প্রাণীজগতে মানুষই কি সবচেয়ে নিকৃষ্ট?
মনুষ্যজাতি যে কতোটা ভয়ংকর হতে পারে, তার উদাহরণ আমাদের সামনেই রয়েছে। জন্মগতভাবে, এই ভয়ংকর রূপ নিয়েই মানুষ পৃথিবীতে এসেছে। প্রতিনিয়ত মানুষ নিজের অবচেতন মনে যে ভয়াবহ কাজগুলো করে যাচ্ছে, যা হয়তো তারা নিজেরাও অনুধাবন করতে পারে না।
তবে, মানুষের কিছু ভালো গুণাগুণও রয়েছে। তারা যখন নিজেদের খারাপ দিকগুলোর মুখোমুখি হতে পারবে, তখনই তারা সেটি থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদেরকে শুধরে নিতে পারবে।
আমরা কিছুতেই সুখী হই না
আপাতদৃষ্টিতে অনেকের কাছে মনে হতে পারে লটারি বা অঢেল টাকা হয়তো মানুষের জীবনে সুখ এনে দিতে পারে, কিন্তু বাস্তব চিত্র তা নয়।
বিয়ে, সন্তান, খ্যাতি কোন কিছুই মানুষের জীবনকে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে না। বাহ্যিকভাবে অর্জিত এসব অর্জন মানুষকে স্বল্প সময়ের জন্য সুখ দিতে পারলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়না।
গবেষণায় দেখা গেছে, জিনগতভাবে প্রত্যেকের সুখের কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে, যা বাহ্যিক কোনোকিছুর ওপর নির্ভরশীল নয়। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে 'হেডোনিক ট্রেডমিল' বলা হয়। 'হেডোনিক ট্রেডমিলের' প্রভাব লক্ষ্য করতে ১৯৭৮ সালে একটি পরীক্ষা চালানো হয়। লটারি বিজয়ীদের সাথে সম্প্রতি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছে এমন ব্যক্তিদের তুলনা করে দেখা যায়, একটা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দুই দলই অসুখী বোধ করে।
তাই, যে জিনিসটির জন্য আমাদের আজকে তীব্র আকাঙ্ক্ষাবোধ কাজ করছে, সেটা পেলেই আমরা সুখী হবো, এটা ভেবে বসে থাকলে চলবে না। এতে করে অন্যদের তুলনায় তিনি কম হতাশায় ভুগবেন।
জন্মগতভাবে আমরা মিথ্যাবাদী
শিশুকাল থেকে শুরু করে মানুষ প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলে চলছে। সম্প্রতি জাপানের একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে কীভাবে ৭ মাস বয়সী শিশুরা কান্নার মিথ্যা অভিনয় করে আদর পাওয়ার জন্য।
বড় হওয়ার সাথে সাথে আমাদের মিথ্যা বলার ধরণেও কিছু পরিবর্তন আসতে থাকে। তখন মানুষ গুছিয়ে যুক্তি দিয়ে মিথ্যা বলা শুরু করে।
ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলে সেটাকে গ্রহণযোগ্যতা দিতে প্রায়ই অনেককে বলতে শোনা যায় যে, অন্যদের আঘাত না করতেই তারা মিথ্যাটি বলেছিল। মিথ্যা বললে সমালোচনা ও নিন্দার মুখে পড়তে হবে এটা ভাবার আগে উচিত হবে মিথ্যা থেকে নিজেদেরই দূরে থাকা।
শিশুরা অন্যদের যন্ত্রণা দেখলে আনন্দিত হয়
গবেষণা থেকে দেখা যায়, ৪ বছরের কম বয়সী শিশুরা অন্যদের দুদর্শা দেখে আনন্দ পায়। টিভিতে কাল্পনিক কোনো চরিত্রের খারাপ পরিণতি হলে, তারা আনন্দবোধ করতো। বড় হওয়ার সাথে সাথে শিশুদের মধ্যে এই ধরনের অনভূতিগুলো আরও বাড়তে থাকে।
ব্যাপারটি অদ্ভুত শোনালেও এখানে চিন্তার বিষয় হচ্ছে- অন্যের দুর্দশা দেখে শিশুদের আনন্দিত হওয়ার পেছেনে কারণ কী! তারা হয়তো মনে করে ঐ ব্যক্তি নিজের কর্মফল ভোগ করছেন।
এটাকে আমরা এভাবেও বলতে পারি শিশুরা ন্যায়বিচার দেখতে পছন্দ করে। তাইতো তারা খারাপ চরিত্রের কাউকে শাস্তি পেতে দেখলে যেমন আনন্দবোধ করে, তেমনি ভালো চরিত্রের কাউকে কষ্ট পেতে দেখলে দুঃখবোধ করে।
একে-অপরকে ঘৃণা-বিদ্বেষবশত হত্যাকারী একমাত্র প্রাণী মানুষ
ইতিহাসে মনস্তাত্ত্বিক অধ্যয়নের একটি বিখ্যাত গবেষণা হচ্ছে 'মিলগ্রাম এক্সপেরিমেন্ট'। মিলগ্রামের এই সমীক্ষা দেখায়, নাৎসি বাহিনী শুধুমাত্র আদেশ পালন করে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায়।
অনেকেই দাবি করেন, মিলগ্রামের সমীক্ষাটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ এবং সেখানে উল্লেখিত তথ্যগুলো সন্দেহজনক। সমীক্ষায় সরাসরি অংশগ্রহণ করা অনেকের মাঝেই পরিস্থিতির বাস্তবতা নিয়ে দ্বিধা দেখা যায়, যা তাদের আচরণকে প্রভাবিত করেছে বলে ধারণা করা হয়।
মানুষ সহিংসতা ভালোবাসে
ইঁদুরের মস্তিষ্কের ওপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখান, সহিংসতা ইঁদুরকে ততোটাই আনন্দ দেয়, যতটা তারা খাদ্য গ্রহণের সময় পেয়ে থাকে। এমনকি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণাত্মক আচরণ করতে পারে। গবেষকদের মতে, ইঁদুরের এইরূপ আচরণগুলোর সাথে মানুষের আচরণের বেশ মিল রয়েছে।
মানুষ ইঁদুর নয়, তাই ইঁদুরের ওপর করা গবেষণা খুব বেশি কার্যকারী হবে বলে বিশ্বাস করার কিছু নেই। কিন্তু, আমাদের সহিংসতার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়ার প্রমাণ খোদ ইতিহাসই দেয়।
- সূত্র- লাইফহ্যাকার ডটকম