অক্সিজেন ও হাসপাতাল পরিস্থিতি: সেকেন্ড ওয়েভে বাংলাদেশের সামনে কী অপেক্ষা করছে?
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বিপর্যস্ত প্রতিবেশী দেশ ভারত। বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসছে ভারতের সংকটাপন্ন পরিস্থিতির চিত্র। ফলে, উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশেও। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক এবং সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জামাদির পর্যাপ্ত সরবরাহ বিষয়ক পর্যালোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছে।
কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের মূল অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে অক্সিজেন। বর্তমানে, দেশে সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী অক্সিজেন উৎপাদনের পাশাপাশি হাসপাতালেও সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরবরাহকৃত অক্সিজেনের অধিকাংশই আসছে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড এবং স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড নামের দুই প্রতিষ্ঠান থেকে।
দেশের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের দাবি অনুসারে, এখন পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ পর্যাপ্ত। এছাড়া, কঠোর লকডাউন আরোপের ফলে সম্প্রতি কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে। তবে, গুরুতর আক্রান্তের সংখ্যা আবারও হুট করে বাড়তে থাকলে কী হবে, সে প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা।
লিন্ডে বাংলাদেশের মুখপাত্র সাইকা মাজেদ বলেন, "গত দুই মাসে বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে ব্যবহৃত অক্সিজেনের চাহিদা প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা পুরোদমে উৎপাদন বজায় রেখেছি। আমাদের দুটি প্ল্যান্টে দৈনিক ৯০ টন অক্সিজেন উৎপাদিত হচ্ছে।"
"আমরা শীঘ্রই গুরুতর সংকটের মুখে পড়ব না। তবে, আমরা চাহিদাসম্পন্ন এই সরবরাহ চেইন বজায় রাখতে এখন থেকেই সাবধানে পা ফেলছি," বলেন তিনি।
মেডিকেল অক্সিজেনের বর্তমান চাহিদা প্রসঙ্গে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অসীম কুমার নাথ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত মাস থেকে আমাদের অক্সিজেন চাহিদা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে, আমরা দৈনিক ১২ হাজার কিউবিক মিটার ধারণ ক্ষমতার ট্যাংকে পুনরায় অক্সিজেন পূর্ণ করছি।"
"তবে, আমরা এখন পর্যন্ত অক্সিজেন সংকটে পড়িনি," বলেন তিনি।
২২ এপ্রিল থেকে ভারত অক্সিজেন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। লিন্ডে এবং স্পেকট্রা উভয় প্রতিষ্ঠানই ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে, স্পেকট্রা প্রতি সপ্তাহে ভারত থেকে ১৫০ টন অক্সিজেন আমদানি করে।
বর্তমানে স্পেকট্রা দৈনিক মোট ৫৮০ কিউবিক মিটার অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি প্ল্যান্ট কাগজে-কলমে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্ল্যান্টটি চালু হলে স্পেকট্রা হাসপাতালে অতিরিক্ত ৪০০ কিউবিক মিটার অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে হাসপাতালে দৈনিক ২৫ টন তরল অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্পেকট্রার একজন কর্মকর্তা বলেন, "আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী দেশজুড়ে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করছি। বর্তমানে আমরা মেডিকেল অক্সিজেনের উচ্চ চাহিদা সামলাতে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘন্টাই গ্রাহক সেবা চালু রেখেছি। তবে, চাহিদা আরও বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।"
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান 'লিন্ডে বাংলাদেশে'র নিজস্ব প্ল্যান্ট আছে ভারতে। লিন্ডে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ট্যাংকে করে এবং কিছু বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা দানকারীদের নিকট সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে।
লিন্ডের মুখপাত্র সাইকা মাজেদ বলেন, "বর্তমানে শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত অক্সিজেনের তুলনায় মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহের প্রাধান্য বেশি। ভারতের চলমান অক্সিজেন সংকটের কারণে আমরা অক্সিজেন আমদানি করতে না পারলে শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত অক্সিজেনের সংকট সৃষ্টি হবে।"
এক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসা এবং শিল্প খাতে ব্যবহৃত অক্সিজেনের মধ্যে "ভারসাম্য রক্ষায়" ভারতের প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন আমদানি করে আসছিল। তবে, এখন আর তা সম্ভব না।
