করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসকের আবেগঘন স্ট্যাটাস
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১০ জন। এদের মধ্যে জেলার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন নারী চিকিৎসকও রয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই নারী চিকিৎসকের করোনভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে অবস্থান করছেন। সেখানেই তিনি আইসোলেশনের আছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ।
ওই নারী চিকিৎসক বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার। তিনি জেলার আখাউড়া উপজেলাস্থ তার শ্বশুরবাড়ি থেকে গিয়ে বিজয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করতেন। আর বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি জেলার একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টার। বর্তমানে সেখানে ১৮ জন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
ওই নারী চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় নিজেকে গর্বিত মনে করার কথা উল্লেখ করেছেন।
বুধবার দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত স্টেটাসটিতে লাইক দিয়েছেন ৬ হাজার ৩০০ মানুষ ও কমেন্ট করেছেন ১ হাজার এবং শেয়ার করেছেন ১ হাজার ৪০০ মানুষ।
মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫১ মিনিটে পোস্ট করা ওই চিকিৎসকের স্টেটাসটি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
সবাই বলছে কাউকে বলো না। কেন বলব না? আমি তো কোনো দোষ করি নাই। আমি আপনাদের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছি। লকডাউনে যখন আপনারা বাড়িতে বসে সময় কিভাবে কাটাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন তখন আমি হয়তো কোনো কোভিড ১৯ পজিটিভ ব্যাক্তির পাশে দাঁড়িয়ে। হ্যাঁ আমি কোভিড ১৯ পজিটিভ। এতে আমার কোনো লজ্জা বা ভয় বা আফসোস নাই। বরং আমি খুব গর্বিত। কারণ আমি শেষদিন পর্যন্ত কাজ করে এসেছি। এখন যদি মরেও যাই আমার আফসোস থাকবে না। কারণ আমি ডাক্তার হিসেবে যে শপথ নিয়েছিলাম তা পালন করে এসেছি। আমি যতদিন পেরেছি আপনাদের জন্যে হাসপাতালে এবং মাঠে কাজ করেছি। যেদিন আমার মনে হল আমার নিজেরই স্যাম্পল পাঠানো দরকার, আমি সাথে সাথে স্যাম্পল পাঠিয়ে নিজেকে কোয়ারান্টাইনড করেছি। আমার পক্ষে যতদূর সম্ভব মানুষ এড়িয়ে চলেছি। নিজের বাড়িতেও ফিরিনি যেহেতু আমারো পরিবার আছে, বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুর শ্বাশুড়ি আছেন।
তারপরো আজ আমার এলাকার মানুষের কাছে (ময়মনসিংহের যে এলাকায় ভাড়া থাকি) যে ব্যবহার পেয়েছি আমি ও আমার স্বামী তা কোনোদিন ভুলব না।
একটা কথা বলে যাই...নগর পুড়লে কি দেবালয় এড়ায়? আগামী বছর বেঁচে থাকলে এই স্মৃতিটা ভেসে উঠবে ফেবুর পাতায়।
শুভ নববর্ষ, ১৪২৭! সবার মঙ্গল হোক।