আদা-রসুনের দাম: পাইকারিতে সস্তা, খুচরা বাজারে চড়া
পাইকারি বাজারে আদা-রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমলেও খুচরা বাজারগুলোতে তা চড়া রয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে ক্রেতাদের উপস্থিতি হ্রাসের ফলে দামের এমন তারতম্য দেখা যাচ্ছে বলে জানালেন বিক্রেতারা।
পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, গত দুদিনের তুলনায় মঙ্গলবার আদার দাম কেজিতে ১০০ টাকা এবং রসুনের দাম ৩০ টাকা কমেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের খুচরা বাজারগুলোতে ঠিক উল্টো চিত্র।
বেশ কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা জানান, তারা আদা কেজিতে ২৮০ টাকা থেকে ৩২০ টাকায় এবং রসুন ১৩০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
তারা বলছেন, তারা কয়েক দিন আগে পাইকারি বাজারে বেশি দাম দিয়ে কিনেছেন বলে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
আমদানিকারকরা বলছেন, আদা ও রসুনের প্রধান উৎস চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক আদা ও রসুন আমদানি করেছে বাংলাদেশ, তবে করোনাভাইরাস আমদানিতে প্রভাব ফেলেছে।
ভোক্তাদের অভিযোগে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজানের সময় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
শামসুর রহমান নামে রাজধানীর শ্যামবাজারের এক আড়তদার বলেন, ক্রেতার অভাবে গত দুদিনের তুলনায় পাইকারি বাজারে আদা, রসুন এবং পেঁয়াজের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, 'দুদিন আগে যে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন যথাক্রমে ৫০ টাকা, ২৪০-২৫০ টাকা এবং ১৩০ টাকায় বিক্রি করেছি, আজ (মঙ্গলবার) তা ৪৩-৪৫ টাকা, ১৫০ টাকা এবং ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি।'
'অনেক গ্রাহক আগে কিনে মজুদ করায় দাম কমেছে এবং করোনাভাইরাসের প্রভাব তো রয়েছেই,' যোগ করেন শামসুর।
শ্যামবাজারের পাইকারী বিক্রেতা মানিক সাহা বলেন, তারা দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা এবং আমদানি করা বিদেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।
'পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু আদা ও রসুনের দাম এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ক্রেতার অভাবে তা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে,' যোগ করেন তিনি।
পাইকারি বিক্রেতা মানিক বলেন, বন্দরগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আদা রয়েছে, যা শ্রমিকের অভাব এবং বন্দরের ধীরগতির কার্যক্রমের কারণে আনলোড করা যাচ্ছে না।
রাশেদুল নামে পুরাতন ঢাকার এক দোকানদার বলেন, তারা বেশ কয়েক দিন আগে পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কেনায় আদা ৩০০ টাকা কেজি এবং রসুন ১৩০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।
বংশালের বাসিন্দা নাছির উদ্দিন জানান, তিনি স্থানীয় একটি দোকান থেকে আদা ৩০০ টাকা এবং রসুন ২০০ টাকা কেজি ক্রয় করেছেন।
'বাজার তদারকির অভাবের সুযোগ নিয়ে প্রতিবছর রমজান মাস এলেই বিক্রেতরা দ্রুত বড়লোক হওয়ার জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে ফেলেন। বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অন্তত তাদের মানবিক হওয়া উচিত,' যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে বেশিরভাগ দোকানদার দামের তালিকা ঝুলিয়ে রাখেন না।
সরকারি সূত্র বলছে, দেশে রসুনের চাহিদার পরিমাণ ০.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন হলেও উৎপাদিত হয় ০.৪৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। প্রয়োজনীয় অবশিষ্ট রসুন চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
এদিকে, ইফতারের সবচেয়ে সাধারণ খাবার বেগুন ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, সপ্তাহ খানেক আগেও যেগুলো ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। শশার দামও কেজিতে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৩০-৫০ টাকা এবং টমেটো ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি, ডাল ও চিনির মধ্যে ছোলার ডাল ৬০-৭০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৮০-৯০ টাকা, মশুর ডাল ৪০-৪৫ থেকে ৫০-৫৫ টাকা এবং চিনি ৬৫-৭০ টাকা থেকে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগি ১৩০-১৪০ টাকায়, গরুর মাংস ৬০০-৬২০ টাকায় এবং খাসির মাংস ৮০০-৯০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
শাক-সবজির মধ্যে পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা, করলা ৩৫-৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (সিএবি) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার লোভে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
'সরকারের উচিত বিভিন্ন উপায়ে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা, যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি করতে না পারে,' যোগ করেন তিনি।