বাংলাদেশ সম্ভবত বর্তমানে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জ নিয়ে খাদের কিনারে অবস্থান করছে। তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার দাবি করে আসছে। বিশেষত, গত সপ্তাহের শেষে রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় অক্সিজেন সংকট দেখা যায়নি।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দেশে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নিয়ে টানাপোড়েনের মাঝে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবারের মতো রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কথা জানিয়েছে কোভিডের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহ।
ডাক্তার নাথ বলেন, "শনিবার সকাল পর্যন্ত কোভিড রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৫৯টি শয্যা খালি আছে। পাঁচ থেকে ছয়দিন ধরে আমরা ক্রমশ রোগীর সংখ্যা কমতে দেখছি।" রোগীর সংখ্যা কমতে থাকায় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাতেও স্বস্তি এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হাসপাতালের বাইরে খুচরা বাজারেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। লিন্ডের মুখপাত্র মাজেদ বলেন, "নিশ্চিতভাবেই আবারও বিপুল সংখ্যক মানুষ অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনছে বা ভাড়া নিচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকেই তা চালু আছে।"
গত বছরের মতো এবারও অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার হিড়িক পড়েছে। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে ঘরে অক্সিজেন সুবিধা দিতে পারবেন ভেবে অনেকে পূর্বসতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে সিলিন্ডার কিনছেন।
চট্টগ্রাম ভিত্তিক অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেডের উপদেষ্টা সোহরাব হোসেন বলেন, "আমরা মূলত শিল্পখাতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে অক্সিজেন উৎপাদন করে থাকি। আমাদের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা নয় হাজার ৬০০ টন। তবে, কয়েকবার আমরা স্থানীয় হাসপাতালগুলোর অক্সিজেন সিলিন্ডার ভরে দিয়েছি।"
"কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে মেডিকেল অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা এখন হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি। সেজন্য, কারখানার সরঞ্জামাদি উন্নত করার পাশাপাশি আমরা পরিবহন ব্যবস্থা নিয়েও কাজ করছি," বলেন তিনি।
'ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড' সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের কাজে নিয়োজিত অপর একটি প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ছোটখাটো বহু প্রতিষ্ঠান স্থানীয় পর্যায়ে সীমিত আকারে অক্সিজেন উৎপাদন করে থাকে।
সেকেন্ড ওয়েভ কেন ব্যতিক্রম?
বাংলাদেশে অক্সিজেন সরবরাহ সংকট নতুন কোনো বিষয় নয়। গত বছর কোভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছিল।
এপ্রিলের শুরুতে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগীরা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) শয্যা, ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নিয়ে সংকটে পড়ে। প্রথম ওয়েভের পর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসেনি।
নতুন ওয়েভকে পিছে রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা বলছেন যে, প্রথম ওয়েভের তুলনায় ভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসকরা এখন আরও বেশি প্রস্তুত আছেন। এছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা বিষয়ক সুযোগ সুবিধাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে আইসিইউর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, আইসিইউ সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি তা পরিচালনার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকবল প্রয়োজন। আর তাই, আইসিইউ স্থাপনের বিষয়টি সহজ নয় বলে উল্লেখ করেন তারা।
প্রথম ওয়েভ চলার মাসখানেকের মাঝে সরকার, চিকিৎসক ও পেশাদার স্বাস্থ্যসেবাদানকারী ও অন্যান্য অংশীদার দেশের দুর্বল স্বাস্থ্যখাতকে দ্রুততার সাথে রূপান্তরের আহ্বান জানান।
সংশ্লিষ্টদের দাবী অনুযায়ী, স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নের লক্ষ্যে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ সফলভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ তারা, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধাদি সংযোজনের কথা উল্লেখ করেন।
কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রয়োজন অনুসারে কোভিড রোগীদের শয্যায় লিকুইড অক্সিজেন থেকে গ্যাস রুপে অক্সিজেনের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব। অন্যথায় রোগীকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের উপর নির্ভর করতে হয়। সিলিন্ডারের মাধ্যমে প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ ছয় লিটার অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব।
