করোনার ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প
বিশ্বব্যাপি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পও। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্পে মিয়ানমারের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষের বসবাস। অপরিচ্ছন্ন ও ঘনবসতির কারণে করোনার সংক্রমণ নিয়ে ভয় কাজ করছে রোহিঙ্গাদের মনে। তবে সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনের সচেতনতামূলক প্রচারণা ও নিয়মিত খাবার বিতরণের কারণে কোনো সংকট নেই বলে দাবি করছেন তারা।
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনেই ভোগ্যপণ্য বিতরণ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এসএম শামসুজ্জোহা।
উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-৩ বাসিন্দা জলিল মোহাম্মদ (৪০) বলেন, আমাদের ক্যাম্পে যদি কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাহলে দ্রুত বিস্তার ঘটবে। কারণ আমরা ঘনবসতিতে গাদাগাদি থাকি, এটাই ভয়ের।
মধুরছড়া ক্যাম্পের সালামত খান বলেন, সেনাবাহিনী আজ তিনদিন ধরে টহল দিচ্ছেন। তারা মাস্ক ব্যবহার হাত ধোয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানিয়ে দিয়ে অহেতুক আড্ডা না দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা সেভাবে আছি। শুধু ত্রাণ নিতে গেলে একটু জটলা হয়।
ক্যাম্পে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রোহিঙ্গারা হুজুগে টাইপের। যতক্ষণ বুঝানো হয়, ততক্ষণ বুঝে। সেখান আইনশৃংখলাবাহিনী সরে গেলে আবার অবাধে চলাফেরা করে। ত্রাণের লাইনে ঘেঁষাঘেঁষি করতে মানা করলেও রাখা যায় না। যেকোনো দূর্যোগ সম্পর্কে বললে অতি বিশ্বাস দেখিয়ে হেলা করে।
টেকনাফের হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকে সবার অগোচরে মিয়ানমার পারাপার করে থাকে। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের বিশাল সীমান্ত, আর রোহিঙ্গারা চোরাপথে মিয়ানমারে আসা-যাওয়া করে। সেজন্য আমাদের ঝুঁকিটা একটু বেশি। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশি নজরদারি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের কেন্দ্রীয় সচিব মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ক্যাম্পে ১১ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান। আমদের অনুমতি ছাড়া বাইরে যায় না। কিন্তু ক্যাম্পে বিদেশি এবং স্থানীয়রা প্রবেশ করছে। তাদের মাধ্যমে আমাদের রোহিঙ্গা কমিউনিটিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে আছি। এটা নিয়ন্ত্রণে আমরা নিজেদের কমিউনিটিতেও প্রচারণা চালাচ্ছি। যেহেতু ঘেঁষাঘেষি মানুষ, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে বেশি মানুষ বেকায়দায় পড়বে।
তবে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত শিবিরের কারোর মধ্যে করোনা ভাইরাসের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তবে তেমনটা দেখা গেলে রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া রয়েছে। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাকে আলাদা করে রাখা হবে। শরণার্থী শিবিরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় ইতোমধ্যে ৪৭টি এবং রামু ও চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ১০০টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন এসএম শামসুজ্জোহা জানান, করোনা মোকাবেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ নজরদারি। সে পরিপেক্ষিতে ক্রান্তিকালে বিদেশ থেকে আগতদের নতুন-পুরাতনসহ ৩৪টি ক্যাম্পে ঢুকতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা এসেছেন তাদের ভ্রমণ বৃত্তান্ত চেক করা হচ্ছে। এছাড়া বিদেশি নাগরিকদের ক্যাম্পে যাতায়াতে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জনসমাগম এড়াতে স্কুল-মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পে কোনো প্রকার জনসমাগম যাতে না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া আছে। দৈনন্দিন রেশন বিতরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে সরবরাহ করা হচ্ছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিওগুলো মিটিং করে সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছে। করোনার ক্রান্তিকাল চললেও আগামী মাসের জন্যও আমাদের ত্রাণ সামগ্রি মজুদ রয়েছে।