্যের দেখা। সেবা দিয়ে শিগগিরই পাঠকদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে নেয় বুক স্ট্রিট।
শুরুর দিকের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে রেজওয়ান বলেন, 'বইয়ের বাজার ছোট হলেও কাজ করার সুযোগ সে সময়ে অনেক ছিল। এখনও যে নেই তা না, তবে বাজার তৈরি করে নিতে হয় বা হচ্ছে।'
এরকম অনিশ্চিত পেশায় আসাটাকে সাধারণত বাংলাদেশের কোনো পরিবারই সমর্থন করে না। রেজওয়ানের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিরাপদ চাকরি ছেড়ে ছেলে অনিশ্চিত ব্যবসায় আসছে, এতে খুশি ছিল না পরিবার।
রেজওয়ান বলেন, 'আপত্তি না এলেও তারা কেউই খুশি ছিল না শুরুতে। প্রথম দুই-এক বছর তো তারা আমার এই পেশাকে গণনাতেই আনত না।'
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিস্থিতি বদলেছে। বইয়ের ব্যবসায় উন্নতি বা স্থিতি দেখে রেজওয়ানের পরিবারের সদস্যরা এখন বেশ খুশি।
বই বিক্রি থেকে বই প্রকাশনায়
তবে বই বিক্রি থেকে প্রকাশনায় আসার ইচ্ছা রেজওয়ানের ছিল না। প্রকাশনায় এসেছেন স্ত্রীর উৎসাহে। অনলাইন বুকশপ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে যাবার পর তার স্ত্রী প্রকাশনা শুরু করার উৎসাহ দেন। স্ত্রীর সমর্থনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন রেজওয়ান। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত করলেন নিজের প্রকাশনা সংস্থা বুক স্ট্রিট পাবলিশিং হাউজ। শুরুটা করেন কয়েকটি অনুবাদ বই দিয়ে।
বই বিক্রির পর প্রকাশনাতেও রেজওয়ানকে সাফল্যের মুখ দেখাল বুক স্ট্রিট। তিনি নিজে তরুণ। জানেন, ঠিকমতো খুঁজে বের করতে পারলে নবীন লেখকরাই সাফল্য এনে দেবে একদিন। তাই নামী-দামি প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পেছনে না ছুটে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ লেখকদের খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নিলেন। রেজওয়ানের ভাষায়, 'নবীনরাই একসময়ে অভিজ্ঞ হয়ে যায়।'
রেজওয়ানের ব্যক্তিগত আগ্রহ রোমাঞ্চ ঘরানার লেখার দিকে একটু বেশি। তবে সব ধরনের পাণ্ডুলিপিই পড়েন তিনি। নিজের ভালো লেগে গেলে বা সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে যেকোনো পাণ্ডুলিপিই তিনি বই আকারে ছাপতে প্রস্তুত।
প্রকাশের উপযুক্ত বই বাছাই করার ও সম্পাদনা করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে রেজওয়ান বলেন, তিনি নিজে তো পাণ্ডুলিপি পড়েনই, পাশাপাশি একটি সম্পাদনা দলও আছে তার। সম্পাদনা দলে রেজওয়ান নিজে ছাড়াও আছেন তার স্ত্রী সুফাই রুমিন তাজিন—যিনি নিজেও লেখিকা—ওয়াসি আহমেদ ও মাহমুদুল হাসান।
পাণ্ডুলিপি হাতে এলে প্রথমে প্রথম ৩-৪ পৃষ্ঠা রেজওয়ান নিজেই পড়েন। ভালো লাগলে সেটি সম্পাদনা টিমের কাউকে পুরোটা পড়তে দেন। তারপর যাকে পাণ্ডুলিপি দেওয়া হয়, তিনি পুরোটা পড়ে নিজের মতামত জানান। আর যেকোনো বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বুক স্ট্রিট সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় লেখনশৈলীর ওপর।
রেজওয়ান বলেন, 'মাঝে মাঝে দেখা যায় কাহিনি ভালো হলেও লেখনশৈলী ততটা ভালো না। সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে শক্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়। আবার কখনও দেখা যায় কাহিনি খানিকটা দুর্বল মনে হলেও লেখনশৈলী চমৎকার হয়। সেক্ষেত্রে লেখকের সাথে আলাপ করে কাহিনিতে কিছু পরিমার্জনের সাজেশন দেয়া হয়।'
লেখকের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রয়্যালটি ঠিক হয়ে থাকে লেখকের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে। এছাড়া তাদের নিজস্ব একটা 'স্ট্যান্ডার্ড পেমেন্ট'ও আছে।
পাঁচ বছরে বুক স্ট্রিট এখন পর্যন্ত প্রায় চল্লিশটি বই প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে বিক্রির দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে অনুবাদগ্রন্থ বিফোর আই গো টু স্লিপ। তবে পাঠকদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক সাড়া পাওয়া দুটি বই-ই মৌলিক—নসিব পঞ্চম জিহাদীর মাঝরাতে একটা গল্প শুনিয়েছিলেন এবং জুবায়ের আলমের শব্দযাত্রা লেখক সংঘ।
