কেউ একটানা কথা বলতে থাকলে তাকে কীভাবে থামাবেন?
করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত হানার আগে বিশ্বে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ছিল ভিন্ন। আমরা প্রায়ই অফিসে বিভিন্ন মানুষের কথায় বিরক্ত বোধ করি কিংবা সহকর্মীর দীর্ঘ কথোপকথন মেনে নেওয়া অনেকের পক্ষেই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মহামারির আগে যখন সবাই অফিসে এসে কাজ করতো, তখন এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া অনেকটা সহজ ছিল। কেউ বিরতিহীন কথা বলতে থাকলে আপনি উঠে দাঁড়িয়ে ওই জায়গা ত্যাগ করতে পারতেন। এতে বোঝা যেত ওই দীর্ঘ কথোপকথনে আপনার কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু জুম মিটিং বা ফোনের ক্ষেত্রে এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় কি? কীভাবে কাউকে কথা বলা থেকে থামাবেন আপনি?
উত্তরটা হচ্ছে, পুরনো কৌশলই আরও সৃজনশীলভাবে কাজে লাগাতে হবে! ভার্চুয়ালি কাজের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করে ভার্চুয়ালওয়ার্কস। এটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ডেবরা এ দিনোসেনজোর ভাষ্যে, "জুম মিটিং এর আলোচনা নিয়ন্ত্রণে রাখার ধরন সরাসরি মিটিং এর মতোই, কিন্তু এখানে আছে এক ভার্চুয়াল টুইস্ট!"
ভার্চুয়ালি কিভাবে সময়মত কোনো আলোচনা সভা বা কথোপকথন সারবেন, তারই কিছু টিপস থাকছে আজ পাঠকদের জন্য।
শুরুতেই প্যারামিটার ঠিক করা
জুম মিটিং এর শুরুতেই কি বিষয়ে আলোচনা বা মতামত গ্রহণ করা হবে এবং তার জন্য নির্ধারিত সময় কতক্ষণ, সেটি সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে।
ডেবরা দিনোসেনজো বলেন, "কোনো বিষয়ে কথা বলার ঠিক কতক্ষণ সময় মিটিংয়ে উপস্থিত ব্যক্তিদের হাতে আছে তা স্পষ্ট জানিয়ে দিন। ঠিক ঐ সময়ের মধ্যেই মিটিং শেষ করার চেষ্টা করুন। আলোচনার মাঝেই মিটিং এর মূল এজেন্ডা এবং অংশগ্রহণকারীদের সময়ের মূল্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। তাই যেভাবেই হোক, নির্ধারিত সময়েই যেন মিটিং শেষ হয়, একথা সবাইকে বলুন।"
ব্রান্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক অ্যান্ডি মলিনস্কি বলছেন, কথোপকথন যদি ফোন কলে হয়, তাহলে কথার ইতি টানার পূর্বাভাস দেওয়া শ্রেয়।
"যখন আমরা কাউকে খারাপ সংবাদ দিবো, আগেই তার পূর্বাভাস দেওয়া ভালো। যদিও সাধারণ কথাবার্তাকে খারাপ সংবাদের সাথে তুলনা দেওয়া চলে না, কিন্তু তাও এক্ষেত্রে অপরপক্ষের মনে হতাশা জন্ম নিতে পারে। তাই হুট করে ফোন রাখার কথা না বলে আগেভাগেই আভাস দিন যে আপনাকে যেতে হবে।"
যেমন- আপনি বলতে পারেন এভাবে, "আমি একজন সহকর্মীকে বলেছিলাম আর ১৫ মিনিটের মধ্যেই তার সাথে দেখা করবো। ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার সাথে কথা চালিয়ে যাওয়া যায়।"
কথার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া
আলোচনার মধ্যে যদি কোনো ব্যক্তি একাই অনর্গল কথা বলতে থাকেন এবং মূল বিষয় থেকে সরে আসেন, তাহলে আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে কথা শেষের দিকে নিয়ে আসতে হবে, বলেন বায়োলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক জয় কুয়ালস।
তার ভাষ্যে, "এমনভাবে কথার মোড় ঘুরিয়ে দিতে হবে যাতে অপরপক্ষ আঘাত না পায়, কিন্তু সবাই আলোচনা শেষ করতে চাওয়ার ইঙ্গিতটা বোঝে। যারা একটানা কথা বলে চলেন কিংবা ভার্চুয়াল মিটিং এর ধরন সম্পর্কে অবগত নন, তাদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের মাধ্যমে আলোচনা শেষের বার্তা দেওয়া যাবে না।"
আরও একটি উপায় হতে পারে, বক্তাকে আলোচনার মূল এজেন্ডা বা উদ্দেশ্যের দিকে ফেরানো। কমিউনিকেশন ফার্ম সাকসেস ইন মিডিয়া'র প্রেসিডেন্ট জেস টডফেল্ড বলেন, "আপনার কথায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছি বলে দুঃখিত, কিন্তু আমি শুধু মনে করিয়ে দিতে চাইছি যে আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই এবং মূল আলোচনাটা শেষ করতে হবে- এমনটা কাউকে বলা কোনো অপরাধ নয়। তারপর আপনি আসল আলোচনায় ফিরে যান, এভাবেই মানুষ পরিস্থিতিটা বুঝতে শেখে।"
ভিডিও টুল ব্যবহার
ভিডিও মিটিং টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেন হোস্ট।
দিনোসেনজো বলেন, "ভিডিও সংকেত ব্যবহারের মাধ্যমে কথা না বলেই আপনি বোঝাতে পারেন যে, মিটিং এর সময় শেষের দিকে। যেমন- ইংরেজি 'টি' অক্ষরের মতো হাত দেখিয়ে বা ঘড়ির ছবি সংবলিত একটি চিহ্ন দেখিয়ে কথা থামানো যায়। আর ওই সময়টায় হোস্ট বা দলনেতা আবারও আলোচনার নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় নিতে পারেন।"
আর যদি এসবের কিছুতেই কাজ না হয়, তাহলে 'মিউট' অপশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা বুঝবেন যে তাদের কথা বলার সময় শেষ।
পরবর্তী সুযোগের কথা উল্লেখ
মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের যদি বলা হয়, তারা পরবর্তীতে আরেকদিনও তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে, তখন কথোপকথন থামানো অনেক সহজ হয়ে যায়। নির্দিষ্ট আরেকটি দিন ও সময়ের কথা উল্লেখ করে ফলো-আপের বিষয়টি জানান। পরের দিনের মিটিং এ ওই এজেন্ডা যুক্ত করুন অথবা আলাদা মেইলের মাধ্যমে তাদের বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ করে দিন।
যোগাযোগ বিষয়ক কোচ ও প্রশিক্ষক আশিরা প্রোজাক বলেন, "অংশগ্রহণকারীদের বলুন, তাদের বক্তব্য কতটা মূল্যবান এবং আপনি সেটি বুঝতে পারছেন। পরেও ম্যাসেজ বা মেইলের মাধ্যমে কথা বলতে পারবে জানালে হয়তো তারা পূর্ণাঙ্গ আইডিয়া এক মিটিংয়েই শেয়ার করা থেকে বিরত থাকবে।"
কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলে দীর্ঘ কথোপকথনের ইতি টানার দক্ষতা থাকা খুবই প্রয়োজনীয়। কথা বলার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া কোনো অন্যায় নয়, বরং প্রত্যেকের সময়ের মূল্যকে সম্মান করা।
সূত্র: ফাস্ট টকিং।