আইন করে খুচরা বিড়ি, সিগারেট বিক্রি বন্ধের দাবি
খুচরা সিগারেট বিক্রি করা যাবে না। যিনি কিনবেন তাকে এক প্যাকেট পুরোটাই কিনতে হবে। সিগারেট বিক্রির ক্ষেত্রে এমনই নিষেধাজ্ঞা দেয়া সহ আরও কয়েকটি দাবি জানিয়ে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন করার দাবি জানানো হয়েছে।
বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি যুগোপযোগী করার বিষয় তুলে ধরতে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) 'কোভিড-১৯ ও শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োজনীয়তা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত' শীর্ষক ওয়েবিনার আয়োজন করে।
শনিবার ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।
প্রজ্ঞার হেড অব টোব্যাকো কন্ট্রোল মো. হাসান শাহরিয়ার বর্তমান আইন সংশোধনের উপর বিষয়ভিত্তিক মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "খুচরা এবং প্যাকেটবিহীন তামাক পণ্য বিক্রি করলে বিড়ি, সিগারেট শিশু-কিশোর ও তরুণরা কম দামে সহজে কিনতে পারে। তার উপর প্যাকেটের গায়ে যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী সেটা দেখতে পারে না"।
মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড সহ বিশ্বের ১১৮টি দেশ সিঙ্গেল সিগারেট স্টিক সহ ছোট প্যাকেট বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে। ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশে গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে খুচরা সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয় হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে গৃহীত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফটিসি) ধারা ১৬ অনুযায়ী বিড়ি, সিগারেটের সিঙ্গেল বা ছোটো প্যাকেট বিক্রি এবং ধারা ১১ অনুযায়ী তামাকপণ্যের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বিক্রি বন্ধে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ওয়েবিনারে প্রজ্ঞা এবং আত্মা'র পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যেসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে, 'ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান' বিলুপ্ত সহ সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির 'সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি' বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি) সহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৯০ শতাংশ করা সহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, "আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দাবি না জানিয়ে তামাক নির্মুল আইনের দাবি জানানো প্রয়োজন। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ বছর আগে ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪০ সালে বাংলাদেশ হবে তামাকমুক্ত দেশ। আমাদের সেটা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে"।
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, "আইন সংশোধনের যে প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে এগুলো সমন্বিত করেই আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে আমাদের আইনের বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে হবে। প্রকাশ্য ধুমপান নিষিদ্ধে আইন আছে কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটার যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, "আমাদের তামাকের কুফল সম্পর্কে জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরী করতে হবে। আর যারা আইন তৈরীর ব্যাপারে কাজ করছে তাদের মধ্যে যদি এ ব্যাপারে অঙ্গীকার না থাকে তাহলে কাজ এগোবে না"।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খ্যাতিমান অভিনেতা আবুল হায়াত, বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং টিভি টুডে'র এডিটর ইন চিফ মনজুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, নিউজ টুয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক কবি ও লেখক শাহনাজ মুন্নী, জনপ্রিয় মডেল ও ক্রীড়া সংগঠক মোহাম্মাদ ফয়সাল আহসান উল্লাহ, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক। অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মা'র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
বক্তারা বলেন, তামাক মৃত্যু ঘটায় এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণ সহায়ক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, তামাক ব্যবহারের ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বর্তমানে দেশের প্রায় ৪ কোটি তামাক ব্যবহারকারী মারাত্মকভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই সংশোধনীর মাধ্যমে বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি যুগোপযোগী করা এখন সময়ের দাবি।