আমদানির অনুমতি ঘোষণা: দুই দিনেই পাইকারি পেঁয়াজের দাম কমল কেজিতে ৮-১০ টাকা
আমদানির অনুমোদন (আইপি) দেওয়ার ঘোষণায় কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। গত দুইদিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পণ্যটির দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত।
এর আগে কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত করতে সরকার গত একমাস ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫-৪৮ টাকা দামে। এর দুইদিন আগে, অর্থাৎ মঙ্গলবার বাজারে একই মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৩-৫৫ টাকায়। সেই হিসেবে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে ৭-৮ টাকা।
ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের সুযোগে গত একমাসে প্রচুর পরিমাণে মায়ানামারের পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ করে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি মায়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা দামে।
ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির খবরে গত দুই দিনে ১০ টাকা কমে বর্তমানে প্রতি কেজি মায়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা দামে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন বলেন, 'অনুমতি শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ২৯ এপ্রিল থেকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এর পরপরই আমরা বন্দরের আমদানিকারকরা আমদানির অনুমতি বা আইপি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছিলাম, কিন্তু তারা সেটি গ্রহণ করা হচ্ছিল না। সম্প্রতি তারা আবেদন গ্রহণ করছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি নিজে ২ হাজার টনের আইপি চেয়ে আবেদন করেছি। আমার মতো বন্দরের আরও বেশ কয়েকজন আমদানিকারক বেশ কয়েক হাজার টনের আইপির জন্য আবেদন করেছেন। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আইপি পেলে আগামী সপ্তাহ থেকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হবে।' আর সেটা শুরু হলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামের যে ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা, সেটি কমে আসবে বলেও জানান তিনি।
পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার বিষয়ে খাতুনগঞ্জের মেসার্স এসএ ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী শওকত আলী বলেন, 'ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় গত একমাস দফায় দফায় বেড়ে পণ্যটির দাম ২৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায় পৌঁছায়। অর্থাৎ একমাসে পণ্যটির দাম দ্বিগুণ হয়। কিন্তু ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি খবরে গত বুধবার থেকে পণ্যটির দাম হঠাৎ কমতে শুরু করে। এরপর গত দুই দিনে পণ্যটির দাম কেজিতে ৮-১০ টাকা পর্যন্ত কমে যায়।'
শওকত আলীসহ খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে পৌঁছবে। এতে পণ্যটির দাম আরও কমে যাবে।
খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্যের (পেঁয়াজ, রসুন ও আদা) মার্কেট হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ মিয়া বলেন, 'দেশীয় কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত করতে সরকার গত ২৯ এপ্রিল থেকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেয়। ওই সময় থেকে মে মাসের শেষ সময় পর্যন্ত দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার আবারও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে পৌঁছলে পণ্যটির দাম আরও কমে আসবে।'
উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রামের উপ পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, 'দেশীয় পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হওয়ার কারণে গেল তিন মাস ধরে (মার্চ-এপ্রিল) চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। তবে এর আগে আসা কিছু পেঁয়াজের নিলাম হয়েছে।'
বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর ও টিসিবির তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২২-২৩ লাখ মেট্রিকটন। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৯ লাখ টন। এর আগে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৭ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিকটন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে সংগ্রহত্তোর অপচয় হিসেবে ২৫ শতাংশ বাদ দিলে ব্যবহার উপযোগী পেঁয়াজ থাকে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকনটন।
এদিকে আবাদকৃত পেঁয়াজের প্রায় ২ শতাংশ পরবর্তী বছরের বীজের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। সেই হিসেবে, প্রতি বছর প্রায় ৯-১০ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। তবে আমদানিকৃত পেঁয়াজেও সরবরাহ ও বিপণন পর্যায়ে ৫ শতাংশ অপচয় হয়।
বিগত সময়গুলোতে আমদানিকৃত এসব পেঁয়াজের বেশিরভাগই আমদানি করা হতো ভারত থেকে। তবে গত দুই বছর ধরে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেন আমদানিকারকরা।