ঈশ্বরদী জংশনে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া
দীর্ঘ দিনের অবহেলিত ঈশ্বরদী জংশনে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। স্টেশনটির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এক সঙ্গে ১৮টি কোচ দাঁড়ানোর জন্য সম্প্রসারণ করা হচ্ছে রেললাইন ও প্লাটফর্ম। একই সঙ্গে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ (ডুয়েল) লাইনেরও কাজ চলছে। নির্মাণ করা হচ্ছে ঈশ্বরদী থেকে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পর্যন্ত নতুন রেল লাইন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সঙ্গে নতুন রেলপথ স্থাপনের পাশাপাশি লাইনের সংস্কার, পূণনির্মাণ, প্লাটফর্মের আধুনিকায়ন, প্লাটফর্ম ও শেডের সংস্কার, যাত্রীদের বিশ্রাম, বসবার জায়গা, আধুনিক টয়লেট, সিগন্যাল, রেলওয়ে ইয়ার্ড কম্পিউটারাইজসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
রেলওয়ের বিভিন্ন সূত্র জানায়, ব্রিটিশ শাসনামলে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটি গড়ে তোলা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া পড়েনি এ জংশন স্টেশনে। পুরাতন বিল্ডিং, ট্রেনের উচ্চতার চেয়ে কয়েক ফুট নিচু প্লাটফর্ম, ছাউনি ফুটো, যাত্রীদের বিশ্রামাগারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংরা ও ব্যবহারের অনুপযোগী টয়লেট, যাত্রীদের বসবার স্থান সংকট, লাইনগুলো অতি পুরাতন ও নড়বড়েসহ মাদকাসক্ত, চোর, ছিনতাইকারী, প্রতারকসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের নিরাপদ আশ্রয় ছিল ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা।
২০১৯ সালের ২২ জুন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন পরিদর্শনে আসেন। সে সময় স্টেশনে উপস্থিত স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ট্রেনযাত্রীরা স্টেশনের সমস্যাগুলো মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। মন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে স্টেশনটিতে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারকে নির্দেশ দেন।
সেই নির্দেশনা মতেই রেলপথ মন্ত্রণালয় ৩৩৫ কোটি টাকার 'রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ, নতুন স্টেশন স্থাপন, রেললাইন সংস্কার ও সমপ্রসারণ কাজের পাশাপাশি ঈশ্বরদী প্লাটফর্মে যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য প্লাটফর্ম সংস্কারসহ নানামুখি যুগোপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আর এই কাজটি ক্যাসেল কন্সট্রাকশন লি. অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার লি. জয়েন্ট ভেঞ্চার কম্পানির মাধ্যমে করা হচ্ছে।
ঈশ্বরদী এলাকার আসাদুর রহমান বিরু বলেন,দীর্ঘকাল পর হলেও ঈশ্বরদী রেলওয়েতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এই জনপদে রেলপথে রোগী ও বয়স্ক যাত্রীর সংখ্যা অনেক। দীর্ঘদিন ধরেই তারা খুব কষ্ট করে রেলপথে যাতায়াত করছিলেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আসাদুজ্জামান আসিফ বলেন, প্লাটফর্ম উচুঁ হওয়ায় রোগীদের যাতায়াতে আর বাধা রইলো না। খুব সহজেই ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহী, ঢাকা ও কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আসা রোগীরা ট্রেনে উঠে যাতায়াত করতে পারবেন। তার দাবি, প্লাটফর্ম উচুঁ হয়েছে। এখন যাত্রীদের টয়লেট, বিশ্রামাগার ও ছাউনিগুলোর মেরামত ও আধুনিকায়ন জরুরি হয়ে গেছে। এগুলো হলেই আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে।
এ ব্যাপারে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আসাদুল হক বলেন, এই স্টেশনের বিদ্যমান সমস্যা সম্প্রতি রেলওয়ে বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখে গেছেন। মূলত তাদের কারণেই আজ এই স্টেশনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে এই স্টেশনে সকল ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। মান্ধাতামলের এনালগ প্রযুক্তি বাতিল করে কম্পিউটারাইজড ও পুরো স্টেশন এলাকাকে প্রযুক্তিনির্ভর করা হবে।
এছাড়াও ভারতের জিপিটি এবং বাংলাদেশের এসইএল ও সিসিসিএল অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) ২৯৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্পের আওতায় যে ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ হচ্ছে তার মধ্যে ২২ দশমিক ০২ কিলোমিটার হবে মূল লাইন, আর ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার হবে লুপ লাইন। এছাড়া ১৩টি লেভেলক্রসিং গেইট, একটি 'বি' শ্রেণির স্টেশন ভবন, একটি প্ল্যাটফর্ম এবং সাতটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
এ ব্যাপারে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আসাদুল হক বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের মালামাল ও যন্ত্রপাতি পৌঁছাতে এ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ রেললাইন হলে চট্রগ্রাম ও খুলনা বন্দর থেকে অল্প সময়ে খুব সহজেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মালামাল পরিবহন করা সম্ভব হবে।