ওসি প্রদীপসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা
৫ লাখ টাকা আদায় করে আরও ৫ লাখ টাকা ঘুষ না পাওয়ায় 'বন্দুকযুদ্ধে'র নামে কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার যুবক সাদ্দাম হোসেনকে হত্যার অভিযোগ এনে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের হয়েছে।
নিহত সাদ্দাম হোসেনের মা গুলচেহেরের দায়ের করা ফৌজদারী এজাহার মঙ্গলবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলা হিসেবে রুজু করেছেন। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ হেলাল উদ্দীন ফৌজদারী এজাহার আমলে নিয়ে একজন এএসপি পদমর্যদার অফিসারকে দিয়ে তা তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
বাদি পক্ষের আইনজীবী আবদুল বারী ও ইনসাফুর রহামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এই তথ্য জানান।
মামলায় হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানকে প্রধান ও ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২নং আসামি করে মোট ২৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২৭ জনই পুলিশের সদস্য। অন্যজন হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার নূরুল আমিন প্রকাশ নুরুল্লাহ।
এজাহারে বাদি অভিযোগ করেন, ৪ জুলাই টেকনাফ হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান একদল পুলিশ নিয়ে হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার মৃত সুলতান আহামদ প্রকাশ বাদশার ছেলে সাদ্দাম হোসেন ও তার ভাই জাহেদ হোসেনকে বাড়ির অদূরে রাস্তা থেকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যান। তাদের ছাড়িয়ে আনতে ফাঁড়িতে যান মামলার বাদি (মা) গুলচেহের। তাদের ছেড়ে দিতে সম্মত হলেও ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান। এক পর্যায়ে পাঁচ লাখ টাকায় উভয়ের মধ্যে রফাদফা হয়।
পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে একইদিন তিন লাখ সরাসরি হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানের হাতে দেন বাদি গুলচেহের। বাকি দুই লাখ পরদিন মশিউর রহমানের কথামতো তার পাঠানো বাহক ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার নুরুল আমিনকে দেন।
বাদি এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান পাঁচ লাখ টাকা গ্রহণ করার পর দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহেদ হোসেনকে একটি মামলা দিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দেন। ৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে ৩০০ গজ দূরে এনে সাদ্দাম হোসেন ও অন্য একজনকে গুলি করে পুলিশ। এতে গুরুতর আহত হন সাদ্দাম হোসেন। পরে পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বাদি গুলচেহের এজাহারে দাবি করেন, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ মশিউর রহমান, সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও মামলার তিন নম্বর আসামী আরিফুর রহমানের পরামর্শ ও নির্দেশক্রমে অন্য আসামি সবাই পরিকল্পনা করে সাদ্দাম হোসেনকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছেন। সাদ্দামকে মারার কিছুদিন আগে একইভাবে তাদের বাবা সুলতান আহমদ প্রকাশ বাদশাকেও পুলিশ বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেছে বলে বাদি এজাহারে উল্লেখ করেন।
কিছুদিনের ব্যবধানে স্বামী ও সন্তান হারিয়ে মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বাদি গুলচেহের। অন্যদিকে, এই বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে নিয়মিত হুমকি দিয়েছে পুলিশ। তাই মামলার আবেদন করতে বিলম্ব হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করেন বাদি।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. আরিফুর রহমান, এসআই সুজিত চন্দ্র দে, এসআই অরুন কুমার দে, এসআই মো. নাজিম উদ্দিন ভুইয়া, এসআই নাজিম উদ্দিন, এসআই কামরুজ্জামান, এএসআই আমির হোসেন, এএসআই কাজি সাইফুদ্দিন, এএসআই নাজিম উদ্দিন, এএসআই মাঈন উদ্দিন, এএসআই মাযহারুল ইসলাম, এএসআই নঈমুল হক, এএসআই মিশকাত উদ্দিন, এএসআই রাম চন্দ্র দাশ, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, আবু হানিফ, মো. শরীফুল ইসলাম, মো. আজিজ, দ্বীন ইসলাম, মো. বোরহান, মো. জসিম উদ্দিন, আব্দু শুক্কুর, শেকান্দর, মহি উদ্দিন ও হ্নীলা ইউনিয়নের দফাদার নুরুল আমিন প্রকাশ নুরুল্লাহ।