কক্সবাজারে অস্ট্রেলিয়ান পর্যটককে ধর্ষণচেষ্টা, আটক ৩
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/12/17/coxs_bazar_australian_tourist_grabbing_rape_news_17_dec19_pic.jpg)
কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি মারমেইড বিচ রিসোর্টের লাগোয়া ‘গুড ভাইব কটেজে’ নিরাপত্তাকর্মীর সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ান এক নারী পর্যটককে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রামু থানায় মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় মারমেইড ইকো ও বিচ রিসোর্টের পরিচালক আনিসুল হক সোহাগের ভাই শামিমুল হক স্যাম এবং এজাহারভূক্ত অপর দু’জনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মামলাটি নথিভূক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন।
রোববার রাতে ওই নারী জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে সাহায্য চাইলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। শামিমুল হক স্যামের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি অনুমোদনহীন ‘গুড ভাইব কটেজে’ এ নারী রাত্রিযাপনের জন্য উঠেছিলেন। তাই তাকে সন্দেহজনক আসামি হিসেবে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপ এলাকার কলিম উল্লাহ ছেলে আনচার উল্লাহ (২৪) ও আবদুল মুনাফের ছেলে আব্দুল গফুর (২০)। মামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে বেলাল উদ্দিন (২৫) নামে আরও একজনকে নথিভূক্ত করা হয়েছে। তিনি পলাতক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন জানান, অস্ট্রেলিয়ান ওই নারী পর্যটক অন অ্যারাইভাল ভিসায় গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ঘুরতে আসেন। শনিবার অনলাইনে বুকিং দিয়ে রোববার তিনি মারমেইড বিচ রিসোর্ট সংলগ্ন ‘গুড ভাইব কটেজে’ ওঠেন। মাঝরাতে তার কক্ষে অনুপ্রবেশ করে দুই যুবক। যুবকরা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়ার পাশাপাশি মুখ চেপে ধরে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় ওই নারী পর্যটক কটেজ থেকে বের হয়ে চিৎকার শুরু করলে ধর্ষণ চেষ্টাকারীরা পালিয়ে যায়। ধস্তাধস্তিতে অস্ট্রেলিয়ান নারী আহত হন। পরে ওই পর্যটক জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান।
তিনি জানান, বিষয়টি জেনেই রামু থানার পুলিশ দ্রুত গিয়ে তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজারে নিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এ সময় কটেজের মালিক শামীমের এক ভাই ও নিরাপত্তাকর্মীসহ ৫ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশ জানতে পারে, কটেজের নিরাপত্তাকর্মী নিজেই যুবক গফুর ও বেলালকে খবর দেয়। তারা সেখানে চুরি করার জন্য প্রবেশ করেছিল। এরপর ওই নারীর মুখ চেপে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে। রাতেই পুলিশ গফুরকে আটক করেছে।
তিনি আরও জানান, ঘটনাটি যেহেতু পর্যটন সংশ্লিষ্ট, তাই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদারক করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান ওই নারী পর্যটকের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ রয়েছে। মঙ্গলবার তিনি ঢাকায় ফিরে গেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মেরিন ড্রাইভ সড়কের রামু হিমছড়ির মারমেইড ইকো রিসোর্ট দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। এর আশপাশে বেশ কয়েকটি অনুমোদনহীন কটেজ গড়ে তোলেন মারমেইড পরিচালকের ভাই শামিমুল হক স্যাম ও শাহীন। এগুলোকে মারমেইড বিচ রিসোর্টের অংশ হিসেবেই চেনেন পর্যটক ও স্থানীয়রা। কাগজে কলমে এগুলো মারমেইডের অংশ না হলেও মারমেইড দ্বারা এসব পরিচালিত হতো। এসব কটেজের খাবার থেকে শুরু করে সবকিছু সরবরাহ হতো মারমেইড থেকে। ফলে পর্যটকদের কাছে এসব কটেজ মারমেইড হিসেবেই পরিচিত।
কিন্তু এসব কটেজের সঙ্গে মারমেইডের কোন যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেছেন মারমেইড বিচ রিসোর্টের কর্মকর্তা ইয়াছির আরাফাত রিশাদ। তিনি জানান, যে কেউ খাবার পার্সেল চাইলে আমরা বিক্রি করি। পার্সেল নেয়া খাবার কে কোথায় নিয়ে খান সেটা আমাদের কাছে খবর থাকে না।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পর্যটন এলাকায় আবাসন কিংবা খাবারের কোনো প্রতিষ্ঠান করতে গেলে জেলা প্রশাসন থেকে সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক। অস্ট্রেলিয়ান নারী পর্যটক অবস্থান করা ‘গুড ভাইব কটেজে’ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান আমরা অনুমোদন দিইনি। মারমেইড রিসোর্টের পরিচালক আনিসুল হক সোহাগের নেওয়া অনুমোদন কাগজের অনুবলে হয়তো তার ভাই ভিন্ন নামে কটেজ করে অবৈধভাবে ভাড়া দিয়ে আসছিল। বুধবার থেকে এসব বিষয়ে অভিযানে নামবে জেলা প্রশাসন।