এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ মামলার অভিযোগ গঠন
সিলেটের মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। রোববার সিলেট বিভাগীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুুুহিতুুুল হক এই অভিযোগ গঠন করেন। এরফলে আলোচিত এই মামলার বিচার কাজ শুরু হলো।
এ তথ্য নিশ্চিত করে এই আদালতের পিপি রাশিদা সাঈদা খানম বলেন, 'এর আগের দুটি তারিখে অভিযোগপত্র পর্যালোচনার জন্য সময় প্রার্থনা করে বাদী পক্ষ। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগ গঠনের তারিখ পিছিয়ে যায়। ১২ জুনায়ারি নির্ধারিত তারিখে বাদীপক্ষ অভিযোগপত্র নিয়ে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা আদালতে জানায়। বাদির আপত্তি না থাকায় আদালত অভিযোগপত্রটি আমলে নেন।'
এই মামলায় বাদি পক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্রে পুলিশ সকল আসামীদের যথাযথভাবে অর্ন্তভুক্তি করেছে। অভিযোগপত্রের ওপর আমাদের কোনো আপত্তি না থাকায় আদালত তা আমলে নিয়েছেন। আজ আদালতে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার কাজ শুরু হলো।'
এর আগে, গত ৩ ডিসেম্বর সকালে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আবুল কাশেমের আদালতে ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে এই মামলার অভিযোগপত্র প্রদান করেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।
পরে ৩ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে চাঞ্চল্যকর এই মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ ছিল। সেদিন বাদীর পক্ষে আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করা হয়। বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগপত্র নিয়ে আপত্তি থাকলে তা জানাতে এক সপ্তাহের সময় প্রদান করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক। ১০ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।
এরপর ১০ জানুয়ারি সকালে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মো. মোহিতুল হকের আদালতে বাদীপক্ষ ফের দু'দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করলে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১২ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
বলে রাখা ভালো, অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়াকে সরাসরি ধর্ষণে সম্পৃক্ত এবং রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমকে ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। এই আটজনই বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।
এর আগে, ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নববধুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্বামীকে নিয়ে শাহপরান মাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন নির্যাতনের শিকার তরুণী (২৫)। ফেরার সময় তারা গাড়ি থামিয়েছিলেন নগরের টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে। স্ত্রীকে প্রাইভেটকারে রেখে স্বামী পাশ্ববর্তী দোকানে গিয়েছিলেন। ওইসময় প্রাইভেটকারটি ঘিরে ধরে কয়েক তরুণ। প্রাইভেটকারসহ ওই দম্পতিকে তারা নিয়ে যায় বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ভেতরে। সেখানে স্বামীর সামনেই গাড়ির ভেতর সংঘবদ্ধভাবে তরুণীকে ধর্ষণ করে ৬ তরুণ। পরে তাদের মারধর করে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয় ধর্ষকরা। আটকে রাখে তাদের গাড়িও।
ঘটনার রাতেই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে নগরের শাহপরান থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে গেলেও ৩ দিনের মধ্যে ৬ আসামিসহ সন্দেহভাজন আরও ২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ। সন্দেহভাজন দুই গ্রেপ্তারকৃত হলেন- আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া। গ্রেপ্তারের পর তাদের প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে সকলেই দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।