নারী নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪, উত্তাল নোয়াখালী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও তথ্য প্রযুক্তি আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে। রোববার রাতে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ (৩৫) বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত মামলার প্রধান আসামি বাদল এবং দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। অন্যদিকে, অন্য দুই আসামি আব্দুর রহিম এবং আব্দুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলায় আসামি তালিকায় নেই দেলোয়ারের নাম। তার নামে থানায় অন্য দুটি মামলা রয়েছে।
র্যাবের হাতে আটককৃত বাদল (২২) একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মধ্যম একলাশপুর গ্রামের মোহর আলী মুন্সি বাড়ির রহমত উল্যার ছেলে। দেলোয়ার একই গ্রামের কামাল উদ্দিন ব্যাপারী বাড়ির সাইদুল হকের ছেলে।
অন্যদিকে, পুলিশের হাতে আটককৃত মো. রহীম (২০) একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে এবং মো. রহমত উল্যাহ (৪১) একই এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রহীমের ছেলে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা
ওই মামলায় বাদলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া রহিম, আবুল কালাম (২২), ইসরাফিল হোসেন (২২), সাজু (২১), সামছুদ্দিন ওরফে সুমন (৩৯), আবদুর রব ওরফে চৌধুরী মিয়া (৪৮), আরিফ (১৮) ও রহমত উল্যার নাম উল্লেখসহ ৭-৮ অজ্ঞাতনামাকে করা হয়েছে আসামি।
ঘটনার পর থেকে গত ৩২ দিনে দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর পরিবারকে কিছু দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে তার পুরো পরিবারকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে।
মামলার এজাহারের নির্যাতিতা নারী উল্লেখ করেন, স্বামীকে বেঁধে রেখে আসামিরা তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তারা এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণা করেন। গত এক মাস ধরে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন তারা। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এই ভিডিও প্রকাশ করেন।
ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, বর্বর এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের ৫টি দল কাজ করছে।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, তিন বছর আগে ওই নারীর বিয়ে হয়। স্বামী তাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর থেকে তিনি বাবার বাড়িতে থাকতেন। দীর্ঘদিন স্বামীর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না।
২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে অনৈতিক কাজের অভিযোগ এনে তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিটিয়ে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও করেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে গৃহবধূর ঘরে ঢুকে, স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন বাদল ও তার বাহিনী। ওই সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্রধারণ করেন।
একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওই নারীর বরাত দিয়ে জানান, 'ঘটনার পর ওই গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনা জানাতে এসেছিলেন। কারা নির্যাতন করেছিল, সে ব্যাপারে কিছু জানাননি। এ ঘটনার পর থেকে নির্যতনকারীদের ভয়ে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যান।'
একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান দিপু বলেন, 'মাদককারবারি দেলোয়ার ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা এ বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়েছে।'
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর বাবা বলেন, 'নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাইনি।'
বেগমগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নজরে আসে। এরপর তিনি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচার দাবিতে উত্তাল নোয়াখালী
বর্বরোচিত এ নির্যাতনের প্রতিবাদে উত্তাল নোয়াখালী। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন প্রতিবাদ ও মানবন্ধন করেছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও এনজিও মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এসো গড়ি উন্নয়ন সংস্থা, এনআরডিএস, নারী অধিকার জোট, এফপিএবি-সহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।