উত্তরে শীতের এক সকাল
উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ, মাঝে মধ্যে কুয়াশাগুলো বৃষ্টির মতো ঝরছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত দেখা মেলেনা সূর্যের।
আবহাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, বনায়ন ও নদীর পানি কমে যাওয়ায় গত বিশ বছরের চেয়ে চলতি বছর বেশি ঠান্ডা পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
অন্যদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, শীত বেশি হওয়ায় বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যাও।
সকাল গড়ালে পূবের আকাশে সূর্য উঁকি দিয়ে ছড়াচ্ছে মিষ্টি রোদ। কুয়াশার চাদর সরিয়ে আলো ছড়াচ্ছে পথ-ঘাট-ক্ষেত সব স্থানে। দূর্বা ঘাসে শিশিরবিন্দু, দেখে মনে হচ্ছে মুক্তার কণা জ্বলজ্বল করছে। আবার দিনে রোদ হলেও ঠান্ডা অনেক বেশি। কুয়াশায় দিনের বেলায়ই হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যান-বাহন।
শীতে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। অনেকেই খুড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। কনকনে ঠান্ডায় গরম কাপড়ের দাবি করছেন নিম্নআয়ের মানুষ।
রংপুর অঞ্চলে বেড়েই চলছে শীতের প্রকোপ। কনকনে শীতে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দিনভর সূর্যের দেখা না মেলায় তারা বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছেন না।
রংপুর সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, শীত বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে করোনা রোগীর সংখ্যা। আর এ রোগে বেশির ভাগ আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধরা। গত ৮ মাসে ৬১জন করোনা আক্তান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত করোনায় আক্তান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬শ জন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান জানান, রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা প্রতিদিন কমতে শুরু করছে। উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় তাপমাত্রা শুক্রবার ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা ৯-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।
রংপুরে গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ১৪ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করলেও তা আগামী দুই একদিনে আরও কমে যেতে পারে। এ কারণে শীত কয়েক দিনের মধ্যে বেড়ে যাবে আশঙ্কা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, গত ২০ বছরের রেকর্ডকে ছেড়ে যাবে এ বছর ঠান্ডা। এ অবস্থায় গরম কাপড় ব্যবহারসহ ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ।
শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে বাজার ও ফুটপাতে এখন গরম কাপড় বিক্রি শুরু করছে দোকানীরা। বেশি ঠান্ডার কারণে শীত বেশি হওয়ায় কাঁথা কম্বল ব্যবহার করছে মানুষ। তবে শুরুতেই বেশি শীত পড়ছে উত্তরাঞ্চলের জেলা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায়।
আবার কুয়াশাও পড়ছে অনেক। ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও দিনাজপুরের সড়ক মহাসড়কে যানবাহনে হেডলাইট জালিয়ে চলাচল করছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রংপুরের লাহেরীর হাট এলাকার নগরীর দেলেয়ার হোসেন বলেন, কুয়াশার সাথে সাথে বাড়ছে শীত। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঠান্ডা ও দিনে একটু গরম লাগছে। রাতে কাঁথা কম্বল ছাড়া ঘুমানো যায়না।
মহানগরীর মুন্সিপাড়ার আরিফা সুলতানা শিউলি জানান, ভোর থেকে কুয়াশা পড়ছে এ অঞ্চলে। এ কারণে বাড়ছে ঠান্ডা। রাতে গরম কাপড় বের করতে হচ্ছে। আবার দিনে একটু গরম সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতে অনেক বেশি ঠান্ডা লাগছে।
রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় জানান, উত্তরাঞ্চলে বাড়তে শুরু করছে শীত। ঠান্ডায় করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে তাই সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। শীতের সময় যেকোনো ভাইরাসজনিত রোগ বাড়তে পারে। এর জন্য সবাইকে সর্তক হতে হবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শীত বেশি হলে করোনার প্রভাব বৃদ্ধির আশংকা করা হচ্ছে। যার ফলে হৃদরোগী, ডায়বেটিক রোগী, বয়ষ্ক ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হতে পারে।