আরিচা-কাজিরহাট রুটে ফেরি সার্ভিস চালু
জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে আরিচা-কাজিরহাট রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী শনিবার মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে আরিচা-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার বাস্তবায়নে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতকারী জনসাধারণের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে উপহারস্বরূপ আরিচা-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, আরিচা-কাজিরহাট ফেরিরুটের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। আরিচা থেকে কাজিরহাট যেতে সময় লাগবে এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট, কাজিরহাট থেকে আরিচা আসতে সময় লাগবে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট। একটি রো রো (বড়) ও দুটি মিডিয়াম ফেরি দিয়ে এ রুটের সার্ভিস শুরু হয়েছে।
এ রুটে বড় বাসের ভাড়া ২ হাজার ৬০, ট্রাকের ভাড়া ১ হাজার ৪০০, মাইক্রোবাসের ভাড়া ১ হাজার, কার (ছোট গাড়ি) এর ভাড়া ৬৮০, মোটরসাইকেলের ভাড়া ১০০ এবং যাত্রীর ভাড়া ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমানে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের একটি অন্যতম জনগুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হবে। পাশাপাশি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামালসহ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সাজোয়া যান, অন্যান্য ভারী যানবাহনসমূহ উক্ত ঘাট দিয়ে পারাপার হতে পারবে।
জনগুরুত্বপূর্ণ ঘাটসমূহ নির্মাণ, সংরক্ষণ ও মেরামত এবং যাত্রী সুবিধাদিসহ সুষ্ঠুভাবে ঘাট পরিচালনার সেবা কাজ বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক সম্পন্ন করেছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক দুই পাড়ে ফেরিঘাট নির্মাণসহ নৌপথের প্রয়োজনীয় ড্রেজিং এবং বয়া-বাতি স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃক একটি রো রো (বড়) ফেরি এবং দু'টি মিডিয়াম এ রুটে নিয়োজিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশ ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা এবং পদ্মা নদী দ্বারা পূর্ব ও পশ্চিমে দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। সেই সময় ঐতিহাসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি ফেরিঘাট আরিচা-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-নগরবাড়ী যথাক্রমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন পারাপারে আরিচা নদী বন্দরের আওতায় পরিচালিত হতো। ফেরি পারাপারের অন্যতম প্রধান ঘাট হিসেবে তখন থেকেই নগরবাড়ী উত্তরাঞ্চলে পরিবহন সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। পরবর্তীতে নৌপথের দুরত্ব হ্রাসসহ উন্নত যাত্রী সেবা নিশ্চিত কল্পে ২০০২ সালে ফেরিঘাট আরিচা হতে পাটুরিয়াতে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ায় নগরবাড়ী রুটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায় এবং ফেরিঘাট ৮ কিলোমিটার ভাটিতে কাজিরহাটে স্থানান্তর করা হয়। তবে ঘাট স্থানান্তর করা হলেও ব্যবহারকারীদের কাছে এর গুরুত্ব কোন অংশেই কমে যায়নি। আরিচা হতে কাজিরহাটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল অব্যাহত রয়েছে এবং এর হার আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বৃহত্তর পাবনাসহ আশপাশের জেলার জনসাধারণের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতু ব্যবহারের চেয়ে আরিচা-কাজিরহাট ফেরি রুট ব্যবহার করা অর্থ এবং সময় উভয় ক্ষেত্রেই সাশ্রয়ী। সমীক্ষায় আরও দেখা যায় যে, গত বছর এ ঘাট ব্যবহার করে প্রায় ২৮ লাখ যাত্রী পারাপার হয়েছে।