আগামী মাসে ঘূর্ণিঝড় এবং আবারও তীব্র তাপ প্রবাহের আশঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার মত আদর্শ তাপমাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে সমুদ্রের পানি যার ফলে আগামী মে মাসে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এপ্রিল মাসে কোন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি না হওয়ায় মে মাসে ঘূর্ণিঝড় হলে তার শক্তি অনেক বেশি থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।
মে মাসে একটি ঘূর্ণিঝড়ের আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরও। একই সাথে পূর্বাভাস রয়েছে ভূ-পৃষ্ঠে আরেকটি তীব্র তাপ প্রবাহের যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রীর চেয়ে বেশি থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, "একটি ঘূর্ণিঝড় একই জায়গায় উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার বা শ্রীলংকায় আঘাত হানতে পারে। এসব দেশে যে ঘূর্ণিঝড়গুলো আঘাত করে সেগুলোর উৎপত্তি হয় বঙ্গোপসাগরের শেষ সীমানার দিকে।
"ওখানে পানির তাপমাত্রা এখন ২৬ ডিগ্রী থেকে ২৭ ডিগ্রীর মধ্যে উঠানামা করছে। কখনো এটা আরেকটু বেশি থাকছে। দিনে দিনে আরো বাড়বে। একটি ঘূর্ণিঝড় গঠনের আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ২৭-২৮ ডিগ্রী সেলিসিয়াস। তাই ঘূর্ণিঝড় গঠনের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে মে মাস থেকে। আর সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলো পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিপথের কারণে ডান দিকে বাঁক নিয়ে ভারত, বাংলাদেশের দিকে আসে"।
"মে এবং জুন মাস জুড়েই সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় হওয়ার মত অবস্থায় থাকবে। জুলাইতে তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করলে ঘূর্ণিঝড়ের পরিবর্তে প্রচুর বৃষ্টিপাত শুরু হবে"।
ইন্ডিয়া মেটেরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের (আইএমডি) পূর্বাভাস অনুসারেও বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা মে মাসে ২৮ সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি থাকবে বলে বলা হয়েছে। সে দিক থেকে তাপমাত্রার হিসাবে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার দিক থেকে 'পিক টাইমে' রয়েছে মে মাস। গত বছর মে মাসের ২০ তারিখে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত করেছিল।
মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আসতে পারে শক্তিশালী রূপে
এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে কোন ঘূর্ণিঝড় তৈরী হয়নি। এমনকি কোন লঘুচাপও না। এমন পরিস্থিতিকে 'অস্বাভাবিক' বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় মে মাসে ঘূর্ণিঝড় হলে তা অনেক শক্তিশালী হতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, "আগামী এক সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ের কোনো আশঙ্কা নাই বঙ্গোপসাগরে। এটা খুবই অস্বাভাবিক যে এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে কোন ঘূর্ণিঝড় গঠন করল না। গতবছরও এমন হয়েছিল, এপ্রিলে কোন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়নি। ফলে মে মাসে শক্তিশালী হতে সময় পেয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান।
"দীর্ঘদিন বিরতি নিয়ে যখন কোন ঘূর্ণিঝড় গঠন করে তখন সেটা শক্তিশালী হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়। আর ঘন ঘন ঝড় গঠন করলে সেগুলো বেশি শক্তিশালী হতে পারে না", বলেন তিনি।
এপ্রিলে কোন ঘূর্ণিঝড় হয়নি এমন খুব কমই দেখা গেছে বলে জানান তিনি।
ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের মতে, ২০০৫, ২০১১ ও ২০১২ সাল ব্যতীত প্রতিবছর এপ্রিল ও মে মাসে ঘূর্ণিঝড় তৈরী হয়েছে বঙ্গোপসাগরে।
মে মাসে আরেকটি তীব্র তাপ প্রবাহ
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস ছিল, এপ্রিল মাসে একটি তীব্র তাপ প্রবাহের মধ্যে পড়বে দেশ। বাস্তবে হয়েছেও তাই। চলতি এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখে দেশের তাপমাত্রা উঠেছিল যশোরে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা ২০১৪ সালের পর গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগামী ২ দিন পর্যন্ত মাঝারি ও হালকা তাপপ্রবাহ থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
তবে তাপ প্রবাহ এখানেই শেষ না। আসছে মে মাসে গরমে আরো একবার হাসফাঁস করতে হতে পারে মানুষকে। ওই মাসে আরো একটি তীব্র তাপ প্রবাহের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর যখন দেশের তাপমাত্রা পেরিয়ে যাবে ৪০ ডিগ্রী।
আবদুল মান্নান বলেন, "আগামী মাসে সূর্যের কিরণ তীব্র থাকবে। একই সঙ্গে ২-৩টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বঙ্গোপসাগরে। লঘুচাপের ফলে যে বৃষ্টি হওয়ার কথা রয়েছে তা হতে দুই-একদিন বিলম্ব হলেই তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে"।
"আর ওই সময় জলীয় বাস্পের পরিমাণ বায়ুতে বেশি থাকবে। ফলে তাপমাত্রা বাড়বে এবং গরম বেশি অনুভূত হবে, " যোগ করেন তিনি।