সুপার স্প্রেডারের ঝুঁকি এড়াতে কৃষকদের আন্দোলন বন্ধের আহ্বান ভারতীয় নেতাদের
কৃষকদের গণ আন্দোলন করোনা সংক্রমণের 'সুপার স্প্রেডার' ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে কৃষকদের আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ভারত সরকারের নেতা ও সরকারি কর্মকর্তারা। দেশটিতে গত সোমবার কোভিডজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়ায়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গণজমায়েত, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা কমে আসা- দেশটিতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ার পেছনে এসব কারণ কাজ করেছে।
মহামারি জুড়েই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাস হওয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। এই আইনের ফলে তাদের জীবনযাত্রায় দুর্দশা নেমে আসবে কৃষকরা এমন দাবি করলেও, ভারত সরকারের বলছে দেশের কৃষি খাতের আধুনিকায়নের জন্য সংশোধনী প্রয়োজন।
আন্দোলন শুরুর পর থেকেই দেশটির হাজার হাজার কৃষক দিল্লির সীমান্তে তাঁবু খাটিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ওয়েভের সংক্রমণ শুরুর পর আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে, সেইসঙ্গে ফসল ঘরে তোলার মৌসুম এসে পড়েছিল। একারণে অনেক কৃষক তাদের ফসল তোলার কাজে ঘরে ফিরে যান।
তবে ফসল তোলার মৌসুমও শেষের পথে, কৃষকরা তাদের আন্দোলনের ছয় মাস পূর্তিতে আগামী বুধবার থেকে আবারও দেশজুড়ে গণ আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা করছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কৃষক সংগঠনগুলোর যৌথ কমিটির পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, নিজেরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কৃষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের কৃষিখাতকে মুক্ত করতে আইনটি বাতিলের দাবি জানান তারা ওই চিঠিতে।
"আন্দোলরত কৃষক বা কাউকেই কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না আমরা। কিন্তু, করপোরেট কৃষি ব্যবসার ফলে কৃষকদের জীবনে যে দুর্দশা নেমে আসবে তাও তাদের জন্য জীবন-মরণের বিষয়।" বলা হয় চিঠিটিতে।
কংগ্রেসসহ ভারতের ১২টি বিরোধী দল কৃষকদের পাশে আছে জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
ভারতের প্রায় ৫৮ শতাংশ নাগরিকের জীবন ধারণের প্রধান উৎস কৃষিকাজ। দেশের সবচেয়ে বড় ভোটার জনগোষ্ঠীও কৃষকরাই। একারণে দেশটির রাজনীতিতে অন্যতম গুরূত্বপূর্ণ বিষয় কৃষিখাত।
কিন্তু, দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রাজধানীর পাশে গণ সমাবেশের ফলে তা 'সুপার-স্প্রেডারে' পরিণত হতে পারে। সুপার স্প্রেডার হলো এমন একটি অবস্থা, যখন একজন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অনেক মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়। সর্বশেষ নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক মিছিল, সভায় অসংখ্য মানুষের জমায়েত, কুম্ভমেলায় লাখো মানুষের জমায়েত- এ ধরনের ঘটনাগুলো ভারতে সেকেন্ড ওয়েভ সংক্রমণের ক্ষেত্রে সুপার স্প্রেডার হিসেবে কাজ করেছে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী আমরিন্দর সিং এক বিবৃতিতে বলেন, "দয়া করে দায়িত্বহীনের মতো কাজ করবেন না। মানুষের জীবন যখন সংকটাপন্ন, সে সময় এ ধরনের আন্দোলন একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।"
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সোমবার ভারতে ২ লাখ ২২ হাজার ৩১৫ জন কোভিড শনাক্ত হন। এ মাসেই দেশটিতে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দৈনিক সংক্রমণ সে তুলনায় কমে আসলেও, বিশ্বের যে কোনো দেশের দৈনিক সংক্রমণের তুলনায় এই সংখ্যা বেশি।
দেশটিতে সোমবার পর্যন্ত মোট কভিড আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশি। সোমবার কোভিডজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ৪,৪৫৪ জনের। কোভিডজনিত কারণে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩০৩,৭২০।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক মৃত্যুই কোভিডজনিত মৃত্যু হিসেবে চিহ্নিত না হওয়ায়, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হতে পারে। বিগত সপ্তাহগুলোতে দেশটির গঙ্গা নদীতে সারি সারি লাশ ভেসে আসার ও নদীর তীরে স্তূপাকারে লাশ মাটিচাপা দেওয়ার মতো ঘটনাও দেখা গেছে।
- সূত্র: সিএনএন