মরিচ বাতি, উইশ বল, র্যাটন বল—আলোকসজ্জার জগতে আর কী চাই!
প্রিয় ঘরকে সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে সাজাতে চায় সবাই। রাজা-বাদশারা ঘরের শোভা বাড়াতে ব্যবহার করতেন ঝাড়বাতি। রাজাদের আমল তো চলে গেছে সেই কবেই। বিরাট বিরাট সেসব ঝাড়বাতির ব্যবহার দেখা যায় কেবল অতি-ধনীদের ঘরে। তাই বলে মধ্যবিত্তের ঘর সাজানো কি আর থেমে আছে? তখনকার অন্দরমহল রূপ পেয়েছে এখনকার গৃহকোণে। কালের পরিক্রমায় এসেছে নিত্যনতুন ল্যাম্প, লণ্ঠন। ঝাড়বাতির আকারেও এসেছে পরিবর্তন। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ছোট ছোট রং-বেরঙের মরিচবাতির ব্যবহার দেখা যেত কেবল বিয়েবাড়িতে।
তবে এখন ছোট মরিচবাতি বা রংবেরঙের ফেয়ারি বাতির আলোকসজ্জা শুধু বিয়েবাড়ি নয়, অনলাইন বাণিজ্যের সুবাদে এখন চলে এসেছে ঘরের কোণেও। নিজ ঘর বা পড়ার টেবিল অথবা ড্রয়িং রুম সাজাতে, কিংবা প্রিয়জনকে উপহার দিতে অহরহ এ ধরনের মরিচবাতি, উইশ বল প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করছেন তরুণরা। এমনটিই জানালেন আলোকসজ্জা নিয়ে অনলাইন পেজ 'পার্পল হাউজ'- এর স্বত্বাধিকারী তানভীর খান।
২০১৭ সালে পার্পল হাউজ নামে এ অনলাইন শপটি দেন তানভীর। সেসময় বাংলাদেশে এ ধরনের আর কোনো দোকান ছিল না। ঘর সাজাতে খুব পছন্দ করতেন। তবে বহু জায়গায় ঘুরে ঠিক নিজের পছন্দসই জিনিস পেতেন না। নিজের জন্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকটা হঠাৎ করেই অনলাইনে এ ধরনের একটি দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।
তিনি জানান, যারা এখনও পড়াশোনা করছেন, ঘর সাজাতে আগ্রহী অথচ অর্থ সংকটে রয়েছেন, সেইসব তরুণরাই তার মূল গ্রাহক বা কাস্টোমার। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হলেও ক্রেতাদের আগ্রহের বিষয়টি মাথায় রেখে উত্তর বাড্ডার বিটিআই প্রিমিয়ার শপিং মলে ছোট একটি আউটলেট দিয়েছে পার্পল হাউজ। সাড়ে ৩শ' টাকা থেকে শুরু করে বেশির ভাগ পণ্যই ১৫শ' টাকার মধ্যেই পাওয়া যাওয়া বলে তরুণদের পছন্দের তালিকায়ও বেশ এগিয়ে রয়েছে দোকানটি।
দীপ্ত অন্তর মোমেন নামে এক ক্রেতার কণ্ঠেও একই সুর। জানালেন, একটি কাজে এসেছিলেন উত্তর বাড্ডার বিটিআই প্রিমিয়ার শপিং মলটিতে। চলে যাওয়ার সময় দোকানটি চোখে পড়ে। ছোট ছোট লাইটের এসব পণ্য দেখে এতোটাই ভালো লেগে যায় যে, স্মার্ট এলইডি লাইট ও একটি থ্রিডি গ্যালাক্সি ল্যাম্প কিনে ফেলেন তিনি। দামটাও সাধ্যের ভেতর- এমনই দাবি তার।
শুধু তরুণরাই নয়, শিশুদেরও যে বেশ পছন্দ দোকানটির অভিনব এ আইটেমগুলো, তা বোঝা গেল কিছুক্ষণের ভেতরই। প্রীতম নামে ৭ বছর বয়সী এক শিশু শপিং মলটিতে কেনাকাটা শেষে মিনিয়ন ব্লুটুথ স্পিকারে গান বাজতে দেখে দাঁড়িয়ে গেল দোকানটির সামনে। বাবা-মায়ের কাছে আবদার, কিনে দিতেই হবে তাকে ওই ছোট্ট ব্লুটুথ স্পিকারটি।
ছোট ছোট এ ধরনের লাইট, স্পিকারগুলো ছোট শিশু থেকে তরুণদের সবাইকেই বেশ আকৃষ্ট করে বলে জানালেন দোকানটির কর্মচারী আসাদ। তিনি জানান, দোকানটির মূল আকর্ষণ তাদের অনলাইন পেইজটি। ঘর সাজানোর জন্য সহজলভ্য হওয়ায় এগুলো খুব দ্রুতই তাদের পেইজটি জনপ্রিয় হয়ে গেছে, বেশিরভাগ ক্রেতাই অনলাইনে পার্পল হাউজের পেইজ দেখেই অর্ডার করেন। কেউ কেউ আবার দোকানেও চলে আসেন পছন্দের পণ্য বাছাই করতে, এমনটি জানালেন তিনি।