প্রথমে অনলাইনে বই বিক্রি, তারপর প্রকাশনায় আগমন। এ দুটোর মধ্যে কোন কাজটিকে বেশি চ্যালেঞ্জিং লেগেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে রেজওয়ান বলেন, 'দুটোই নিজ নিজ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং। তবে প্রকাশনায় চ্যালেঞ্জের মাত্রাটা একটু বেশিই। পাণ্ডুলিপি পাঠ থেকে শুরু করে পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রই চ্যালেঞ্জিং। কোনো একটা ক্ষেত্রে সামান্য গরমিলেই সব ভেস্তে যেতে পারে। এজন্য খুব সতর্ক থাকতে হয়।'
আগে থেকেই বই বিক্রির প্রতিষ্ঠান ছিল। সে কারণে প্রকাশনী দেওয়ার পর নিজের বই বিপণনের কাজটা তুলনামূলক সহজ হওয়ার কথা। এ কথায় সায় দেন রেজওয়ানও। বলেন, 'হ্যাঁ, আমার জন্য প্রকাশনীতে আসার পথটা অনেক সহজ ছিল, যেহেতু ডিস্ট্রিবিউশনে অনেকটাই এগিয়ে ছিলাম। বর্তমানে অনলাইনেই গ্রাহকরা বই কিনতে বেশি পছন্দ করেন। ট্র্যাডিশনাল বইয়ের দোকানের আবেদন কখনোই কমবে না, তবে প্রচুর দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গল্পের বইয়ের তাকে পাঠ্যবইয়ের আধিক্য দিয়ে তারা বাঁচতে চাইছেন।'
অবশ্য বিপণনে দেশের প্রকাশনা খাতের পিছিয়ে থাকার কথাও বলেন তিনি। তার অভিযোগ, বেশিরভাগ দোকানই বই নিয়ে বিক্রির পর ঠিকমতো পেমেন্ট করতে চায় না। এ কারণে নিজেদের বই বিপণনের জন্য বুক স্ট্রিট এখন অনলাইনেই বেশি জোর দিচ্ছে বলে জানান রেজওয়ান।
দেশের প্রকাশনা ব্যবসার ধরনটাও একটু অদ্ভুত লাগে রেজওয়ানের কাছে। যেমন, অনেকসময় দেখা যায় খুব ভালো কোনো বইয়ের পাণ্ডুলিপি আসে তার হাতে। সেই বইটি নিয়ে প্রত্যাশার পারদ থাকে আকাশচুম্বী। কিন্তু বই প্রকাশের পর দেখা গেল ওই বই থেকে আশানুরূপ ব্যবসায়িক সাফল্য আসে না। আবার কিছু বইয়ের পাণ্ডুলিপি ভালো না লাগায় সেটি ছাপালেন না। পরে অন্য প্রকাশনী থেকে সেই বই প্রকাশ পেলে দেখলেন তার বিক্রি বেশ ভালো। এ যেন অনেকটা সিনেমা বাছাইয়ের মতো ব্যাপারে। কাহিনি বা চরিত্র পছন্দ না হওয়ায় একজন তারকা একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হলেন না, কিন্তু পরে দেখা গেল আরেক তারকা সেই সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং ছবিটি সুপারহিট হয়েছে।
রেজওয়ান জানালেন, ব্যবসাসফল বইয়ের ক্ষেত্রে দু-এক মাসেই বিনিয়োগ উঠে আসে। আর বিক্রি ধীর হলেও ছয়-সাত মাসের মধ্যেই উঠে আসে বিনিয়োগের টাকা।
সব মিলিয়ে প্রকাশনা ব্যবসা থেকে আয়ের ব্যাপারে আশাবাদী রেজওয়ান। জানালেন, বিনিয়োগ করার পর ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে পারলে এই ব্যবসা থেকেও ভালো আয় সম্ভব। তার মতে, বই ভালো হলে তার ফল একসময় না একসময় পাওয়া যাবেই।
তিনি বলেন, 'ইদানীং অনেক প্রকাশকই বই প্রকাশের পর কোনো বইয়ের বিক্রি আশানুরূপ না হলে দু-এক মাস পরই প্রোডাকশন কস্টেই সেলের অফার দিয়ে বসেন। এটা অনুচিত। এতে সার্বিকভাবে বাজার অস্থিতিশীল হয়।'
ব্যবসা ও ব্যক্তিজীবনে ধাক্কা
করোনা মহামারিতে যে কয়েকটা খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোর একটি প্রকাশনা খাত। মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এমনিতেই বইয়ের বিক্রি হয়েছে কম। তার ওপরে কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে প্রকাশকদের।
এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে রেজওয়ান বলেন, 'করোনায় লকডাউনের সময়ে সরকার বলল, অনলাইন কার্যক্রম চালানো যাবে। কিন্তু এদিকে আমাকে প্রোডাক্টের কাছে পৌঁছাতে হলে মার্কেটে ঢুকতে হবে, যা মার্কেট কমিটি দেবে না। কারণ, সরকার মার্কেট বন্ধ রাখার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বাসায় বসে তো আর ব্যবসা করা সম্ভব নয়।'
