অসময়ে পরিবহন শ্রমিকদের বেতন বাড়ালো সরকার
- পরিবহন শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো জারি
- হেভি উইথ পিএসভি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভারদের সর্বনিম্ন মোট মজুরি ২০২০০ টাকা
- হেভি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভারদের সর্বনিম্ন মোট মজুরি ১৭৮০০ টাকা
- মিডিয়াম লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভারদের সর্বনিম্ন মোট মজুরি ১৬৬০০ টাকা
- লাইট লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভারদের সর্বনিম্ন মোট মজুরি ১৫৪০০ টাকা
- দক্ষ হেল্পার, কন্ডাক্টর, চেকারদের মোট মজুরি ১৩০০০ টাকা
করোনাভাইরাসের প্রভাবে যখন দেশজুড়ে যানবাহন চলাচল কমে যাওয়ায় পরিবহন মালিকরা লোকসান গুণছেন, তখন বেসরকারিখাতে নিয়োজিত ড্রাইভার, সুপারভাইজার, কনট্রাক্টর, চেকার ও হেল্পারসহ খাতটির শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো জারি করেছে সরকার। এতে লাইট লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভারদের সর্বনিম্ন মোট মজুরি ১৫,৪০০ টাকা এবং হেভি উইথ পিএসভি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভারদের মোট মজুরি সর্বোচ্চ ২০,২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশে কোভিড সংক্রমণের পর বিপুল সংখ্যক পরিবহন শ্রমিক কর্ম হারানোর সময় যখন চাকরি টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ছে, এমন সময় জারি করা এই মজুরি কাঠামোর সঠিক বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে।
ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজ শুক্রবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, পরিবহনখাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ড্রাইভার, কন্ট্রাক্টরসহ শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। বেসরকারি পরিবহনখাত এটি মেনে চলতে বাধ্য।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ঢাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ঘটনার পর দৈনিক চুক্তি ভিত্তিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে পরিবহন শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়। তার প্রেক্ষিতেই ২০১৯ সালে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, এখন কোভিড পরিস্থিতির কারণে ঘোষিত কাঠামো বাস্তবায়নে সরকার পরিবহন মালিকদের চাপ দেবে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এটি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চালক ও হেল্পারদের বড় অংশই মাসিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত নন। তারা ট্রিপ ভিত্তিক মজুরি পান। কোভিড পরিস্থিতিতে ট্রিপ কমায় তাদের আয়ও কমেছে। এ অবস্থায় সরকার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেছে, যা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাবে।
ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ বলেন, মালিকরা দৈনিক ভিত্তিতে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে। কিন্তু সরকার চায় মাসিক ভিত্তিতে তারা মজুরি পাক। তাহলে শ্রমিকদের কর্মের নিশ্চয়তা থাকে।
কোভিড পরিস্থিতিতেও ঘোষিত মজুরি দেওয়া মালিকদের জন্য কষ্টকর হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মাত্র বাসে ঢাকা থেকে কুমিল্লা এলাম। দুই সিটেই যাত্রী পরিবহন করছে। পরিবহন মালিকরা নগদ টাকায় আয় করেন। ফলে তাদের পক্ষে মজুরি পরিশোধ কঠিন কিছু না।
পরিবহন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে গত ২৭ জুলাই শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। মন্ত্রণালয়ের মজুরি বোর্ড শাখার উপসচিব দিল আফরোজা বেগম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন শ্রেণীর ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভারদের মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও যাতায়াত ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য এলাকার জন্য মূল বেতনের ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে হেভি উইথ পিএসভি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভারদের মূল বেতন ১২৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য ভাতাসহ শহর পর্যায়ে এ শ্রেণীর একজন ড্রাইভারের মোট বেতন হবে ২০২০০ টাকা, এবং এর বাইরে মোট বেতন হবে ১৮৯২০ টাকা।
হেভি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভারদের মূলবেতন ১১২০০ টাকা। সব ধরণের ভাতাসহ শহরাঞ্চলে তাদের মোট বেতন ১৭৮০০ টাকা ও অন্যান্য এলাকায় ১৬৬৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মিডিয়াম লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভার ১০৪০০ টাকা মূল মজুরিসহ শহরাঞ্চলে মোট ১৬৬০০ টাকা ও অন্যান্য এলাকায় ১৫৫৬০ টাকা পাবেন। লাইট লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভাররা শহরে ১৫৪০০ ও অন্যান্য এলাকায় ১৪৪৪০ টাকা মজুরি পাবেন, এর মধ্যে তাদের মূল মজুরি ৯৬০০ টাকা।
পাবলিক পরিবহনের ক্ষেত্রে দক্ষ গাইড, সুপারভাইজার, কনট্র্যাক্টর, চেকার, বুকিং ক্লার্ক ও ক্যাশিয়ার পদে কর্মরত শ্রমিকদের মূল মজুরি ৮০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শহরাঞ্চলের শ্রমিকদের মোট মজুরি হবে ১৩০০০ টাকা ও অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে ১২২০০ টাকা।
অদক্ষ হেল্পার, ক্লিনার ও কলাররা ৬৫০০ টাকা মূল বেতন নিয়ে বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট মজুরি পোরে ১০৭৫০ টাকা ও অন্যান্য এলাকায় ১০১০০ টাকা।
ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে শিক্ষানবিশ শ্রমিকদের মাসিক সাকুল্য বেতন ৭৫০০ টাকা নির্ধারণ করে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের শিক্ষানবিশকাল হবে তিন মাস। তবে এই সময়ে শ্রমিক তার কাজের মান অর্জন করতে ব্যর্থ হলে এ মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো যাবে।