উদ্বোধনের আগেই সিলেটে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন
সিলেটের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক। ২০১৬ সালে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক হিসেবে। এই সড়কের পাশেই গড়ে উঠছে দেশের প্রথম 'সাইবার সিটি' বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক।
কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বাড়ালেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ। সর্বশেষ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫০৯ কোটি টাকা। এদিকে, কাজ শেষ হওয়ার আগেই সড়কটিতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। সড়কের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং সড়কের পাশের ব্লক ধসে মাটি সরে গেছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দিয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে নিম্নমানের কাজের কারণেই উদ্বোধনের আগে সড়কে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের শেষপ্রান্ত ভোলাগঞ্জে দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি। এই কোয়ারির পাথর পরিবহনে প্রতিদিন কয়েক শতাধিক ট্রাক চলাচল করে বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক দিয়ে। এছাড়া যাত্রীবাহী যানবাহনও চলাচল করে। সড়কটির কাজ এখনো শেষ না হলেও যান চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এ মহাসড়কের বর্ণি নামক স্থানে সড়কের গার্ডওয়ালের ব্লক ধসে পড়ে। ব্লক ধসে সড়কের নিচের মাটি সরে যায়। ফাটল দেখা দেয় সড়কের কয়েকটি অংশে। এ অবস্থায়ও ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী দ্বিতল বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে বর্ণি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ধস ও গার্ডওয়ালের ভাঙন ঠেকাতে ফাটলের উপরে বালি-সিমেন্টের স্তুপ দিয়ে বৃষ্টির পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা। এর আগে ২০১৯ সালেও এই সড়কের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের সামনের অংশে ভাঙ্গন দেখা দেয়।
নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বরাবার ভাঙন দেখা দেওয়ায় নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠছে। স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স নামে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এই সড়কটি নির্মাণ করছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কারো বক্তব্য জানা যায়নি। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কটি এখনও নির্মাণাধীন আছে। কোনো অনিয়ম বা নিম্নমানের কাজের প্রমাণ পেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩১ মে বিমানবন্দর-বাইপাস-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে কাজের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কয়েক দফায় এই সড়ক নির্মাণের সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়। সময় ও ব্যয় বাড়লেও সড়কের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সড়কের কাজের মান নিয়ে এই এলাকার সাংসদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর এই মহাসড়কের কাজ পরিদর্শনে যান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এসময় বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের সামনের সড়কে ফাটল দেখতে পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। সাথে সাথেই তিনি সড়ক ও জনপদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চান। সড়কের নির্মাণ কাজের মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
মন্ত্রীর নির্দেশনার পর এবার সড়কের আরেক জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দুজ্জামান বলেন, "গতবছর সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের হাইটেক পার্ক এলাকায় সড়কের মূল অংশে বড় ধরনের ফাটল দেখা যায়। কিছুদিন পরে সেই ফাটলের অংশ ভেঙে নতুন করে বানানো হয়। এছাড়া কাটাখাল সেতুর অংশে এ ধরনের ফাটল ও ব্লক ধসের ঘটনা আগেও ঘটেছে। এতে বোঝা যায় এই সড়কের নির্মাণ কাজ নিম্নমানের হচ্ছে"।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য বলেন, "বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের বর্ণি এলাকায় ধসে যাওয়া অংশ আমি পরিদর্শন করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ধসে যাওয়া অংশ মেরামতের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাকে আশ্বস্থ করেছেন কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সড়কের ভাঙন মেরামত করা হবে"।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "বিমানবন্দর-বাইপাস-ভোলাগঞ্জ সড়কের ৯০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের একটি অংশের ব্লক ধসের সংবাদ পেয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ধসে যাওয়া সড়কের মেরামত কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। মেরামত কাজ ইতোমধ্যে শুরুও হয়েছে"।
তিনি বলেন, "সড়কের কাজটি এখনো চলমান আছে। আমরা নিবিড়ভাবে কাজ পর্যবেক্ষণ করছি। নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সবকিছু যাচাই-বাছাই করা হবে। কোনো অনিয়মের প্রমাণ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে"।