সব মিলিয়ে করোনাকালে প্রকাশনা শিল্প বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে বলে জানান তরুণ এই উদ্যোক্তা। তার দাবির সত্যতা পাওয়া গেছে গত ২ জানুয়ারি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের প্রায় ২৬ প্রকাশক মিলে প্রতিদিন ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা লোকসান গুনছেন।
তাছাড়া বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রকাশনী এখনও বইমেলাকেন্দ্রিক ব্যবসা করে। মহামারির কারণে গত দুই বছর বইমেলা হয়েছে অনেকটা না হওয়ার মতোই। তাই এ সময় প্রকাশ হয়েছে কম। সে কারণে বুক স্ট্রিটের অনলাইন অর্ডারও খানিকটা কমে গেছে।
শুধুই কি করোনা, গত প্রায় দু-বছরে টালমাটাল হয়ে গিয়েছিল রেজওয়ানের ব্যক্তিগত জীবনও। গত বছর জানতে পারেন, তার মাত্র তিন বছরের মেয়ে আয়শা সাফরিন এষাল আক্রান্ত হয়েছে ক্যান্সারের বীজবহনকারী উইলমস টিউমার।
মাত্র তিন বছরের মেয়ের শরীরে এই ভয়াবহ রোগ বাসা বেঁধেছে জানার পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন রেজওয়ান ও তার স্ত্রী। তবে মন শক্ত করে, সাহসে বুক বেঁধে অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা শুরু করেন শীঘ্রই। একদিকে সামলেছেন মেয়ের টেস্ট, সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, অন্যদিকে ব্যবসা। অবশেষে দীর্ঘ প্রায় সাত মাসের চিকিৎসার পর অসুস্থতাকে জয় করেছে রেজওয়ানের মেয়ে।
একদিকে মেয়ে অসুস্থ, তার চিকিৎসা; অন্যদিকে ব্যবসা—দুটো ধাক্কা সামলাতে হয়েছে রেজওয়ানকে। গত বছরের মার্চ থেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে রাখেন তিনি। এ সময় ব্যবসা চালিয়েছেন বুক স্ট্রিটের টিম মেম্বাররা। মেয়ে রোগমুক্ত হওয়ার পর এ বছর থেকে আবার পূর্ণ মনোনিবেশ করেছেন ব্যবসায়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মহামারির ধাক্কায়, মেয়ের অসুস্থতা কোনোটাই দমাতে পারেনি রেজওয়ানকে। সব প্রতিকূলতা জয় করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা জারি রেখেছেন। ধীরে ধীরে বইয়ের বিক্রি বাড়ছে। বেশ কিছু বইও প্রকাশ করছেন বইমেলা উপলক্ষে।
২০২২ বইমেলায় বেশ কিছু বই পুনর্মুদ্রণ ও নতুন বই আনছেন। নতুন বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, সুফাই রুমিন তাজিনের 'জোকার', পিয়া সরকারের 'বৃশ্চিক', সানজিদ পারভেজের 'গোস্ট রাইটার'।
দেশের বইবাজার বা প্রকাশনা শিল্প নিয়ে বেশ আশাবাদী রেজওয়ান। তিনি মনে করেন, নতুন নতুন পাঠকও তৈরি হচ্ছে ভালো সংখ্যায়। তবে দেশের বইয়ের বাজার সম্প্রসারিত করার জন্য গণমাধ্যম কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মত দেন এই তরুণ প্রকাশক। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নতুন বই নিয়ে নিয়মিত আয়োজন থাকলে ভালো হতো বলে মনে করেন তিনি। তার অভিযোগ, এ বিষয় নিয়ে মিডিয়া খুব উদাসীন। এছাড়া পত্রপত্রিকাতেও বই নিয়ে তেমন কোনো আয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, 'এক্ষেত্রে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতার বইয়ের বাজার বেশ আধুনিক। পত্রিকায় নিয়মিত আয়োজন থাকে এ নিয়ে।'
নিজের প্রকাশনী নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, জানতে চাইলে রেজওয়ান বলেন, সংখ্যায় অল্প হলেও মানসম্মত বই প্রকাশ করাই তার মূল লক্ষ্য।
রেজওয়ান যখন প্রথম অনলাইনে বই বিক্রি শুরু করেন, তখন এ রকম ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায়ী বলতে গেলে আর কেউই ছিল না। সেখান থেকে তিনি সফল ব্যবসায়ী হয়েছেন। নিজের ব্যবসা মডেল দাঁড় করিয়েছেন। তার সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরও অনেকেই এসেছেন এ ব্যবসায়—সফলও হয়েছেন অনেকে। আবার অনেকে ঝরেও যাচ্ছেন।
বইয়ের দুনিয়ায় সাফল্যের জন্য সর্বাগ্রে লেগে থাকার ধৈর্য, সত্যতা ও দক্ষতা দরকার বলে মনে করেন রেজওয়ান। এই তিনটি গুণ থাকলে এ খাতে অনেক দূর এগোনো সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।