জানা গেল, ৬ জন সহকর্মীর মাধ্যমে পেইজ ও দোকানটি চালানো হয়। উত্তর বাড্ডাতেই আরেকটি গোডাউন রয়েছে পার্পল হাউজের। অনলাইন পেইজটি চালানো, একইসঙ্গে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছানো সংক্রান্ত কাজও করা হয় সেখান থেকেই।
৩ লাখ ৬১ হাজার লাইকের 'পার্পল হাউজ' নামের পেজটিতে গেলে দেখা মেলে বর্ণিল রঙের, ঢঙের বিভিন্ন লাইটের।
মূলত চীন থেকে টেন্ডার এজেন্ট বা থার্ড পার্টির মাধ্যমে আমদানি করা হয় এসব পণ্যগুলো। বাজার চাহিদাকে মাথায় রেখে পণ্য আনা হলেও- মানের বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি নন তানভীর খান। এজন্য অনলাইনে পাওয়া রিভিউয়ের ওপর জোর দেন তিনি। তার ভাষ্যমতে, ভবিষ্যতে দেশে এ ধরনের বাণিজ্য অনেকদূর এগিয়ে যাবে। সুতরাং অনলাইন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক রিভিউ যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটুকু নেগেটিভ রিভিউ। এতে পরবর্তীতে সেবার মান আরও উন্নত করা সম্ভব হয় বলেও জানালেন তিনি।
বেশিরভাগ পণ্যই ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সবার কাছে অনেক জনপ্রিয় হলেও- এক ক্রেতা যাতে বারবার অনলাইন পেইজটি থেকে কেনাকাটা করতে পারেন সেটার ওপরই বেশি জোর দেন দোকানটির স্বত্বাধিকারী।
অনলাইন এ শপটিতে কি কি পণ্য পাওয়া যায়, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
মিনি ব্লুটুথ স্পিকার
৪-৫ ইঞ্চির এ ব্লুটুথ স্পিকার ইউএসবি কেবলের মাধ্যমে চার্জ করা সম্ভব। মিনিয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্টুন চরিত্রের এ স্পিকারগুলো খুব সহজেই কেড়ে নেবে শিশুদের আকর্ষণ। ৯৯৯ টাকায় মিলবে স্পিকারটি।
র্যাটন বল লাইট
৫ সেন্টিমিটার আয়তনের বিভিন্ন রঙের এ বলগুলো অনায়াসে ঘরের সৌন্দর্য বর্ধন করবে। রিচার্জেবল এ বলগুলো ঘর সাজাতে বিছানার পাশে কিংবা পর্দার ওপর ঝুলিয়ে দেওয়া যাবে সহজেই। দেখতে যেমন সুন্দর, যেখানেই রাখা হোক না ঘরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে দারুণ ভূমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে। ৪৫০ টাকার ভেতর মিলবে লাইটটি।
মুন এন্ড স্টার কার্টেন লাইট
অন্দরসজ্জায় পর্দার ভূমিকা অনন্য। পর্দাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে কার্টেন লাইটও প্রচুর ব্যবহৃত হয়। চাঁদ ও তারার মতো দেখতে কার্টেন লাইটগুলো ইলেকট্রিক প্লাগের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে লাইটগুলো পাওয়া যাবে সাড়ে ৮শ' টাকায়।
অ্যালফাবেট লাইট
ইংরেজি ২৬টি বর্ণমালায় তৈরি লাইটগুলো দিয়ে নিজের প্রিয় মানুষের নাম তৈরি করে চমকে দেওয়া যেতে পারে। বিশেষ দিনগুলোয় প্রিয় মানুষকে চমকে দিতে তার নাম দিয়ে ঘর সাজিয়েই দেখুন না কী হয়! পেন্সিল ব্যাটারি দিয়ে চলা এ লাইটগুলোর প্রতি পিসের মূল্য ৩৫০ টাকা।
ড্রিম ক্যাচার
