শুল্ক ছাড়ের প্রভাব: পাইকারিতে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী
দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কমতে শুরু করেছে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম।
ব্যবসায়ীদের মতে– আমদানিতে শুল্ক-কর ছাড়, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর কমে যাওয়া এবং ডিসেম্বরে ব্যাংক ক্লোজিংয়ে আমদানিকারদের ওপর ঋণ পরিশোধে বাড়তি চাপের প্রভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম কমেছে।
তবে পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম কমলেও তেমন প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে।
চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজার, চকবাজার ও মোমিনরোড এলাকার মুদির দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে– পাইকারি বাজারে গত দুই সপ্তাহে যেসব পণ্যের দাম কমেছে, খুচরায় তার একটিরও দাম কমেনি।
গত দুই সপ্তাহে খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ ভোজ্যতেলে ৪৫০-৫৫০ টাকা, চিনিতে ২০০ টাকা, ডাল জাতীয় পণ্যে ১৫০-৩০০ টাকা, গম ১০০ টাকা এবং এলাচিতে ৩০০ টাকা দাম কমেছে।
ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, রোববার (২২ ডিসেম্বর) ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) সয়াবিন তেল ৬,৩৫০ টাকা; পাম তেল ৫,৯৫০ টাকা এবং পাম সুপার ৬,০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে সয়াবিন ৬,৮০০ টাকা; পাম ৬,৫০০ টাকা এবং পাম সুপার ৬,৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসেবে প্রতি লিটার সয়াবিনে ১১ টাকা, পাম এবং সুপার পাম অয়েলে ১৩ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে।
দুই সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতিমণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হয়েছে ৪,৫০০ টাকায়— যা বর্তমানে ৪,৩০০ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ, দুই সপ্তাহে প্রতিকেজি চিনির দাম ৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
একইভাবে দুই সপ্তাহ আগে ৪,৪০০ টাকার বিক্রি হওয়া প্রতিমণ ছোলা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪,২৫০ টাকায়। সেই হিসেবে ছোলার দাম কমেছে কেজিতে ৪ টাকা।
দুই সপ্তাহ আগে প্রতিমণ মটর ১,৯৪০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ২,২৪০ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ, কেজিতে ৮ টাকা পর্যন্ত কমেছে মটরের দাম।
বর্তমানে প্রতিমণ আমদানিকৃত মোটা মসুর বিক্রি হচ্ছে ৩,৫৪০ টাকায়— যা দুই সপ্তাহ আগ পর্যন্ত ৩,৭৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজার দর অনুযায়ী, প্রতিকেজি মোটা মসুরের দাম ৫ টাকা কমেছে।
দুই সপ্তাহ আগে প্রতিমণ গম বিক্রি হতো ১,৪০০ টাকায়— যা বর্তমানে ১,৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ, পাইকারিতে প্রতিকেজি গমের দাম কমেছে সাড়ে ৩ টাকা।
একইভাবে কেজিতে ৩০০ টাকা কমে বর্তমানে এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪,০৫০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে এলাচের দাম ছিল ৪,৩৫০ টাকা।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী আমান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আমানা উল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এস আলমসহ বড় কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে পারেনি। এতে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এরপর দেশব্যাপী বন্যার পর সেই প্রভাব আরও দৃঢ় হয়। যে কারণে বেশিরভাগ নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার।
তিনি বলেন, "এরপর বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রধান ৬টি ভোগ্যপণ্যের শুল্ক-কর ছাড় দেয় সরকার। ফলে ধীরে ধীরে পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ বাড়তে শুরু করে। এতে পণ্যের দামও কমে আসে।"
দেশের শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের ডিজিএম তসলিম শাহরিয়ার বলেন, "আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের বুকিং দর কমে যাওয়া এবং শুল্ক-কর ছাড়ের প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম নিম্নমুখী হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে দেশীয় বাজারে ডলারের বিনিময় মূল্য, অর্থাৎ টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানিকারকদের উপর চাপ বেড়েছে। ডলারের দাম কমলে কিংবা ন্যূনতম স্থিতিশীলতা থাকলে পণ্যের দাম কমে যাওয়ার সেই সুফল দীর্ঘমেয়াদে ভোগ করতে পারবেন ভোক্তারা।"
তবে ডলারের দাম বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আমদানি বৃদ্ধি করতে চালের ওপর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, রেগুলেটরি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে সরকার।
ভোজ্যতেল আমদানিতে প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর ও দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ক–কর কমিয়ে তা নামানো হয়েছে শুধু ৫ শতাংশে।
আগে প্রতিকেজি অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ৩৮-৪০ টাকা শুল্ক–কর দিতে হতো। এখন তা কমিয়ে ২৩ টাকায় নিয়ে এসেছে সরকার।
এছাড়া পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতেও শুল্ক–কর কমিয়ে আনা হয়েছে। এরমধ্যে চাল ছাড়া পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম আমদানি বৃদ্ধির পরে ধীরে ধীরে নিম্নমুখী হয়েছে।