প্রচলিত ফিল্টারের চেয়ে ১,০০০ গুণ দ্রুত পানি বিশুদ্ধ করবে নতুন এই ডিভাইস!
বিশ্বজুড়ে ব্যবহারযোগ্য পানির অভাব এখন নিত্যদিনের সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ সমস্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রকট হতে চলেছে। কেবল আফ্রিকাতেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও নতুনভাবে কমবেশি দেখা দিয়েছে সুপেয় ও ব্যবহারযোগ্য পানির সংকট। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে কেবল আফ্রিকাতেই প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মানুষ পানি ঘাটতির সম্মুখীন হবেন।
পৃথিবীর ৭০ শতাংশ জুড়েই রয়েছে পানি। সুতরাং মনে হতেই পারে, এতো পানি থাকতেও কেনো পানির সংকট? কিন্তু এই ৭০ শতাংশ পানির বেশিভাগই লবণাক্ত। এরমধ্যে মিঠা পানি বা ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ খুবই কম। তাই বিজ্ঞানীরা এই লবণাক্ত পানিকে ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে আবিষ্কার করেছেন উন্নত প্রযুক্তির ডিস্যালাইনেশন প্ল্যান্ট বা ফিল্টার। পানি বিশুদ্ধকরণ বলতে মূলত সমুদ্রের পানি থেকে লবণ অপসারণ করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এরমাধ্যমে সমুদ্রের পানি থেকে লবণ আলাদা করে ওই পানিকে বিশুদ্ধ ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। একটি ডিস্যালাইনেশন প্ল্যান্ট প্রাপ্ত পানির প্রায় অর্ধেককে সুপেয় পানিতে রূপান্তরিত করে।
সামুদ্রিক পানি বিশুদ্ধকরণের এই প্রক্রিয়া বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও এতে খরচ হয় অনেক বেশি। আর তাই গবেষকরা প্রথমবারের মতো ফ্লোরিন-ভিত্তিক ন্যানোস্ট্রাকচার ব্যবহার করে সফলভাবে পানি থেকে লবণ অপসারণের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন। এই ফ্লোরাস ন্যানোচ্যানেলগুলো প্রচলিত ডিস্যালাইনেশন প্রযুক্তির চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর বলে দাবি করেছেন এর উদ্ভাবকরা। কারণ এটি প্রচলিত প্রযুক্তির চেয়ে দ্রুত কাজ করে, কম চাপেও ভালো কাজ করে, পরিশোধনে এটি আরও বেশি কার্যকর এবং এটি ব্যবহারে কম এনার্জি বা শক্তির প্রয়োজন হয়; ফলে এর খরচও কম।
টেফলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফ্লোরিন। এটি ওজনে হালকা এবং সহজাতভাবেই পানি-প্রতিরোধী বা হাইড্রোফোবিক। টেফলনের সঙ্গে পাইপ জুড়ে দিয়ে পানির প্রবাহও বাড়ানো যায়। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়োশিমিতসু ইতোহ এবং তার সহকর্মীরা টেফলনের এমন বৈশিষ্ট্যে কৌতূহলী হন। আর এ কারণেই তারা ফ্লোরিন পাইপলাইন বা চ্যানেলগুলো ন্যানোস্কেলে কীভাবে কাজ করে তা পরীক্ষা করতে নামেন।
ইতোহ বলেন, "একটি ফ্লোরাস ন্যানোচ্যানেল কীভাবে বিভিন্ন যৌগ, বিশেষ করে, পানি থেকে লবণকে আলাদা করতে পারে এবং কতটা কার্যকর উপায়ে করতে পারে, তা দেখতে আমরা আগ্রহী ছিলাম। কিছু জটিল কম্পিউটার সিমুলেশন পরীক্ষার পর আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, একটি কার্যকরী নমুনা তৈরিতে সময় এবং প্রচেষ্টার যথাযথ ব্যবহার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি।"
"বর্তমানে পানি বিশুদ্ধ করার দুটি প্রধান উপায় রয়েছে- একটি হলো, তাপ প্রয়োগ পদ্ধতি; এ পদ্ধতিতে তাপ প্রয়োগ করে সমুদ্রের পানিকে বাষ্পীভূত করে বিশুদ্ধ করা হয়। অপরটি হলো, অভিস্রবণ পদ্ধতি; এ পদ্ধতিতে পানি বিশুদ্ধ করতে চাপ প্রয়োগের জন্য এমন একটি ঝিল্লি ব্যবহার করা হয়, যেখানে পানির লবণ আটকে যায়। তবে এই উভয় পদ্ধতিতেই প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণ শক্তি; ফলে খরচও হয় বেশি," যোগ করেন ইতোহ।
গবেষকরা রাসায়নিকভাবে ন্যানোস্কোপিক ফ্লোরিন রিং তৈরির মাধ্যমে করে পরীক্ষামূলক পরিস্রাবণ ঝিল্লি বানিয়েছেন। তারা ১ থেকে ২ ন্যানোমিটার আকারের ন্যানোরিংসহ পরীক্ষার জন্য একাধিক নমুনা তৈরি করেছেন। ইতোহ এবং তার সহকর্মীরা তাদের তৈরি ঝিল্লির কার্যকারিতা নির্ধারণী পরীক্ষায় ঝিল্লির উভয় পাশে ক্লোরিন আয়নের উপস্থিতি মূল্যায়ন করেছেন; এই পরীক্ষা প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে বলেই জানান গবেষক দল। উল্লেখ্য, লবণের প্রধান উপাদানের একটি ক্লোরিন, অপরটি সোডিয়াম।
ইতোহ বলেন, "প্রক্রিয়াটি এতো দ্রুত হয়েছে, এতে আমি সতিই বিস্মিত হয়েছিলাম। আমাদের তৈরি নমুনা প্রচলিত ডিভাইসের তুলনায় কয়েক হাজার গুণ দ্রুত কাজ করেছে এবং পরীক্ষামূলক কার্বন ন্যানোটিউব-ভিত্তিক ডিস্যালাইনেশন ডিভাইসের চেয়ে প্রায় ২ হাজার ৪০০ গুণ দ্রুত কাজ করেছে।"
"বর্তমানে আমরা যেভাবে আমাদের উপকরণগুলো সংশ্লেষণ করছি, তা তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত শক্তি-সাশ্রয়ী; আমরা গবেষণার মাধ্যমে এটিকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি। সেইসঙ্গে, ঝিল্লির দীর্ঘ স্থায়িত্ব এবং খরচ আরও কমিয়ে আনার চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে," যোগ করেন তিনি।
- সূত্র: সাইটেকডেইলি ডট কম