ড্রিম ক্যাচারের নিয়ে অনেক ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। ড্রিম ক্যাচার থাকলে নাকি খারাপ স্বপ্ন ঘরের ভেতর ঢুকতে পারে না! এমনকি খারাপ শক্তির হাত থেকেও শিশুদের রক্ষা করে এ বস্তুটি। প্রচলিত রয়েছে, উত্তর আমেরিকার একদেশে একটি শিশু ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখত, ফলে ভয় পেয়ে শিশুটির এত জ্বর আসতে শুরু করে যে- রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। সেসময় শিশুটিকে রক্ষায় মাকড়শার জালের মতো করে একটি ড্রিম ক্যাচার তৈরি করেন এক নারী, যাতে অশুভ শক্তির প্রভাব ওই তার ওপর না পড়ে।
ঘটনা সত্যি না মিথ্যে তা- যাচাই-বাছাইয়ের ভার অনুসন্ধানীদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া যাক, তবে ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনে ড্রিম ক্যাচার বরাবরই দারুণ।
৫৮ সেন্টিমিটার লম্বা ও ২০ সেন্টিমিটার চওড়া ড্রিম ক্যাচারের সঙ্গে লেট লাইটের সংমিশ্রণগুলো পাওয়া যাবে ৩শ' থেকে সাড়ে ৩শ' টাকার মধ্যে।
থ্রিডি গ্যালাক্সি ল্যাম্প
লাল, নীল, বেগুনি, সবুজ, হলুদসহ ১৬ রঙের এ গ্যালাক্সি ল্যাম্পটি রিচার্জেবল ব্যাটারি দিয়ে চালানো যায়। কাঠের স্ট্যান্ডের ওপর বসানো এ ল্যাম্পটির জন্য টাচ কন্ট্রোল, রিমোট কন্ট্রোল রয়েছে। ইউএসবি ক্যাবলের সুবিধা থাকা এ ল্যাম্পটির দাম ১,৬৫০ টাকা।
হিউমিডিফিয়ার উইথ এলইডি লাইটস
হিউমিডিফায়ার বা জলীয় বাষ্প নির্গমনকারী যন্ত্রটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। তবে পানির সঙ্গে বিভিন্ন সুগন্ধীও ব্যবহার করা যায়। সঙ্গে রয়েছে বেশ কয়েক ধরনের লাইটের সুব্যবস্থা। বদ্ধ ঘরের ভেতর কৃত্রিম জলীয় বাষ্প আশেপাশের ৩-৪ ফিট জায়গা পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম, রাতের নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের ক্ষেত্রেও রাখে সহায়ক ভূমিকা। এর প্রতিটির দাম ৭৫০ টাকা।
এলইডি নাইট ল্যাম্প
ঘুমের সময় যারা ঘরে ডিম লাইটের তুলনায় আরেকটু বেশি আলো চান, তাদের জন্য একদম আদর্শ এ লাইটটির জন্য আলাদা করে কোনো হোল্ডারেরও প্রয়োজন নেই। এই লাইটটি সুইচ বোর্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা যাবে। সঙ্গে রয়েছে রিমোট কন্ট্রোল সুবিধা। এছাড়া ব্রাইটনেস কমানো বাড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। টাইমারও সেট করার সুবিধা রয়েছে। এর দাম পড়বে ৪০০ টাকা।
ক্রিস্টাল টেবিল ল্যাম্প
ক্রিস্টালের টেবিল ল্যাম্পটির রয়েছে ১৬টি রং পরিবর্তনের সুবিধা। রিমোট কন্ট্রোলের পাশাপাশি টাচ করার মধ্য দিয়ে চালু ও বন্ধ করার ব্যবস্থা রয়েছে লাইটটির। ১৪ ইঞ্চি উচ্চতার এ ল্যাম্পটির দাম পড়বে ১,৪৫০ টাকা।
রিচার্জেবল ফ্যান উইথ ওয়াটার মিস্ট
প্রচণ্ড গরমে স্বস্তি দিতে ওয়াটার মিস্ট ফ্যানের প্রচলন এখনও খুব একটা দেখা যায় না। ৮ থেকে ৯ ইঞ্চি লম্বা রিচার্জেবল ফ্যানগুলোর মূল আকর্ষণ এর আকার। খুব সহজেই হাতব্যাগে রাখা যায় বলে ভ্রমণের সময় বেশ কার্যকরি। রিচার্জের সুবিধা থাকা এ ফ্যানগুলোর আরেকটা দিক হচ্ছে, এতে ফ্যানের পাশাপাশি জলীয় বাষ্প বের হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ৪৯৯ টাকায় পাওয়া যাবে গরমের বন্ধুটি।
এছাড়া, মিনি ফ্যান, হিউমিডিফায়ার স্প্রে ফ্যান, অ্যাপ কন্ট্রোল এলইডি স্ট্রিপ, এলইডি লাইট ল্যাম্প, মিউজিক রিদম লাইটসহ প্রায় ৬শ' ধরনের আইটেম রয়েছে তাদের সংগ্রহে। এমনকি পর্দা, বিভিন্ন ধরনের র্যাক, ক্যান্ডেল লাইট, মেয়েদের ঘরোয়া আরামদায়ক সুতি পোশাকও মিলবে পার্পল হাউজে।