এক কিলোলিটার তরল অক্সিজেন থেকে নয় লাখ ৬০ হাজার লিটার গ্যাস উৎপাদন সম্ভব। অবস্থাভেদে একেকজন কোভিড রোগীর যে পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন তা সিলিন্ডারের মাধ্যমে সরবরাহ করা সম্ভব নয়। অথচ, পাঁচ কিলোলিটারের একটি অক্সিজেন ট্যাংক ২৪ ঘন্টায় একবার ভরা হলেই তা দিয়ে ৩৫০ জন রোগীকে আরও উচ্চহারে অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব।
বিশেষত নতুন ধরনের কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঝুঁকি বাড়ায় আক্রান্ত রোগীরা স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসমর্থ হন।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার অসীম কুমার নাথ বলেন, "দুই ওয়েভের মধ্যকার উল্লেখজনক পার্থক্য হল এই ওয়েভের সংক্রমণের ভয়াবহতা। আমরা দেখছি যে, নতুন ধরনের আগমনে কোভিড আক্রান্ত রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে।"
কোভিড আক্রান্ত রোগীদের ঘরে আইসোলেশনে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার উপর জোর দেন ডাক্তার নাথ। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে আলাদা করে সংক্রমণ প্রতিরোধ করাও সম্ভব হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বাস্থ্যসেবা খাতের সকল ত্রুটি দূর করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যাশার সাথে বাস্তবতার ফারাক অনেক। তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, স্বাস্থ্যখাতের কমতিগুলো পূরণের লক্ষ্যে প্রথম ওয়েভের পর বেশ কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে।
সত্যতা যাচাই করতে গেলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডাক্তার শাহনেওয়াজ দেওয়ান বলেন, "আমরা কোভিড রোগীদের জন্য তিনটি ওয়ার্ড বরাদ্দ রেখেছি এবং ওয়ার্ডগুলোতে এখন কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ যুক্ত করা আছে। এটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্থাপিত হয়।"
গতবছর এবং এ বছরের দুই ওয়েভের মধ্যকার প্রস্তুতি এবং ব্যবস্থাপনার মাঝে যথেষ্ট পার্থক্য তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ডাক্তার শাহনেওয়াজ।
"প্রাথমিক পার্থক্য আমাদের প্রস্তুতির মাঝে। এখন আমাদের চিকিৎসা ওয়ার্ডের মধ্যে শ্রেণীবিন্যাস আছে। ফুসফুসের সিটি স্ক্যানসহ করোনা রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা আমাদের চিকিৎসা সরঞ্জামাদিও বৃদ্ধি করেছি।"
বাংলাদেশ কি যথেষ্ট করছে?
ভারতের মতো আমাদেরও যেন করুণ পরিণতির মুখোমুখি না হতে সেজন্য বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে ডাক্তার নাথ জানান, "এই মহামারির বিষয়টি এমন যে, প্রতিটি দেশকে ভাইরাস মোকাবিলায় নিজের মতো করে পরিকল্পনা নির্মাণ করতে হবে। প্রতিটি পরিস্থিতি অনন্য বলে এখানে অনুসরণ করার মতো কোনো নির্দিষ্ট মডেলও নেই।"
ইমপালস হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের রেজিস্টার ডাক্তার আবদুল্লাহ আসেফ আখন্দ জানান, "আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী কাজ করছি। চিকিৎসকরা বাড়তি পরিশ্রম করতে করতে এখন অবসন্ন।"
"প্রায় পুরো এপ্রিল জুড়েই আমাদের আইসিইউ বিভাগ ধারণ ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে ছিল। তবে, গত সপ্তাহের শেষে পরিস্থিতির উন্নতি হয়," বলেন তিনি।
হাসপাতালটিতে বর্তমানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ সংযোগ আছে। ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ মাত্র ১২ থেকে ১৪টি আইসিইউ শয্যা থাকলেও বর্তমানে এই হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৬টি।
ডাক্তার আখন্দের বিশ্বাস প্রথম ওয়েভের পর তাদের হাসপাতাল যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে তিনি বলেন, "কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে, আমরা তাদের জায়গা দিতে পারব না।"
শীঘ্রই লকডাউন তুলে ফেলার বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। লকডাউন বাতিলের ফলে সংক্রমণ হার বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাত ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডাক্তার এ এম জাকির হোসেন বলেন, "সিদ্ধান্ত যাই নেয়া হোক, লকডাউন আরোপ বা তুলে ফেলার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক বিবেচনার বিষয়ে আমরা এখন জানি যে ফলাফল পেতে আট থেকে ১০ দিন বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগবে।"
ডক্টর জাকির হোসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক।
তিনি বলেন, সম্ভবত ১৪ এপ্রিল সরকারের নামমাত্র জারি করা লকডাউনের ফলাফল স্বরূপ গত সপ্তাহের শেষে হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা হ্রাস পায়।
"সেক্ষেত্রে বলা যায়, লকডাউন পুরোপুরি তুলে নেওয়া হলে আমরা এক কিংবা দুই সপ্তাহের মাথায় ফলাফল জানব। ভারতের সাথে সীমান্ত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করাসহ ভারত এবং অন্যান্য উচ্চ সংক্রমণ হার বিশিষ্ট দেশের সাথে আকাশপথে যোগাযোগ স্থগিত রাখা না হলে পরিণতি হবে মারাত্মক," বলেন তিনি।