একজন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার খরচ প্রায় ৩৪ হাজার টাকা: বিআইডিএস
ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসায় প্রায় ৩৪ হাজার টাকা ব্যয় হয় বলে উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর গবেষণা মতে, দেশের দরিদ্রতম পরিবারগুলোর তাদের মোট আয়ের ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত ডেঙ্গু চিকিৎসায় খরচ করে।
বৃহস্পতিবার বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত "ঢাকায় ডেঙ্গু মহামারি ও অর্থনৈতিক বোঝা" শীর্ষক এক সেমিনারে এ গবেষনাপত্রটি উপস্থাপন করা হয়।
এই সেমিনারের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় ছিলেন বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। অনুষ্ঠানে গবেষণার মূল বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন বিআইডিএস এর রিসার্চ ফেলো ড. আবদুর রাজ্জাক সরকার।
তিনি বলেন, "গত দুই বছরে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যয় কমেনি, বরং ৫ থেকে ১০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে যেসব ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার উদ্দেশ্যে হাসপাতালে যাচ্ছেন, তাদের খরচও বেড়েছে।"
"আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগীর গড় খরচ ছিল ২২ হাজার ৩৭৯ টাকা। এছাড়া, একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৪৭ হাজার ২৩০ টাকা," যোগ করেন তিনি।
এই গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো, ২০১৯ সালে ঢাকায় ডেঙ্গু মহামারি ও অর্থনৈতিক বোঝা একটি সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনুমান করা। এই গবেষণার জন্য একটি ক্রস-বিভাগীয় স্টাডির নকশা গৃহীত হয়। এক্ষেত্রে তিনটি ভিন্ন জরিপের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করা হয়। জরিপগুলো হলো, ঢাকা শহরে ডেঙ্গু মহামারি সংক্রান্ত বোঝা পর্যালোচনার জন্য একটি সম্প্রদায়-ভিত্তিক পারিবারিক জরিপ, পারিবারিক পর্যায়ে ডেঙ্গুর অর্থনৈতিক বোঝা অনুমান করার জন্য হাসপাতাল-ভিত্তিক ডেঙ্গু রোগীদের জরিপ, এবং একটি হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় মোট খরচ।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এর মোট এক হাজার ১৭৬ টি পরিবারের উপর জরিপ চালানো হয়। ২০১৯ সালে এই এলাকার মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর বিস্তার ছিল প্রায় ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে, উত্তর সিটি কর্পোরেশন (১ দশমিক ৩৭ শতাংশ) থেকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (২ দশমিক ২৭ শতাংশ) হার ছিল বেশি।
এছাড়া, ডেঙ্গুর বিস্তার সবচেয়ে বেশি ছিল ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে (২ দশমিক ১ শতাংশ)। নারীদের মধ্যে এই হার ২ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং ছোট পরিবারে এই হার ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে, সন্ধ্যায় এবং সকালে নিয়মিত পার্ক পরিদর্শন বা হাঁটতে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল বেশি (৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ)।
এ গবেষণার জন্য হাসপাতালে ভর্তি ৩০২ ডেঙ্গু রোগীকে তালিকাভুক্ত করা হয়। তিনি বলেন, "২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর এক ভয়াবহ অধ্যায় পার করে। ডেঙ্গুতে মানুষ কেমন আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এরই একটা রুপরেখা তুলে ধরতে আমরা ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করি যেখানে ২০১৯ সালে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীদের পরিবারগুলোকে সিলেক্ট করা হয়। আমাদের গবেষণায় উঠে আসে একজন ডেঙ্গু রোগীর পেছনে সরকারী হাসপাতালে খরচ হয়েছে গড়ে ২২ হাজার ৩৭৯ টাকা এবং বেসরকারী হাসপাতালে খরচ হয়েছে গড়ে ৪৭ হাজার ২৩০ টাকা।"
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, ডেঙ্গু সংক্রমণের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ঢাকার দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের জন্য 'স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসুচি'সহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করা যেতে পারে।
বিনায়ক সেন বলেন, "বাংলাদেশে হাসপাতালগুলোতে সেবার মান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সকল হাসপাতালে সরকার নির্ধারিত একটি মূল্য বেধে দিলে মানুষ বাড়তি হয়রানি থেকে বাঁচবে। সবথেকে জরুরি হচ্ছে বেড ফি কমানো।"
তিনি আরও বলেন, আরবান হেলথের বড় সমস্যা হচ্ছে এর নিয়ন্ত্রণ মিনিস্টারের কাছে নেই। সিটির মধ্যের বিষয়গুলো সিটি করের্পারেশন নিয়ন্ত্রণ করে ফলে এক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়।
চলতি বছরে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার:
এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের। এছাড়া, গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০৩ জন। এদের মধ্যে ঢাকায় ৮৪ জন এবং ঢাকার বাহিরে ১৯ জন।
চলতি মাসের ১৭ দিনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩৪৫ জন রোগী। পাশাপাশি, এ মাসে মৃত্যু হয়েছে ৭ জন ডেঙ্গু রোগীর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, এ বছর আক্রান্ত মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার জনে। চিকিৎসা শেষে এবছর হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন ২৫ হাজার ৩৫৩ জন।
বর্তমানে ঢাকার ৪৬ টি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী এ হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন এবং রাজধানীর বাহিরের জেলাগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১১৪ জন ডেঙ্গু রোগী।
২০১৯ সালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। সরকারি হিসাবে এবছর ১৫৬ জনের মৃত্যু হয়। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক।